Saturday, July 13, 2013

আওলীয়া গনের কিরামতি

আওলীয়া গনের কিরামতি

- মুহা, লুকমান রাকীব



কারামতে আওলীয়ার ব্যাপারে আহ্‌লুস্‌সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাসঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদার অন্যতম অংশহচ্ছে আউলীয়াদের কারামত এবং আল্লাহ তাআলা তাদের হাতে অলৌকিক ও সাধারণঅভ্যাসের বিপরীত যে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ করেন তাতে বিশ্বাস করাতবে অলীহওয়ার জন্য কারামত প্রকাশিত হওয়া জরুরী নয়আউলীয়াদের কারামত সত্যআল্লাহতাআলা তাদের হাতে অলৌকিক ও সাধারণ নিয়মের বিপরীত এমন ঘটনা প্রকাশ করেথাকেন যাতে তাদের কোন হাত নেইতবে কারামত চ্যালেঞ্জ আকারে প্রকাশিত হয় না; বরং আল্লাহই তাদের হাতে কারামত প্রকাশ করেনএই উম্মাতের মধ্যে প্রচুরপরিমাণ ও বড় বড় কারামত প্রকাশিত হয়েছেকারণ আমাদের নবীর মুজিযাগুলো হচ্ছেবড় বড় এবং আল্লাহ্‌ তাআলার নিকট তাঁর সম্মানও অনেক বড়প্রত্যেক পরহেজগারমুমিনই আল্লাহর অলীআল্লাহ তাআলা বলেনঃ )
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ
 মনে রেখো যে, আল্লাহর অলীদের কোন ভয় নেইআরতারা বিষন্নও হবেনাতারা হচ্ছে সেই সমস্ত লোক যারা ঈমান এনেছে এবংপরহেজগারিতা অবলম্বন করে থাকেতাদের জন্যে সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনেএবং পরকালেও। (সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৪) এই আয়াতে আল্লাহর অলীর সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছেঈমান ও সৎকর্মই হচ্ছে আল্লাহর অলী হওয়ার পরিচয়ঈমানদার, মুত্তাকী এবং শরীয়তেরপুরোপুরি অনুসারীর হাতে যদি আল্লাহ কারামাত বা অলৌকিক কিছু বের করেন তবেতিনি আল্লাহর অলী হিসেবে গণ্য হবেনআর ইসলামী শরীয়তের পাবন্দী নয়, এমনলোকের হাতে যদি কারামাত প্রকাশিত হয়, তবে সে আল্লাহর অলী নয়; বরং সেআল্লাহর শত্রু এবং শয়তানের অলীআল্লামা ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এ বিষয়েএকটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছেনকিতাবটির নাম আল-ফুরকানু বাইনাআউলীয়াউর্‌ রাহমান ওয়া আউলীয়াউশ শায়তানআল্লাহর প্রকৃত অলী এবং ভন্ডদের পার্থক্য সম্পর্কে এতে বিশদ আলোচনা করা হয়েছেযারা এ বিষয়ে বেশী জানতে চান তাদের প্রতি কিতাবটি পড়ার অনুরোধ থাকল কুরআন মযীদের সূরা কাহাফে এবং অন্যান্য সূরায় পূর্ব যামানার অলীদের যে সমস্ত কারামত বর্ণিত হয়েছে এবং এই উম্মাতের প্রথম যুগের তথা সাহাবী, তাবেয়ী, অন্যান্য সৎ লোকের হাতে যে সমস্ত কারামত প্রকাশিত হয়েছে তাতেও আমরা বিশ্বাস করিকিয়ামত পর্যন্ত এই উম্মাতের আউলীয়াদের হাতে কারামত প্রকাশিত হতে থাকবেআল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীনকে শক্তিশালী করা, কাফের-মুশরিকদেরকে পরাজিত করা, হুজ্জত কায়েম করা এবং তার অলীদের সম্মান ওফজীলত বৃদ্ধি করার জন্যই কারামত প্রকাশ করেন
কতিপয় কারামাতে আওলীয়ার উদাহরণ:
পবিত্র কুরআনে অনেক কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়যেমন স্বামী ব্যতীত মরিয়ম (আঃ)এর গর্ভে ঈসা (আঃ)এর জন্ম গ্রহণ এবংঅলৌকিকভাবে আল্লাহর পক্ষ হতে রিযিক প্রাপ্ত হওয়া, সূরা কাহাফে বর্ণিতগুহাবাসীর কারামত, যুল-কারনাইনের ঘটনা, মুসা (আঃ)এর সাথে খিযির (আঃ)এর ঘটনাইত্যাদি সহীহ হাদীছেও রয়েছে পূর্ব যুগের এবং অনেক সাহাবী ও তাবেয়ীর কারামতের ঘটনা  
উমার বিন খাত্তাব (রাঃ)এর কারামতঃ উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) মদীনার মিম্বার থেকেদেখতে পেলেন যে, ইরাকের নাহাওয়ান্দে যুদ্ধরত মুসলিম বাহিনী শত্রুদের আক্রমণের কবলে পড়তে যাচ্ছেতাই তিনি সেনাপতি সারিয়াকে মদীনার মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে ইয়া সারিয়া! আল- জাবালঅর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয়নাও, বলে ডাক দিলেনতাঁর আওয়াজ সিরিয়াতে অবস্থানরত সারিয়ার কাছে পৌঁছে গিয়েছিলসারিয়া খলীফা উমারের সেই ডাক শুনে সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ের উপর আশ্রয় গ্রহণ করলেন এবং শত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলেনউমার (রাঃ)এর কারামাতের বিস্তারিত বিবরণ এইযে, উমার (রাঃ) একদল সৈনিক পাঠালেন এবং সারিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করলেনউমার (রাঃ) মদীনার মিম্বারে খুৎবারত অবস্থায় ইয়া সারিতা!আল-জাবাল, ইয়া সারিতা! আল-জাবাল বলে উচ্চস্বরে ডাক দিলেনসৈনিকদের দূত মদীনায় এসে বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করতে গেলে তারা আমাদেরকে পরাজিত করে ফেলেতখন আমরা একজন লোককে চিৎকার করে বলতে শুনলামঃ ইয়া সারিতা! আল-জাবালঅর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয় নাওএতে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করলামশত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলামআল্লাহ্‌ তাআলা শত্রুদেরকে পরাজিত করলেন। (মাজমূআয়েফাতাওয়া ইবনে তাইমীয়াঃ ১১/২৭৮, উয়ূনুল আছার ১/২৫২)
নীল নদের কাছে উমার (রাঃ)এর চিঠি লেখার ঘটনাটি ইবনে কাছীর তার গ্রন্থ আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে উল্লেখ করেছেনঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, মিশরের শাসক আমর বিন আস উমার (রাঃ)কে সংবাদ দিল যে, মিশরবাসীরা প্রতিবছর নীল নদকে একটি করে কুমারী মেয়ে উৎসর্গ করলেই তা প্রবাহিত হয়আমর বিন আসমিশরবাসীকে জানালেন যে, ইসলামে এধরণের কর্ম সম্পূর্ণ হারামস্বয়ং আমর বিনআস উমার (রাঃ)এর বরাবর এমর্মে একটি পত্র লিখে পাঠালেনউমার (রাঃ) নীল নদেরকাছে এই পত্র লিখে পাঠালেনঃ من عبد الله عمر أمير المؤمنين إلى نيل مصر أما بعد: فان كنت تجري من قبلك ومن أمرك فلا تجر فلا حاجة لنا فيك وإن كان الله الواحد القهار هو الذي يجريك فنسأل الله أن يجريك فألقى عمرو البطاقة في النيل فجرى أفضل مما كانআল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমার (রা)এরপক্ষ হতে মিশরের নীল নদের প্রতি প্রেরিত এই পত্রঅতঃপর হে নীল নদ! তুমি যদি নিজের ক্ষমতা বলে ও নিজের পক্ষ হতে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে তুমি আজ হতে আর প্রবাহিত হয়ো নাতোমার কাছে আমাদের কোন প্রয়োজন নেইআর তুমি যদি মহা প্ররাক্রমশালী এক আল্লাহর হুকুমে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেনআমর (রাঃ) পত্রটি নীলনদে নিক্ষেপ করার সাথে সাথে তা পূর্বের চেয়ে আরো দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হতে লাগল। (দেখুনঃ বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৭/১০২) 

  জুরাইজের ঘটনাঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয নামের একজন পরহেজগার লোক ছিলসে ইবাদতের জন্য একটি গীর্জা তৈরী করে তথায় সর্বদাইবাদতে লিপ্ত ছিলসে এক দিন নামাযরত অবস্থায় ছিলএমন সময় তার মা এসে ডাকদিলজুরাইজ বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামাযঅর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সেনামাযের মধ্যে রয়ে গেলমায়ের ডাকে সাড়া দিলনামা ব্যর্থ হয়ে চলে গেলপরের দিন তার মা আবার আগমণ করলসেদিনও জুরাইয নামাযে ছিলতার মায়ের কন্ঠশুনে সে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামাযঅর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেলমায়ের ডাকে সাড়া দিলনামা ব্যর্থ হয়ে আজও চলে গেলতৃতীয় দিনেও তার মা এসে তাকে নামায রত পেলজুরাইজ তার মার ডাকে সাড়া না দিয়েই নামাযেই রয়ে গেলএবার তার মা রাগাম্বিত হয়ে জুরাইযের উপর এই বলে বদ্‌দুআ করল যে, হে আল্লাহ! জুরাইয যেন বেশ্যা মহিলার মুখ দেখার পূর্বে মৃত্যু বরণ না করেবনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয এবং তার ইবাদতের সুনাম ছড়িয়ে পড়লতাদের মধ্যকার কিছু লোক তাকে পথভ্রষ্ঠ করার জন্য চক্রান- শুরু করলএকজন বেশ্যা মহিলা সেসময় সেজেগোজে ঘুরে বেড়াতসে প্রস-াব করল যে, তোমরা যদি চাও আমি তাকে গোমরাহ করতে পারিনবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর সেই মহিলা জুরাইযের কাছে গিয়ে নিজেকে পেশ করলকিনজুরাইয সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলনাজুরাইযের গীর্জায় একজন ছাগলের রাখাল আসা-যাওয়া করতমহিলাটি জুরাইযের কাছে কোন সুযোগ না পেয়ে রাখালের কাছে গিয়ে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হলএতে সে গর্ভবতী হয়ে গেলপ্রসব করার পর সে বলল এটি জুরাইযের সন্তানলোকেরা দলে দলে আগমণ করে জুরাইযকে গীর্জা থেকে টেনে বের করল এবং তার গীর্জাটিও ভেঙ্গে চুরমার করে দিললোকেরা মারতে শুরু করলজুরাইয জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হল? আমাকে মারছ কেন? আমার ইবাদতখানাটিই বা কেন ভেঙ্গে ফেললে? লোকেরা বললঃ তুমি এই মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছযার কারণে মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছেজুরাইয জিজ্ঞাসা করলঃ শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে অসলজুরাইয বলল আমাকে নামায পড়ার জন্য একটু সময় দাওতারা তাকে নামায পড়ার সুযোগ দিলনামায শেষ করে শিশুটির কাছে গিয়ে তার পেটে খুচা দিয়ে বললঃ এই ছেলে? তোমার বাপ কে? ছেলেটি বলে দিল, ছাগলের রাখাল নবী (সাঃ) বলেন, একথা শুনে লোকেরা আসল তথ্য অনুধাবন করতে পেরে জুরাইযকে চুম্বন করতে শুরু করল এবং তাকে জড়িয়ে ধরলতারা নিজেদের ভুলের কারণে জুরাইযের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং বলল আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনার গীর্জাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিবজুরাইয বললঃ স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করার দরকার নেই; বরং যেমন ছিল তেমন করেই মাটি দিয়ে তৈরীকরে দাওতারা তাই করল। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্‌ যিক্‌র) 
তিন জন অলীর ঘটনাঃ ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেনযে, অতীত কালে তিনজন লোক পথ চলতেছিলপথিমধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলনিরাপদ আশ্রয় হিসাবে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়লউপর থেকে বিশাল আকারের একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেলতাদের জন্য বের হওয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট রইলনাতাদের একজন অপরজনকে বলতে লাগল, তোমরা প্রত্যেকেই আপন আপন সৎ আমল আল্লাহর দরবারে তুলে ধরে তার উসীলা দিয়ে দুআ করএতে হয়ত আল্লাহ আমাদের জন্য বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অতিবৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছিল, আমার কতিপয় শিশু সন্তানও ছিলআমি ছিলাম তাদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারীআমি প্রতিদিন ছাগল চরানোর জন্য মাঠে চলে যেতাম বিকালে ঘরে ফেরত এসে দুধ দহন করে আমি প্রথমে পিতা-মাতাকে পান করাতাম, পরে আমার শিশু সন্তানদেরকে পান করাতামএটি ছিল আমার প্রতিদিনের অভ্যাসএকদিন ঘাসের সন্ধানে আমি অনেক দূরে চলে গেলামএসে দেখি আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছেআমার অভ্যাসমত আমি দুধ দহন করে দুধের পেয়ালা নিয়ে তাদের মাথার পাশে দাড়িয়ে রইলামআমি তাদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত করাকে অপছন্দ করলামযেমনভাবে অপছন্দ করলাম পিতা-মাতার পূর্বে সন্তানদেরকে দুধ পান করানোকেশিশুসন্তানগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করতেছিলএভাবে সারা রাত কেটে গিয়ে ফজর উদীত হলআমার পিতা-মাতা ঘুম থেকে জাগলেনআমি তাদেরকে প্রথমে পান করালাম অতঃপর আমার ছেলে-মেয়েদেরকে পান করালাম হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই জানেন যে, আমি একাজটি একমাত্র আপনার সনষ্টি অর্জনের জন্য সম্পাদন করেছিএই আমলটির উসীলায় আমাদের জন্য বের হওয়ার রাস্তা করে দিনএভাবে দুআ করার সাথে সাথে পাথরটি একটু সরে গেল, তারা আকাশ দেখতে পেল, কিনতখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার একজন চাচাতো বোন ছিলসে ছিল আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং একজন পুরুষ কোন মহিলার প্রতি যতদূর আসক্ত হতে পারে, আমি ছিলাম তার প্রতি ততটুকু আসক্তআমি তার কাছে আমার মনোবাসনা পেশ করলাম সে একশত স্বর্ণমুদ্রা দেয়ার শর্তে তাতে সম্মত হলআমি অনেক পরিশ্রম করে একশত স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করে তার কাছে গমণ করলামসে সম্মতি প্রকাশ করারপর আমি তার উভয় উরুর মধ্যে বসে পড়লামএমন সময় সে বলে উঠল, হে আল্লাহরবান্দা! আল্লাহকে ভয় কর, আমার স্বতীত্ব নষ্ট করোনাএকথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার ভয়ে সেদিন পাপের কাজ থেকে বিরত হয়েছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবসা করে দিনসাথে সাথে পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিনতখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি তৃতীয়জন বললঃ হে আল্লাহ! নির্ধারিত বেতনের বিনিময়ে আমি একজন শ্রমিক নিয়োগ করলামকাজ শেষ করে সে আমার কাছে পারিশ্রমিক চাইলে আমি তা প্রদান করলাম, কিনসে উহা গ্রহণ না করেই চলে গেলআমি তার প্রাপ্য টাকা বাড়াতে থাকলামএকপর্যায়ে তা একপাল গরুতে পরিণত হলআমি গরুগুলো মাঠে চরানোর জন্য একজন রাখালও নিয়োগ করলাম অনেক দিন পর সেই লোকটি আমার কাছে এসে তার মজুরী চাইলআমি বললামঃ তুমি রাখালসহ উক্ত গরুর পালটি নিয়ে চলে যাওসে বলল, হেআল্লাহর বান্দা! আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং আমার সাথে বিদ্রুপ করোনাআমি বললাম, বিদ্রুপ করি নাইবরং এগুলো তোমারআমি তোমার এক দিনের মজুরী দিয়ে এগুলো করেছিতাই তুমি রাখালসহ গরুর পালটি নিয়ে চলঅতঃপর সে গরুর পালটি নিয়ে চলে গেলএকটিও রেখে যায়নি হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার সনষ্টির জন্য একাজটি করেছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিনসাথেসাথে পাথরটি সম্পূর্ণরূপে সরে গেলতারা নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে এল (বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া)  
এক বৃদ্ধ কৃষকের কারামতঃ  অতীত কালে একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলছিলহঠাৎ মাথার উপর মেঘমালা থেকে একটি শব্দ শুনল যে, অমুকের বাগানে বর্ষণ করলোকটি মেঘমালাকে অনুসরণ করে পথ চলতে থাকলঅবশেষে একটি যমিনে বৃষ্টি বর্ষণ হলসেখানে দেখতে পেল একজন লোক কোদাল হাতে নিয়ে বাগানে কাজ করছেলোকটি বাগানওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করল তোমার নাম কি? সে বললঃ আমার নাম অমুকযে নামটি সেমেঘ থেকে শুনেছিলতারপর বাগানের মালিক জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞাসা করছ? উত্তরে সে বললঃ যে মেঘ থেকে এই বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, আমি তোমার নামটি সেই মেঘের ভিতরে শুনতে পেয়েছিতাই আমি তোমার নাম জিজ্ঞেস করছিতোমার কাছে আমার আরো একটি প্রশ্ন হল, তুমি কিভাবে এই বাগানের ফসলব্যয় কর, তাও আমি জানতে চাই সেবললঃ আমার যমিনে উৎপাদিত ফসলকে তিনভাগে বিভক্ত করিএকভাগ আমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করিএকভাগ পুনরায় ফসল আবাদের কাজে ব্যয় করিআরএক ভাগ ফকীর, মিসকীন এবং মুসাফিরদের মাঝে বন্টন করে দেই। (মুসলিম, তাফসীরে ইবনে কাছীর)
উসায়েদ ইবনে হুযায়ের-এর কারামতঃ উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বলেন, আমি একদিন রাত্রি বেলায় সূরা বাকারা তেলাওয়াত করছিলামআমার ঘোড়াটি কাছেই বাধা ছিলহঠাৎ করে ঘোড়াটিলাফিয়ে উঠলআমি কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলামঘোড়াটিও থেমে গেলআবার তেলাওয়াত শুরু করলামআবার ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করলআমি আবার কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলামঘোড়াটিও থেমে গেলতারপর আমি একেবারেই তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলামকারণ আমার শিশু পুত্র ইয়াহয়া ঘোড়াটির পাশেই ঘুমন্ত ছিলআমার ভয় হল যে, ঘোড়াটি হয়ত ইয়াহয়াকে আঘাত করতে পারে, এই ভয়েই আমি মূলত কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলামঅতঃপর আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম, মাথার উপরে অসংখ্য আলোক বর্তিকার মত কি যেন দেখা যাচ্ছেআলোক বর্তিকাগুলো আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে গেলএকটিও অবশিষ্ঠ রইলনা সকাল বেলা আমি রাসূল (সাঃ)এর নিকট গিয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করলামবললাম হে আল্লাহর নবী! গত রাত্রে আমি কুরআন তেলাওয়াত করছিলামআমার ঘোড়াটি কাছেই বাধা ছিলহঠাৎ করে ঘোড়াটি লাফিয়ে উঠলআমি আবার কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলামঘোড়াটিও থেমে গেলআবার তেলাওয়াত শুরু করলামআবার ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করলআমি আবার কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলামঘোড়াটিও থেমে গেলতারপর আমি একেবারেই তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম কারণ আমার শিশু পুত্র ইয়াহয়া ঘোড়াটির পাশেই ঘুমন- ছিলআমার ভয় হল যে, ঘোড়াটি হয়ত ইয়াহয়াকে আঘাত করতে পারে, এই ভয়েই আমি মূলত কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলামঅতঃপর আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম, মাথার উপরে অসংখ্য আলোকবর্তিকার মত কি যেন দেখা যাচ্ছেআলোক বর্তিকাগুলো আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে গেলএকটিও অবশিষ্ঠ রইলনা রাসূল (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জান এগুলো কি? তারা হলো আল্লাহর ফেরেশতাতোমার কুরআন তেলাওয়াত শুনার জন্য তারা আগমণ করেছিলতুমি যদি সকাল পর্যন্ত তেলাওয়াত অব্যাহত রাখতে, তাহলে দুনীয়ার মানুষেরা তাদেরকে দেখতে পেতকারণ কুরআন তেলাওয়াত শুনা ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপন করা কখনই তাদের পক্ষে সম্ভব হতনা (বুখারী, অধ্যায়ঃ ফাযায়িলুল কুরআন)
আব্বাদ বিন বিশরের করামাতঃ আব্বাদ বিন বিশ্‌র এবং উসাইদ ইবনে হুজাইর নবী (সাঃ)এর সাথে ইশা নামায আদায় করার পর অনেক ক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সাথে কথাবার্তা বললেনএতে অনেক রাত হয়ে গেলরাত্রিটি ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন কথাবার্তা শেষে তারা যখন নবী (সাঃ)এর দরবার থেকে বের হলেন তখন তাদের সামনে একটি আলোক বর্তিকা প্রকাশিত হয়ে রাস্তা আলোকিত করে দিলআলোক বর্তিকাটি তাদের আগে আগে চলতে লাগলরাস্তায় যখন তাদের পৃথক হওয়ার সময় হল একটি আলোকবর্তিকা দুটিতে পরিণত হয়ে গেলএকটি আব্বাদ বিন বিশরের রাস্তাকে আলোকিত করে তার আগে আগে চলতে লাগলআর তিনিও উক্ত আলোতে পথ চলতে চলতে বাড়িতে পৌঁছেগেলেনএমনিভাবে অন্য আলোটি উসাইদ বিন হুজাইরের রাস্তাকে আলোকিত করলে তিনিও নির্ভিগ্নে বাড়িতে চলে গেলেন। (বুখারী, অধ্যায়ঃ আব্বাদ বিন বিশর ওউসাইদ বিন হুযায়েরের ফজীলত)
ওয়াইসআল-কারণীর ঘটনাঃ উসাইর ইবনে যাবের (রাঃ) বলেন, যখনই ইয়্যমেন থেকে কোন যুদ্ধের কাফেলা মদীনায় আগমণ করতেন, তখন উমার (রাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মাঝে ওয়াইস বিন আমের আল-কারণী নামে কোন লোক আছে কি? কোন এক সময় ওয়াইস বিন আমের আগমণ করেছে জানতে পেরে উমার (রাঃ) তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ওয়াইস বিন আমের? তিনি বললেনঃ হ্যাঁতারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কার্‌ন গোত্রের মুরাদ শাখার লোক? উত্তরে তিনি বললেন হ্যাঁতোমার শরীরে কি শ্বেত রোগ ছিল, যা থেকে তুমি সুস্থ হয়েছ, কিন্তু সামান্য স্থানে তার চিহ্ন রয়ে গেছেতিনিবললেন হ্যাঁউমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মাতা জিবীত আছে? তিনিবললেন, হ্যাঁএরপর উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, অদূর বভিষ্যতে তোমাদের কাছে ওয়াইস বিন আমের নামে একজন লোক আগমণ করবেতার ছিল শ্বেতরোগসামান্য স্থান ব্যতীত তাঁর শরীরের চামড়া ভাল হয়ে গেছেতিনিতাঁর ময়ের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেতিনি তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচরণকারী এবং আনুগত্যশীলসম্ভবতঃ সে কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে নাসে যদি আল্লাহর নামে কোন শপথ করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দেনতুমি যদি তাকে পাও, তার কাছে তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করিওসুতরাং তুমি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করওয়াইস আল-কারণী উমার (রাঃ)এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেনঅতঃপর উমার (রাঃ)জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এখন কোথায় যাবে? সে বলল, কূফার দিকে যাওয়ার ইচ্ছাপোষণ করছিউমার (রাঃ) বললেন, কূফার গভর্ণরের কাছে তোমার জন্য কিছু লিখে দিব কি? সে বলল, না কোন কিছু লিখার প্রয়োজন নেইআমি দারিদ্র হালতে এবংফকীর-মিসকীনদের সাথে বসবাস করা পছন্দ করিপরবর্তী বছরে কূফার একজন লোক হজ্জ করতে আসলউমার (রাঃ) তাকে ওয়াইস আল-কারণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেনসে বললঃ আমি তাকে একটি পুরাতন ঘরের মধ্যে অসহায় অবস্থায় বসবাস করতে দেখে এসেছিউমার (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, অদূর বভিষ্যতে তোমাদের কাছে ওয়াইস বিন আমের নামে একজন লোক আগমণ করবেতার ছিল শ্বেত রোগসামান্য স্থান ব্যতীত তাঁর শরীরের চামড়া ভাল হয়ে গেছেতিনি তাঁর মাতার খেদমতে নিয়োজিত রয়েছেতিনি তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচরণকারী এবংআনুগত্যশীলসম্ভবতঃ সে কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে নাসে যদি আল্লাহরনামে কোন শপথ করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দেনতুমি যদি তাকেপাও, তার কাছে তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করিওসুতরাং তুমিও তার কছে গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করিওকূফাবাসী লোকটি দেশে ফিরে গিয়ে ওয়াইস আল-কারণীর সাথে সাক্ষাত করে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেনপ্রথমে সে এই বলে আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেন যে, তুমি হজ্জের সফর থেকে কেবলমাত্র আগমণ করেছসুতরাং তুমিই আমার জন্য দুআ করএ কথাটি সে কয়েকবার বলার পর জিজ্ঞাসা করল তুমি উমার (রাঃ)এর সাথে দেখা করেছ? কূফাবাসী বললঃ হ্যাঁঅতঃপর ওয়াইস আল-কারণী তার জন্য দু করলেন মানুষের কাছে ওয়াইসের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে গেলে সে অদৃশ্য হয়ে গেল হাদীসের বর্ণনাকারী উসাইর ইবনে যাবের বলেন, আমি তাকে একটি চাদর দান করেছিলামযখনই মানুষ তাকে এই চাদরটি পরিহিত অবস্থায় দেখত, তারা বলতঃ ওয়াইসএই চাদরটি কোথায় পেল? (মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়িলুস্‌ সাহাবাহ) আমাদের দেশে ওয়ইস আল-কারণী সম্পর্কে৩২ দাঁত ভাঙ্গার যে ঘটনা বর্ণনা করা হয়, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা
আবু বকর (রাঃ)এর করামাতঃ আবু বকর (রাঃ)এর খেলাফতকালে আরবের কতিপয় গোত্রমুরতাদ হয়ে যাওয়ার সময় আল্লাহ্‌ তাঁর হাতে কারামত প্রকাশ করেনআবু বকরের হাতে প্রকাশিত আরেকটি মুজিযা হচ্ছে, আবু যার্‌ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসন্ধান করার জন্য মদীনার কোন বাঘানে গেলামগিয়ে দেখলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে আছেনআবুযার্‌ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেনআবু যার্‌ বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সামনে কতগুলো পাথর রাখা ছিলতিনি সেগুলো হাতে নিলে সেগুলো তাসবীহ পাঠ করা শুরু করলঅতঃপর তিনি তা মাটিতে রাখলে তাসবীহ পাঠ বন্ধ করে দেয়নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামসেগুলো হাতে নিয়ে আবু বকরের হাতে রাখলে আবার তাসবীহ পাঠশুরু করে দেয়আবু বকর (রাঃ) সেগুলো মাটিতে রাখলে চুপ হয়ে যায়হাদীছেবর্ণিত আছে যে, পাথর দানাগুলো উমার ও উছমানের হাতেও তাসবীহ পাঠ করেছিল (ইবনু আবী আসেম, কিতাবুস্‌ সুন্নাহইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং- ১১৪৬)

আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ)এর ঘোড়ার ঘটনা: আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) অশ্বারোহী বাহিনী রোমানদের সাথে যুদ্ধের সময় ঘোড়ায় আরোহন করে সাগর পার হয়েছিলঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, তিনি উমার (রাঃ)এর খেলাফতকালে একদল সৈনিক নিয়ে যুদ্ধে বের হলেনশত্রু ও তার বাহিনীর মধ্যে একটি সাগর অন-রায় হয়ে দাঁড়ালতিনি আল্লাহর কাছে দুআ করে সাগরের উপর দিয়ে ঘোড়া ছুটালেন সাগর পাড় হয়ে তিনি শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে ফেরার পথে পুনরায় আল্লাহরকাছে দুআ করে মুসলিম বাহিনী নিয়ে সাগরের উপর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে পার হলেন (দেখুন আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৬/১৬২)

আরো কিছু কারামত:

. উরওয়াহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সাঈদ ইবনে যায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর বিরুদ্ধে আরওয়া বিনতে আওস নামক এক মহিলা মারওয়ান ইবনে হাকামের দরবারে মোকাদ্দামা পেশ করল; সে দাবি জানাল যে, ‘সাঈদ আমার কিছু জমি আত্মসাৎ করেছেন।সাঈদ বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (এ বিষয়ে ধমক) শোনার পরও কি আমি তার কিছু জমি দাবিয়ে নিতে পারি?’ মারওয়ান বললেন, ‘আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কি (ধমক) শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দাবিয়ে নেবে, (কিয়ামতের দিনে) সাত তবক জমিন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।এ কথা শুনে মারওয়ান বললেন, ‘এরপর আমি আপনার কাছে কোন প্রমাণ তলব করব না।সুতরাং সাঈদ (বাদী পক্ষীয়) মহিলার প্রতি বদ্দুআ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! এ মহিলা যদি মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে ওর চক্ষু অন্ধ করে দাও এবং ওকে ওর জমিতেই মৃত্যু দাও।
বর্ণনাকারী বলেন, ‘মহিলাটির মৃত্যুর পূর্বে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে গিয়েছিল এবং একবার সে নিজ জমিতে চলছিল। হঠাৎ একটি গর্তে পড়ে মারা গেল।-বুখারী ও মুসলিম
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, উহুদের যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়। রাতে আমাকে আমার পিতা ডেকে বললেন, ‘আমার মনে হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচরবৃন্দের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম শহীদ হবেন, আমিও তাঁদের অন্তর্ভুক্ত। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পর, তোমাকে ছাড়া ধরা-পৃষ্ঠে প্রিয়তম আর কাউকে ছেড়ে যাচ্ছি না। আমার উপর ঋণ আছে, তা পরিশোধ করে দেবে। তোমার বোনদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।সুতরাং যখন আমরা ভোরে উঠলাম, তখন দেখলাম যে, সর্বপ্রথম উনিই শাহাদত বরণ করেছেন। আমি তাঁর সাথে আর এক ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করলাম। তারপর অন্যজনকে তাঁর সঙ্গে একই কবরে দাফন করাতে আমার মনে শান্তি হল না। সুতরাং ছয়মাস পর আমি তাঁকে কবর হতে বের করলাম। (দেখা গেল) তার কান ব্যতীত (তার দেহ) সেদিনকার মত অবিকল ছিল, যেদিন তাকে কবরে রাখা হয়েছিল। অতঃপর আমি তাকে একটি আলাদা কবরে দাফন করলাম। .-বুখারী ] 

. আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীর মধ্য থেকে দুজন সাহাবী অন্ধকার রাতে তাঁর নিকট হতে বাইরে গমন করেন। আর তাঁদের আগে আগে প্রদীপের ন্যায় কোন আলো বিদ্যমান ছিল। পরে যখন তাঁরা একে অপর থেকে আলাদা হয়ে গেলেন, তখনও প্রত্যেকের সঙ্গে আলো ছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহে পৌঁছে গেলেন। (এটিকে বুখারী কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কোন কোন বর্ণনায়, ঐ দুই সাহাবীর নাম ছিল, উসাইদ ইবনে হুযাইর ও আববাদ ইবনে বিশ্র। রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।)  

   ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখনই কোন বিষয়ে আমি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বলতে শুনতাম, ‘আমার মনে হয়, এটা এই হবেতখনই (দেখতাম) বাস্তবে তাই হত; যা তিনি ধারণা করতেন!(বুখারী)

      ভন্ড নবী আসওয়াদ আনাসী আবু মুসলিম খাওলানী (রাঃ)কে আগুনে নিক্ষেপ করলে আবু মুসলিম আগুনের ভিতর নামায আদায় করেছেনআবুমুসলিম খাওলানীর কারামাত এই যে, ভন্ড নবী আসওয়াদ আনাসী আবু মুসলিমখাওলানীকে ডেকে নিয়ে বললঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আমি আল্লাহর রাসূল? আবুমুসলিম বললনেঃ আমি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছি নাআসওয়াদ আনাসী পুনরায় বললঃতুমি কি এই সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল? আবু মুসলিম বললেনঃ হ্যাঁইতিহাসের কিতাবগুলোতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে এছাড়া আরও অনেক কারামাত নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামএর যুগে, তারপর সাহাবী, তাবেয়ীদের যুগে প্রকাশিত হয়েছে এমনিভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবেএই কারামতগুলো তাদের পরবর্তী যুগে এবং বর্তমান যুগেও অব্যাহত রয়েছেএমনিভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে
         এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসারী নয় এমন লোকের হাতে যদি স্বাভাবিক অভ্যাসের বিপরীত কোন কিছু প্রকাশিত হয়, তবে তা কারামত নয়; বরং তা ফিতনা ও ভেলকিবাজিযার হাতে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, সে আল্লাহর অলী নয়; বরং শয়তানের অলী

 Source: http://www.bokolom.com  and Other

 

No comments:

Post a Comment

https://isignbd.blogspot.com/2013/10/blog-post.html

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য