মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন
-শেখ মারূফ সৈকত
আমাদের জীবনধারায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিদর্শন মূর্ত হয়ে ওঠে। এগুলো সম্পর্কে সম্যক জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। কেননা, এগুলো একটা জাতির চিন্তা-চেতনা, জীবনাচার, জাতির উদ্ভব প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে। এভাবে উঁচু দালান, প্রাসাদের চূড়া, মূলত একটা জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস ও শক্তিসামর্থ্যকে ধারণ করে গড়ে ওঠে। সভ্যতার শুরুতে গড়ে ওঠা এসব স্থাপত্যের সৃষ্টির নেপথ্য কাহিনী সত্যিই খুবই চমকপ্রদ! নগর বা শহর, দেশ এবং একটা জাতি তাদের গর্বের প্রতীক বা নিদর্শন প্রকাশের নিমিত্তে এই টাওয়ার নির্মাণ করে থাকে। এ থেকে আমরা তাদের ঐতিহাসিকভাবে উপস্থিতিও জানতে পারি। যেমন : ভাষার লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্মিত মিনার; বিত্তবৈভবের নিদর্শনরূপে দণ্ডায়মান মেসোপটেমিয়ার ‘জি¹ুরাট’; শহরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বাক্ষর ‘ইতালির টাওয়ার’; প্রযুক্তির আধার ‘আইফেল টাওয়ার’ ইত্যাদি। এগুলোর সবই মানুষের চিন্তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আমাদের জানতে সহায়তা করে। প্রত্যেক স্থপতিরই নিজস্ব একটা ইচ্ছা বা বাসনা থাকে যে তার স্থাপত্যটি অন্যের চেয়ে স্বতন্ত্র, উঁচু ও অধিক ইতিহাসনির্ভর হবে।
ইসলামের সভ্যতায় স্থাপত্যশিল্পের বড় অবদান
হচ্ছে ‘মিনার’। এর নির্মাণশৈলী অন্য সকল স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। আর
মিনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বোধ করি তোমাদের সকলেরই কমবেশি আছে। আমাদের
আজকের আলোচনার বিষয় তাই এই মিনারকে কেন্দ্র করেই।
কিভাবে এলো মিনার
আমরা যখন আকাশছোঁয়া একটা মিনারের দিকে চোখ তুলে তাকাই তখন সত্যিই অবাক হতে হয় যে, এত উঁচু একটি মিনার নির্মাণ করা
কিভাবে সম্ভব হলো এবং কিভাবেই বা তার এই
আকৃতি ও নকশা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। মিনার প্রধানত মহান প্রভু আল্লাহ
রাব্বুল আলামিনের শানে প্রার্থনা জানানোর উৎস হিসেবে নির্মিত হয়। হিজরতের
পর রাসূলে পাক (সা) মদিনায় পৌঁছলে যে স্থানে তার উট থেমে যায় সেখানেই
প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তবে আজান দেয়ার জন্য তখন কোনো উঁচু জায়গাকে
বেছে নেয়া হতো। এর অনেক পর অন্য বাড়িগুলো থেকে পৃথক করার জন্য এবং পাশাপাশি
মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনিকে আরও দূরে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদগুলোতে
উঁচু মিনার তৈরি করা হয়।
ইসলাম একটি শাশ্বত জীবনবিধান। সকল উম্মাহর
জন্য মুক্তির একমাত্র পথ। নিয়মানুয়ায়ী নামাজের সময় উপস্থিত হলে যেখানে
মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করা হয় সেটা মসজিদ। কিন্তু মসজিদগুলোকে অন্যান্য
বাড়িঘর থেকে আলাদা করার জন্য তার গঠন-কাঠামো কিছুটা ভিন্ন করা হয়, তা না
হলে দূর হতে তা চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের উপস্থিতি
মুসলমানদের কাছে জানানো প্রয়োজন।
মসজিদ সামাজিক কর্মকাণ্ডের একটা উৎসও বটে।
এটা আল্লাহর ইবাদত করা, দ্বীনের প্রশিক্ষণ দেয়া, সমাজের বিচারকার্য
পরিচালনা করা, অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা এবং একটি অঞ্চল বা
কমিউনিটির সমস্ত ব্যবস্থাপনারও স্থান।
মুসলিম সমাজের লোকদের নামাজের জন্য এই
প্রধানতম স্থান তথা মসজিদে আসার জন্য আজান দিয়ে আহ্বান করা হয়। মিনার মূলত
এই আজান দেয়ার স্থান হিসেবেই গড়ে ওঠে। অবশ্য অনেক মিনার আজানের পাশাপাশি
মুসলিম সভ্যতার ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করার লক্ষ্যকে সামনে রেখেও নির্মিত
হয়েছে। সেগুলো সত্যিই খুবই আকর্ষণীয় ও অনন্য।
একটি অনন্য নিদর্শন
স্থাপত্য অথবা যে কোনো নিদর্শনই তাদের মূল্য
সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা প্রদান করে। এবং এগুলো যুগ যুগ ধরে
জ্ঞানপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। সেজন্য আমাদেরকেও এসব
স্থাপত্য শিল্প কেবল দেখলেই চলবে না। বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাটাকেই
প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সবার মধ্যে একটা উদ্ভাবনী
শক্তির উদ্ভব হতেও পারে। অন্যথায় সবটাই হবে বৃথা শ্রম।
মিনার মুসলিম বিশ্বের বিশ্বাসের সাথে
ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান সভ্যতা যার তথ্য-প্রযুক্তি অতি দ্রুতই পরস্পরের
মধ্যে আদান-প্রদান হচ্ছে, সহযোগিতা ও সংহতির ক্ষেত্রে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ
গ্রহণ করা তাই মানুষের জন্য ভাবনার বিষয় হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। এই কারণেই
মানুষের ঐক্যকে সুসংহত করার জন্য মিনারবিশিষ্ট উঁচু প্রাসাদের প্রয়োজন
অপরিহার্য। কেননা, এখানে মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে বিশ্বমুসলিমের জন্য করণীয়
বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সর্বোপরি একটা
আধ্ম্যাত্মিকতা তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
মানুষের জন্য প্রচুর জ্ঞানসমৃদ্ধ ও মানব
সভ্যতার উন্নতিকল্পে আলমোহ্যাড জাতি ‘তিনমাল মসজিদ’ নির্মাণ করে এক অনন্য
দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
নির্মাণের উদ্দেশ্য
মুসলমান অধ্যুষিত যেকোনো এলাকার মানুষকে
নির্দিষ্ট সময়ে নামাজের জন্য ডাকার একটি ঐতিহাসিক নির্দিষ্ট স্থান হচ্ছে
মসজিদের মিনার। কিছু প্রাচীন মসজিদের মিনার দূরদর্শনের টাওয়ার হিসেবেও
ব্যবহৃত হয়। যেমন দামেস্কের ‘গ্রেট মসজিদ’-এর মিনার। বর্তমান সময়ে
মিনারগুলো কেবল বিশ্বাসী মুসলমানকে নামাজের জন্য আহ্বানের উদ্দেশ্যে আজান
দেয়ার জন্যই ব্যবহৃত হয় না। এই শতাব্দীতে আজানের জন্য মিনারের ব্যবহার
অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে। এখন আজান দেয়ার জন্য মাইক্রোফোন এবং মাইক ব্যবহার
করা হয়ে থাকে। মসজিদের ভেতর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে
মাইক্রোফোনে আজান দেয়ার কাজটি সারা হয়। পোহাতে হয় না মিনারে উঠে কষ্ট করে
আজান দেয়ার ঝামেলা। আরও মজার বিষয় হলো কোনো কোনো মসজিদের মিনার তো
প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সূর্যের আলো (তাপ) মিনারের
চূড়ায় পড়ার কারণে মসজিদ গরম হয়ে যেতে পারে। এ কারণে মিনার প্রাকৃতিক
ভেন্টিলেটারের কাজ করে থাকে।
আরবি বর্ণমালার প্রথম হরফ ‘আলিফ’। মসজিদের
মিনারও আলিফের মতো খাড়া হয়ে থাকে। মনে করা হয় মিনার হচ্ছে ‘দুনিয়া ও
বেহেশতের মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ’।
পৃথিবীর উচ্চতম মিনার হচ্ছে মরক্কোর
কাসাব্লাঙ্কা মসজিদের মিনার যার উচ্চতা ২১০ মিটার। আর ইটের তৈরি পৃথিবীর
উচ্চতম মিনারটি দিল্লির কুতুব মিনার। এছাড়া ইরানে আছে এইরকম উচ্চ আরও দু’টি
মিনার।
নির্মাণকৌশল
মিনার সাধারণত তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। যথাÑ
ভিত্তি বা অধোভাগ : যে কোনো
মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তিটা মজবুত হওয়া প্রয়োজন। এজন্য এটা বেশ যতেœর
সাথে তৈরি করা হয়। কাঁকর-নুড়ি এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে ভিত্তি প্রস্তুত
করা হয়। আর এই নির্মাণশৈলী খুবই অসাধারণ!
মাঝের অংশ : সিঙ্গল মিনারগুলো চোঙাকৃতির, সিলিন্ডার আকৃতির অথবা বহুভুজাকৃতির হয়ে থাকে। উচ্চশিখরে ওঠার জন্য সিঁড়িও তৈরি করা হয়। এছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও অনেক প্রযুক্তি মিনার নির্মাণে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
মাঝের অংশ : সিঙ্গল মিনারগুলো চোঙাকৃতির, সিলিন্ডার আকৃতির অথবা বহুভুজাকৃতির হয়ে থাকে। উচ্চশিখরে ওঠার জন্য সিঁড়িও তৈরি করা হয়। এছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও অনেক প্রযুক্তি মিনার নির্মাণে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
শীর্ষভাগ : মিনারের
শীর্ষদেশে মুয়াজ্জিনের আজান দেয়ার জন্য একটি অবৃত্তাকার ঝুলবারান্দা রাখা
হয়। এর ওপর দিয়ে ছাদ-সদৃশ নকশাদার অংশ নির্মিত হয়। এই নকশাসমূহ ইট ও টাইলস
দিয়ে করা হয়। তৈরি করা হয় কার্নিশ, খিলান এবং পাথরে খোদিত কুরআন ও হাদিসের
বিভিন্ন বাণী সেখানে লাগানো হয়। আর যে মিনারগুলো এতো নকশাদার করা হয় না
সেগুলোও বেশ জমকালো করা হয়।
নানা প্রকার মিনার
মিনার ছাড়া কোনো মসজিদ কল্পনা করা যায় না।
কেননা, মুসলমানদের কাছে মিনার মসজিদেরই একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। মুসলিম
স্থাপত্যশিল্পের বিখ্যাত আর্কিটেকচার ব্রিটিশ কেএসি ক্রেসওয়েলের বিভাগীয়
ডিন যিনি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রথম বিশেষজ্ঞ, তিনি ঘোষণা করেন, ‘হযরত
মুহাম্মদের (সা) সময় মসজিদে কোনো মিনার ছিল না।’ তিনি প্রথম যে মিনারের কথা
বলেন তা হলো মুহাম্মদ (সা)-এর মৃত্যুর ৪১ বছর পর ৬৭৩ সালে দামেস্কে
নির্মিত মিনার। তাই বলা যায় নামাজের উদ্দেশ্যে মানুষকে আহ্বানের জন্য
প্রাথমিক পর্যায়ে উঁচু রাস্তা বা মসজিদের ছাদ ব্যবহৃত হতো। গ্রাম অঞ্চলের
মসজিদে তো মিনারের আশা প্রায় করাই যেত না।
এই আর্কিটেকচার বলেন যে, তখন আবদুল্লাহ ইবনে
ওমরের বাড়িতে পাথরের তৈরি একটি থাম ছিল যার ওপর দাঁড়িয়ে আজান দেয়া হতো। এটা
হিজরি দশ সালের কথা। এ জন্য তখন আজান খুব বেশি দূর থেকে শোনা যেত না।
নবম হিজরিতে (৭০৩ সাল) আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ
মসজিদে নববীর চার কোনায় চারটি মিনার নির্মাণ করেন। প্রত্যেকটি মিনারের
উচ্চতা ছিল প্রায় ৯ মিটার (৩০ ফুট) এবং এগুলোর ভিত্তি ছিল ১৬ মিটার বা ৫২
ফুট। ফলে মুয়াজ্জিনের আজান অনেক দূর থেকে শোনা যেত।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পৃথিবীর উচ্চতম
মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার বা ৬৩০ ফুট। এটি মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত
‘দ্বিতীয় হাসান মসজিদ’ যেটা তৈরি করা হয়েছিল মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসানের
৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে। মক্কার কা’বা ঘরের পর এটিই বৃহত্তম
ধর্মীয়-স্মৃতিস্তম্ভ। এর ভেতরে একসঙ্গে ২৫ হাজার ও বাইরে ৮০ হাজার মুসল্লি
নামাজ পড়তে পারেন। ২১০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এই মিনারটি রাত ও দিনে
ভালোভাবেই দেখা যায়। এর নির্মাণশৈলী অনেকটা কুতুবিয়া মিনারের মতো। কুতুবিয়া
মিনার ১১৯৫ সালে মরক্কোর মারাকেসে নির্মাণ করা হয় যার উচ্চতা ৭৭ মিটার বা
২৩০ ফুট।
মোঙ্গলদের বিদায়ের পর ঘুরিদ সাম্রাজ্যের
রাজধানী ফিরুজকুতে ১৯৫৭ সালে একটি বিখ্যাত মসজিদ আবিষ্কৃত হয়েছে যেটি
নির্মাণ করা হয় ১১৯৪ সালে। এটি ‘জাম’ টাওয়ার নামে পরিচিত। ইরান,
আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ১১ থেকে ১৩ শতাব্দীতে আকর্ষণীয়
মিনারগুলো নির্মিত হয়েছে। আফগানিস্তানে মাটি থেকে ৬০ মিটার উঁচুতে একটি
পর্বতের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় এরূপ একটি মিনার। অষ্টভুজাকৃতির এই
মিনারটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। আধোয়ান তৈরি হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা
মরিয়ামে বর্ণিত ‘কুফিক’ কৌশলে। ইট কেটে সতর্কতার সাথে সদৃশ করা হয়েছে, যার
নাম রাখা হয়েছে ঘুরিদ শাসক ঘুরিয়া আল-দিন মুহাম্মাদ (১১৬৩-১২০৩) নামে। নীল
সিরামিকের জমকালো নকশা এর বৈশিষ্ট্য।
বর্তমান সময়ে নির্মিত প্রত্যেকটি মসজিদের
মিনারই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এগুলোর সবই লম্বা, মাধুর্যপূর্ণ এবং
শক্ত রড দিয়ে আকৃতি প্রদান করা হয়। কোনো কোনোটা আবার অবতল বা ধনুকাকৃতির
হয়ে থাকে এবং মসজিদের ছাদের ওপরে এগুলো নির্মিত হয়। আর মিনারবিহীন মসজিদ তো
বর্তমানে কল্পনাাই করা যায় না।
মিনার থাকবে
যে কোনো নিদর্শন সংশ্লিষ্ট কলোনির বিশ্বাসের
ভিত্তি, উক্ত অঞ্চলের গুরুত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রভৃতিকে
ধারণ করে। মহান প্রভুর দেয়া একমাত্র জীবনবিধান ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে
অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বাক্ষর রাখতে হয়েছে। তবেই মজবুত হয়েছে এর
ভিত্তি এবং গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র একটি ঐতিহ্য। তাই এর প্রযুক্তিও অন্যান্য
জাতি-গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা। শুধু আলাদাই নয়, ইসলামের সকল স্থাপত্য ও
নিদর্শনের পেছনে আছে এক একটি ইতিহাস, এক একটি ঐতিহ্য, এক একটি সংগ্রাম ও
বিজয়ের কীর্তিগাথা। আর মিনার হচ্ছে সেরকমই একটি নিদর্শন।
এখন বলা যায় পৃথিবীর যেখানে যে প্রান্তে
মসজিদ নির্মিত হবে তার মিনারটিও হবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সেটা হবে
সেই এলাকার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও। তবে মিনার নির্মাণের পেছনে যতই
সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দিকটি থাক না কেন, এর মূল উদ্দেশ্য তৎসংলগ্ন
সম্প্রদায়ের লোকদেরকে একত্রিত করার বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। প্রতিদিন
পাঁচবার এই মিনার থেকে শোনা যাবে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবার’ আজান
ধ্বনি। আর বিশ্বাসী মু’মিনরা দলবেঁধে ছুটবে মহান রব্বুল আ’লামিনের দরবারে
মস্তক অবনত করে নামাজ আদায়ের জন্য। মিনার তাই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের হৃদয়ে
স্রষ্টার প্রতি অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসার ফল্গুধারা বইয়ে দিতে থাকবে আর
নিজেদেরকে উচ্চে তুলে ধরতে আশাবাদ শুনিয়ে যাবে।
No comments:
Post a Comment
https://isignbd.blogspot.com/2013/10/blog-post.html