Friday, December 21, 2012

আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির কিছু নিদর্শন

আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির কিছু নিদর্শন

 

পাঠ সংক্ষেপ
আল্লাহ তাআলার মহাবৈশ্বয়িক কিছু নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করা আল্লার অসীম শক্তি সম্পর্কে বান্দার ঈমান বাড়িয়ে দেয়।আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে তার আসমান জমিনের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার নর্দেশ দিয়েছেন, যাতে বান্দা বুঝতে পারে এ মহাবিশ্বের একজন পরিচালক রয়েছেন, যিনি ইবাদতের একমাত্র উপযুক্ত। খুতবায় বিষয়টি সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রথম খুৎবা


 الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ ثُمَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ يَعْدِلُونَ. هُوَ الَّذِي خَلَقَكُمْ مِنْ طِينٍ ثُمَّ قَضَى أَجَلًا وَأَجَلٌ مُسَمًّى عِنْدَهُ ثُمَّ أَنْتُمْ تَمْتَرُونَ. وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ وَفِي الْأَرْضِ يَعْلَمُ سِرَّكُمْ وَجَهْرَكُمْ وَيَعْلَمُ مَا تَكْسِبُونَ. وَمَا تَأْتِيهِمْ مِنْ آَيَةٍ مِنْ آَيَاتِ رَبِّهِمْ إِلَّا كَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ .(الأنعام:1 وأَشْهَدُ أَن لَّا إَلَهَ إِلَّا اللهُ وّحْدَهُ لَاشَرِيْكَ لَهُ، وأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ:
মুহতারাম হাযেরীন!  আজকের খুতবায় আমরা একিট গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। আর তা হলো মহাবৈশ্বয়িক কিছু নিদর্শন, যা আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব ও একত্ববাদের জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ বহনকারী। আকাশ ও পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র, লতাগুল্মসহ মহাবিশ্বের সকল কিছুই আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের ঘোষক এবং একমাত্র তিনিই যে ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা, চূড়ান্ত ভক্তি-ভয়-ভালোবাসার পাত্র তার অকপট সাক্ষী। মহাবিশ্বের নানা বিষয়, ঘটনা-অনুঘটনা অনুসান্ধানী দৃষ্টিতে খুঁটিয়ে দেখলে বিষয়টি অত্যুজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠে। এবার আসুন তাহলে, এ বিষয়ক কয়েকটি আয়াত অধ্যয়নে মনোনিবেশ করি।  পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনأَوَلَمْ يَنْظُرُوا فِي مَلَكُوتِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ مِنْ شَيْءٍ وَأَنْ عَسَى أَنْ يَكُونَ قَدِ اقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ. ‘ তারা কি দৃষ্টিপাত করেনি আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্বে এবং আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার প্রতি? আর (এর প্রতি যে) হয়তো তাদের নির্দিষ্ট সময় নিকটে এসে গিয়েছে? সুতরাং তারা এরপর আর কোন্ কথার প্রতি ঈমান আনবে?’ (সূরা আল আরাফ : ১৮৫)  আল্লাহ তাআলা আরও ইরশাদ করেন: أَفَلَمْ يَنْظُرُوا إِلَى السَّمَاءِ فَوْقَهُمْ كَيْفَ بَنَيْنَاهَا وَزَيَّنَّاهَا وَمَا لَهَا مِنْ فُرُوجٍ. وَالْأَرْضَ مَدَدْنَاهَا وَأَلْقَيْنَا فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْبَتْنَا فِيهَا مِنْ كُلِّ زَوْجٍ بَهِيجٍ  ‘ তারা কি তাদের উপরে আসমানের দিকে তাকায় না, কিভাবে আমি তা বানিয়েছি এবং তা সুশোভিত করেছি? আর তাতে কোনো ফাটল নেই। আর আমি যমীনকে বিস্তৃত করেছি, তাতে পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তাতে প্রত্যেক প্রকারের সুদৃশ্য উদ্ভিদ উদ্গত করেছি আল্লাহ অভিমুখী প্রতিটি বান্দার জন্য জ্ঞান ও উপদেশ হিসেবে’ (সূরা কাফ : ৬-৮)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেনأَفَلَا يَنْظُرُونَ إِلَى الْإِبِلِ كَيْفَ خُلِقَتْ . وَإِلَى السَّمَاءِ كَيْفَ رُفِعَتْ . وَإِلَى الْجِبَالِ كَيْفَ نُصِبَتْ . وَإِلَى الْأَرْضِ كَيْفَ سُطِحَتْ . ‘ তবে কি তারা উটের প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে? আর আকাশের দিকে, কীভাবে তা ঊর্ধ্বে স্থাপন করা হয়েছে? আর পর্বতমালার দিকে, কীভাবে তা স্থাপন করা হয়েছে? আর যমীনের দিকে, কীভাবে তা বিস্তৃত করা হয়েছে?’ (সূরা আল গাশিয়া : ১৭-২০)
আল্লাহ তাআলার কতিপয় নিদর্শন
আল্লাহ তাআলার নিদর্শনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আসমান ও যমীনের সৃষ্টি। সুতরাং যে ব্যক্তি আসমানের দিকে তাকাবে, আসমানের নিপুণ সৃষ্টি, আসমানের সৌন্দর্য-বৈচিত্র্য এবং তার সুউচ্চতা ও শক্তির প্রতি লক্ষ্য করবে, সে তার মধ্য দিয়ে আল্লাহ তাআলার অসীম শক্তি ও ক্ষমতাই দেখতে পাবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: أَأَنْتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاءُ بَنَاهَا . رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَاতোমাদেরকে সৃষ্টি করা অধিক কঠিন, না আসমান সৃষ্টি? তিনি তা বানিয়েছেন। তিনি তার ছাদকে উচ্চ করেছেন এবং তাকে সুসম্পন্ন করেছেন’ (সূরা আন-নাযিয়াত : ২৭-২৮)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন: وَالسَّمَاءَ بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ আর আমি হাতসমূহ দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চয় আমি সম্প্রসারণকারী’   (সূরা আয-যারিয়াত : ৪৭)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:  ثُمَّ ارْجِعِ الْبَصَرَ كَرَّتَيْنِ يَنْقَلِبْ إِلَيْكَ الْبَصَرُ خَاسِئًا وَهُوَ حَسِيرٌ অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফিরাও একের পর এক, সেই দৃষ্টি অবনমিত ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে’ (সূরা মুলক : ৪)
আর যে যমীন তথা ভূপৃষ্ঠের দিকে তাকাবে, সে দেখতে পাবে কীভাবে আল্লাহ তাআলা একে সুগম করেছেন, এর মধ্যে আমাদের জন্য রাস্তা বানিয়েছেন, এর উপরিভাগে দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, এতে বরকত দিয়েছেন, এতে সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন এবং বান্দাদের জন্য এসব আহরণ করা সহজ করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন: وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ مِنْ فَوْقِهَا وَبَارَكَ فِيهَا وَقَدَّرَ فِيهَا أَقْوَاتَهَا فِي أَرْبَعَةِ أَيَّامٍ سَوَاءً لِلسَّائِلِينَ আর তার উপরিভাগে তিনি দৃঢ় পর্বতমালা স্থাপন করেছেন এবং তাতে বরকত দিয়েছেন, আর তাতে চারদিনে প্রার্থীদের জন্য সমভাবে খাদ্য নিরূপণ করে দিয়েছেন’ (সূরা ফুসসিলাত : ১০)
বান্দারা যাতে রিযক অন্বেষণ করতে পারে তাই আল্লাহ তাআলা যমীনকে সমতল বানিয়েছেন। বান্দারা যমীনে চাষাবাদ করে, যমীন থেকে পানি বের করে তা পান করে তৃপ্ত হয়। আল্লাহ তাআলা যমীনকে স্থির করেছেন, তাঁর নির্দেশ ছাড়া তা নড়ে না বা কম্পিত হয় না। আল্লাহ তাআলা, তাই, ইরশাদ করেন: وَفِي الْأَرْضِ آَيَاتٌ لِلْمُوقِنِينَ   ‘সুনিশ্চিত বিশ্বাসীদের জন্য যমীনে অনেক নিদর্শন রয়েছে’ ( সূরা আয-যারিয়াত : ২০)
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহ তাআলার আরেক নিদর্শন তাঁর গড়া আসমান-যমীনের অসংখ্য জীব। আসমানে অসংখ্য-অগণিত ফেরেশতা রয়েছেন, যার সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলাই জানেন। যমীনে আল্লাহ তাআলা যে কত জাতের কত প্রজাতির জীব সৃষ্টি করেছেন,তিনি ছাড়া তা কেউ জানে না। আর এগুলোর সংখ্যা যে কত তাও কল্পনার অতীত। এসব জীব আবার নানা প্রজাতির, নানা রঙের এবং নানা ধরনের। এর মধ্যে কিছু আছে যা আমাদের জন্য উপকারী। এর দ্বারা আল্লাহর নিয়ামতের পূর্ণতা উপলব্ধি করা যায়। আবার কিছু আছে মানুষের জন্য ক্ষতিকর, এর দ্বারা মানুষের নিজের জীবনের মূল্য এবং আল্লাহর সৃষ্টির সামনে তার দুর্বলতার অনুভূতি লাভ হয়। এসব সৃষ্টির প্রত্যেকেই কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা ও গুণাগুণ বর্ণনা করে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন : تُسَبِّحُ لَهُ السَّمَوَاتُ السَّبْعُ وَالْأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ وَإِنْ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهِ وَلَكِنْ لَا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ إِنَّهُ كَانَ حَلِيمًا غَفُورًا. ‘ সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না; কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা বুঝ না। নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ৪৪)
সমস্ত প্রাণীর রিযকও আল্লাহ তাআলা দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন : وَمَا مِنْ دَابَّةٍ فِي الْأَرْضِ إِلَّا عَلَى اللَّهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا كُلٌّ فِي كِتَابٍ مُبِينٍ আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিযকের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল। সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে’ (সূরা হূদ : ৬)
আল্লাহ তাআলার নিদর্শনের মধ্যে আরও আছে দিন-রাতের সৃষ্টি। রাতকে আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত সৃষ্টি করেছেন আমাদের প্রশান্তি লাভের জন্য। আমরা এতে নিদ্রা যাই এবং সারাদিনের ক্লান্তি দূর করি। আর দিনকে সৃষ্টি করেছেন জীবিকা অর্জনের জন্য। এ সময় মানুষ আপন জীবিকা অর্জনে ব্যস্ত থাকে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন فَالِقُ الْإِصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ তিনি) প্রভাত উদ্ভাসিতকারী। তিনি বানিয়েছেন রাতকে প্রশান্তি এবং সূর্য ও চন্দ্রকে সময় নিরূপক। এটা সর্বজ্ঞ পরাক্রমশালীর নির্ধারণ’ (সূরা আনআম : ৯৬)
প্রিয় মুসল্লিয়ানে কেরাম! আল্লাহ তাআলা যদি রাতের পর দিন না আনেন, তাহলে আমরা কি জীবিকা সংগ্রহ করতে পারব? যদি এমন হয় তাহলে পৃথিবীর কোনো সরকার, আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের মহাক্ষমতাধর  প্রেসিডেন্টও কি পারবে আমাদের জন্য দিন এনে দিতে? দেখুন আল্লাহ তাআলা কত সুন্দর করে আমাদের কে সেকথা বুঝিয়ে দিচ্ছেন: قُلْ أَرَأَيْتُمْ إِنْ جَعَلَ اللَّهُ عَلَيْكُمُ اللَّيْلَ سَرْمَدًا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَاءٍ أَفَلَا تَسْمَعُونَ.  ‘ বল, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি আল্লাহ রাতকে তোমাদের উপর কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী করে দেন, তবে তাঁর পরিবর্তে কোনো ইলাহ আছে কি যে তোমাদের আলো এনে দেবে? তবুও কি তোমরা শুনবে না? (সূরা আল-কাসাস : ৭১)
আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ! এই মহাবিশ্ব, এই মহা বিশ্বের সব কিছু একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। তার কোনো শরীক বা অংশীদার নেই। তাই একমাত্র তিনিই ইবাদতের উপযুক্ত।
কোনো কিছুই নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি 
প্রিয় ভাইয়েরা আমার! চিন্তা করে দেখুন, এসব সৃষ্টির কোনোটাই কিন্তু নিজে নিজে সৃষ্টি হয়নি। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই সকল  সৃষ্টির স্রষ্টা। ইরশাদ হয়েছে  أَمْ خُلِقُوا مِنْ غَيْرِ شَيْءٍ أَمْ هُمُ الْخَالِقُونَ . أَمْ خَلَقُوا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بَل لَا يُوقِنُونَ. ‘ তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা? তারা কি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না’ (সূরা আত-তূর : ৩৫-৩৬)
মুমিন-মুসলমান ভাইয়েরা! আপনাদের যদি বলা হয়, একটি বিশাল অট্টালিকা বা একটি রাজপ্রাসাদ নিজে নিজেই সৃষ্টি হয়েছে, তাহলে আপনারা নিশ্চয় এটা বিশ্বাস করবেন না। যদি কেউ বলে, দেখ, এই দালানটি হঠাৎ নিজের থেকে তৈরি হয়ে গেল, আপনারা তাকে পাগল বলবেন। তাহলে বলুন, এ বিশ্ব চরাচর, এই যে সুউচ্চ আকাশ আর সুবিস্তৃত যমীন, এই ঊর্ধ্বজগত আর নিম্নজগত কীভাবে একজন স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হতে পারে? কোনো বানানেওয়ালা ছাড়া আকস্মিকভাবে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে? নিশ্চয় এসবের একজন স্রষ্টা আছেন। একজন অসীম ক্ষমতাবান নিয়ন্ত্রক আছেন। হ্যা, তিনিই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা।
ডারউইনের থিওরি একটি ভ্রান্ত মতবাদ
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! বর্তমান যুগে তথাকথিত কিছু শিক্ষিত লোক ডারউইনের  বিবর্তনবাদ থিওরিতে বিশ্বাস করে। মানুষ নাকি প্রথমে বানর ছিল। তারপর ক্রমবিবর্তনের ধারায় সেখান থেকে তারা মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। এটি বাস্তবতার ওপর জুুলুম ও সীমালঙ্ঘন ছাড়া কিছুই নয়। বিবর্তনবাদ এমন একটি মতবাদ, যা আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। মানুষের অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ কিছুই এ চিন্তার সত্যায়ন করে না। এমন বাতুলতাপূর্ণ  চিন্তায় বিশ্বাস করে কেউ ঈমানহারা হবেন না। এ মতবাদকে খণ্ডন করে বিজ্ঞানী ও আলেমগণ অনেক বই লিখেছেন। আপনারা সেগুলো পড়লেই বুঝবেন বিষয়টি কতটা অসার ও হাস্যকর।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .

দ্বিতীয় খুৎবা
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، نَصَبَ مِنْ آيَاتِهِ عَلَى وَحْدَانِيَّتِهِ دَلَيْلاً، وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ، رَبُّ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَاتَّخِذْهُ وَكِيْلاً، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ:
প্রিয় ভাইয়েরা! আল্লাহর যেসব নিয়ামতের জন্য আমাদের শুকরিয়া করা উচিত, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো :এসব সৃষ্টিকে আমাদের অনুগত করে দেয়া। তিনি হাজার হাজার মাখলুকাত আমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং সেগুলোকে আমাদের অনুগত বানিয়েছেন। তাই আমাদের অবশ্যই আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া জানানো উচিত।
বেরাদারানে ইসলাম! আল্লাহ তাআলাকে ভয় করুন। তিনি যে আপনাকে ও আমাকে হিদায়েত দিয়েছেন, আমরা যা জানতাম না তা শিখিয়েছেন, আমাদের দুনিয়া-আখিরাতে যা  কল্যাণকর তার জ্ঞান তিনি আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর যা আমরা অনুধাবন করতে সক্ষম নই, যাতে আমাদের কল্যাণ নেই, তা আমাদের কাছ থেকে গোপন রেখেছেন। তাই আমাদের উচিত আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা।
তিনি আমাদের জানিয়েছেন কীভাবে এই বিশ্বজাহান সৃষ্টি হয়েছে। এ জ্ঞান তিনি দিয়েছেন তাঁর   নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে। সুতরাং আসমান-যমীনের সৃষ্টি সংক্রান্ত যে কথাই আমরা শুনি না কেন, যাচাই করে দেখতে হবে তা নবী-রাসূলগণের  কথার সাথে মিলে কি না। যদি মিলে, তাহলে তা গ্রহণ করব; যদি না মিলে তাহলে তা প্রত্যাখ্যান করব। আর যদি এ সম্পর্কে নবী-রাসূলগণের  বক্তব্য জানতে না পারি, তাহলে যতদিন বিষয়টি সত্য না মিথ্যা তা নিশ্চিত হব, ততদিন এ ব্যাপারে নীরব থাকাই হবে স্বচ্ছ বুদ্ধির দাবি।
মুসল্লিয়ানে কিরাম! আল্লাহ তাআলা আমাদের জানিয়েছে যে, তিনি আসমান-যমীন ও এতদোভয়ের মাঝখানের সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির কাজ শুরু করে দুই দিনে তিনি যমীন সৃষ্টি করেছেন, তার উপর পেরেক স্বরূপ পাহাড়-পর্বত স্থাপন করেছেন। এরপর আর দুই দিনে তাতে খাদ্য সন্নিবেশিত করেছেন। এই হলো চারদিন। অতঃপর তিনি আসমানের দিকে মনোনিবেশ করেন। এটি তখন ছিল ধোঁয়ার মত। তারপর তিনি দুই দিনে সাত আসমান সৃষ্টি করেন। এই মোট ছয় দিনে আল্লাহ তাআলা আসমান-যমীন সৃষ্টি করেন। 
আল্লাহ তাআলা বলেন: إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ. ‘ নিশ্চয় তোমাদের রব আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে উঠেছেন। তিনি রাত দ্বারা দিনকে ঢেকে দেন। প্রত্যেকটি একে অপরকে দ্রুত অনুসরণ করে। আর (সৃষ্টি করেছেন) সূর্য, চাঁদ ও তারকারাজী, যা তাঁর নির্দেশে নিয়োজিত। জেনে রাখ, সৃষ্টি ও নির্দেশ তাঁরই। আল্লাহ মহান, যিনি সকল সৃষ্টির রব (সূরা আরাফ : ৫৪)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন: إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ. ‘ নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ। যিনি আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, তারপর আরশে উঠেছেন। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন। তার অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করার কেউ নেই। তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব। সুতরাং তোমরা তাঁর ইবাদত কর। তারপরও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ (সূরা ইউনুস : ৩)
মুহতারাম হাযেরীন! আসমান-যমীনের সৃষ্টির সাথে সাথে এতদোভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছুই আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেছেন। যমীন থেকে পানি ও চারণভূমি  বের করেছেন এবং তাতে এমনভাবে খাদ্য লুকিয়ে রেখেছেন, যা সব যুগের এবং সব স্থানের উপযোগী। যাতে খাদ্যগুলো প্রত্যেক যুগে নানা রকমের হয়, সব সময় খাদ্য কোথাও না কোথাও থাকে  এবং এই খাদ্যের প্রয়োজনে মানুষে মানুষে সম্পর্ক ও যোগাযোগ গড়ে ওঠে। তেমনিভাবে তিনি আসমানে চাঁদ-সূর্য ও তারকারাজি স্থাপন করে তাকে সুসজ্জিত করেছেন। এর দ্বারা মানুষ সমুদ্রে ও স্থলে পথ খুঁজে পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন : أَلَمْ تَرَوْا كَيْفَ خَلَقَ اللَّهُ سَبْعَ سَمَوَاتٍ طِبَاقًا . وَجَعَلَ الْقَمَرَ فِيهِنَّ نُورًا وَجَعَلَ الشَّمْسَ سِرَاجًا. وَاللَّهُ أَنْبَتَكُمْ مِنَ الْأَرْضِ نَبَاتًا. ‘ তোমরা কি লক্ষ্য কর না যে, কীভাবে আল্লাহ স্তরে স্তরে সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন? আর এগুলোর মধ্যে চাঁদ সৃষ্টি করেছেন আলো এবং সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন প্রদীপরূপে। আর আল্লাহ তোমাদেরকে উদগত করেছেন মাটি থেকে’ ( সূরা নুহ : ১৫-১৭)
আমরা যেন কিছুতেই এ কথা ভুলে না যাই যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা এসব সৃষ্টিকে আমাদের অনুগত করে দিয়েছেন যাতে আমরা একমাত্র তাঁরই দাসত্ব করি; অন্য কাউকে তাঁর ইবাদাতে শরীক না করি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনوَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে’ (সূরা আয্যারিয়াত: ৫৬)
তাই আমাদের সবার কর্তব্য, আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মতো তাঁর ইবাদত করা এবং এসব নিয়ামতের জন্য তাঁর শুকরিয়া আদায় করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেনيَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ হে মুমিনগণ, আহার কর আমি তোমাদেরকে যে হালাল রিযক দিয়েছি তা থেকে এবং আল্লাহর জন্য শোকর কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর’ (সূরা বাকারা : ১৭২)
তিনি আরও ইরশাদ করেন: فَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَاشْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ  ‘অতএব আল্লাহ তোমাদেরকে যে হালাল উত্তম রিযক দিয়েছেন, তোমরা তা থেকে আহার কর এবং আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা তারই ইবাদত করে থাক’ (সূরা নাহাল : ১১৪)
অন্যত্র তিনি ইরশাদ করেনإِنَّمَا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْثَانًا وَتَخْلُقُونَ إِفْكًا إِنَّ الَّذِينَ تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ لَكُمْ رِزْقًا فَابْتَغُوا عِنْدَ اللَّهِ الرِّزْقَ وَاعْبُدُوهُ وَاشْكُرُوا لَهُ إِلَيْهِ تُرْجَعُونَ. ‘ 
 তোমরা তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলোর পূজা করছ এবং  মিথ্যা বানাচ্ছ। নিশ্চয় তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের উপাসনা কর তারা তোমাদের জন্য রিযক-এর মালিক নয়। তাই আল্লাহর কাছে রিযক তালাশ কর, তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সূরা আনকাবুত : ১৭)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর নিয়ামত সম্পর্কে জানবার এবং বেশি বেশি তাঁর শুকরিয়া আদায় করার এবং ইবাদত করবার তাওফীক দান করুন। আমীন।
اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.
হে আল্লাহ! আপনার সকল নিদর্শন আমাদেরকে সঠিকভাবে অনুধাবনের তাওফীক দান করুন। হে আল্লাহ! আপনার সৃষ্টি সম্পর্কে সকল ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাস থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন। আপনি আমাদের ঈমান ও আমলে দৃঢ়তা দান করুন।
হে আল্লাহ আপনি আমাদেরকে সকলপ্রকার আপদ-বিপদ, বালামুসীবত থেকে রক্ষা করুন। মুসলিম উম্মাহকে ইয্যতের সাথে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা ও আপনার দীনের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার তাওফীক দান করুন।  হে আল্লাহ!  আপনি আমাদের সবাইকে হালাল রিযিক অন্বেষণের তাওফীক দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

Source: http://www.globalminberbangla.com

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য