Showing posts with label মক্কা মদীনার ইসলামিক নিদর্শন. Show all posts
Showing posts with label মক্কা মদীনার ইসলামিক নিদর্শন. Show all posts

Saturday, September 28, 2013

মক্কা মদীনার ইসলামিক নিদর্শনসমূহ

মক্কা মদীনার ইসলামিক নিদর্শনসমূহ

 -জাকির হোসাইন আজাদী




আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির মধ্যে তাঁর প্রেরিত দূত নবী রসূলগণ জগতের শ্রেষ্ঠতম মানুষ। এই পৃথিবীতে তাঁরা যে সকল স্থানে আগমন করেছেন। পদচারণা করেছেন। দ্বীনের দাওযাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং বিভিন্ন মু'জিজা প্রদর্শন করেছেন সেই সকল স্থানগুলো বিশেষভাবে তাত্পর্যমণ্ডিত, ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত। যা দর্শন করলে ঈমানও মজবুত হয়। যাঁরা হজ্বে যাচ্ছেন তাঁরা ঐসব স্থান গুলোও দেখে আসার চেষ্টা করবেন যেমন—১। রাহমাতুল্লীল আলামীনের পবিত্র জন্মস্থান (ছওকুল্লাইল)। ২। হযরত খাদিজা (রা.)-এর ঘর। ৩। দারুল আরকাম বিন আবিল আরকাম। ৪। হযরত আলীর জন্মস্থান। ৫। জান্নাতুল মুয়াল্লাহ্ (কবরস্থান)। ৬। ওয়াদিয়ে ছারফ্ হযরত উম্মুল মুমেনীন মায়মুনা (রা.)-এর বিয়ে ও কবর। ৭। জাবালে নূর-এর গারে হেরা গুহা (কুরআন শরীফ নাযিলের পাহাড়)। ৮। জাবালে ছওর (হজরত রাসূলে করীম (স.) হিযরতের সময় যে পাহাড়ে ৩ দিন আত্মগোপন করেছিলেন।) ৯। মিনা (হযরত ইসমাইল আলাইহিচ্ছালামের কুরবানীর জায়গা)। ১০। মুযদালিফাহ্— (হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-দ্বয়ের পৃথিবীর প্রথম বাসর রাত বা ঘুমের জায়গা)। ১১। আরাফাহ—হজের ময়দান, যেখানে হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর পৃথিবীর প্রথম পরিচয় হয়েছিল। ১২। ওয়াদিয়ে মুহাসসার—বাদশাহ্ আবরাহার ধ্বংসস্থল। ১৩। ওয়াদীয়ে মুহাস্সাব—মিনা থেকে হরম শরীফে ফেরার পথে হুজুর (স.) এই জায়গায় অবতরণ করেন এবং মাগরিবের নামায আদায় করেন। এখানে একটি সুন্দর মসজিদ আছে। ১৪। হুদায়বিয়া—বর্তমান নাম (ছুমাইসীয়া, মক্কা থেকে ২১ কি.মি. দূর)। ১৫। ওয়াদিয়ে ফাতেমা—মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর অবতরণস্থল। ১৬। হুনাইন— মক্কা বিজয়ের পর এখানে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হয়, আল্লাহ ফেরেশতা দিয়ে এই যুদ্ধে মুসলমানদেরকে সাহায্য করেন। ১৭। জেরানা, বড় ওমরার জায়গা রাসূলুল্লাহ (স.) হুনাইন যুদ্ধের পর এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন, এটাই শ্রেষ্ঠ মিকাত। এখানে একটি মসজিদ আছে, যাকে মসজিদে রাসূল (স.) বলা হয়। ১৮। নাখলা—মক্কা থেকে ৪৫ কি.মি. দূরে মক্কা ও তায়েফের মাঝামাঝি এই উপত্যকা। এখানে খেজুর বাগান ছিল, এই অঞ্চলের নাম 'নাখলা'। এই জায়গাটি মিষ্টি পানির জন্য প্রসিদ্ধ। আল্লাহর নবীর জবানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শুনে জ্বীন জাতির ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা এখানেই ঘটে বলে জায়গাটি ঐতিহাসিক। মক্কা শরীফের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ মসজিদ :১। মসজিদে আবুবকর (রা.) এখানে হযরত আবুবকর (রা.)-এর বাড়ি ছিল। ২। মসজিদে খালেদ বিনওয়ালিদ। ৩। মসজিদে জ্বীন। ৪। মসজিদে বাইআহ্। ৫। মসজিদে খায়েফ। ৬। মসজিদে নামেরা। ৭। মসজিদ তাইঈম। মক্কার ঐতিহাসিক পাহাড়সমূহ :১। জবলে নূর। ২। জাবালে সওর। ৩। জাবালে আবু কোবাইস। ৪। জাবালে রহমত। কাবা শরীফ ও মক্কা শরীফের রহস্যপূর্ণ জায়গাসমূহ :১। আল্লাহর ঘরের ভেতরে, তবে সেখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করা সম্ভব নয় তাই হাতীমে (বাইতুল্লাহর পাশে গোলাকার দেয়াল ঘেরা কিছু উন্মুক্ত খালি জায়গা) নামায পড়ার সুযোগ আছে। ২। মুলতাজাম বা কা'বা ঘরের দরজা, ১৩৬৩ হিজরীতে বাদশা আব্দুল আজীজ আসেসৗদ একটি সুন্দর কাঠের দরজা লাগান, সেটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছিল। বর্তমান দরজাটি বাদশা খালেদ লাগিয়েছেন। এতে ২৮৬ কি. গ্রা. খাঁটি স্বর্ণ লাগানো আছে, এতে আল্লাহর ও কুরআন শরীফের আয়াত— 'কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহীম, লাতাকনাতুমির রাহমাতিল্লাহ্, ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা জামিয়া লেখা আছে। তাই এই আয়াত পড়ে এর উসিলা দিয়ে দোয়া করলে অবশ্যই দোয়া কবুল হয়। ৩। কাবা ঘরের পেছনের দেয়াল অর্থাত্ রোকনে ইয়ামানীর কাছে এখানো দোয়া কবুল ও নিষ্পাপ হওয়ার দলিল আছে। যেহেতু হুজুর (স.) হিযরতের পর এখানে দাঁড়িয়েই ১৬ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায আদায় করেছেন এবং কেবলা পরিবর্তনের দোয়া করেছিলেন। ৪। হাতীম বা হিজরে ইসমাইল হিজরে ইসমাইলের অপর নাম হচ্ছে হাতীমে কা'বা। এই হাতীমে হযরত ইসমাইল (আ.) ও তাঁর মা হযরত হাজেরা (আ.)-এর কবর আছে বলে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইসমাইল (আ.)-এর দোয়ার বরকতে এই বেহেশতি ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। আল্লাহর ঘরের ভেতর নামায পড়ার ইচ্ছা করলে হাতীমে পড়ে নিলেই তা আদায় হয়ে যাবে। ৫। হাজরে আসওয়াদ, বাইতুল্লাহ শরীফের পূর্বকোণে ৩/৪ ফুট উঁচুতে দেয়ালের ভেতরে সংরক্ষণ করা সেই পাথর বেহেশতের সবচেয়ে মূল্যবান পাথর। রূহের জগতে এই পাথরের উপরে হাত রেখে হুজুর (স.)-এর রূহ মুবারক আমরা আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহ আমাদের প্রভু এই প্রতিশ্রুতি পাঠ করিয়েছিলেন। হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আসার সময় আল্লাহ পাক সেই পাথর তার সাথে দিয়ে দেন, পরবর্তীতে তিনি সেটা জাবালে আবু কোবাইছে রাখেন তখন সে পাথর বরফের মত সাদা ও সূর্যের মত আলোকিত ছিল। নূহ (আ.)-এর বন্যার সময় আল্লাহ পাক পুনরায় আসমানে উঠিয়ে নেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দ্বারা কা'বা ঘর তৈরির সময় আবার তা ফেরেশতার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ইব্রাহীম (আ.) সেই পাথরকে আল্লাহর ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপন করেন। তাই এখান থেকেই তাওয়াফ শুরু হয়। হাদীস শরীফে আছে—হজরে আসওয়াদ প্রথম আবু কুবাইছ পাহাড়ে নাজিল হয়, সেখানে তা ৪০ বছর পর্যন্ত থাকে। তারপর তা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর আগেই-ভিত্তির ওপর লাগানো হয়। অর্থাত্-মাকামে ইব্যাহীম ও হিজরাল আসওয়াদ এই পাথর দু'টিই বেহেশতের পাথর। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আগেই হাজরে আসওয়াদ নাজিল হয়েছে। বন্যার সময় এটিকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। তারপরই ইব্রাহীম (আ.) এর কাবা শরীফ নির্মাণের সময় জিব্রাইল (আ.) তা নিয়ে আসেন।

যতবড় কঠিন হূদয়ের অধিকারী মানুষ হোন না কেন, আল্লাহর অসংখ্য নবী ও রসূলের স্মৃতিবিজড়িত দর্শনীয় স্থানগুলিতে গেলে মন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। প্রায় প্রত্যেকেই বলে থাকেন, যখন স্বচক্ষে কাবা শরীফ দেখলাম। কাবায় প্রবেশ করলাম। নামাজ পড়লাম। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম। তখন থেকেই মনের মাঝে অহর্নিশ আল্লাহ প্রেম, রসূল প্রেমের ঝড় বইতে শুরু করলো। কোথায় পরিবার-পরিজন, কোথায় ব্যবসা বাণিজ্য, কোথায় বন্ধু-বান্ধব, দুনিয়ার কোনো কিছুই মনে থাকে না, ভালো লাগে না, হূদয়ে এসে ভিড় জমেনা। হূদয় কন্দরে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে, তন্ত্রীতে-তন্ত্রীতে, রক্তের প্রবাহে কেবল আল্লাহর মহব্বতের বেহেশতি আবহ প্রবাহিত হয়ে যায়। ঢেউ খেলে যায় রসূল প্রেমের উত্তাল তরঙ্গমালা। মুখে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত ও গুঞ্জরিত হয় আল্লাহর জপমালা। কাবা শরীফ, মাকামে ইব্রাহিম, কাবার হাতিম, হিজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ জাবালে আবু কুবাইস, জাবালে নূর, জাবালে সওর, হযরত আবু বকর (রা.) এর বাড়ী, রসূলের জন্মস্থান, খাদিজা (রা.)-এর বাড়ী, জান্নাতুল মুয়াল্লা, ওয়াদিয়ে মুহাসসার, দারুল আরকাম, আরাফা ময়দান, মুজদালেফার প্রান্তর, মিনার ঐতিহাসিক প্রান্তর, তায়েফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড় এ সমস্ত স্থানে যাওয়া ও দেখার পর প্রত্যেক হাজীর মন কেঁদে ওঠে, চোখ অশ্রুসিক্ত না হয়ে পারে না। আর মদীনা শরীফ যাওয়ার পর রসূলের রওজার কাছে গিয়ে হজ্ব পালনকারীগণ কেঁদে জারে জার হয়ে যান। কেননা এটা সেই স্থান যেখানে শায়িত রয়েছেন, আমাদের শাফায়াতের কাণ্ডারি যার সুপারিশ ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নাই। যিনি উম্মত হিসেবে আমাদের না চিনলে নিষ্কৃতির কোনো রাস্তা নেই। যিনি হাশরের ময়দানে অগণিত মানুষের মধ্য হতে তাঁর উম্মতদের বাছাই করবেন ও নিজ হাতে হাউজে কাওছারের পানি পান করাবেন এবং সঙ্গে করে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। যেখানে রসূল (স.) এর রওজা হয়েছে ঐ স্থানে তাঁর সঙ্গে তাঁর দুইসহচর হয়রত আবু বকর ও হযরত ওমর (রা.) রয়েছেন তাদের কথাও স্মরণে আসে। কারণ ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে হযরত আবু বকরের অবদান অনস্বীকার্য। বাল্যকাল থেকে রসূল (স.) এর ইন্তেকাল পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে বিপদে আপদে যুদ্ধে সন্ধিতে সকল সময়, সকল স্থানে ছায়ার মত সাথে সাথে থেকেছেন। রসূল (স.) বলেছেন, আবু বকর আমার বাল্যকালের সাথী, হিজরতের সাথী জান্নাতেরও সাথী। আরো বলেছেন, দুনিয়ার সব মানুষের ঈমান যদি এক পাল্লায় দেয়া হয়, আর আবু বকরের ঈমান যদি আর এক পাল্লায় দেয়া হয় তাহলে আবুবকরের ঈমানের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আর ওমর (রা.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব জাহেলিয়াতের যুগের মানুষেরা যার ভয়ে সর্বদা প্রকম্পিত ছিল। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন প্রকাশ্য দিবালোকে ফিরে আসে ইসলাম। রসূল (স.) তাঁর জীবদ্দশায় বলে গেছেন, লা নাবিয়্যা মিম বাআদি, লাকানা ওমার, আমার পরে কোনো নবী নেই, যদি আল্লাহ কারো নবী বানাতেন তাহলে অবশ্যই ওমরকে আল্লাহ নবী বানিয়ে দিতেন। আর একজনের জায়গা খালি রয়েছে, যেখানে হযরত ঈসা (আ.) কে দাফন করা হবে। রসূল (স.) এর রওজা ও মিম্বর এর মাঝে একটি জায়গা রয়েছে। যার নাম রিয়াজুল জান্নাহ। অর্থাত্ বেহেশতের টুকরা। সেখানে নামাজ পড়া অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। মসজিদে নববীতে ৮ দিনে মোট ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বিশেষ মর্যাদার। কেননা মসজিদে নববীতে এক রাকাআত নামাজ পড়া ৫০ হাজার রাকাআত নামাজ পড়ার সমান। মসজীদে নববীর পার্শ্বেই রয়েছে জান্নাতুল বাকী কবরস্থান। যেখানে রসূল (স.) এর হাজার হাজার সাহাবীর কবর রয়েছে। তাছাড়া সেখানে রসূল (স.) এর প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা.), হযরত হাসান (রা.), জয়নুল আবেদীন, হযরত আয়শা (রা.)সহ সকল উম্মুল মুমেনীনগণ (কেবলমাত্র খাদিজা (রা.) ছাড়া) হযরত আবু হরায়রা (রা.), হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.), আবু আইয়ুব আনসারী (রা.)সহ প্রায় ৩০ হাজার সাহাবীর কবর এখানে রয়েছে। রসূল (স.) তাঁর ইন্তেকালের আগে এই জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে বিদায়ী ছালাম জানিয়ে বলেছিলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া দারু কউমি মু'মিনীন। তার পর মসজিদে কেবলাতাইন বা দুই কেবলার মসজিদ। রসূল (স.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর ১৭ মাস ধরে মসজিদে আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়েন। সেই সময় প্রায় প্রায় তিনি আকাশের দিকে তাকাতেন এই আশা নিয়ে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যদি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত কাবাঘরকে কেবলা নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে খুবই ভালো হতো। আল্লাহ পাক রসূল (স.) এর মনের আকুতি বোঝেন, তাঁর চোখের ভাষা উপলব্ধি করেন। অবশেষে একদিন আসরের নামাজে দুই রাকায়াত পড়ার শেষে আয়াত নাজিল করে মসজিদে হারামকে কাবা হিসেবে পুনরায় ফিরিয়ে দেন। যে আয়াতে বলা হয়েছে, 'ফাওয়াল্লি অজহাকা শাতরল মসজিদিল হারাম' অর্থাত্ হে নবী (স.), আপনি আপনার চেহারা এখুনি মসজিদে হারামের দিকে ফেরান তখন বাকী দুই রাকাআত মসজিদে হারামের দিকে ফিরেই পড়েন। এটাও দর্শনীয় একটি স্থান। তারপর মসজিদে জুমআ। রসূল (স.) হিজরতের পর মদীনায় আসার সময় এই স্থানে জুমআ ফরজ হয়। মক্কার ১৩ বছরের নবুয়াতি জীবনে এই জুমআ ফরজ ছিল না। যখন ফরজ ঘোষণা হলো রসূল (স.) সেখানেই জুমআ পড়লেন। এই স্থানে সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর মসজিদে কুব্বা যা ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম মসজিদ। আল্লাহ কুরআনে বলেন, ইন্না আওয়ালু উসসিসা আলাত তাকওয়া হুয়া মসজিদু কুব্বা। অর্থাত্ তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রথম নির্মিত মসজিদই হলো কুব্বা। রসূল (স.) যখন হিজরতে বের হয়েছিলেন। এই কুব্বার মানুষেরাই তাকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছিলেন। তারা প্রতিদিন একটি উঁচু টিলার ওপর বসে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আর রাত হলে ঘরে ফিরতেন। একদিন তারা ঘরে ফেরার পর দুর থেকে রসূলের হিজরতের কাফেলা দেখে একজন ইহুদী কুব্বার লোকদের বলেছিলেন, হে কুব্বাবাসি, তোমরা প্রতিদিন যার জন্য অধীর আগ্রহে মরুপানে অপলক দৃষ্টি দিয়ে অপেক্ষা করো, তিনি আসছেন। ঐ দেখো, তাঁর কাফেলা দেখা যায়। তখন কুববায় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় নবী, প্রিয় রসূল (স.) কে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। নবীজী (স.) সেখানে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এটা অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। তারপর বদরের প্রান্তরটি সময় থাকলে যাওয়া উচিত্। যেখানে ইসলামের প্রথম ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়ালা সেখানে এক হাজার ফেরেশতা সৈনিক দিয়ে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। এরপর ওহুদের প্রান্তরে গিয়ে সেই ঘটনার উপলব্ধি করা। যেখানে রসূল (স.) এর রক্ত ঝরেছে। দাঁত মোবারক শহীদ হয়েছে। চাচা আমীর হামজা শহীদ হয়েছেন। ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়েছেন। এসব স্থানগুলি দর্শন করে আসতে পারলে যতদিন বেঁচে থাকবেন, শয়তান ধোকা দিয়ে সহজেই বিপথগামী করতে পারবে না। আল্লাহ সকল হজ্বযাত্রীকে এসমস্ত দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে আসার তাওফীক দান করুন, আমীন। 

ই-মেইল :mzhazadi @ yahoo.Com
Source: http://www.ittefaq.com.bd


Releted Link:

জাযীরাতুল আরব বা সৌদি আরব:ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন - সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে

 


 Bee






Thursday, July 11, 2013

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী

মসজিদে নববী মানে নবীর মসজিদ। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনা শরিফে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। পবিত্র কাবা শরিফ মসজিদে হারামের পরেই মদিনা মসজিদের অবস্থান। মহানবীর হিজরতের আগ পর্যন্ত মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ইয়াসরিবের নাম পাল্টে রাখেন মদিনা। হিজরতের পর মুসলমানদের নামাজের জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক নির্মিত হয় মদিনা মসজিদ। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরের পর থেকে শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাল নির্ধারণ করা হয়।
 নির্মাণপ্রক্রিয়া
মুহাম্মদ(সা:) মদিনা মসজিদের নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই জন বালকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন। এর ক্ষুদ্র একটি অংশে বাসস্থান নির্মাণ করতঃ বাকী অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রতিটি কোণ থেকে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো একটি ক্ষেত্র। বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ দাৎড়ালো ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। অর্থাৎ মদিনা মসজিদের প্রাথমিক আয়তন ছিল ১০০*১০০ হাত বা ৫৬*৫৬ গজ। মসজিদের ভিত্তি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তর নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্র-শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এই রৌদ্র-শুষ্ক ইট বাকী আল-খাবখাবা উপত্যাকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর করার জন্য, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার উপর কাঁদামাটির আস্তরণ লেপে দেয়া হয়েছিল। সে সময় মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে যা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতেন ও বাহির হতেন। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ যা "বাবে রহমত" নামে পরিচিত। তৃতীয় প্রবেশ পথটি ছিল পূর্ব দেয়ালে যা দিয়ে মুহাম্মদ (সা:) এ মসজিদে প্রবেশ করতেন। এ জন্য এটির নাম হয় "বাব উন নবী", ঐতিহাসিক উইনসিংকের মতে, মদিনা মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। মদিনা মসজিদেই সর্ব প্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান বা মিনার ও ওজুর স্থান সংযোজন করা হয়। বর্তমানে মদিনা মসজিদে আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত। সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে এটিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মুসল্লীর নামাযের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। 
সংস্কার ও সম্প্রসারণ

মদিনা মসজিদ বা মসজিদে নববী মুসলমান শাসকদের দ্বারা বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সা:) ওফাতের পর হযরত ওমর (রা:) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে রববীর সম্প্রসারণ করেন। তিনি মসজিদটি উত্তর দিকে ৩০ হাত, দক্ষিণ দিকে ১০ হাত, পশ্চিম দিকে ২০ হাত সম্প্রসারণ করেন। হযরত ওমর (রা:) এর সময় মসজিদের পরিমাণ দাঁড়ায় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত, পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত। হযরত ওসমান (রা:) এর সময় ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুরপাতার পরিবর্তে ছাদে সেগুণ কাঠ ব্যবহার করা হয়। ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০*১৩০ হাত। এ সময় সম্প্রসারিত হয়ে মসজিদের আকার দাঁড়ায় উত্তর দক্ষিণে ১৬০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত। খলিফা আল ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে মসজিদে নববীকে সাজিয়ে তোলেন। তাঁর সময় মসজিদে নববীর পরিমাপ দাঁড়ায় ২০০*২০০ হাত। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সর্ব প্রথম মদিনা মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার নির্মাণ করেন আল ওয়ালিদ। তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত এবং প্রস্থে ছিল ৮ হাত। খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন ৩০০*৩০০ হাত। আর মামলুক সুলতান কয়েত-বে মসজিদে নববীতে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন। এতে গম্বুজ করা হয় ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে। গম্বুজ সবুজ রং-এর আস্তরণ দিয়েছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমান আধুনিকায়নে মসজিদ-এ নববীর রূপদান করেন সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ। এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ মসজিদ আধুনিকায়ন করা হয়। বিশালকার মসজিদে নববীর সমস্ত রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের।
জিয়ারত 
ইসলামে ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে তিন মসজিদে ভ্রমণ করার অনুমোদন আছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো মক্কা মুকাররমা বা কাবা শরীফ (সৌদি আরব)। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মসজিদ আল-আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস : ইসলামের প্রথম কিবলা (ফিলিস্তিন)। তৃতীয়টি হলো মদীনা আল-মুনাওয়ারার মসজিদে নববী : নবীজিকে যেখানে চির শয়নে শায়িত করা হয়েছে। মদীনা নবীর শহর, একে আরবিতে বলা হয় ‘মদীনাতুন নবী।’ আর মদীনার প্রাণকেন্দ্র হলো ‘মসজিদে নববী।’ মদীনার ৯৯টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) মদীনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন, একে হারাম বা সম্মানিত ঘোষণা করেছেন।
* হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, ঘর থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়লে একটি উমরাহ্র সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে নববী থেকে সামান্য দূরে ইসলামের ১ম মসজিদ কুবা অবস্থিত।
* মসজিদে নববীর ভেতরে স্বয়ংক্রিয় ছাদের ব্যবস্থা আছে, যা দিনের বেলা সুইচের মাধ্যমে খুলে দেওয়া হয় আর রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মসজিদে নববীতে নারীদের জন্য আলাদা নামাজ পড়ার জায়গা আছে। ভেতরে কিছুদূর পরপর পবিত্র কোরআন মজিদ রাখা আছে, আর পাশে আছে জমজম পানি খাওয়ার ব্যবস্থা।
*পাশেই ‘জান্নাতুল বাকি’ গোরস্তান। এখানে হযরত ফাতেমা (রা.), বিবি হালিমা (রা.) ও হযরত ওসমান (রা.) সহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামের কবর রয়েছে। এর একপাশে নতুন কবর হচ্ছে প্রত্যহ। এখানে শুধু একটি পাথরের খন্ড দিয়ে চিহ্নিত করা আছে একেকটি কবর।
* মসজিদে নববীর উত্তর দিকের গেট দিয়ে বেরিয়েই সাহাবাদের মসজিদ। পাশাপাশি দু’টি এবং একটি একটু দূরে একই ডিজাইনে করা তিনটি মসজিদ। এগুলোকে ‘সাহাবা মসজিদ’ বলা হয়। হযরত আলী, ওমর ফারুক ও আবু বকর (রাহ.) মসজিদ।
* মসজিদে নববীতে সালাত আদায় ও দোয়া করার উদ্দেশ্যেই মদীনায় গমন এবং সালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা ও সালাম পৌঁছানোর ইচ্ছা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের থাকে।
* জিয়ারত ও নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মদীনায় যাওয়া সুন্নত। মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার ফজিলত বেশি।
* মসজিদে নববীতে জিয়ারতের জন্য ইহরাম বাঁধতে বা তালবিয়া পড়তে হয় না। তবে মদীনা থেকে যদি মক্কায় আবার আসতে হয়, তাহলে মিকাত বীর আলী পার হলে ইহরাম বেঁধে আসতে হবে।

Watch these Video:




Same Label's Other Link
http://isignbd.blogspot.com/2013/09/blog-post_18.html

Wednesday, July 10, 2013

মসজিদে জীন, মক্কার ঐতিহাসিক নিদর্শন

মসজিদে জীন, মক্কার ঐতিহাসিক নিদর্শন



শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: মসজিদটি হাজুন পর্বতের নীচে এবং হাজুন ব্রিজের পঞ্চাশ মিটার দূরে অবস্থিত। সূরা জীনের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে মসজিদটিকে জীন মসজিদ নামকরণ করা হয়েছে। এই মসজিদের পাশ দিয়ে একটি ছোট্ট পথ চলে গেছে যাকে জীন মসজিদের সড়ক বলা হয়।
এই মসজিদে সূরা জীন অবতীর্ণ হওয়ার কারণে এটাকে জীন মসজিদ নামকরণ করা হয়েছে। আল্লাহ এই সূরায় বলছেন: জীনরা আল্লাহর আয়াত শুনেছে এবং তার প্রতি ঈমান এনেছে।
যে স্থানে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় সেখানে এই মসজিদ তৈরি করা হয়। জীনরা এই স্থানে রাসূল(সা.)-এর হাতে বয়াত করেছিল বলে এই মসজিদকে মসজিদুল বয়াতও বলা হয়।
রাসূল(সা.) তায়েফ থেকে ফেরার পথে একটি খোরমা গাছের নীচে বিশ্রাম নেন এবং রাত্রে নামাজ পড়ে কুরআন তিলাওয়াত করেন। ঐ সময়ে সাতটি জীন রাসূল(সা.)-এর কুরআন তিলাওয়াত শুনে অন্যদের কাছে গিয়ে খবর দেয়। রাসূল(সা.) এর পরও কয়েকবার সেখানে গিয়ে জীনদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। এখানেই সূরা জীনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং রাসূল(সা.)-কে জীনদের ঈমান আনার সংবাদ দেয়।
বর্তমানের মসজিদটিও ঠিক পূর্বের স্থানেই রয়েছে এবং মসজিদটির সংস্কার করার পর বর্তমানে এর আয়তন ৬০০ বর্গ মি.।

Watch these vedio

Tuesday, July 9, 2013

জাযীরাতুল আরব বা সৌদি আরব:ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন - সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে

সৌদি আরব:ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন 
- সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে


এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে লোহিত সাগর, আরব সাগর ও পারস্যোপসাগরের নীল বারিরাশি বাহু বেষ্টনে অবস্থান করছে এক বিশাল ভূখন্ড, যাকে বলা হয় জাযীরাতুল আরব বা সৌদি আরব। যেখানে রয়েছে বিশ্ব মুসলিমের প্রাণ কেন্দ্র মসজিদুল হারাম বেষ্টিত বায়তুল্লাহ শরীফ। এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর কাবা শরীফ (দুই হাজার বছর আগে কাবা শরীফের স্থানটি) সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এর ফাউন্ডেশন সাত জমীনের নীচ পর্যন্ত প্রোথিত রয়েছে। বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার পাশে রয়েছে হাজরে আসওয়াদ, বায়তুল্লাহর দরজার ২ গজ ডানে মেঝেতে গেঁথে রাখা কয়েকটি লাল পাথরের সোজা নীচে হযরত ইব্রাহীম (আ:) কাবার সংস্কারকালে মসল্লা তৈরী করেছিলেন। কাবার উত্তর পাশে রয়েছে হাতীমে কাবা। এর সোজাসুজি উপরে মিজাবে রহমত। এর ঠিক নীচে নীল রঙ্গের একটি পাথর ছিল, আর ঠিক এ স্থানেই হযরত ইসমাঈল (আ:)’র কবর শরীফ এবং তাঁর পূর্বপার্শ্বে মা হাজেরা (আ:) এর কবর শরীফ রয়েছে। এতে রয়েছে জমজম কূপ, মিম্বরে রাসুলিল্লাহ (দ:) সহ অসংখ্য ইসলামী নিদর্শন। অনুরূপভাবে ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে মদিনা মনোয়ারায় মসজিদে নববী শরীফে। এটি ঐ শহর, যাকে উদ্দেশ্য করে হযরত উমর (রা:) বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার রাস্তায় শাহাদাতের মৃত্যু দাও এবং তোমার নবীর শহরে আমাকে মৃত্যু দান করিও। (বুখারী) এ পূণ্যভূমি কেবল উম্মতে মুহাম্মদীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে, এমনটি নয়, বরং স্বয়ং নবীজি (দ:) অধিক পরিমাণে ভালবাসতেন। আর মহান আল্লাহর দরবারে দো’আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরে মদিনা শরীফের ভালবাসা দান করুন যেমন আমরা ভালবাসি মক্কা শরীফকে অথবা এর চাইতে বেশি। (জাযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব)
প্রতিবছর বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ আশেকে রাসুল (দ:) ছুটে যান মক্কা-মদিনার পানে। দিন দিন হাজিদের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব হাজিদের স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা করতে সম্প্রসারণ সময়ের দাবি এটি যেমন সত্য। ঠিক তেমনি ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ সংরক্ষণ ও রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব। পবিত্র কুরআন করিমে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- “কেউ আল্লাহর নির্দশনাবলীকে সম্মান করলে এটাতো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই বহি:প্রকাশ।’ (হাজ্জ্ব:৩২) ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে, ওসমানী ও আব্বাসী খেলাফত আমলে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর এ বাণীর প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ সম্পাদন করেছে, যা অব্যাহত ছিল তুর্কী খেলাফতকাল পর্যন্ত। কিন্তুু দুভার্গ্য হলেও সত্য যে, ১৪৩৪ হিজরী মোতাবেক ২০১৩ সালে সৌদি বাদশাহ আবদুলাহ কর্তৃক গৃহিত সম্প্রসারণ প্রকল্প এর ব্যতিক্রম নীতি অবলম্বন করেছে। যার কারণে এটি বিজ্ঞমহলের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ।
সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মসজিদে হারামে মহানবী (দ:) এর মেরাজ তথা উর্ধ্বগমন যাত্রার স্থানটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং তাঁর জন্মস্থানটিও নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ডেইলি দি ইনডিপেনডেন্ট’ গত ১৫ মার্চ ‘দ্য ফটোস সৌদি আরাবিয়া ডাজন’ট, ওয়াল্ট সিন-অ্যান্ড প্রুফ ইসলাম’স মোষ্ট হলি বেলিকস আর বিং ডিমলিশড ইন মেক্কা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইনডিপেনডেন্টের হাতে ছবিতে দেখা গেছে, শ্রমিকরা ড্রিল মেশিন ও যান্ত্রিক খননযন্ত্র দিয়ে কিভাবে মসজিদুল হারামের পূর্ব পার্শ্বে ওসমানী ও আব্বাসী খেলাফত আমলে স্থাপিত নিদর্শগুলো ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে। অনেক সংস্কার কাজের পরও মসজিদুল হারামে গত কয়েকশ বছরের পুরনো কয়েকটি স্তম্ভ থেকে যায়। কাবা শরীফকে ঘিরে মারবেল পাথরের নির্মিত মেঝের ঠিক পরপরই মসজিদুল হারামের এসব কলামের অবস্থান।
ওসমানী ও আব্বাসী খেলাফত আমলে মক্কা শরীফে মসজিদুর হারামে অনেক কলামে জটিল কিছু আরবীয় ক্যালিওগ্রাফি খোদাই করা হয়েছিল। যাতে মুহাম্মদ (দ:) এর সাহাবীদের নাম এবং তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তগুলোর কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে এমন একটি স্তম্ভ ইতিমধ্যে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে বিশ্বনবী (দ:) বোরাকের মাধ্যমে রাতের কিছু অংশে উর্ধ্বগমন করে ফিরে এসেছিলেন।
সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ এই সম্প্রসারণ কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে মসজিদুল হারামের ইমাম আবদুর রহমান সুদাইসিকে নিয়োগ দিয়েছি। আর এ সম্প্রসারণ কাজের দায়িত্বে পেয়েছে দেশটির অন্যতম নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সৌদি বিন লাদেন গ্রুপ।
বিজ্ঞ সমালোচকরা সৌদি শাসকদের ইসলামের পবিত্র শহরদ্বয়ে ইসলামের প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অনৈতিকভাবে অসম্মান প্রদর্শন করার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা গালফ ইনষ্টিউড এর প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা দেখা যায়, আধুনিকায়নের পথে মক্কায় হাজার বছরের ৯৫ শতাংশ ভবন কেবল গত দুই দশকেই ইবনে সওদের বংশধরের হাতে ধবংস হয়েছে। ইসলামের সূচনাকালের নিদর্শন কয়েক ডজন ঐতিহাসিক স্থান এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে প্রত্নতাত্ত্বিক ও পন্ডিতদের অব্যাহত তাগাদার মধ্যেই এই ধবংসযজ্ঞও বেড়েই চলেছে। অনতি বিলম্বে বাইত আল মাউলিদ বা মুহাম্মদ (দ:) এর জন্মস্থানটি ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
ইসলামিক হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইরফান আল আলভি ছবিগুলো দেখার পর বলেন, মসজিদুল হারামের ওসমানী ও আব্বাসী স্তম্ভগুলো অপসারনের ঘটনাটি ইসলামী ঐতিহ্য সম্পর্কে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম অনীহা প্রদর্শন করতে পারে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কারণ মসজিদটির নির্দিষ্ট কিছু এলাকার স্তম্ভের দারুণ তাৎপর্য রয়েছে, বিশেষ করে যেখানে হুজুর (দ:) বসতেন এবং নামাজ আদায় করতেন। এসব ঐতিহাসিক রেকর্ড মুছে ফেলা হচ্ছে। একজন নতুন মুসলমান কখনই এমন কোন সূত্র খুজে পাবে না, যাতে এসব জায়গা আবার খুজে বের করা যায়। তিনি আরো বলেন, “মক্কা ও মদিনা সম্প্রসারণ করতে আপনার কাছে তো অনেক উপায় আছে, যাতে ঐতিহাসিক স্থানও রক্ষা পায়।”
লন্ডন সৌদি দূতাবাসের কাছে যখন ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, মক্কা ও মদিনা সম্প্রসারণের কাজের ব্যাপারে এবং ঐতিহাসিক স্থানসমূহ কেন সংরক্ষণ করা হচ্ছে না? ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, কল করার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তুু কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
অথচ নবীদের কর্মকান্ড স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ সংরক্ষণের রীতি নীতি শিক্ষা দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন। যেমন “মকামে ইব্রাহীম” যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ:) কাবাঘর পূর্ণনির্মাণ করেছিলেন। কাবাঘর নির্মাণ কাজ এসে ইব্রাহীম (আ:) পাথরটি বর্তমানে অবস্থিত জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে একে মকামে ইব্রাহীম বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং নামাজের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। আর তাই প্রত্যেক হাজীকে কাবা শরীফের তাওয়াফ শেষে মকামে ইব্রাহীমকে সামনে রেখে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একথা সুষ্পষ্ট হয় যে, হজ্জ্বের প্রত্যেকটি আহকাম কোন নবী কিংবা কোন পূণ্যবানমনিষীর স্মৃতিচারণ।
আর বিংশ শতাব্দীতে এসে ইসলামী ঐতিহ্য ও নিদর্শন মুছে ফেলা সুপরিকল্পিতভাবে- এটা নবীবিদ্বেষ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর মহান আল্লাহ নবী বিদ্বেষীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে বারণ করে ইরশাদ করেন, [ওহে রাসূল (দ:)] আপনি আল্লাহ এবং আখেরাতের বিশ্বাসী মুমিন সম্প্রদায়কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:) এর বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্বস্থাপনকারী রূপে দেখতে পাবেন না। (মুজাদালাহ:২২)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মালেকী মজহাবের বিখ্যাত ইমাম কাজ্বী আয়াজ মালেকী (রা:) তাঁর রচিত শেফা শরীফে বর্ণনা করেন- আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (দ:) এর প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হলো- আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (দ:) এর প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং তাদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা। (শেফা শরীফ, ২য় খন্ড)
পরিপূর্ণ ঈমানদারের পরিচয় দিতে গিয়ে নবী করিম (দ:) ইরশাদ করেন- তোমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিনরূপে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নবী তার নিকট নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুুতি এবং অন্যান্য সকল লোকের চেয়ে অধিকতর প্রিয়ভাজন হবো না। (ছহীহ বুখারী শরীফ)
অতএব, ওআইসি এবং জাতিসংঘের উচিত বিশ্বের মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র মক্কা-মদীনা শরীফে ইসলামী ঐতিহ্য ও নিদর্শন বিশেষত রাসূল (দ:) এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহ সংরক্ষনে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্যথায় বিশ্ব মুসলিম এর যথার্থ জবাব দিতে প্রস্তুত।

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য