Saturday, July 13, 2013

আল্লাহ'র ওলী: কারামত ও শয়তানীয়াত

আল্লাহ'র ওলী: কারামত ও শয়তানীয়াত

এটি এমন একটি ঘটনা, যা বর্ণনা করেছেন আল আযহার বিশ্ব বিদ্যালয়ের একজন শাইখ। আসুন ঘটনাটি শুনি।
শাইখ তার আলোচনায় বলেনঃ পূর্বকালে এমন একজন আলেম ও সৎ লোক ছিলেন, যিনি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দিতেন এবং অসৎ কাজের নিষেধ করতেন। এমনকি তিনি হাঁটে-বাজারে গিয়েও দাওয়াতী কাজ অব্যাহত রাখতেন। একবার তিনি বাজারে গিয়ে দেখলেন একজন আতর ব্যবসায়ী মাদক দ্রব্য তথা নেশা জাতীয় বস্তু বিক্রয় করছে। এ দৃশ্য দেখে স্বীয় অভ্যাস মোতাবেক তিনি জোরালো প্রতিবাদ করলেন। তিনি অনবরত প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে থাকলেন। এতে আতর ব্যবসায়ী অসন্তু হলো। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে উক্ত আলেম ও সৎ লোকটি পশুর ন্যায় জ্ঞানশুণ্য হয়ে গেলো। তাঁর অনুসারী ও ছাত্রগণ তাঁকে বাড়িতে নিয়ে গেলো। তারা তাদের উস্তাদের বিষয়টি নিয়ে হতাশ হয়ে গেলেন এবং চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে গেলেন। চিকিৎসা সম্পর্কে তারা লোকদেরকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলেন। লোকেরা এমন একজনই চিকিৎসকের কথা বললো, যাকে যুল জানাহাইন তথা দুই ডানা ওয়ালা বলে ডাকা হয়। অর্থাৎ তাদের বিশ্বাস ছিল যুল জানাহাইন দুই প্রকার ইলমের অধিকারী। একটি হচ্ছে শরীয়তের ইলম তথা যাহেরী ইলম আর অপরটি হচ্ছে হাকীকত-মারেফত তথা বাতেনী ইলম।
যাই হোক তাকে সেই যুল জানাহাইনের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। ছাত্ররা যুল জানাহাইনের কাছে তাদের উস্তাদের ঘটনা বর্ণনা করার পর সে বললোঃ মদ আতর ব্যবাসায়ীর (বিক্রয়কারীর) কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কারণেই তোমাদের উস্তাদের এই অবস্থা হয়েছে। তোমরা কি কি জান না যে, উক্ত মদ ব্যবসায়ী মানুষের মানুষের মাঝে বিরাট একজন অলী হিসাবে পরিচিত? এরপর যুল জানাহাইন ছাত্রদেরকে বললোঃ তোমরা তাকে ঐ আতর ব্যবসায়ীর (নেশা জাতীয় দ্রব্য বিক্রয়কারীর) কাছে নিয়ে যাও এবং তার কাছে ক্ষমা চাও। এতে তোমাদের উস্তাদ জ্ঞান ফিরে পাবে। তারা তাই করলো। তারা তাঁকে নিয়ে উক্ত আতর বিক্রেতা এবং কল্পিত অলীর কাছে নিয়ে গেলেন এবং তাদের উস্তাদকে ক্ষমা করে দেয়ার আবেদন করলেন। এতে আতর ব্যবসায়ী অলী আলেমের উপর সন্তুষ্ট হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরই ঘুমন্ত মানুষ জাগ্রত হওয়ার ন্যায় উক্তম স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেলেন এবং তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন।
এবার শরীয়তের এই আলেম তাঁর মুসীবতে পড়ার কারণ বুঝতে পারলেন এবং ইলমে মারেফতের গুরুত্বও বুঝতে সক্ষম হলেন। সুতরাং তিনি ঐ আতর ব্যবসায়ী (হাশীশ, মদ, হেরোইন ইত্যাদি) বিক্রয়কারীর কাছে ক্ষমা চাইলেন।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! এই ঘটনার বর্ণনাকারী হচ্ছেন মিশরের স্বনাম ধন্য ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শাইখ। তিনিও এই ধরণের কল্পিত কাহিনীতে বিশ্বাস করেন এবং মানুষের কাছে তা বর্ণনা করেন। আমাদের দেশের দিকেও যদি আমরা একটু দৃষ্টি দেই তাহলে দেখতে পাবো আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, কালেজ ও উঁচু মানের মাদরাসাগুলোর প্রফেসর, মুহাদ্দিছ, মুফাসসির, শিক্ষক, আদালতের বিচারপতি, আইনজীবিসহ সকল পেশার শিক্ষিত লোকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালনে খুবই যত্মশীল। তারা যখন ছাত্রদেরকে ক্লাশে পাঠ দান করতে যান তখন তারা প্রতিটি বিষয় পড়াতে গিয়ে ছাত্রদের জন্য উপযুক্ত রেফারেন্স সরবরাহ করতে সচেষ্ট থাকেন এবং সঠিক ও নির্ভুল তথ্যটিই প্রদান করতে গিয়ে বিষয়বস্তুর চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন। কোর্টের বিচারপতি ও আইনজীবিগণ আসামীকে অভিযুক্ত করার জন্য একাধিক সাক্ষী ও দলীল প্রমাণ খুঁজতে থাকেন।
কিন্তু যখন তারা কোন পীরের হাতে মুরীদ হতে যান তখন তারা পীরের এমন কারামত ও কাহিনীর কথা শুনে মুগ্ধ হয়ে যান এবং চোখ বন্ধ করে তা বিশ্বাস করেন, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তারা একবারের জন্যও যাচাই বাছাই করে দেখেন না যে, ইসলামী শরীয়তের সাথে এ বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক কি না?
আযহারের শাইখ যে কিচ্ছাটি শুনালেন তাতে দেখা যাচ্ছে শরীয়তের সুস্পষ্ট আদেশ লংঘনকারীও আল্লাহর অলী হতে পারে, শরীয়তের কোন বিধান না মানলেও প্রকৃত পক্ষে তারা আল্লাহর অলী। কেননা তারা তো কারামত দেখাতে পারে। তারা মানুষকে পাগল করে দিতে পারে, মৃতকে জীবিত করতে পারে, বৃষ্টি বর্ষণ করতে পারে এবং নদ-নদীও তাদের আদেশে চলে।
আমরা বলছিঃ এগুলো কারামত নয়। এগুলো হচ্ছে শয়তানীয়াত বা শয়তানের খেলা-তামাশা। এরা আল্লাহর অলী নয়; শয়তানের অলী। এই সমস্ত শয়তানীয়াতে যারা বিশ্বাস করে তাদের জীবদ্দশায় যদি মিথ্যুক ও কানা দাজ্জাল আসে তবে তারা সেই দাজ্জালের কথাও বিশ্বাস করবে। কিয়ামতের আগে দাজ্জাল এসেও অনেক বড় বড় কাজ করে দেখাবে। সে আকাশকে বৃষ্টি বর্ষণের আদেশ দিলে আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে, জমীনকে ফসল উৎপন্ন করতে বললে জমীন তা পালন করবে এবং সে মৃত মানুষকেও জীবিত করে দেখাবে। এগুলো দেখিয়ে সে রুবুবীয়তের দাবীও করবে। সুফীবাদের মাশায়েখরা এভাবে মানুষের জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট কারামত বর্ণনা করার মাধ্যমে মুসলিমদের জন্য দাজ্জালের প্রতি বিশ্বাস করার পথই যে সহজ করে দিচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের লোকেরা অলীদের কারামতে বিশ্বাসী। স্বাভাবিক ও প্রচলিত রীতির বাইরে যা প্রকাশিত হয় তাই কারামত। তার মাঝে এবং শয়তানীয়াতের মধ্যে পার্থক্য করার মূলনীতি হচ্ছে, আমরা দেখবো যে কার থেকে তা বের হয়েছে? তিনি যদি কুরআন ও সুনাহ-এর অনুসারী মুমিন ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং হারাম ও গর্হিত কাজ থেকে দূরে থাকেন তাহলে আমরা তাঁর কারামতে বিশ্বাস করি। এ ধরণের অনেক কারামত সাহাবী ও সালাফদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। এগুলো আমরা কখনই অস্বীকার করি না।
পক্ষান্তরে যারা মদ্যপায়ী, হারাম কাজে সদা মশগুল এবং শরীয়তের উপর আমল করে না, তাদের থেকে চিরাচরিত নিয়মের বাইরে কিছু বের হলে আমরা সেগুলোকে দাজ্জাল ও শয়তানের কাজ বলেই মনে করি। এগুলো ইসলামের পক্ষে নয়; বরং বিপক্ষে এবং ইসলামের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এ সব থেকে মুসলিমদের সাবধান ও সতর্ক থাকা জরুরী। সঠিক ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনই সকল প্রকার গোমরাহী থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।

 

No comments:

Post a Comment

https://isignbd.blogspot.com/2013/10/blog-post.html

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য