Monday, September 16, 2013

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য

এক অসাধারণ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি:
ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য 
সংকলনে: শাহাদাতুর রহমান সোহেল


দরূদ পাঠ মুসলিম সমাজের একটি নিদর্শন, রাছুলুল্লা­াহ (সাঃ)- এর প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন, গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী আমল। আর আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি অসাধারণ না’তসহ দরূদ হল- বালাগাল উলা বি-কামালিহি ......।

       বালাগাল উলা বি-কামালিহি,/কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,/হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি,/সাল্লু আলায়হে ওয়া আলিহি।।  - আমাদের দেশে দরূদ হিসেবে প্রচলিত এই ছন্দোবদ্ধ আরবী চতুস্পদীটি বলতে হবে, অসম্ভব জনপ্রিয় সর্বমহলে। জ্ঞানী-গুণী পীর-মাশায়েখদের কাছে যেমন, তেমনি নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সর্বসাধারণ মানুষের কাছেও সমানভাবে সমাদৃত। মীলাদ মাহফিলে ওয়ায়েজ যখন সুর দিয়ে দরূদটি পড়েন, তখন উপস্থিত ছোট-বড় সবাই তাঁর সঙ্গীত মাধুরিতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসায় বিমোহিত হন। তাঁরাও সমস্বরে পাঠ করেন রাসূল প্রেমের আরশি, অমৃত সুধার আধার এই চতুস্পদী। অর্থ না বুঝেই যে আবেগ তৈরী করে অর্থ-তাৎপর্য, ইতিহাস ইত্যাদি জানলে এই দরূদের দ্বারা অনেক বেশী আবেগ-চেতনা তৈরী হত এবং নিঃসন্দেহে বেশী সওয়াবেরও কারণ হত। আসুন নাত- সহকারে এই অসাধারণ দরূদটি আমরা শুনি:            

            অন্য দরূদের সাথে এর পার্থক্য হল এটি না’তসহকারে দরূদ এবং এই না’তটির মধ্যেও আছে বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর ব্যঞ্জনা।  না’ত মানে প্রশংসা। রাসূলে পাকের প্রশংসাকে বলা হয় না’ত। এটি আমাদের ধর্মীয় পরিভাষা। মানুষ যখন আল্লাহ পাকের প্রশংসা করে, তাকে বলা হয় ‘হামদ’। আর রাসূলে পাকের ক্ষেত্রে হলে না’ত। আমাদের দেশে ধর্মীয় মাহফিলের শুরুতে তেলাওয়াতে কুরআনের পরপর হামদ ও না’ত এর প্রচলন এখনও পুরোদমে বিদ্যমান। আমাদের আলোচ্য না’ত সহ দরূদটি আরবি ভাষায় লেখা। তবে এর রচয়িতা একজন ফারসি কবি। বিশ্ব বিখ্যাত সাধক কবি শেখ সা’দী (রা.)। আসল  নাম  মুশাররফ উদ্দীন মুসলেহ ইবনে আব্দুল্লাহ শিরাজী বর্তমান ইরানের ফার্স প্রদেশ বা প্রাচীন পারস্যের রাজধানী শিরাজ নগরীতে তাঁর জন্ম এবং সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত। তার জন্মসাল নির্দিষ্ট নয়, তবে মৃত্যু ৬৯১ ও ৬৯৫ হিজরির মধ্যবর্তী সময়ে। বর্তমানে ১৪৩৩ হিজরী চলছে । অর্থাৎ এখন থেকে অন্তত: সাড়ে আটশ বছর আগে। উচ্চ শিক্ষার জন্য শেখ সা’দী (রহঃ) সে সময়কার বিশ্ব সাহিত্যের পাদপীঠ হাজারো সাহাবীর পদধন্য বাগদাদে চলে আসেন এবং জমানার মুজাদ্দিদ গাউসুল আজম হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহির নিকট এলেমি শিক্ষা লাভ করেন | মহান হজ্বব্রত পালন শেষে তিনি বিশ্ব ভ্রমনে বেড়িয়ে পড়লেন | বলা হয় ইবনে বতুতার পর প্রাচ্যে তিনিই সবচেয়ে বড় পরিব্রাজক | ইতিহাস ঘেটে দেখে গেছে যে তিনি একজন বীর মুজাহিদ ও বটে | জেরুজালেমের পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দেস (আল আকসা) নিয়ে খৃষ্টানদের সাথে ঐতিহাসিক যুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহন ছিল | জেরুজালেমের পথে প্রান্তরে দিবানিশি শেখ সাদীর কবিতা হামদ রচনা মুসলীম মুজাহিদগন আবৃত্তি করে একে অপরকে উত্সাহ জোগাতেন | অতএব দেখা যাচ্ছে, সেই জিহাদে শেখ সাদী(রহঃ)-এর অংশগ্রহণ ছিল নেতৃস্থানীয় এবং প্রভাবশালী। সম্মিলিত ইউরোপের ক্রুসেডের বিরুদ্ধে সেই জিহাদে মুসলমানরা বিজয় অর্জন করে। ফলে শেখ সাদী(রহঃ) হন গাজী। বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সৃষ্টি তাঁর দুটি মহাগ্রন্থ গুলিস্তা এবং বোস্তা | জন্মের সাড়ে ৮০০ বছর পরও এ মহাকবি আজও অমর তাঁর কালজয়ী সাহিত্য কর্মের সুবাদে | তিনি ফারসি গদ্য ও পদ্য সাহিত্যে সবার শিরোমণি। আবার আরবিতে তাঁর পান্ডিত্য কত উঁচু মানের তা প্রমাণের জন্য এ চারটি চরণই যথেষ্ট। আল্লাহ পাকের হাম্দের পর রাসূলের পাকের (সা.) প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি অবতারণা করেছেন একটি চতুস্পদির। প্রায় সাড়ে আটশ বছর পরেও সেই চারটি লাইন হাজার হাজার মাইল দূরের এই দেশে আমরা ভক্তিভরে পাঠ করি, রাসূলের মহববতের সুধা পান করি। আমাদের মজলিস- মাহফিল তখন মদীনার প্রেমে গুলে গুলজার হয়। মদীনার বাগানের সমীরণ আমাদের মনপ্রাণ ছুঁয়ে যায়। আমরা জেগে উঠি, দুলতে থাকি ভক্তিতে, শ্রদ্ধায়, সালামে মদীনার সবুজ গম্বুজকে চেতনার মিনারায় দেখে দেখে- বালাগাল উলা  বেকামালিহী …      …                          …                      … অর্থ বুঝি না, অনেকেই বুঝে না। কিন্তু ছন্দ, দোল, ঝংকার, সুর ও ব্যঞ্জনা দোল দেয় মনে। রাসূল প্রেমের শিহরণ আনে প্রাণে। শেখ সাদীর লেখা এই না‘ত কিংবা দরূদ এ দেশের প্রতিটি মু’মিনের প্রাণপ্রিয় সংগীত, ভক্তকুলের গলার মালা। কিন্তু কী আছে এই চারটি লাইনে? এমন জনপ্রিয়তার রহস্য কোথায়?
          আলোচ্য দরূদ সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল- শেখ সাদী (রহঃ) এই চতুষ্পদীর প্রথম তিন লাইন লেখার পর চতুর্থ লাইন মেলাতে পারছিলেন না। অনেক দিন-মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায়। শেখ সাদী (রহঃ) এখানে একটি সন্তোষজনক লাইন পেতে ব্যর্থ হন। এসময় তিনি রাছুলুল্লা­হ (সাঃ)কে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে রাছুলুল্লা­হ (সাঃ) তাঁকে এই চতুর্থ লাইনে লিখে দিতে বলেন - সাল্লু আলায়হে ওয়া আলিহি। ‘সাল্লু ’ মানে তোমরা দরূদ পাঠাও। আর ‘দরূদ’ অর্থ কারও জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা। ‘আলাইহি’ তার প্রতি। ‘ওয়া’ মানে এবং, ও ‘আলিহী’ অর্থ তাঁর বংশধর। শেখ সা’দী স্বপ্নযোগে এ আদেশ পেলেন স্বয়ং হযরতের কাছ থেকে। একজন কবির জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া কী হতে পারে? এর চাইতে বড় গৌভাগ্য কী কল্পনা করা যায়! স্বয়ং নবীজির সাক্ষাৎ পাওয়া। যাঁর প্রশংসায় কবি তিনটি চরণ লিখছেন, স্বয়ং তিনি এসে চতুর্থ লাইন মিলিয়ে দেয়া। এভাবে রচিত হয় এই অসাধারণ না’তসহ দরূদটি। এভাবে এই চতুষ্পদীটি তৈরীতে সহায়তা করায় এটা বুঝা যায় যে, এটি রাছুলুল্লা­হ (সাঃ) -এর পছন্দনীয়।  এখানে একটা কথা উল্লেখ্য যে, যে কোন লোক স্বপ্নযোগে এভাবে কিছু পাওয়ার দাবী করলে তা সব সময় গ্রহণযোগ্য হয় না । কিন্তু শেখ সাদী (রহঃ) -এর মত একজন বিশ্ব বিখ্যাত আল্লা­হ্’র ওলী জানানোতে তা অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য। সম্ভবত: এখানেই ‘বালাগাল উলার…’ জনপ্রিয়তার রহস্য নিহিত। নচেত এটি চার লাইনের একটি চতুস্পদী। সরল সহজ ভাষায় বর্ণনা। কবিত্বের অলংকার নাই, তত্ত্ব-দর্শনের মারপ্যাঁচ নেই। এত সহজ প্রকাশের এত বড় পাওয়া নিশ্চয়ই অকল্পনীয়। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এর বিশ্বজনীন স্বীকৃতি, সমাদর। সারা দুনিয়ার মুসলিমরা গায় এই বালাগাল উলা। নবীপ্রেমের সুধা পান করে এর সুরের ব্যঞ্জনায়। এই চতুস্পদীর অন্তরালে মহা নেয়ামত নহর  কাওসার, আবে হায়াত যমযম লুকিয়ে না থাকলে শত শত বছর ধরে এই না’তসহ দরূদ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-কিশোর সবার গলার মালা হয়ে গীত হত না পরম ভক্তিতে- মসজিদে, মাহফিলে, দুনিয়ার সর্বত্র। সত্যিই নবী প্রেমের আরশি ‘বালাগাল উলা বি কামালিহী’।
          এই পর্যায়ে আমরা আলোচ্য দরূদটির অর্থ ও তাৎপর্য জেনে নেই। অনেকে অনুবাদ করেছেন, অনুবাদ করতে চেয়েছেন এই চতুস্পদী ফারসিতে, উর্দুতে বা বাংলায়। কিন্তু সার্থক অনুবাদ কোনটিই হয়নি। আমরা জানি, কবিতার অনুবাদ হয় না। আরও পরিষ্কারভাবে বলা যায়, কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, তা অন্য ভাষায় হুবহু অনুবাদ করা যায় না। অনুবাদ করলেও দাবি করা যাবে না যে, কবি যা বলতে চেয়েছেন- বুঝিয়েছেন, তার সবটুকুই ভাষান্তর করতে পেরেছি। এ তো গেল ভাষা, ভাব ও অর্থের কথা। ছন্দ, ঝংকার ও ব্যঞ্জনা- যা কবিতার প্রাণ, তার রূপান্তর মোটেও সম্ভব নয়। তথাপি আমরা এখানে কিছু অনুবাদ উল্লে­খ করছি।  বালাগাল উলা বি-কামালিহি,/কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,/হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি,/সাল্লু আলায়হে ওয়া আলিহি।। -এর মোটামুটি সরল অর্থ হলোঃ ১) পূর্ণতায় তিনি সুউচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন, ২) বিদুরিত হয়েছে সকল অন্ধকার তাঁর সৌন্দর্যের ছটায়, ৩) সম্মিলন ঘটেছে তাঁর মাঝে সকল উন্নত চরিত্রের, ৪) পেশ করুন তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি দরুদ ও সালাম |”  এর অনুবাদ . মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী করেন এভাবে: সুউচ্চ শিখরে সমাসীন  তিনি নিজ মহিমায় / তিমির-তমসা কাটিল  তার রূপের প্রভায়, / সুন্দর আর সুন্দর তার স্বভাব চরিত্র  তামাম / জানাও তাঁর ও তাঁর বংশের ‘পরে দরূদ-সালাম।”  প্রখ্যাত কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর “সকল প্রশংসা তাঁর” কাব্যগ্রন্থে এর রূপান্তর করেন এভাবে: তাবৎ পূর্ণতা নিয়ে শীর্ষে হয়েছেন উপনীত, / অপার সৌন্দর্যে তিনি আলো করেছেন তমসাকে, / আশ্চর্য চারিত্র তাঁর অতুলন সৌন্দর্যে মন্ডিত, / রাহমাতুল্লিল আ’লামীন-হাজার সালাম তাঁকে।।” অন্য একজন কবির রূপান্তর হলোঃ  অতি উচ্চতা মহিমা মহান পূর্ণগুণজ্ঞানে হে নবী / তব মাধুরীত অমর আঁধার বিদূরিত আজিরে সবি / অতীব সুন্দর অতীব সুন্দর তোমার সকল আচার ব্যবহারই /সহস্র সালাম উপরে তোমার হে নবী রাসূলে আরবি। (এই অনুবাদের কবির নাম জানা নাই। কেউ জানলে অনুগ্রহপূর্বক এই ই-মেইল এড্রেসে জানালে ভালো হয়: sohelict@gmail.com)

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী  উক্ত চতুষ্পদীর অর্থ ও তাৎপর্য তুলে ধরেন এভাবে: “আরবিতে ‘বালাগা’ অর্থ পৌঁছে গেছেন। ‘উলা’ মানে উচ্চতা। তাতে ‘বালাগাল উলা’ মানে তিনি পৌঁছে গেছেন উচ্চতার শীর্ষে, শিখরে। ‘বিকামালিহী’ এখানে বি অক্ষরটি হর্ফ বা অব্যয়। অর্থ হল সঙ্গ, সহ দ্বারা, দিয়া। ‘কামাল’ এর সঙ্গে ‘হী’ অক্ষরটি সর্বনাম। মানে ‘তার’। এখন দেখা যাক ‘কামাল’ অর্থ কী ? ‘কামাল’ আরবি শব্দ। আমরা ‘কামালিয়াত’ বলে একটি পরিভাষার সাথে পরিচিত। ‘কামাল’ ও কামালিয়াত এর অর্থ ‘পূর্ণতা’। এখান থেকেই কামেল- পূর্ণতাপ্রাপ্ত। যেমন বলা হয় লোকটি  কামেল। ‘কামাল’ এর আভিধানিক অর্থ পূর্ণতা। এই পূর্ণতা মানবীয় চরিত্রের, মানবিক গুণাবলির। মানুষ হিসেবে আমরা জীব। তবে অন্যান্য জীবজন্তু থেকে আমরা আলাদা। কারণ, আমাদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বা গুণ আছে, যেগুলো অন্যান্য জীবের নেই। সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, পরোপকার, ত্যাগ, ধৈর্য প্রভৃতি মানুষের অনেক গুণ আছে যেগুলো অন্য প্রাণীর নেই। আবার এসব গুণ যে মানুষের মধ্যে যে পরিমাণ বিদ্যমান, তিনি তত বড় মাপের মানুষ।

আমরা সাধারণত বলি ‘তিনি বড় লোক’। সাধারণভাবে তখন বুঝি, লোকটি বড় পয়সাওয়ালা অথবা অনেক ক্ষমতাধর। কিন্তু এই গুরুত্ব যতদিন ক্ষমতায় থাকে বা পয়সার মালিক থাকেন, ততদিন। ক্ষমতা হারালে, পয়সা ফুরালে ফুটো বেলুনের মত চুপসে যান। কিন্তু যারা মানবীয় গুণাবলিতে পূর্ণতার অধিকারী তাঁরা সর্বদা আমাদের কাছে স্মরণীয়-বরণীয়। আর সত্যিকার ‘বড় লোক’ হওয়ার মাপকাঠিও হচ্ছে এসব গুণে গুণবান হওয়া। এই গুণ যখন পূর্ণতায় পৌঁছে তখন তাকে কামাল বা কামালিয়াত বলা হয়। আর লোকটিকে বলা হয় কামেল। এমনও হতে পারে যে, কারও মধ্যে দু’একটি গুণ পূর্ণতায় পৌঁছে। যেমন দানশীল হিসেবে আমরা হাতেম তাঈ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিনের কথা বলতে পারি। বীরত্বের বিচারে হযরত আলী (রা.), খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) প্রমুখের উদাহরণ আনতে পারি। আধ্যাত্মিকতায় বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রা.) বা খাজা আজমিরী (রা.)-এর প্রসঙ্গ আসতে পারে। কিন্তু সকল মানবীয় গুণের চূড়ামত্ম পর্যায়ের গুণান্বিত একজন মাত্র মানুষকেই পাওয়া যাবে পৃথিবীর ইতিহাসে। তিনি হচ্ছেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। শেখ সা’দী সে কথাই বলছেন প্রথম চরণে- ‘বালাগাল উলা বি কামালিহী’- সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন তিনি নিজ কামালিয়াতে, মানবীয় গুণাবলির পূর্ণতায় তিনি উচ্চতার স্বর্ণ শিখরে উপনীত, সুউচ্চ শিখরে সমাসীন  তিনি আপন মহিমায়।
পরের চরণটিতে বলেছেন, ‘কাশাফাদ দুজা বি জামালিহী’। ‘কাশাফা’-এর মূল ধাতু ‘কাশ্ফ্’ অর্থ খোলা, প্রসারিত হওয়া। ‘দুজা’ অর্থ ঘন-অন্ধকার, দিনের শেষে রাত নামলে পৃথিবী অাঁধারে ছেয়ে যায়। তবুও আকাশে চাঁদ আর তারারা ভাসলে মিটিমিটি আবছা আলোর রেখা আঁচ করা যায়। কিন্তু যদি রাতটি হয় অাঁধিয়ারার, অমাবশ্যার রাত, মুষলধারে বৃষ্টি, চারদিকে ঘোর অমানিশা, তখন নিজের হাতটিও দেখা সম্ভব নয়।। ‘দুজা’ বলতে সেই অমানিশা ও ঘন-অন্ধকারকেই বুঝানো হয়। বি অব্যয় মানে দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক। ‘জামাল’ এর পরে ‘হী’ হল সর্বনাম। ‘জামাল’ শব্দটিও ‘কামাল’-এর সমার্থক। অর্থ: রূপ, সৌন্দর্য। তবে দৈহিক সৌন্দর্যের সাথে চরিত্রের সৌন্দর্য মিলিত হয়ে যে অপরূপ কামিত্ম ফুটে ওঠে তাকেই বলা হয় কামাল, মহিমা। তাহলে দাঁড়ায় ‘অাঁধার দূরিভূত হল তার সৌন্দর্য মহিমায়। অাঁধিয়ারা অমানিশা তিরোহিত হল তার রূপের আভায়, তিমির-তমসা কাটিল  তার সৌন্দর্যের প্রভায় ।
‘জামাল’ (সৌন্দর্য) বুঝতে হলেও বিষয়টি একটু খোলাসা করা দরকার। মানুষের সৌন্দর্য বুঝার একটি লক্ষণ তার গায়ের রং। তবে শুধু গায়ের রং ফর্সা, চেহারা হলুদাভ, চাঁদের বরণ টুকটুকে হলেই সুন্দর বলা যাবে না। দেহের গড়ন, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিমিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া অনিবার্য শর্ত। তার পরে চেহারায় মমতার আবরণ, ব্যক্তিত্বের আভা, গাম্ভীর্যের ছাপ, কথা-বার্তার ওজন সবকিছু মিলিয়ে ঠিক করা হবে কোন্ মানুষ কতখানি সুন্দর। কাজেই আসল সুন্দর মানুষের রঙ, রূপ, দৈহিক গঠনে, গড়নে নয়; বরং চরিত্রে। এই চরিত্রই চাঁদ সূরুজের মত আলোকোজ্জ্বল করে লোকটিকে। তখন তার চরিত্র মাধুর্য আলো বিকিরণ করে চারদিকে। সমাজ থেকে দূর করে সকল অসুন্দর-অমঙ্গল।
ধরুন, রাতের আকাশে চাঁদ নেই, দিনের বেলা সূর্যও নেই। তখন মানব সমাজ হবে ভুতুড়ে জনপদ। আমরা এখন যন্ত্র সভ্যতার যাঁতাকলে বিদ্যুৎ নির্ভর জীবনে অভ্যস্ত। মনে করুন, বিশাল ঢাকা মহানগরীতে কোন দুর্ঘটনায় একটানা কয়েক দিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। জেনারেটরগুলোও দিন দুয়েক ঝনঝন করে পরে থেমে গেছে। রাত নেমেছে। ঘোর অন্ধকার চারদিকে, চোর ডাকাতের তান্ডব। রাস্তায় বের হওয়া দায়। প্রাণ নিয়ে উৎকণ্ঠা। বর্তমানে তো আলো বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায়ও প্রাণের বা সম্পদের নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে। তার ওপর যদি বিদ্যুৎ  একেবারে না থাকে, তাহলে দুর্যোগের ভয়াবহতা কি অনুমান করা যায়? দেখা গেল ঘোর অমানিশা, অরাজক হাহাকারের মধ্যে একদিন নিশিরাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ এসে গেল, বাতি জ্বলল। এসি, ফিরুজ চালু হল, যানবাহন রাস্তায় নামল, তখন চারদিকে আনন্দের কোলাহল দেখা দেবে নিশ্চয়। হযরতের আগমনও এই বিদ্যুতের ঝলকানীর মত, মধ্য আকাশে চন্দ্র বা সূর্যের আলোর বন্যার ন্যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে
‘ক্বাদ জাআকুম মিনাল্লাহি নূরুন ওয়া কিতাবুন মুবীন’
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসে গেছে আল্লাহর পক্ষ হতে মহান নূর এবং একটি উজ্জ্বল কিতাব।’’
এই আলোর বন্যায় উদ্ভাসিত হয়েছে মুসলিম সমাজ, গোটা বিশ্ব মানবতা। ইতিহাসে হযরতের আগমন-পূর্ব যুগকে ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ বলা হয়। অজ্ঞতার যুগ, অন্ধকার যুগ। কেন অন্ধকার যুগ বলা হবে? তখন কি আকাশে দিনের বেলায় সূর্য, রাতে চাঁদ-তারারা ছিল না? অজ্ঞতার যুগ বলা হবে কোন্ যুক্তিতে? সাহিত্যে-কবিতায়, সঙ্গীতে আরবরাই তো দুনিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল, এখনও শ্রেষ্ঠ। এজন্যই তো তারা অনারবদের বলতে পারত আজমী- বোবা। তাহলে আসল কারণটি কেথায়? এই অন্ধকার ও অজ্ঞতা ছিল মানব চরিত্রের চরম অধঃপতনের। চুরি-ডাকাতি-রাহাজানীকে তখন মনে করা হত অর্থ উপার্জনের বৈধ পন্থা। এখন যেমন চোরাকারবার ও শেয়ার বাজার লুট করা ধনী হওয়ার বৈধ (?) ব্যবস্থা বলে স্বীকৃত। তখন মদ, জুয়া বেশ্যাবৃত্তির ছাড়াছড়ি ছিল সর্বত্র। অবশ্য মেয়েরা তখনও মাথায় কাপড় দিত। বর্তমানের ন্যায় উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ ছিল না। নারীর মর্যাদার অবনতি কতখানি হয়েছিল তার একটি প্রমাণ, কারও ঘরে মেয়ে শিশু জন্ম নিলে অপমানের ভয়ে পিতা নিজে গিয়ে জীবিত শিশুটিকে করব দিয়ে আসত। সেই অন্ধকার যুগে হযরত এসে সৌন্দর্য বিতরণ করলেন, আলো ছড়ালেন। হানাহানি, রক্তপাতের পরিবর্তে মুসলমানরা ভাই ভাই শিক্ষা দিলেন, মেয়ে সমত্মান বেহেশতের সারথি- এই বিশ্বাস বদ্ধমূল করলেন। মায়ের পায়ের তলায় বেহেশত- এই শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হল মুসলমান। প্রেম মমতা, ত্যাগ, পরোপকার, যাকাত প্রভৃতির মাধ্যমে মায়া-মমতার একটি বেহেশতী সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর এই শিক্ষা ও চরিত্রের সৌন্দর্যের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। আরব উপদ্বীপ ছাড়িয়ে ভারতবর্ষেও আমাদের পূর্ব-পুরুষরা ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল সেই সৌন্দর্য মহিমায় মুগ্ধ হয়ে।
একজন গবেষক বলেছেন : দুনিয়ার বুকে মানব সমাজে যেখানে যতটুকু নৈতিক শিক্ষা বা মানবীয় চরিত্রের সৌন্দর্য বিদ্যমান তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হযরতের শিক্ষার কাছে ঋণী। কারণ, অন্য কোন মহাপুরুষের নৈতিক শিক্ষা জগতে অত অবিকৃতভাবে বিদ্যমান নেই। তাই অন্য জাতির মাঝে ন্যায়বোধ, সততা, মানবপ্রেম, স্বার্থ ত্যাগের যেসব শিক্ষা বিদ্যমান তা তারা ইসলামের নবীর কাছ থেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রহণ করেছে। আল্লাহ পাক নিজে হযরতের এই অনুপম চরিত্রের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন:
‘‘আপনি মহান চরিত্র আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’’
মহানবী (সা.) নিজেই বলেছেন
‘‘আমি সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’’
বস্ত্তত শেখ সা’দী ‘জামাল’ বলতে হযরতের এই চরিত্র সুষমাকেই বুঝিয়েছেন। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে তিনি গেয়েছেন : ‘কাশাফাদ দুজা বে জামালিহী’- তার রূপে অপসারিত মানব সমাজের ঘন অমানিশা। ‘তিমির-তমসা কাটিল  তার সৌন্দর্যের প্রভায়’।
তৃতীয় পঙ্ক্তিতে তিনি উপসংহার টেনে বলছেন, আসলে হযরতের প্রশংসা-তারিফ কীভাবে করব? তাঁর চারিত্রের, শিক্ষার, ব্যক্তিত্বের কোন্ দিকটি নিয়ে বলব ? মাওলানা সুলাইমান নদভী সাহেবের একটি বক্তৃতা সংকলন পড়েছিলাম, ‘পয়গামে মুহম্মাদী’ নামে ।  সেখানে মাওলানা সুলাইমান নদভী হযরতের চরিত্র মাধুর্য বিশেষণ করতে গিয়ে বলেছেন : হযরত (সা.) ছিলেন সর্বযুগের সব মানুষের সুন্দরতম আদর্শ। কেউ যদি আদর্শ স্বামী হতে চায়, তাহলে হযরত খাদিজা ও আয়েশা (রা.)-এর আদর্শ স্বামী মুহাম্মাদুর রাসূলুলাহ তার জন্য আদর্শ। কেউ যদি রাষ্ট্রনায়ক হয় তার জন্য আদর্শ হচ্ছেন মদীনার রাষ্ট্রনায়ক মহানবী (সা.)। সেনাপতি ও যোদ্ধার জন্য মহান আদর্শ হলেন বদর-উহুদের মহান সেনাপতি। দুগ্ধপোষ্য শিশুর জন্য আদর্শ, মা হালিমার কোলের শিশু মুহাম্মদ। এভাবে মানব জাতির প্রতিটি অংশের জন্য সুন্দর চরিত্র ও উদাহরণ রয়েছে মহানবীর জীবনে। কুরআন মাজীদে তাই বলা হয়েছে :
তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে।
হযরতের জীবনের এসব দিক, গুণ-বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যে শেখ সা’দী আত্মহারা। তিনি সে কথাই ব্যক্ত করেছেন প্রেম-ভালবাসার ডালা সাজিয়ে- হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহী- ‘তার সকল স্বভাব আচরণই সুন্দর, সুন্দর আর সুন্দর তার স্বভাব চরিত্র  তামাম।’
‘হাসুনাত’ মানে সুন্দরে পরিপূর্ণ, সুন্দর আর সুন্দর। ‘জামীয়ু’ অর্থ সকল, যাবতীয়। ‘খিসাল’ হচ্ছে ‘খাসলত’ এর বহুবচন। খাসলত শব্দের মূল অর্থ স্বভাব, আচার-ব্যবহার বা চরিত্র। ‘হী’ অক্ষরটি সর্বনাম। অর্থাৎ হযরতের সকল চরিত্রই সুন্দর আর সুন্দর। এই তিনটি চরণে শেখ সা’দী হযরতের পুরো জীবনের একটি স্কেচ এঁকেছেন। একবার একজন বড় শিল্পী এক পত্রিকা অফিসে এসে কলমের অাঁচড় কেটে নজরুলের একটি স্কেচ অাঁকেন। সেটি পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়। দেখলাম, দু’তিনটি ছোট্ট রেখা। শিল্পীকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি এটি আঁকতে। অথচ রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্দর অবয়বের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তাতে। পূর্ণ ছবি না হলেও এই দু’তিনটি রেখাতেই পুরো রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যেন হাসছেন। দক্ষ হাতের কারিশমা এখানেই। শেখ সা’দীর রচনায়ও হযরতের পূর্ণাঙ্গ তারিফ হয়নি, কারও পক্ষে সম্ভবও নয়; কিন্তু স্কেচের মত তিনটি চরণে যেন আমাদের মনের পর্দায়, চোখের সামনে ভেসে ওঠে হয়রতের অপূর্ব অনুপম চরিত্র মাধুরী। তাই ভক্তিতে, আসক্তিতে আপ্লুত হৃদয়ে শেখ সা’দীর কণ্ঠে কণ্ঠ রেখে আমরা গেয়ে পরম তৃপ্তি পাই-‘বালাগাল উলা… ’
                   বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য চতুষ্পদীটি অবলম্বনে একটা না’ত রচনা করেছেন। না’তটি হলঃ
কুল মখলুক গাহে হযরত
বালাগাল উলা বেকামালিহী।
অাঁধার ধরায় এলে আফতাব
কাশাফাদ দুজা  বেজমালিহী \

রৌশনীতে আজো ধরা মশগুল
তাইতো ওফাতে করি না কবুল,
হাসনাতে আজো উজালা জাহান
হাসুনাত জমিউ খেসালিহী \

নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহাল
জাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামাল
খুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশত
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী \

কাজী নজরুল ইসলামের না’তটি সম্পর্কে ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেনঃ ‘‘নজরুল যা করেছেন তাকে অনুবাদ না বলে নতুন নির্মাণ, নব সৃষ্টি বললেই সুন্দর হবে। অর্থাৎ তিনি নিজেই বাংলায় বালাগাল উলা রচনা করেছেন। যার মধ্যে শেখ সা’দীর বর্ণনার আবহ আছে। বাংলা ভাষার গাথুনীতে ফারসি-আরবি শব্দের মুক্তমালা গ্রথিত হয়েছে। সব মিলে ভাব, ভাষা, ছন্দ, ঝংকারে অসামান্য অনুবাদ, কিংবা বলব নব নির্মিত বাংলা বালাগাল উলা। নজরুল গেয়েছেন-
কুল মখলুক গাহে হযরত
বালাগাল উলা বেকমালিহী
প্রথম লাইনের চারটি শব্দের তিনটিই আরবি ও ফারসি। অথচ একটি বাংলা শব্দ দিয়ে তিনটি শব্দই বাঙময় হয়েছে। সারা সৃষ্টি জগৎ হযরতের প্রশংসা গীতি গায়। শেখ সা’দীর কণ্ঠে যেন গোটা বিশ্ব বলে:
অাঁধার ধরায় এলে আফতাব
কাশাফাদ দুজা  বেজমালিহী
শেষের লাইনের আমরা অর্থ করেছি ঘন অমানিশা দূরিভূত হয়েছে তার সৌন্দর্য মহিমায়, ‘তিমির-তমসা কাটিল  তার সৌন্দর্যের প্রভায় ।’ নজরুলের নব নির্মাণে দেখুন ব্যঞ্জনাটি কী রকম! আপনি আফতাব- দেদীপ্যমান সূর্য। অাঁধার পৃথিবীতে আপনি এসেছেন। সূর্যের সাথে নবীজিকে তুলনা করে বুঝিয়েছেন, সূর্য উদিত হলে যেমন সব অন্ধকার দূরীভূত হয়ে জগৎ আলোর বন্যায় ভাসে তেমনি আপনার আগমনেও সকল তমসার অবসান হয়ে আজ জগৎ উজালা হয়েছে।
রৌশনীতে আজো ধরা মশগুল
তাই তো ওফাতে করি না কবুল।
আপনার রৌশনী, আলো, ঔজ্জল্য-দীপ্তি এখনও ফুরায়নি। গোটা পৃথিবী, এই ধরাধাম আপনার রৌশনীতে, আলোতে মশগুল, বিভোর, সমাহিত। জগতে যত মায়া-দয়া-মনুষত্ব আছে, সব আপনার অবদান। তাই আপনার ওফাত আমি কবুল করি না। অপনি আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন, অমত্মর্ধান হয়েছে, একথা আমি মানি না।
হাসনাতে আজো উজালা জাহান
হাসুনাত জমিউ  খেসালিহী
‘হাসনাতে’ সৌন্দর্য সুষমায় এখনও জগৎ উজালা। আপনার সকল স্বভাব-চরিত্র সুন্দর, অনুপম, উজ্জ্বল। আপনার আনীত শিক্ষা ও আদর্শের মূল পাঠ কোন্টি, সেখানে চলে গেছে এখন নজরুলের সন্ধানী মন। বলেছেন-
নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহাল
জাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামাল
কালেমার দু’টি অংশ তাওহীদ ও রেসালাত। তাওহীদের দু’টি অংশ। একটি শির্ককে অস্বীকার করা, তারপর আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা। নজরুল বলেন, হযরতের আনীত শিক্ষায় নাস্তি, নাস্তিকতা নিত্য নাজেহাল হয়ে চলেছে। নাস্তিকতার অস্তিত্ব বিশ্বে  বিপন্ন। এর পক্ষে শক্ত কোন যুক্তি পৃথিবীতে এখন আর নেই। সর্বত্র জেগে উঠছে তাওহীদ- একত্ববাদ, একেশ্বরবাদ; এটিই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন- দ্বীন-ই কামাল। কামালিয়াত লাভের ধর্ম এটিই। মানবীয় গুণাবলির বিকাশ চাইলে, মানব জীবনে পূর্ণতা পেতে হলে এই দ্বীনের কোন বিকল্প নাই। সেই দ্বীনের ডঙ্কা আজ দুনিয়ার দিকে দিকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত।
খুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশত
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী।
হযরতের আনীত আদর্শ, চরিত্রের সৌন্দর্য সুষমা, মানুষত্বের শিক্ষার খুশবুতে সারা দুনিয়া আজ মাতোয়ারা। সকল ভাবুক, মহাপুরুষ তাঁর উদ্দেশ্যে ভক্তি অর্ঘ নিবেদন করে। মুসলমানরা পাঁচ ওয়াক্ত আযানে, নামাযে তাঁরই মহিমা ঘোষণা করে। তাঁর প্রতি সালাম জানায়, দরূদ পাঠায়। দুনিয়া সেই খুশবুতে আনন্দে মাতোয়ারা, নজরুলের চেতনায় দুনিয়াটাই বেহেশতে পরিণত হয়েছে। কাজেই যাঁর আগমনে, যাঁর অবদানে মানব জাতি, গোটা সৃষ্টি এমন সৌভাগ্যবান তাঁর প্রতি ও তাঁর বংশের প্রতি হাজারো দরূদ ও সালাম।’’ কাজী নজরুল ইসলামের না’তটি সম্পর্কে মোস্তফা জামান আব্বাসী বলেনঃ ‘‘ধারণা করি, শেখ সাদি রচিত আকাশউচ্চ বচন ‘বালাগাল উলা’-এর পর নজরুল যে স্তবক তিনটি উপহার দিয়েছেন, সাদির রচনার সাহিত্য ও আধ্যাত্মিক মূল্যের চেয়েও তা কোনো অংশে কম নয়।’’ 
  
                  এ পর্যায়ে এর বিরোধিতার জবাব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কিছূ উগ্রপন্থী বলছে, এই না’তসহ দরূদটি পড়লে গুনাহ হবে। কোন কোন সৌদি আলেম বলেছেন- এখানে কামাল(পূর্ণতা)-এর কথা বলা হয়েছে। কামাল আল্লাহ্’র জন্য। এজন্য এতে শিরকের গন্ধ পাওয়া যায়। এর জবাব হল- শিরকের বিষয়ে সতর্কতা ভালো, তবে যা শিরক নয় তাকে শিরক বলাও অপরাধ। এটা বড় ধরণের মিথ্যা অপবাদ এবং দ্বীনের বিকৃতিসাধনও অবশ্যই।  এখানে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) ক্ষেত্রে পূর্ণতা হলো - মানবীয় চরিত্র ও আদর্শের পূর্ণতা, আধ্যাত্মিক উন্নতির পূর্ণতা, আল্লাহ্’র নৈকট্যের পূর্ণতা ইত্যাদি আল্লাহ্’র রাছুল হিসাবে পূর্ণতার যতদিক আছে তার সবকিছুতে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) সুউচ্চ পর্যায়ে আরোহন করেছেন। এখানে শিরকের গন্ধ পাওয়া আশ্চর্জজনক এবং দুঃখজনকও। এখানে উপরে উক্ত পূর্ণতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লামা সাইয়েদ সুলায়মান নদভী (রহঃ)-এর ‘পয়গামে মুহাম্মদী’ গ্রন্থে এই পূর্ণতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (বিশ্বখ্যাত ‘পয়গামে মুহম্মাদী’ গ্রন্থটি বর্তমানে আবদুল মান্নান তালিবের অনুবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশনা বিভাগের দ্বারা প্রকাশিতঃ ফোন নং-৮৩৫৮৯৮৭, ৯৩৩১২৩৯ -ঢাকা।) আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (রহ.) বলেন,“ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দুএকটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ হবে। কিন্তু মহানবী (সা.) এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না” (http://www.weeklysonarbangla.net, ১৮ মার্চ ২০১১) অন্যদিকে বিচার করলে উক্ত শিরকের গন্ধের অভিযোগ হাস্যস্পদও। হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধার জন্য একটা দৃষ্টান্ত দেয়া হচ্ছে- কোন একটা বিদ্যালয়ে একজন পরিদর্শক আসলো। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিদর্শককে একটি ছাত্রকে দেখিয়ে বললেন- এ ছেলেটি সর্বশ্রেষ্ঠ। তখন পরিদর্শক প্রধান শিক্ষককে বললেন - আপনি কেন এ ছেলেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বললেন? সর্বশ্রেষ্ঠ তো আল্লাহ। এখানে শিরকের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে পরিদর্শকের কথা যেমন হাস্যস্কর ঠিক তেমনি কামাল শব্দের মধ্যে শিরকের গন্ধ পাওয়াও হাস্যষ্পদ। এসব শব্দতো নিতান্তই আপেক্ষি। মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরীকে উক্ত শিরকের গন্ধ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি সৌদি আলেমদের সমমনা হলেও এ বিষয়ে বললেন- আমি এটা শিরক মনে করি না। এটা আপেক্ষি কেউ “বালাগাল উলা বি-কামালিহি” লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরীর সম্পূর্ণ বক্তব্য জানতে পারবেন। এখানে ভিডিওটি দেয়া হলঃ 
ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দু’একটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ্ট হবে। কিন্তু মহানবী (সা.)ই এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। - See more at: http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=879#sthash.9vHvaagf.dpufঅন্যদিকে এটি হাস্যস্পদও। হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধার জন্য একটা দৃষ্টান্ত দেয়া হচ্ছে-
 
ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দু’একটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ্ট হবে। কিন্তু মহানবী (সা.)ই এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। - See more at: http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=879#sthash.9vHvaagf.dpuf  
 
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

আগের বর্ণনায় জেনেছি এবং এখন এখানে ভিডিওতে জানলাম যে, রাছুলুল্লাহ (সাঃ) উক্ত চতুষ্পদীটি রচনায় শেখ সাদীকে স্বপ্নযোগে সাহায্য করেছেন। বুঝা যায়, উক্ত চতুষ্পদীর প্রথম তিন লাইন রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পছন্দ হওয়াতে তিনি স্বপ্নযোগে চতুর্থ লাইন রচনায় সাহায্য করেছেন -এতে সম্পূর্ণ চতুষ্পদীটি মহান গৌরব অর্জন করে। এটা বিস্ময়ের বিষয় হলো,  রাছুলুল্লাহ (সাঃ) পছন্দ ও সাহায্যধন্য সেই চতুষ্পদীতে কিছু ব্যক্তি শিরকের গন্ধ খুঁজে পেলেন! েক্ষাভের সাথেই বলতে হয়, তারা কি রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর চেয়েও বেশী তৌহিদ-শিরক বুঝেন? তারা নিঃসন্দেহে ভুল করেছেন এবং উপরে দেখিয়েছি, সেটা হাস্যস্পদ ভুল। বরং এর বিপরীতে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) -এর ‘কামালিয়াত’ (পূর্ণতা)-’র ধারণা দ্বীন ইসলামের একটি চুড়ান্ত সত্য এবং ঈমানের অনিবার্য দাবী। কলেমা তাইয়্যেবা অনুসারে একমাত্র আল্লাহ্’র গোলাম ও রাছুলুল্লাহ(সাঃ) -এর উম্মত (অনুসারী) হওয়ার অনিবার্য দাবী হলো রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত জীবনাদর্শ  পরিপূর্ণ হওয়া। এর অস্বীকৃতি বড় ধরণের শিরক এবং কুফর। আল্লাহ্ প্রদত্ত এবং  রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠাই মু’মিন জীবনের চরম লক্ষ্য।  বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রাথমিক এবং প্রধান সমস্যা হলো রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত জীবনাদর্শকে  পরিপূর্ণ হিসাবে না মানা।  আল্লাহ্ প্রদত্ত এবং  রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত জীবনাদর্শকে পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং তাদের দালাল রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, পাশ্চাত্য গণতন্ত্র ইত্যাদির চরম দুশমন।  সম্মিলিত ইউরোপের ক্রুসেডের বিরুদ্ধে জেহাদে বিজয়ী বীর মুজাহিদ শেখ সাদী (রহঃ) এই আলোচ্য চতুষ্পদীতে রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কামালিয়াতের (পূর্ণতার) কথা বলে বিশ্ব-মুসলিম এবং বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের পরমপ্রিয় সত্যকেই প্রকাশ করেছেন। বিরোধিতার কারণে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) পছন্দ ও সাহায্যধন্য আলোচ্য চতুষ্পদীর জনপ্রিয়তাই বৃদ্ধি পাবে, ইনশাল্লাহ॥ এ চতুষ্পদীর বিষয়ে অগভীর চিন্তা ও বিদ্বেষ প্রসূত  তাদের আরো অভিযোগ আছে। আলোচ্য চতুষ্পদী সম্পর্কে ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদীর উপরের আলোচনায় তার জবাব আছে।  তাই এখানে আলোচনা থেকে বিরত থাকলাম।  আল্লাহ্ সবাইকে হেদায়াত করুন। যাদের অধিক জবাব জানার প্রয়োজন তারা এই লিংকটি ব্রাউজ করুন:  'বালাগাল 'উলা বি কামালিহী' দো'আটি পাঠ করা যাবে কি? জবাব দানে: :  


                   প্রসঙ্গক্রমে দরূদের গুরুত্ব সম্পর্কে ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেনঃ ..........এ আদেশ তো নবী (সা.)-এর নয়; স্বয়ং আল্লাহর। এ কারণে দরূদ শরীফ আল্লাহর নিখাদ ইবাদাত রূপে গণ্য। আমরা দরূদ পড়ছি আল্লাহর নবীর প্রতি; অথচ গণ্য-গৃহীত হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাত হিসেবে। বিষয়টি খুবই চমৎকার। এ আদেশও কত তাৎপর্যপূর্ণ, একটু গভীর দৃষ্টি দিলেই বোধগম্য হবে। তাফসীরে কাশফুল আসরারের গ্রন্থকার বলেন, কুরআন মাজীদে দু’টি বিষয়কে আল্লাহ তা’আলা নিজে করেন, ফেরেশতারা করেন ও মুমিন মুসলমানরা করেন আর করণীয় বলে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত বা অন্য কোন আমলের ক্ষেত্রে এমন নিয়মের কথা উলেখ নাই। এর একটি হল আল্লাহর তাওহীদের সাক্ষ্য, অপরটি রাসূলে পাকের প্রতি দরূদ। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন :
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ (উপাস্য ও প্রভু) নেই। আর ফেরেশতারাও একই সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানী ব্যক্তিরাও এই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
আল্লাহর তাওহীদকে স্বীকার করেই আমরা মুসলমান। সেই তাওহীদের সাক্ষ্যের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ ও ফেরেশতাকুল শামিল থাকা নিশ্চয়ই এর অতুলনীয় গুরুত্বের পরিচায়ক। অনুরূপ নবীজির প্রতি সালাত ও সালামের বেলায় কুরআন মাজীদের ভাষ্য :
নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাকুল সালাত পাঠায় নবীর ওপর। কাজেই হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার ওপর যথাযোগ্য মর্যাদায় সালাত পাঠাও, আর সালাম জানাও।
এই নির্দেশের প্রতিটি অক্ষর ও বর্ণনাশৈলী নিয়ে চিন্তা করলে অবাক হতে হয়। আল্লাহর নবী এসেছেন, তাঁকে দেখে দেখে যেন মানুষ অনুসরণ করে। জীবন সুন্দর হয় ও পরকালীন জীবনে সাফল্য আসে। এখানে দরূদ.তারিফ বা মহববতের এত তাগাদা কেন-প্রশ্ন আসতে পারে। আসলে সেই আনুগত্য ও অনুসরণের অনুভূতি তাৎপর্যময় হওয়ার জন্যই প্রয়োজন তাঁর প্রতি গভীর ভালবাসা পোষণ করা, তাঁর তারিফ করা ও সকাল-সন্ধ্যা বেশি বেশি দরূদ শরীফ পড়া। আয়াতের শেষে ‘তাসলীমা’ শব্দটি তাগিদ বুঝানোর জন্য মাফউলে মুতলাক। তার মানে যথাযোগ্য সম্মান সহকারে। কেন এই নির্দেশ? ইবনে আববাস (র) এর মতে, আল্লাহর পক্ষ হতে সালাত মানে, আল্লাহ পাক নবীজির প্রতি অহরহ রহমত নাযিল করেন ও নবীজির প্রশংসা করেন। আর ফেরেশতাদের দরূদ মানে, আল্লাহর দরবারে তারা দোয়া করেন ও মাগফিরাত কামনা করেন। মনীষী আবুল আলিয়া আরো পরিষ্কার করে বলেন, আল্লাহর দরূদ মানে ফেরেশতাদের মাঝে নবীজির প্রশংসা করা আর ফেরেশতাদের দরূদ মানে হযরতের জন্য আল্লাহর  দরবারে তাদের দোয়া। মু’মিনদের প্রতি সালাত পাঠানোর নির্দেশের তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর  রসূলের প্রতি অফুরান রহমত নাযিলের জন্য দোয়া কর আর সালাম জানাও মানে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী নবীজির প্রতি শ্রদ্ধাভরে সালাম পাঠাও।
কাসীদায়ে বোর্দা রাসূলে পাক (সা.)-এর শানে আরবিতে আরেকটি না‘তের অনবদ্য সৃষ্টি। এ সম্পর্কিত আলোচনার জন্য অনেক দীর্ঘ সময় চাই। এই কবিতার শত শত ব্যাখ্যা ও তরজমা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আমার কাছে ফারসি কবিতা ও পদ্যে অনুবাদের একটি কপি আছে কুর্দিস্থান নিবাসী তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একজন প্রফেসরের লেখা। এর ভূমিকায় তিনি কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন। তন্মধ্যে একটি কথা হচ্ছে, মুসলমানদের প্রতি তথা গোটা বিশ্ববাসীর প্রতি হযরতের অনুগ্রহ, দয়া ও অবদান অপরিসীম। তাঁর উসিলাতে আমরা আল্লাহকে চিনেছি। সত্যের পথ পেয়েছি। পশুত্বের জীবন থেকে মনুষ্যত্বের জীবনের সন্ধান পেয়েছি। বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছি। দোযখ থেকে বাঁচার পথ ও তাগিদ পেয়েছি। তার বিনিময়ে আমরা হযরতকে কী দিতে পারি, কী দেয়া উচিত? তিনি বলেন : উম্মতের পক্ষে যেটুকু দেয়া সম্ভব ও উচিত তা হল, অহরহ সালাত ও সালাম। শেখ সা’দীর লেখা ঐ বয়েতটিতেও সেই তাগাদার অনুরনণ হয়েছে। তাঁর বংশধরের প্রতি দরূদ পাঠের যুক্তি বুঝতে হলে আমরা যে নামাযের শেষ  বৈঠকে  ‘ওয়াআলা আলে মুহাম্মদ’ (মুহাম্মদের বংশধরের উপর দরূদ) পড়ি তার তাৎপর্য বুঝতে হবে।” (www.mashikdeendunia.com)
                আলোচ্য চতুষ্পদীটির প্রথম চার লাইনের পরে আরো কিছু লাইন একসূত্রে পাওয়া যায়, সেগুলো হল: “বালাগাল উলা বে-কামালিহী / কাশাফাদ- দোজা বে-জামালিহি / হাসুনাত জামিউ খেসালিহী / সাল্লু আলাইহে ওয়ালিহি। / খাসাফাল কামারু লে-জামালিহি /  মুলিয়াল খালাউ বে-খবরিহি। / নাত্বাকাল হাজারু বে-জালালিহি / মাসাগা জা'কাল লে-গাইরিহি / নুসিখাল মিলালু বে-জুহুরিহী / মাসাবাশ-শিবাহু বে-কায়ানিহি” (http://www.chandpur-kantho.com) এর আরো লাইন আছে কিনা জানিনা, কেউ জানলে এই ই-মেইল এড্রেসে ই-মেইল করে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো: sohelict@gmail.com
                      শেখ সাদী (রহঃ)-এর আলোচ্য চতুষ্পদী অবলম্বনে সারা পৃথিবীতে নানা ভাষায় অনেক না'তে রাছুল রচিত হয়েছে। বাংলাদেশেও হয়েছে। এর একটি হল:  বালাগাল উলা বি কামালিহি / কাশাফুদ্দুজা বি জামালিহি / হাসুনাত জামিউ খিসলিহি / সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।। //// তুমি এলে তাই মরুর বুকে ফুটলো যে ফুল, / উঠলো গেয়ে বাগে বুলবুল। / খেজুর বিথিকায় পিউপাপিয়া / থেমে থেমে উঠলো ডাকি।। //// পুরানো রবি আর উঠলোনা সেদিন লজ্জা পেয়ে, / তোমার আলোয় ধরা গেল গো ছেয়ে। / গ্রহ চাঁদ সিতারা উথলে উঠে / তব পায়ে পড়ল লুটি।কথা ও সুরঃ আব্দুস শাকুর তুহিন এরূপ একটি সুন্দর না'তে রাছুলের ভিডিও দেখি এখানেঃ
                    আল্লাহ আমাদের আলোচ্য দরূদসহ অন্যান্য দরূদের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণলাভের এবং রাছুলুল্লাহ (সাঃ) প্রদর্শিত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানের অনুসরণ, প্রচার ও প্রতিষ্ঠার তৌফিক দান করুন, আমীন।

..................................................................................................................

এথানে এসম্পর্কে আরো ভিডিও দেখুন প্লীজ:

বালাগাল উলা বিকামালিহী - আপত্তির জবাব

46 comments:

  1. This Ramadan has come to us Ramadan Speacial. Here you will find everything necessary for Ramadan.
    Ramadan Speacial
    Islamic Life
    Home page

    ReplyDelete
  2. Thanks you so much dear writer and admin of this blog post. I got an meaningful explanation from here. - www.twcmsi.org | www.jobsinglobe.com

    ReplyDelete
  3. খুব সুন্দর ও তথ্যবহুল একটি পোষ্ট করেছেন। লেখককে অনেক ধন্যবাদ। আহলে হাদীস নামধারী কিছু লোক আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করার জন্য বিভিন্নভাবে অপচেষ্টা করে আসতেছে। কিন্তু এরকম তথ্য বহূল আলোচনা পেলে আমরা আরো কিছু গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারবো এবং তাদের বিরুদ্ধে দলীল সহ কথা বলতে পারব। সবশেষে বলব আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক। আমিন

    ReplyDelete
    Replies
    1. Jodi Quran Hadis Nije na poren tahole kono dol e aponake ghomrahi theke bachate parbena.. .. oni ja ja bolechen ta porei aponi koto khushi.. sotti bolte uni ghola panike zom zom er pani bole chaliye dilo onek kothar chole... aponi bujtei parlen na.. allah amader quran porar bujhar se onojai amol korar taofiq dan korun

      Delete
    2. কোরআন ও হাদীস অবশ্যই পড়তে হবে। সঠিকভাবে পড়তে হবে আর সঠিকভাবে বুঝতে হবে। ভুল বুঝলে হবে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুন, আমীন।

      Delete
  4. দরুদ কি নবী রাসুল স: গন ছাড়া অন্য কেউ বানাতে পারে?
    যদি না বলেন, তাহলে বালাগুল... কে দরুদ বলা যাবে কি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. This comment has been removed by the author.

      Delete
    2. আপনি উপরের প্রবন্ধ ভালো করে পড়ুন প্লীজ। নাতে রাছুল এবং দুরুদ সাহাবীদের সময় থেকে মানুষের দ্বারা রচিত হয়ে আসছে। এর সপক্ষে সহীহ হাদীস আছে।

      Delete
  5. আপনি উপরের প্রবন্ধ ভালো করে পড়ুন প্লীজ। নাতে রাছুল এবং দুরুদ সাহাবীদের সময় থেকে মানুষের দ্বারা রচিত হয়ে আসছে। এর সপক্ষে সহীহ হাদীস আছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. হাদিস টি দেবেন?

      Delete
    2. কবি সাহাবীদের সম্পর্কিত হাদীসগুলো আছে সেসব পড়ুন। নিজেই খোঁজ করে পড়ুন। না পারলে আলেম-ওলামাদের সাহায্য নিন। কবি সাহাবীদের রচিত নাতগুলো পড়ুন। এসম্পর্কে অনেক হাদীস আছে

      Delete
    3. ইবন আব্বাস(রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি বা এক বেদুইন নবী(ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় কথাবার্তা বললো। নবী(ﷺ) বলেনঃ কথায়ও যাদুকরী প্রভাব থাকে এবং কবিতাও প্রজ্ঞাপূর্ণ হতে পারে (আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ, মুসনাদ আহমাদ, ইবন হিব্বান, তহাবী, আদাবুল মুফরাদ হাদিস নং : ৮৮০ (সহীহ))

      আমর ইবনু শারীদ(র.) এর সনদে তাঁর পিতা [শারীদ (রা.)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমি রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর (বাহনে) সফরসঙ্গী হলাম। তিনি বললেন, তোমার স্মৃতিতে (কবি) উমাইয়াহ ইবনু আবুস সালত এর কবিতার কোন কিছু আছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, পড়ো। আমি তখন তাঁকে একটি লাইন আবৃত্তি করে শুনলাম। তিনি বললেন, বলতে থাকো, তখন আমি তাঁকে আরও একটি শ্লোক পাঠ করে শুনালাম। তিনি আবার বললেন, বলতে থাকো। শেষ অবধি আমি তাঁকে ১০০ টি ছন্দ আবৃত্তি করে শুনালাম। [সহীহ মুসলিম]

      উল্লেখ্য যে, উমাইয়াহ ইবনু আবুস সালত ছিলেন জাহেলী যুগের একজন কবি। কিন্তু কবিতায় উত্তম উপাদান থাকায় এবং অনিষ্টকর উপাদান না থাকায় স্বয়ং রাসুলুল্লাহ(ﷺ) তাঁর কবিতা বেশ সময় নিয়ে শুনেছেন। যেখানে স্বয়ং নবী(ﷺ) থেকে এভাবে কবিতা শোনার বিবরণ পাওয়া যায়, মানুষ এরপর কিভাবে বলতে পারে যে ইসলামে কবিতা হারাম?

      Delete
    4. আরবের সাব'আ মুয়াল্লাকার কবি যুহায়র ইবনে আবি সুলমা'র পুত্র কা'ব বিন যুহায়রও পিতার মতোই কাব্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন । তিনি তাঁর এই প্রতিভা ওজস্বিতা ও উত্তাধিকারকে ইসলাম ও ইসলামের নবী মুহাম্মদ (দ.) এর বিপক্ষে সর্বাত্নকভাবে নিয়োজিত করেন ।ফলে মক্কা বিজয়ের পর যে দশজন কুখ্যাত কাফেরের মৃত্যুদন্ড ঘোষিত হয় তার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম ।

      এক সময় হাবিবে রাব্বুল আলামীন এর প্রতি তাঁর অনুরাগ সৃষ্টি হলে তিনি নিজেকে রাসুল (দ.) এর পদপ্রান্তে নিবেদন করার সিদ্বান্ত গ্রহন করেন এবং এজন্য সাওগাত স্বরূপ রচনা করেন এক সুদীর্ঘ কবিতা ---বানাত সু'আদ ।

      '' উন্‌ বি'তু আন্না রাসুল্লালাহি আও'আদানি

      ওল আগঊ ইন্‌দা রাসুল্লুলাহি মা'মুলু......।

      অর্থাৎ --বার্তা পেলাম আমার পরে রূষ্ট নাকি শ্রেষ্ট রসুল (দ.)

      ভয় কি তাতে এই জগতে সত্যি তিনি ক্ষমায় অতুল

      চিত্তে আশা ভিক্ষে পাব সেই সাগরের বিন্দু বারি

      হাজার পাপী আশেষ ভুলে পায় যে ক্ষমা নিত্য তারি....।



      মদিনা মনোয়ারায় উপস্থিত হয়ে কা'ব বিন যুহায়র রাসুল (দ.) এর সমীপে নিজ কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থি হয়ে এ কবিতা নিবেদন করলে বিশ্বনবী (দ.) তাঁকে ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং আপন ডোরাকাটা চাদর খুলে তাঁকে পরিয়ে দেন । আর এভাবে সুচনাঘটে হুজুর রাহ্‌মাতুল্লিল আলামীন নবীর প্রেমিক দের ক্ষমা ও ভালোবাসার এক সুবর্ন ধারা।

      Delete
    5. ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির -মুশরিকরা ইসলামের বিরোধিতায় কবি ও কবিতাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু করে । এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা) ইসলাম ও ইসলামের নবী ( সা ) এর সপক্ষে কবিতা রচনায় এগিয়ে আসার জন্য সাহাবী কবিবৃন্দদের আহবান জানান এবং বলেন " এ তো অনস্কীকার্য " আল্লাহ র রাসুলের হেফাযত করার জন্যে অস্র হাতে নিয়ে তোমরা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছো , কলমের ভাষা দিয়ে তাঁকে আজ হিফাযত করার সময় এসে গেছে । কে আছ তীক্ষè মসীর আঁচড় নিয়ে এগিয়ে আসবে ? রাসুলুল্লাহ ( সা ) -এর এ আহবানে সাহাবী কবি হযরত হাসৃসান বিন সাবিত (রা.) কাব বিন মালিক ( রা.) আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) প্রমুখ কবিতার জিহাদে শবীক হন এবং রাসুলুল্লাহ (সা) -এর সর্বক্ষণের সংগী হিসেবে আমৃত্যু ইসলামের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।

      রাসুল্ল্লুাহ (সা) এর জীবদ্দশায় সাহাবী-কবিবৃন্দ কাফির -মুশরিকদের জবাব প্রদানের কাজে কবিতা ব্যবহ্রত হতো। মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম যখন বিজয়ীর বেশে দিক -দিগন্তব্যাপী বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে ,তখন রাসুল ( সা ) শাঁনে কবিতা লেখা একটি স্বতন্র ধারা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

      Delete
    6. ইসলাম, রাছুল (সাঃ) ইত্যাদির পক্ষে কবিতা লেখার অনেক প্রমাণ বিদ্যমান আছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) রাছুল (সাঃ) নিয়ে কবিতা লিখেন। এখানে যে বর্ণনা আগে দেয়া হয়েছে তাতে প্রমাণ হয় - রাছুলের শানে বা ইসলামের পক্ষে কবিতা লেখা শুধু সওয়াবের কাজই নয়, সবোচ্চ জিহাদের সওয়াব।

      Delete
  6. সুন্দর লেখার জন্য ধন্যবাদ ৷
    আমরা আর কি কি দরূদ পড়তে পারি৷

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার ছবি ও আপনার গুগল + একাউন্ট দেখে মনে হয় আপনি দরূদ সম্পর্কে জানেন। তবু আমার মতামত জানতে চাইলে বলবো্, এটা স্বতন্ত্র বই লেখার মত ব্যাপক বিষয়। আপনি দরুদে ইব্রাহীমি পড়তে পারেন। হাদীসে আরো দরুদ আছে সেসব পড়তে পারেন। সেসব পড়াই উত্তম। এর বাইরে যেসব দরূদ আছে তার মধ্যে অর্থ-তাৎপর্য যাচাই করে যেসব দরূদে ইসলাম পরিপন্থি কোন কথা নাই সেসব পড়তে পারেন। আমি দরূদে তুনাজ্ঝিনা পড়ে থাকি। এর অর্থ জেনে পড়তে পারেন। দরূদ আপনি একাকী পড়তে পারেন - সম্মিলিতভাবে পড়তে পারেন। বিভিন্ন পরিস্থিতিতেই পড়তে পারেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পড়ে পড়েন। হাঁটতে হাঁটতে পড়তে পারেন। গাড়ীতে বসে আছেন পড়তে পারেন। রাছল(সাঃ)-এর প্রতি দরদ ও ভালোবাসা নিয়ে পড়বেন। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন, আমীন।

      Delete
  7. الحمدلله شكرا يا اخي الكريم احسن برك الله في حياتك

    ReplyDelete
  8. বালাগাল উলা এটি একটি কবিতা এটি কোনদিন দুরূদ হতে পারেনা। সরবচ্চো দুরূদ হল দুরূদে ইব্রাহীম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. বালাগাল উলার শেষে “সাল্লু আলাইহে ওয়াালিহি” অবশ্যই দরূদ। সর্বোচ্চ দরূদ দরুদে ইব্রাহিমী এটা ঠিক । কিন্তু হাদীসের গ্রন্থে আরো অনেক দরূদ আছে।
      না পড়েই মন্তব্য করেন কেন? এ প্রবšেধর শুরুতেই বলা হয়েছে: অন্য দরূদের সাথে এর পার্থক্য হল এটি না’তসহকারে দরূদ এবং এই না’তটির মধ্যেও আছে বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর ব্যঞ্জনা। না’ত মানে প্রশংসা। রাসূলে পাকের প্রশংসাকে বলা হয় না’ত। এটি আমাদের ধর্মীয় পরিভাষা। মানুষ যখন আল্লাহ পাকের প্রশংসা করে, তাকে বলা হয় ‘হামদ’। আর রাসূলে পাকের ক্ষেত্রে হলে না’ত। আমাদের দেশে ধর্মীয় মাহফিলের শুরুতে তেলাওয়াতে কুরআনের পরপর হামদ ও না’ত এর প্রচলন এখনও পুরোদমে বিদ্যমান। আমাদের আলোচ্য না’ত সহ দরূদটি আরবি ভাষায় লেখা। তবে এর রচয়িতা একজন ফারসি কবি। বিশ্ব বিখ্যাত সাধক কবি শেখ সা’দী (রা.)।

      Delete
    2. ''দুরুদে ইবরাহীম'' একথাটা কোন হাদিসে আছে জানলে আমাকে বলবেন। অইটা দুরুদ কিন্তু আল্লাহ সূরা আহজাবঃ৫৬ তে বলেন আল্লাহ ও তার ফেরেস্তাগণ নবিজির উপর দুরুদ। এখানে উল্লেখ্য নেই যে কোন দুরুদ পরতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রচলিত দুরুদই দুরুদ আর কোনো দুরুদ দুরুদ না এধারণা ভূল

      Delete
    3. মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। দরুদে ইব্রাহীম নিয়ে একটি হাদীস এখানে: ‍ ইবরাহীম ইবনু হামযা (রহঃ) ... আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। একবার আমরা বললামঃ ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই যে 'আসসালামু আলাইকা' তা তো আমরা জেনে নিয়েছি। তবে আপনার উপর দরুদ কিভাবে পড়বো? তিনি বললেনঃ তোমরা পড়বে ইয়া আল্লাহ! আপনি আপনার বান্দা ও আপনার রাসূল মুহাম্মাদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর খাছ রহমত বর্ষণ করুন। যেমন করে আপনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর উপর রহমত নাযিল করেছেন। আর আপনি মুহাম্মদ ও তার পরিবারবর্গের উপর বরকত বর্ষণ করুন, যে রকম আপনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর উপর এবং ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করেছেন।

      Delete
  9. শেখ সাদ্দীর কবিতা পড়লে কি কোন নেকী হবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. যেকোন ভালো কাজ করলে নেকী হবে। যেকোন ইসলামী কবিতা পড়লে নেকী হবে। কবি সাহাবীদের সম্পর্কিত হাদীসগুলো আছে সেসব পড়ুন। রাছুলের প্রশংসা সহকারে কবিতা বা নাত পড়লে বা লিখলে অবশ্যই নেকী হবে

      Delete
    2. হাদীসে ইসলাম, রাছুল (সাঃ) ইত্যাদির পক্ষে কবিতা লেখার অনেক প্রমাণ বিদ্যমান আছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) রাছুল (সাঃ) নিয়ে কবিতা লিখেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে কাফির -মুশরিকরা ইসলামের বিরোধিতায় কবি ও কবিতাকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার শুরু করে । এ অবস্থায় রাসুলুল্লাহ (সা) ইসলাম ও ইসলামের নবী ( সা ) এর সপক্ষে কবিতা রচনায় এগিয়ে আসার জন্য সাহাবী কবিবৃন্দদের আহবান জানান এবং বলেন " এ তো অনস্কীকার্য, আল্লাহ র রাসুলের হেফাযত করার জন্যে অস্র হাতে নিয়ে তোমরা অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছো , কলমের ভাষা দিয়ে তাঁকে আজ হিফাযত করার সময় এসে গেছে । কে আছ তীক্ষè মসীর আঁচড় নিয়ে এগিয়ে আসবে ? রাসুলুল্লাহ ( সা ) -এর এ আহবানে সাহাবী কবি হযরত হাসৃসান বিন সাবিত (রা.) কাব বিন মালিক ( রা.) আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.) প্রমুখ কবিতার জিহাদে শবীক হন এবং রাসুলুল্লাহ (সা) -এর সর্বক্ষণের সংগী হিসেবে আমৃত্যু ইসলামের খেদমতে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন। ইসলামের পক্ষে কবিতা লেখা শুধু সওয়াবের কাজই নয়, সর্বোচ্চ জিহাদের সওয়াব।

      Delete
  10. এই কবিতাটি সাদী সাহেব কোন গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেছেন

    ReplyDelete
    Replies
    1. পারশিক কবি শেখ সা‘দী (রহঃ)-এর গুলিস্তাঁ গ্রন্থে আরবীতে লিখিত রাসূল (সাঃ)-এর প্রশংসায় লিখিত কবিতার একটি অংশ হলো: বালাগাল উলা বি-কামালিহী ......................। এটি না’তসহকারে দরূদ।

      Delete
  11. শয়তান সব সময় কিন্তুু খোজে। দরুদ/মানেই রাসুল সাঃ প্রশংসা করা। এটার কোন সীমা নাই। কানারা কানাই থাকা। আলে ইয়াজিদ বিন জাহেলীরা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহ খায়ের।

      Delete
  12. তর্ক করাটা আগেও যেমন ছিল, এখনও আছে। এমন কি শিক্ষিত মানুষ গুলোর মধ্যেও? একই প্রশ্নের উত্তর একেক গাইডে একেক রকম কিন্তু উদ্দেশ্য এক। কেউ হয় তো পানি ব্যবহার করেছেন আবার কেউ জল। কামাল শব্দের অর্থ কি সেটা আমি জনি, আর আমি ওই শব্দটা কার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছি সেটা খুব ভাল করে জানি কেননা শব্দটির উচ্চারণ ভঙি আর আমার উপস্থিতি বলে দিবে কার উদ্দেশ্যে বলা। সব থেকে লজ্জার বিষয় হল আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকেরা বিজ্ঞান সমন্ধে মোটামুটি জ্ঞান রাখেনা যার জন্য আপেক্ষিক শব্দ টা বুঝেনা। এর ওর কাছ থেকে কথা শুনে তর্ক করাটা আমাদের দেশের মানুষের একটা স্বভাব হয়েছে। লেখক ভাইকে ধন্যবাদ

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহ খায়ের।

      Delete
    2. কামাল (পূর্ণতা) তো আপেক্ষিক। একটা গ্লাস দুধে বা পানিতে পূর্ণ। এই পূর্ণতার সাথে আল্লাহ’র পূর্ণতা মেলানো চরম বেকুবী ছাড়া আর কিছু নয়। রাছুল (সাঃ) বলেন: আমাকে নৈতিক চরিত্র মাহাত্ম পরিপূর্ণ করে দেয়ার উদ্দেশ্য প্রেরণ করা হয়েছে (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক)। দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা, আধ্যাত্বিক পূর্ণতা ইত্যাদি অনেক কিছুর পূর্ণতা রাছুল (সাঃ) দ্বারা হয়েছে।

      Delete
  13. ভাই এক কথায় অসাধারণ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে ধন্যবাদ। জাযাকাল্লাহ খায়ের।

      Delete
  14. দরুদ একটা ইবাদাত। তাই আল্লাহ ও নবী ছাড়া কেউ ইবাদাত তৈরি করলে তা হবে বিদআত।

    আর আল্লাহ ছাড়া কেউ পুর্নতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁচ্ছাতে পারে না ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. না পড়েই মন্তব্য করেন কেন? উপরের আর্টিকেলটা সম্পূর্ণ পড়ুন । জবাব পাবেন

      Delete
    2. একটা দৃষ্টান্ত - রাছুলুল্লাহ (সা:) বলেন: দোয়া হলো এবাদত (আবু দাউদ, তিরমিযী, সহীহ ইবনে মাজাহ -২/৩২৪) । অনেক দোয়া শিখানো আছে কোরান-হাদীসে। আবার মানুষ নিজের ভাষায় নিজের প্রয়োজনকে সামনে রেখে আল্লাহ প্রশংসা সহকারে যে কেউ দোয়া করতে পারে। এটা কি বিদআত হবে? দোয়া তো এবাদত। যা বিদআত নয় তা বিদআত বলাও অপরাধ -দ্বীনের বিকৃতি সাধন। ২ লাইন শিখে তা বিচার-বিবেচনা ছাড়া বলতে থাকা মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। আইনের বইতে একটা ধারা থাকে না। মহান আল্লাহ আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলি দূর করে দিন এবং হেদায়াত দান করুন, আমিন।

      Delete
    3. পূর্ণতা তো আপেক্ষিক। একটা গ্লাস দুধে বা পানিতে পূর্ণ। এই পূর্ণতার সাথে আল্লাহ’র পূর্ণতা মেলানো চরম বেকুবী ছাড়া আর কিছু নয়। রাছুল (সাঃ) বলেন: আমাকে নৈতিক চরিত্র মাহাত্ম পরিপূর্ণ করে দেয়ার উদ্দেশ্য প্রেরণ করা হয়েছে (মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক)। দ্বীন ইসলামের পূর্ণতা, আধ্যাত্বিক পূর্ণতা ইত্যাদি অনেক কিছুর পূর্ণতা রাছুল (সাঃ) দ্বারা হয়েছে।

      Delete
  15. আমার এই গবেষণামূলক আর্টিকেলটি আমার নাম ছাড়াই একটি সরকারী ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে এই শিরোনামে: এক অসাধারণ নবী স্তুতি বালাগাল উলাবি কামালিহি....... Link: http://old.imam.gov.bd/node/6803

    ReplyDelete
  16. অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আলোচ। জাযাকাল্লাহ

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks - Jajhakallah khair. Please share as mach as possible for Allah's rewards

      Delete
  17. অসাধারণ

    ReplyDelete

https://isignbd.blogspot.com/2013/10/blog-post.html

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য