Showing posts with label সাহাবী সংক্রান্ত নিদর্শন(Sign of Sahabi). Show all posts
Showing posts with label সাহাবী সংক্রান্ত নিদর্শন(Sign of Sahabi). Show all posts

Sunday, October 20, 2013

জর্দানের বিস্ময়কর ইসলামিক নিদর্শন সাহাবী গাছ (ভিডিও সহ)

জর্দানের বিস্ময়কর ইসলামিক নিদর্শন সাহাবী গাছ



আজো বেঁচে আছে বিস্ময়কর ১৫০০ বছর আগের রাসুল (সঃ) এর সাক্ষাৎপ্রাপ্ত বেচে থাকা একমাত্র সাহাবী গাছ। ইংরেজিতে এ গাছকে বলা হয় The Blessed Tree. শুনতে অবাক লাগলেও কিন্তু বেঁচে আছে গাছটি।
পৃথিবীতে এত পুরনো কোনো গাছ এখনো বেঁচে আছে তা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও কিন্তু সত্যি। সাহাবি গাছ এমনই একটি গাছ যে গাছটি অবিশ্বাস্যভাবে শত বর্গ কিলোমিটারজুড়ে মরুভূমিতে গত ১৫০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে খুবই সুন্দর গাছটি।
মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশের কারণে জন্ম থেকেই গাছটি ছিল পাতাহীন শুকনো কিন্তু একসময় আল্লাহর হুকুমে গাছটি সবুজ পাতায় ভরে উঠে এবং আজ পর্যন্ত গাছটি সবুজ শ্যামল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
অবিশ্বাস্য এই গাছটি জর্ডানের মরুভূমির অভ্যন্তরে সাফাঈ এলাকায় দণ্ডায়মান। জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ সর্বপ্রথম এই স্থানটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দেন।
৫৮২ খ্রিস্টাব্দে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বয়স তখন ১২ বছর, তিনি তার চাচা আবু তালিবের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে মক্কা থেকে তৎকালীন শাম বা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
যাত্রাপথে তারা সিরিয়ার অদূরে জর্ডানে এসে উপস্থিত হন। জর্ডানের সেই এলাকাটি ছিল শত শত মাইলব্যাপী বিস্তৃত উত্তপ্ত বালুকাময় এক মরুভূমি। মোহাম্মদ (সা.) এবং তার চাচা আবু তালিব মরুভূমি পাড়ি দেয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
তখন তারা একটু বিশ্রামের জায়গা খুঁজছিলেন। কিন্তু আশপাশে তারা কোনো বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চারদিকে যত দূর চোখ যায় কোনো বৃক্ষরাজির সন্ধান পাচ্ছিলেন না।
কিন্তু দূরে একটি মৃতপ্রায় গাছ দেখতে পেলেন তারা। উত্তপ্ত মরুভূমির মাঝে গাছটি ছিল লতাপাতাহীন শীর্ণ ও মৃতপ্রায়। উপায় না পেয়ে তারা মরুভূমির উত্তাপে শীর্ণ পাতাহীন সেই গাছটির তলায় বিশ্রাম নিতে বসেন।
উল্লেখ্য, রাসূল মোহাম্মদ (সা.) যখন পথ চলতেন তখন আল্লাহর নির্দেশে মেঘমালা তাকে ছায়া দিত এবং বৃক্ষরাজি তার দিকে হেলে পড়ে ছায়া দিত।


মোহাম্মদ (সা.) তার চাচাকে নিয়ে যখন গাছের তলায় বসেছিলেন তখন তাদের ছায়া দিতে আল্লাহর নির্দেশে মৃতপ্রায় গাছটি সজীব হয়ে উঠে এবং গাছটির সমস্ত ডালপালা সবুজ পাতায় ভরে যায়।
সেই গাছটিই বর্তমানে সাহাবি গাছ নামে পরিচিত। এ ঘটনা দূরে দাঁড়িয়ে জারজিস ওরফে বুহাইরা নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রি সবকিছু দেখছিলেন।


আবু তালিব মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে পাদ্রীর কাছে গেলে তিনি বলেন, আমি কোনোদিন এই গাছের নিচে কাউকে বসতে দেখিনি।
পাদ্রী বলেন, গাছটিও ছিল পাতাহীন কিন্তু আজ গাছটি পাতায় পরিপূর্ণ। এই ছেলেটির নাম কি? চাচা আবু তালিব উত্তর দিলেন মোহাম্মদ! পাদ্রী আবার জিজ্ঞাসা করলেন, বাবার নাম কি? আব্দুল্লাহ!, মাতার নাম? আমিনা!
বালক মোহাম্মাদকে (সা.) দেখে এবং তার পরিচয় শুনে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাদ্রীর চিনতে আর বাকি রইল না যে, এই সেই বহু প্রতীক্ষিত শেষ নবী মোহাম্মদ। চাচা আবু তালিবকে ডেকে পাদ্রী বললেন, তোমার সঙ্গে বসা বালকটি সারা জগতের সর্দার, সারা বিশ্বের নেতা এবং এই জগতের শেষ নবী।
তিনি বলেন, আমি তার সম্পর্কে বাইবেলে পড়েছি এবং আমি ঘোষণা দিচ্ছি, এই বালকটিই শেষ নবী।
চাচা আবু তালিব ও মহানবী (সা.) যেই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেই গাছটি ১৫০০ বছর আগ যে অবস্থায় ছিল আজো সেই অবস্থায় জর্ডানের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে।
গাছটি সবুজ লতা-পাতায় ভরা এবং সতেজ ও সবুজ। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, গাছটি যেখানে অবস্থিত তেমন মরুদ্যানে কোনো গাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। গাছটির আশপাশের কয়েকশ’ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে আর কোনো গাছ নেই।
গাছটির চারিদিকে দিগন্ত জোড়া শুধুই মরুভূমি আর মরুভূমি। উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমির মাঝে গাছটি দাঁড়িয়ে থেকে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে মহানবী রাসূল মোহাম্মদের (সা.) স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রেখেছে, যা আল্লাহ তা’য়ালার কুদরতি ক্ষমতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

Watch This Video:


Saturday, September 21, 2013

দুই সাহাবী (রাঃ)’র অলৌকিক রক্ষিত লাশ মুবারক

দুই সাহাবী (রাঃ)’র অলৌকিক রক্ষিত লাশ মুবারক

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ৪০ মাইল দূরে সালমান পার্ক একটি প্রাচীন জনপদ। সেই ঐতিহ্যবাহী নগরী সালমান পার্কে একটি অলৌকিক ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ৭৭ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩২ সালে।
সালমান পার্কে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে সর্বপ্রথম কবরস্থ হন বিখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)। এরপর প্রায় তেরশত বছর পর সেখানে সমাহিত করা হয় আরো দু’জন সাহাবীকে। তার মধ্যে একজন হলেন- (০১) হযরত হুযাইফা (রাঃ) এবং অপরজন (০২) হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)।
শেষাক্তো দু’জন সাহাবীর কবর প্রথমে সালমান পার্কে ছিল না। তাঁদের কবর ছিল সালমান পার্ক থেকে দু’ ফালং দুরে একটা অনাবাদী জায়গায়। যার অতি নিকট দিয়ে কলকল রবে বয়ে চলেছে ঐতিহাসিক দজলা নদী। দীর্ঘদিন পর একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের (কবরস্থ সাহাবীদের) কে সেখান থেকে সরিয়ে এনে সালমান পার্কে দাফন করা হয়।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, সেটি ছিল বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম বিস্ময়কর ঘটনা। সেই সময় ইরাকের বাদশাহ ছিলেন বাদশাহ ফয়সাল।
একদিন বাদশাহ ফয়সাল ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ স্বপ্নে দেখেন- হযরত হুযায়ইফা (রাঃ) তাঁকে বলছেন- “আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরিয়ে অন্যত্র দাফন করা হোক। কেননা, আমার কবরে পানি জমতে শুরু করেছে, আর হযরত জাবের (রাঃ)-এর কবরে পানি প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে।”
কিন্তু বাদশাহ ফয়সাল ব্যস্ততার কারণে পরদিন স্বপ্নের কথা ভুলে যান। এরপর দ্বিতীয় রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু নানাবিধ ঝামেলার কারণে সেদিনও স্বপ্নের নির্দেশ পালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তখন হযরত হুযাইফা (রাঃ) তৃতীয় রাত্রে একইভাবে স্বপ্নযোগে ইরাকের মুফতীয়ে আজমকে একাজ সমাধা করার দায়িত্ব দেন। সেই সঙ্গে এও বলেন যে, ‘আমি পর পর দু’রাত ধরে বাদশাহকে এ ব্যাপারটি অবহিত করে আসছি। কিন্তু তিনি দিনের বেলায় ভুলে যাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হননি। এখন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে – আমার নির্দেশটি তাঁকে স্বরণ করিয়ে দেয়া এবং যথাশীঘ্রই আমাদেরকে স্তানান্তর করার ব্যবস্থা করা।’
স্বপ্নযোগে এ দৃশ্য দেখে মুফতীয়ে আজম কালবিলম্ব না করে পরদিন সকালেই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরী আল সাঈদকে সংগে নিয়ে বাদশাহর দরবারে হাজির হন এবং তাঁকে স্বীয় স্বপ্নের কথা বিস্তারিরত ভাবে খূলে বলেন।বাদশাহ ব্যাপারটা বিশদভাবে আলোচনা করার পর এরূপ একটি স্পর্শকাতর পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে মুফতীয়ে আজম-এর নিকট ফতওয়া তলব করেন। মূফতীয়ে আজম লাশ স্থানান্তরের অনুকূলে ফতুওয়া প্রদান করেন।
অতঃপর সিন্ধান্ত হয় যে, কুরবানীর ঈদের দিন বাদ যোহর সাহাবীদ্বয়ের কবর খুঁড়ে তাঁদের লাশ মুবারক অন্য কোন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত হবে। ইরাক সহ দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যম গুলো তে খবরটি প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে সর্বত্র আলোচনার সৃষ্টি হয়। জনগন সাহাবীদ্বয়কে দেখতে পাবার আনন্দে বিভোর হয়ে যায়। তখন বিশ্বে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন মক্কা নগরীতে সমবেত। কারণ, সেসময় ছিল হজ্জের মৌসুম। এ সংবাদ শ্রবণে হাজীগণ বাদশাহ ফয়সালের কাছে আবেদন করলেন -আমরাও মহান সাহাবীদ্বয়ের চেহারা মোবারক দর্শনে আগ্রহী। অনুগ্রহ পূর্বক তারিখটা আরো ক’দিন পিছিয়ে দেয়া হোক। এদিকে ইরান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিনি, হেজায, বুলগেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা , রাশিয়া, ভারত বাংলাদেশ সহ প্রভূতি রাষ্ট্র থেকে বাদশাহ ফয়সালের নিকট একই আবেদন সম্বলিত অসংখ্য বার্তা আসতে লাগল।
বাদশাহ্ ফয়সাল মহাবিপদে পড়লেন। একদিকে গোটা মুসলিম বিশ্বের তারিখ পেছানোর জোড়ালো অনুরোধ, অন্যদিকে দ্রুত স্থানান্তরের স্বাপ্নিক নির্দেশ। উভয় সংকটে পড়লেন। অবশেষে এ ব্যাপারে সিন্ধান্ত হলো , কিছুদিন যাতে কবরের ভিতর পানি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নদীর দিক থেকে দশ ফুট দুরে একটি গভীর গর্ত খনন করে সেখানে কাঁকর ফেলা হবে। আর সারাবিশ্বের মুসলমানদের আগ্রহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তারিখটি আরো দশ দিন পিছিয়ে দেয়া হল।এ ঘোষনার পর ক’দিনের মধ্যেই সালমান পার্কের ছোট বসতিটি লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, রাষ্ট্রদূত, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঢল নামল এ পার্কে। তাঁবুতে তাঁবুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল মাদায়েনের ঐতিহাসিক মাঠটি। একটি গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল পাঁচ লক্ষ।
শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিক্ষিত দিনটি এসে গেল। লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে কবর খোঁড়া হলো। দেখা গেল -সত্যিই হযরত হুযায়ফা (রাঃ)-এর কবরে কিছু পানি জমে গেছে এবং হযরত জাবের (রাঃ)-এর কবরে কিছুটা আদ্রতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে সমবেত জনতা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন। তাঁদের কণ্ঠে বার বার উচ্চারিত হতে লাগল -”আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” চোখে নেমে আসে অশ্রুর বন্যা।
বাদশাহ ফয়সালের নেতৃত্বে তাঁর মন্ত্রী ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রাষ্ট্রদুতগণের সহযোগীতায় প্রথমে হযরত হুযাইফা (রাঃ) -এর লাশ মুবারক কবর থেকে ক্রেনের দ্বারা তোলা হল। ক্রেনের সাহায্যে তাঁর পবিত্র লাশ টি এমন ভাবে উঠানো হয় যে, মুবারক লাশটি আপনাতেই ক্রেনের মাথায় ফিট করে রাখা ট্রেচারে এসে পৌঁছায়। অতঃপর ট্রেচারটি ক্রেন থেকে পৃথক করে নেয়া হল। বাদশাহ ফয়সাল, মুফতী সাহেব, সিরিয়া এবংতুরস্কের নির্বাচিত মন্ত্রীবর্গ এবংমিশরের যুবরাজ শাহ ফারুক অত্যন্ত যত্ন ও তা’জীম সহকারে লাশ মুবারককে তুলে এনে একটি কফিনের ভিতর রাখেন। অতঃপর একই ভাবে হযরত জাবের (রাঃ)-এর পবিত্র লাশটিও তুলে আনা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- শত শথ বছর কেটে গেলেও শুধু তাঁদের লাশ মোবারকই নয়, কাফন বাঁধার ফিতা গুলোর মধ্যেও কোন পরিবর্তন আসেনি। সুবাহানাল্লাহ্‌! লাশ দুটি দেখে কেউ কেউ কল্পনাও করতে করতে পারছিল না যে, এগুলো দীর্ঘ তেরশত বছরের প্রাচীণ লাশ।
আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- তাঁদের চোখগুলো ছিল খোলা, সেই খোলা চোখ থেকে রহস্যময় অপার্থিব জ্যোতি এমনভাবে ঠিকরে পড়ছিল, যে, অনেকেই তাঁদের চোখ ভাল ভাবে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখ থেকে বেরিয়ে আসা অতি উজ্জ্বল আলোর কারণে কেউই দৃষ্টি ঠিক রাখতে পারছিলেন না।
এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে বড় বড় ডাক্তার গণ হতবাক হয়ে যান। এ সময় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জৈনিক জার্মান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে সবকিছু খুঁটে খুঁটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করে মূফতি সাহেবের হাত ধরে বললেন- “ইসলামের সত্যতা এবং সাহাবীগণের উচ্চ মর্যাদার সপক্ষে এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?” এ বলে তিনি কালিমা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে যান।
অতঃপর পবিত্র লাশ দু’টিকে কফিনে রাখার পর উপস্থিত জনতা তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করেন। এরপর আলেমগণ ও মন্ত্রীবর্গ কফিন দু’টো কাঁধে উঠিয়ে নেন। কিছুদুর যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গ এবং সবশেষে বাদশাহ ফয়সাল কাঁধ পেতে নেন।
দীর্ঘ চার ঘন্টা পর চরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পবিত্র লাশ দুটি সালমান পার্কে এসে পৌঁছে। যে সৌভাগ্যবান লাশ দু’টিকে প্রথমে কফিনে রেখেছিলেন, তারাই কফিন দু’টি নবনির্মিত কবরে নামিয়ে রাখেন। আর এভাবেই জনতার আল্লাহু আকবার ধ্বনির মধ্যে ইসলামের এই মহান সাহাবীদ্বয়কে মাটির কোলো শুয়ে দেওয়া হয়।

Thursday, September 19, 2013

প্রথম ভারতীয় সাহাবী হযরত তাজউদ্দীন চেরামান পেরুমল (রাঃ) - রাছুলুল্লাহ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজার ইন্ডিয়ান সাক্ষী



ভারতীয় সাহাবী তাজউদ্দীন রা: এর কবর

চেরামান পেরুমল উপমহাদেশের সর্বপ্রথম নাগরিক যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পবিত্র সাহচর্য লাভ করে সাহাবী হবার গৌরব অর্জন করেন। উনার নিবাস ছিল ভারতের বর্তমান কেরালা প্রদেশের মালাবার অঞ্চলের ’Kodungaloor ‘কোডুঙ্গোলর’ এলাকায়। উনি উক্ত অঞ্চলের সম্রাট ছিলেন। একাধারে ২৬টি বৎসর তিনি রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পুরো দক্ষীণ ভারতের ২৫০০ মাইলেরও বেশী এলাকা জুড়ে উপকুলীয় এ রাজ্যের সীমানা ছিল বিশাল। অনেক ঐতিহাসিক উনার ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রাচীন বইয়ের মধ্যে এম. হামিদুল্লাহ রচিত “মুহাম্মাদ রসূলুল্লহ” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 
‘চক্রবতী ফারমাস’ যা চেরামান পেরুমল এর অন্য একটি উপাধি; নিজ অঞ্চলে থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা বা অলৌকিক ঘটনা স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেণ।  পবিত্র কোর’আনের সূরা-ক্বমার এ এই চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজার কথা উল্লেখ আছে। তাফসিরে মা’আরিফুল কোর’আনে উক্ত সূরার ব্যাখ্যায় এই পূন্যাত্মা সাহাবীর ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কথা উল্লেখ আছে। ওখানে আরো বলা আছে যে, মালাবারের এই মহারাজা ডায়েরী লিখতেন। যেদিন এই চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা সংগঠিত সেই, উনি সেইদিনের ঘটনা সবিস্তারে তারিখ সহ লিখে গেছেন। উনার রচিত সেই ডায়েরী এখনও সংরক্ষিত আছে।
মক্কার কাফেরদের দাবীর মুখে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা হাতের ইশারায় চাঁদকে দিখন্ডিত করে দেখান। চাঁদের একটা অংশ আকাশের পূর্বাংশে আর অপরাংশ পশ্চিম দিকে সরে যায় কিছুক্ষণের জন্য। উপস্থিত অনেকেই সে রাতে এ দৃশ্য দেখেছিল। কাফেরদের কেউ কেউ এটা বিশ্বাস করলেও নিজের চোখে দেখা সত্তেও কেউ কেউ তা যাদু হিসেবে অভিহিত করে।

জোৎস্নারাতে রাজা চেরুমল রাজপ্রসাদের ছাদে বসে ছিলেন রাণী সাথে করে। হঠাৎ চাঁদকে দ্বিখন্ডিত হতে দেখে রাণীসহ তিনি ও তার সভাসদরা যারপরনাই বিষ্মত হন। এ বিষয়ে তিনি রাজজ্যোতিষীদের কাছে জানতে চান। মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই মালাবার উপকুলে আগত আরব বণীকদের মাধ্যমে স্থানীয় আরব বণীক ও তাদের ভারতীয় দোসররা জানতে পারেন যে, আরবে এক নবী আত্বপ্রকাশ করেছেন, তিনি একত্ববাদ প্রচার করেন, তিনিই নিজ হাতের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন। এ কথা শুনে অভিভূত রাজা চেরামান পেরুমল আরবের সেই নবীর সাথে স্বাক্ষাতের জন্য মরীয়া হয়ে উঠেন, শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন একদল আরব বণীকদের সাথে।

হিজরতের পূর্বে সম্ভবত ৬১৯-৬২০ খৃষ্টাব্দে, ২৭ শে শাওয়াল সকাল নয়টার দিকে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এর সাথে তাঁর দেখা হয়। সেখানেই তিনি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সা: এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বক্কর রা: সহ আরও কয়েকজন সাহাবীর উপস্থিতিতে স্বয়ং আল্লাহর হাবীব সা: তার নাম রাখে তাজউদ্দীন। রাজা চেরামান পেরুমল রাসুলুল্লাহ সা: এর জন্য উপঢৌকন হিসেবে দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত আচার নিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতীয় এক বাদশাহ কর্তৃক আদার সংমিশ্রণে তৈরী সেই আচার সংক্রান্ত একটা হাদিসও আমরা দেখতে পাই, প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাইদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে হাদিসটি। 
হাদীস সঙ্কলনকারী হাকিম (রঃ) তার ‘মুস্তাদরাক’ নামক কিতাবে হাদীসটি সঙ্কলন করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ), চেরামান পেরুমল (রাঃ) কে ‘মালিকুল হিন্দ’ তথা ‘ভারতীয় মহারাজ’ বলে সম্বোধন করেন।
عن ابى سعيد الخدرى (رضى لله عنه) قال اهدى ملك الهند الى النبى (صلى الله عليه وسلم) جرة فيها زنجبيل فاطعم اصحابه قطعة قطعة واطعمنى منها قطعة
[رواه المستدرك حاكم]
হযরত আবু সাঈদ সা’দ বিন মালিক বিন সিনান আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘ভারতীয় মহারাজ নবীজী (সাঃ) এর জন্য এক বয়াম আচার নিয়ে আসলেন যার মধ্যে আদার টুকরা ছিল। নবীজী (সাঃ) সেই টুকরাগুলা তার সাহাবীদের ভাগ করে দিলেন। আমিও খাবার জন্য একটি টুকরা ভাগে পেয়েছিলাম’।
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত মালিক ইবনে দীনারের বোন রাজিয়া’র সাথে রাজা পেরুমল তথা সাহাবী তাজউদ্দীন রা: এর বিয়ে হয়। তিনি সেখানে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ বৎসর অবস্থান করে রাসুলুল্লাহ সা: এর নির্দেশে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তার সাথে মালিক ইবনে দীনারসহ আরও ক’জন সাহাবী ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে দক্ষিণপূর্ব আরবের এক বন্দরে (বর্তমান ওমানের সালালা শহর) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন। আজও তার কবর রয়েছে ওমানের সালালা শহরে, মর্যাদাবান এক সাহাবী হিসেবে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সেটি এক অনবদ্য আকর্ষণ।

ওদিকে মালিক ইবনে দিনার রা: এবং তার বোন রাজিয়া রা:সহ অন্যান্য মুসলমানগণ ঠিকই কেরালাতে আসেন, মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে চেরুমান পেরুমল তথা তাজউদ্দীন রা: তার আত্বীয়স্বজনদের কাছে চিঠি লিখে পাঠান সাহাবী মালিক ইবনে দিনারের হাতে।

সাহাবী মালিক ইবনে দিনার, তার বোন রাজিয়া দলবল সহ কেরালায় আসেন এবং এখানেই তারা বসতী স্থাপন করেন। এর আগে থেকেই সেখানে এক বিরাট আরব বণীকদের বসতী গড়ে উঠেছিল। সাহাবী মালিক ইবনে দিনার সেখানে ভারতের প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন। সেখানেই এই মহান সাহাবী ও তার বোন হযরত রাজিয়া রা: এর কবল আজও বিদ্যমান রয়েছে।

Source: http://www.postpoems.org  and http://www.bdtomorrow.net

Watch this Video: 
Hazrath Tajuddin (R) The first Muslim & Sahabi Rasool (S) from INDIAN Region. 

For more information browse this website: http://www.mohdiqbal.webs.com/ 


 ``Sign of Rasulullah" Label's Other Link:


Thursday, May 9, 2013

তুরস্কে ইসলামী নিদর্শন: সাহাবী আবু আয়ুব আনসারী (রাঃ)-'র সমাধিস্থল

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাদি)
- অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের ইতিহাসে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদি আল্লাহু তা’আলা আন্হুর শুভ নাম অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনা মনওয়ারায় হিজরত করে এসে তাঁর বাড়িতেই আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন। মদীনার প্রত্যেক বাসিন্দা চাচ্ছিলেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁর গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করুন। তাঁদের এই আন্তরিকতা দেখে তিনি বললেন : তোমরা আমার উষ্ট্র্রী কাসওয়ার পথ ছেড়ে দাও। সে আমার অবস্থানস্থল খুঁজে বের করুক। তাই করা হলো। উষ্ট্রী কাসওয়া ধীরগতিতে হাঁটতে হাঁটতে হযরত আইয়ূব আনসারীর দোতলা বাড়ির সামনে এসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে শুয়ে পড়ল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেই বাড়িতে উঠলেন এবং মসজিদে নববী ও তাঁর জন্য হুজরা নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এই বাড়িতেই অবস্থান করেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর পূর্ণ নাম হচ্ছে খালিদ ইবনে যায়েদ ইবনে কুলায়েব আল-খাযরাজী আন্-নাজ্জারী। আবূ আইয়ূব আনসারী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। মদীনার বনূ নাজ্জার বা নাজ্জার বংশের খাযরাজ গোত্রে তিনি ৫৯১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এই নাজ্জার বংশের এক কন্যাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লামের পরদাদা বা প্রপিতামহ হাশিম শাদি করেছিলেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলেন। কবিতা লেখার ঝোঁকও তাঁর ছিল। তিনি ২৯ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। হজ্জের মৌসুমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম মদীনার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে আকাবা নামক স্থানে রাত্রি বেলায় গোপনে মিলিত হন এবং তাঁদের নিকট ইসলামের বাণী তুলে ধরেন। তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনা যাবার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সালামকে দাওয়াত দিয়ে যান। সেই দলে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুও ছিলেন এবং মদীনায় তাঁর নিজগৃহে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে মেহমান হিসেবে পাবার খোশনসীব তিনি লাভ করেছিলেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে পরিচালিত সকল সশস্ত্র যুদ্ধে শরিক হয়েছিলেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিদায় হজ্জে অংশগ্রহণ করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পরিচালিত সকল অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত উমর ইব্ন খাত্তাব রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর খিলাফতকালে মিসরে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। হযরত আমর ইব্নুল আস রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর সেনাপতিত্বে মিসর জয়ে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর বিশেষ অবদান ছিল।
৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান ইব্নে আফফান রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর বাসভবন বিদ্রোহীরা অবরুদ্ধ করলে মদীনায় নেমে আসে অরাজক অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু খলীফার নির্দেশে মসজিদুন নববীতে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু মদীনা মনওয়ারা থেকে রাজধানী কূফা স্থানান্তরিত করেন এবং হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহ তা’আলা আন্হুকে মদীনার গবর্নর নিযুক্ত করেন। গবর্নর হিসেবে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন।
হযরত উসমান ইব্নে আফফান রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুন তাঁর বাসভবনে বিদ্রোহীদের অস্ত্রাঘাতে শহীদ হলে হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু জনগণের বিশেষ করে বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরামের অনুরোধে খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ওদিকে দামেস্কের গবর্নর হযরত আমীর মুআবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু খলীফা উসমান হত্যার বিচার চেয়ে জোরদার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটালেন। এর ফলে হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু ও হযরত মু’আবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। সংঘটিত হয় সিফফিনের যুদ্ধ। এই সুযোগে একটা চরমপন্থী বাতিল র্ফিকা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তারা আল্লাহ্র আইন ছাড়া কোন আইন মানি না সেøাগান তোলে এবং হযরত আলী, হযরত মু’আবিয়াকে কাফির বলে এঁদের হত্যা করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এরাই খারেজী। এই খারেজীদের দমন করবার জন্য হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু ইরাকের নাহারওয়ান অভিমুখে অভিযান পরিচালনা করেন। খারেজীদের সৈন্যসংখ্যা ছিল ২৫ হাজার। নাহারওয়ান খালের তীরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ খারেজীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাদের চার হাজার সৈন্য নিহত হয়। হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহুর বাহিনীতে হযরত আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু অশ্বারোহী বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে যোগদান করেন এবং বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু মুসলিম নৌবাহিনী ৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে হযরত মু’আবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর আমলে কনস্টান্টিনোপল অভিযানে গমন করেন। এই অভিযানে অশীতিপর বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু অংশগ্রহণ করেন। এই অবস্থায় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বেশ কিছুদিন রোগ ভোগের পর সেখানেই ইন্তিকাল করেন। তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পূর্বে অসিয়ত করে যান তাঁকে কনস্টান্টিনোপলেই যেন দাফন করা হয়। তাঁর সেই অসিয়ত অনুযায়ী তাঁকে কনস্টান্টিনোপলের নগর প্রাচীরের পাশে কবরস্থ করা হয়।
  কালক্রমে এই মাযার শরীফ সব ধর্মের মানুষের তীর্থস্থানে পরিণত হয়। তাঁর মাযার শরীফ থেকে আকাশ সমান আলোকিত করে একটা জ্যোতি উত্থিত হয় বলে জানা যায়। উসমানী সুলতানগণ তাঁদের অভিষেক অনুষ্ঠান এই মাযার শরীফে এসে সম্পন্ন করতেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রাদি) উচ্চশিক্ষিত ছিলেন এবং কুরআন মজীদের হাফিজ ছিলেন। হাদীস শরীফ প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ২১০। ইলমে ফিক্হেও তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল। খলীফা আবূ বকর রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু, খলীফা উমর (রাদি.) ও খলীফা উসমান (রাদি)-এর আমলে বায়তুল মাল হতে মাসিক চার হাজার দিরহাম ভাতা দেয়া হতো, হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু এই মাসিক ভাতা ২০ হাজার দিরহামে উন্নীত করেন।
ঐতিহাসিক হিট্টি হিস্ট্রি অব আরব্স গ্রন্থে লিখেছেন: In course of the siege Abu ayub died of dysentery and buried before the walls of Constantinople. His tomb soon became a shrine even for Christian Greeks, who made pilgrimages to it in time of draught to pray for rains... Thus the medina’s gentleman became a saint for three nations.
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সাঃ), সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ


ইতিহাসের এক স্বর্ণালী বিস্ময়।

হলদে ডানা

.............................................আবু আইয়ুব আনসারী রা. পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন অনেক দিন। আল্লাহর জমীনে তারই মনোনিত জীবন ব্যাবস্থাকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধের শেষ জীবনের কাহিনী পৃথিবীর সব বিপ্লবীর জন্য এক নির্বাক করা নমুনা। তখন মুয়াবিয়া রা. এর শাসনকাল।  কন্সানটিনোপল তথা তুরস্কের ইস্তাম্বুল অভিযানে শরীক হলেন ৮৬ বছরের 'তরুণ' মুজাহিদ আবু আইয়ুব আনসারী রা. । শেষ নিশ্বাস ফেলব আল্লাহর দীনের পথে এই ছিল কামনা। রাসুল স. কন্সট্যান্টিনোপল বিজয়ের যে ভবিষ্যতবানী করে যান, সেই বিজয় অভিযানের একজন সঙ্গী হওয়ার সে এক প্রবল আকাঙ্খা! সৈন্যরা ঘেরাও করলো কন্সট্যান্টিনোপল। দীর্ঘ এক বছর অবরোধ চললো।এ সময় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ আবু আইয়ুব আনসারী। শায়ীত হলেন মৃত্যু শয্যায়। ছুটে এলেন সেনাপতি। পরম শ্রদ্ধাভরে শেষ ইচ্ছা জানতে চাইলেন। আবু আইয়ুব আনসারী রা. বললেন- বলে লাভ কি, তোমরা কি তা পূরণ করবে? সেনাপতি  নাছোড়বান্দা। বললেন, কেন নয় চাচাজান- আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করবো। মুমূর্ষু মুজাহিদ বুজুর্গ সাহাবী আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, আমি চাই আমার মৃত্যুর পর আগামীকাল কনস্ট্যান্টিনোপলের প্রবেশ পথের ওপর আমাকে কবর দিয়ে আসবে। শেষ ইচ্ছা শুনে হতবাক সেনাপতিজানতে চাইলেন, তাঁর এই শেষ ইচ্ছার কারণ কি। আবু আইয়ুব আনসারী রা. জানালেন, আমি জানি কন্সট্যানটিনোপলে একদিন কুরআনের শাসন কায়েম হবেই, উড়বে কালেমার পতাকা, কিন্তু আমি তো তখন থাকবোনা। আমি চাই বিজয়ের দিনে বিজয়ী মুসলিম সৈনিকেরা যেন আমার কবরের ওপর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে রোমান রাজধানীতে প্রবেশ করে।
এই সম্মানিত সাহাবীকে ইস্তাম্বুলে প্রবেশকারী সড়কের ওপর দাফন করা হয়। আল্লাহ তায়ালা তার এই আকাঙ্খা কবুল করে নেন। এই ঘটনার সাড়ে সাতশ বছর পর এই সড়কের উপর দিয়েই ওসমানী খলিফা দ্বিতীয় মুহাম্মদের বিজয়ী বাহিনী ইস্তাম্বুলে প্রবেশ করেছিল। সালটি ছিল ১৪৫৪ খৃষ্টাব্দ।
বর্তমান ইস্তাম্বুলের আইয়ুপ সুলতান মসজিদ টি হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. এর মাজারকে ঘিরেই। তুরস্কবাসী তাকে স্মরণ করে আইয়ুপ সুলতান নামে।

ভিডিওটি দেখুন প্লীজ:

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য