Showing posts with label ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শন (Islamic architectural Sign). Show all posts
Showing posts with label ইসলামিক স্থাপত্য নিদর্শন (Islamic architectural Sign). Show all posts

Wednesday, July 17, 2013

দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো মুসলিম নিদর্শন বাংলাদেশে! সাড়ে তেরো শ বছর আগের মসজিদ। পাল্টে যাবে দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিমদের আগমনের ইতিহাস

দক্ষিন এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো মুসলিম নিদর্শন বাংলাদেশে! সাড়ে তেরো শ বছর আগের মসজিদ। (পাল্টে যাবে দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিমদের আগমনের ইতিহাস)

- কাজল রশীদ ও ইফতেখার মাহমুদ 


দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। এক পাশে দু-এক ঘর করে ফাঁকা জনবসতি। মোটেই ঘনবসতিপূর্ণ নয় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাটের পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের রামদাস গ্রাম। অথচ এখানেই আবিষ্কৃত হয়েছে ৬৯ হিজরিতে নির্মিত মসজিদ। সামনে ফসলের মাঠটি একদা ছিল চকচকার বিল। এলাকার প্রবীণ মানুষের কাছে স্থানটি আজও সাগরের ছড়া নামে পরিচিত, যার অনতিদূরে তিস্তা নদীর অবস্থান। ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম অববাহিকাগুলোর একটি। কাজেই এই অববাহিকায় ৬৯ হিজরি বা ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে একটি মসজিদ নির্মাণের ঘটনা বিস্ময় জাগানিয়া হলেও একেবারে অস্বাভাবিক নয়। শৌখিন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক টিম স্টিলও তেমনটাই মনে করেন। বাংলাদেশ ভূখণ্ডের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলজুড়ে যে প্রাচীন সভ্যতা খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে গড়ে উঠেছিল, তার সঙ্গে প্রাচীন রোমান ও আরব-সভ্যতার সম্পর্ককে ইতিহাসের স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবেই দেখেন টিম স্টিল। সভ্যতার সঙ্গে সভ্যতার এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই আরব বণিকেরা লালমনিরহাটের ওই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেনএমনটাই মনে করেন তিনি

স্থানীয় অধিবাসী এবং ইতিমধ্যে গঠিত হারানো মসজিদ কমিটির সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়তাঁদের দাবি অনুযায়ী এই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর একজন সাহাবা। যিনি এই অঞ্চল দিয়ে চীনে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এবং চীনের বিস্মৃত কোয়াংটা নদীর ধারে কোয়াংটা শহরে তাঁর নির্মিত মসজিদ ও সমাধি রয়েছে। ওই সাহাবির নাম আবু আক্কাছ (রা.) ৬৯ হিজরিতে তৈরি মসজিদের ধ্বংসাবশেষের ওপরই গড়ে উঠেছে বর্তমানের মসজিদ কমপ্লেক্স

মোস্তের আড়া বা মজদের আড়া
বর্তমানের হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যে স্থানে অবস্থিতসেই স্থানটি একদা পরিচিত ছিল মোস্তের আড়া বা মজদের আড়া নামে। স্থানীয় অধিবাসী দেলওয়ার হোসেন জানানস্থানটি টিলার মতো ছিল। ওখানে কেউ যেত না। তবে অনেকেই আগরবাতিমোমবাতিফুলধুপ ইত্যাদি ওই স্থানে রেখে আসত। এখানে মসজিদমন্দির না অন্য কিছু আছে কিছুই জানত না তারা। উল্লেখ্যস্থানীয় ভাষায় আড়া শব্দের অর্থ হলো জঙ্গলময় স্থান। দীর্ঘদিনের পতিত এই জঙ্গলে স্থানীয় লোকজন হিংস্র জীবজন্তুসাপ-বিচ্ছু ইত্যাদির ভয়ে ভেতরে প্রবেশ করত না

জানা যায়রামদাস এলাকায় বর্তমানে যাঁরা বসবাস করছেনতাঁদের পূর্ব পুরুষরা ২০০ বছর আগে এখানে বসতি শুরু করেন। হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স যা আগে আড়া নামে পরিচিত ছিলতার একদা মালিক ছিলেন পচা দালাল। তাঁর কাছে থেকে কিনে নেন ইয়াকুব আলী। আনুমানিক সময়কাল ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দ। পরবর্তী সময়ে উত্তরাধিকার সূত্রে জায়গাটির মালিক হন নবাব আলী। হারানো মসজিদ আবিষ্কারের পর তিনি জায়গাটা হারানো মসজিদ কমপ্লেক্সের নামে দিয়ে দেন

যেভাবে আবিষ্কার
৬৯ হিজরির হারানো মসজিদ তায়ালিমুল কোরআন নূরানি মাদ্রাসার শিক্ষক হাফিজ নূর আলম জানানমজদের আড়ায় চাষাবাদ করার জন্য খোঁড়া শুরু হয় ১৯৮৩-৮৪ সালের দিকে। টিলাটি সমতল করার জন্য খোঁড়া শুরু হলে এখানে প্রচুর ইট পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকজনের ধারণাপুরোনো কোনো জমিদার কিংবা রাজরাজড়ার বাড়ি হয়তো এখানে ছিল। এ কারণে তারা এ নিয়ে কোনো রূপ সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি। যে যার মতো ভাঙা ইটের টুকরো নিয়ে গেছে এবং বেশির ভাগই তারা নিজেদের বাড়িঘরের কাজে লাগিয়েছে। কিন্তু একটা ঘটনায় পাল্টে যায় পুরো ঘটনাচক্র

ছটকে পড়া’ ইট
একটা ইটের ছিটকে পড়ার ঘটনাস্থানীয় ভাষায় ছটকে পড়ার মধ্য দিয়েই মজদের আড়ায় আবিষ্কৃত হয় ৬৯ হিজরি বা ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দের হারানো মসজিদ। স্থানীয় অধিবাসী আফছার আলী বলেন, ‘আমরা ঘটনাটিকে অলৌকিক বলেই মনে করি। ঘটনাটা হলোআইয়ুব আলী নামে রামদাসের একজন বাসিন্দা অন্য অনেকের মতো মজদের আড়া থেকে ইট কুড়িয়ে নিয়ে যানযা পরিষ্কার করার সময় দেখতে পানইটের গাদা থেকে একটা ইট যেন আলাদাভাবে ছিটকে পড়ল। তিনি আশ্চর্য হন এবং কৌতূহল বোধ করেন। ছিটকে পড়া ইটটার ওপর কী যেন লেখা দেখতে পান। টিউবওয়েলের পানিতে ইটটা ভালো করে ধুয়ে নেন। তারপর ইটটা অন্যদের দেখালে সবাই দেখতে পানওই ইটটি একটি প্রাচীন শিলালিপিযার আকার ৬XXওপরে স্পষ্টাক্ষরে লেখালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ হিজরি সন ৬৯। এই ঘটনায় স্থানীয় লোকদের মনে দৃঢ় প্রত্যয় জন্মেএটা কোনো হারানো মসজিদের ধ্বংসাবশেষ

অলৌকিক কাহিনি
ওই ঘটনার পর তখনো মজদের আড়ায় নামাজ পড়া শুরু হয়নি। এক রাতে আফছার আলী শুনতে পান একজন বলছেন (কণ্ঠটা ঠিক তাঁর ভায়রা নওয়াব আলীর মতো) চলোআমরা মজদের আড়ায় নামাজ পড়ি। নামাজ পড়ার জন্য তিনি বেরিয়েও পড়েন। একসময় পৌঁছে যান ভায়রার বাড়িতে। অপেক্ষা করেনকিন্তু ভায়রা আর ভেতর থেকে বের হন না। পরে ডাকাডাকি শুরু করেন এবং বলেন নামাজ পড়ার জন্য ডেকে নিয়ে এসে তুমি আর বেরোচ্ছ না কেনএ কথা শুনে নওয়াব আলী তাজ্জব বনে যান। ঘটনাটা এলাকায় জানাজানি হলেসবাই মিলে ওই দিন থেকেই নামাজ পড়া শুরু করেন। এলাকাবাসীর মতেসেটা ৮৬ সালের ঘটনাওই দিন ছিল মহররমের ১০ তারিখ। পরবর্তী সময়ে এখানেই নির্মাণ করা হয় হারানো মসজিদ কমপ্লেক্স এবং একটি নূরানী মাদ্রাসা
উল্লেখ্যএর আগে এলাকাবাসী নামাজ পড়ত তিন কিলোমিটার দূরের সুবেদার মুনছুর খাঁ নিদাঁড়িয়া মসজিদেযা একই ইউনিয়নের নয়ারহাট পাড়ায় অবস্থিত। এই মসজিদটি মোগল আমলের স্থাপত্যকীর্তির সাক্ষ্য বহন করছে। অবশ্য এটিও দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালে ছিল। স্থানীয় লোকজন গরু খুঁজতে গিয়ে এই মসজিদটি জঙ্গলের ভেতর খুঁজে পায়। অবশ্য এলাকাবাসী তারও আগে ছয় থেকে সাত কিলোমিটার দূরের রতিপুরের কেরামতিয়া বড় মসজিদে নামাজ পড়তে যেত

সাক্ষী শিলালিপি
যে শিলালিপির আলোকে হারানো মসজিদকে ৬৯ হিজরির বলা হচ্ছেসেই শিলালিপি এখন নানা হাত ঘুরে রংপুরের তাজহাট জমিদারবাড়ির জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। শিলালিপিটি রামদাসবাসীর কাছ থেকে নিয়ে যান কুড়িগ্রামের একজন সাংবাদিক। তাঁর কাছ থেকে পরবর্তী সময়ে সংগ্রহ করে সংরক্ষণের জন্য রাখা হয় তাজহাট জমিদারবাড়ি জাদুঘরে। উল্লেখ্য১৯৯৩ সালে রংপুুরের টাউন হলে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়। যার বিষয় ছিল হিজরি প্রথম শতাব্দীতে ইসলাম ও বাংলাদেশ। এতে সভাপতিত্ব করেন কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কুদ্দুস বিশ্বাস। প্রবন্ধকার ও সব আলোচক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে৬৯ হিজরি অর্থাৎ ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে সাহাবায়ে কেরামগণ কর্তৃক এই হারানো মসজিদ নির্মাণ করা মোটেই অসম্ভব নয়
একজন টিম স্টিল
কর্মসূত্রে টিম স্টিল তখন বাংলাদেশের টাইগার ট্যুরিজম নামের একটি পর্যটন উন্নয়নবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা। সাউথ ওয়েলসে স্ত্রী ক্রিস্টিন ও দুই মেয়ের সঙ্গে ছুটি কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরলেন তিনি। ছুটে গেলেন লালমনিরহাটে। খুঁজে বের করলেন প্রাচীন মসজিদটি। তিনি বাংলা ও উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাস তন্ন তন্ন করে খুঁজতে শুরু করলেন। ৬৪৮ খ্রিষ্টাব্দে কে কেন লালমনিরহাট এলাকায় ওই মসজিদ নির্মাণ করল তা খুঁজতে নেমে গেলেন তিনি। যোগাযোগ করলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সঙ্গে। তারা আগ্রহ দেখাল না। বেশির ভাগ প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ বললেন এত আগে ওই অঞ্চলে মসজিদ নির্মিত হওয়ার কথা না। বাংলার ইসলাম বিস্তারের ইতিহাসের প্রভাবশালী ধারা বলে ১০০০ শতকে চট্টগ্রামে সুফিদের প্রথম আগমন ঘটে। ১১০০ থেকে ১২০০ শতকে সুফিদের হাত ধরে পূর্ববাংলায় ইসলামের প্রচার ও প্রসার শুরু। তাঁদের হাতেই এই অঞ্চলে প্রথম মসজিদ নির্মাণ হয়। পরে সুলতান ও মোগলদের হাত ধরে তার আরও প্রসার ঘটে

মসজিদের ইট হাতে টিম স্টিল

লালমনিরহাটের এক প্রত্যন্ত গ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন মসজিদ রয়েছেএটা প্রমাণের জন্য টিম স্টিল সহায়তা নিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্নতাত্ত্বিকদের সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজিস্টের। সেখানকার ইসলামের ইতিহাস ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে গবেষণা করেন এমন সব গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। তাঁরা বললেন হ্যাঁহতে পারে। কেননারোমান ও জার্মান অনেক ইতিহাসবিদের লেখায় আরব ও রোমান বণিকদের ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় নৌ-বাণিজ্যের সূত্রে আসা-যাওয়ার কথা লিপিবদ্ধ আছে। আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব আর্কিওলজি টিম স্টিলকে জানায়তাদের বেশ কয়েকটি চলমান গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-তিস্তা অববাহিকাকে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরোনো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের নৌপথ হিসেবে ব্যবহূত হওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে
টিম জানতে পারলেনব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পাড় ধরে সিকিম হয়ে চীনের ভেতর দিয়ে আরব বণিকদের বাণিজ্যবহরের যাতায়াতের অনেক প্রমাণও টিমের হাতে আসে। টিমের গবেষণায় আরও প্রমাণ মেলে খ্রিষ্টপূর্ব সময় থেকে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা দিয়ে চীন ও ভারতবর্ষ থেকে রোমান ও আরবরা পণ্য নিয়ে যেত। রোমানদের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগের আরও প্রমাণ তিনি পান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সুফি মোস্তাফুির রহমানের ওয়ারি-বটেশ্বর সভ্যতা নিয়ে গবেষণায়। নরসংদী থেকে কিশোরগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে প্রাচীন নগর-সভ্যতার যে নিদর্শন মোস্তাফিজুর রহমান পেয়েছেনতাতে এটা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে পড়ছেদক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা বাংলাদেশ ভূখণ্ডে গড়ে উঠেছিল। পঞ্চগড়ের ভিটাগড়ে প্রাচীন নগরের নিদর্শন পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক অধ্যাপক শাহনেওয়াজের গবেষণা থেকেও সহায়তা পান টিম। বগুড়ার মহাস্থানগড় বা নওগাঁর প্রাচীন মসজিদ এই সবকিছুকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে গড়ে ওঠা প্রাচীন-সভ্যতার ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখতে চান টিম স্টিল
এই শৌখিন প্রত্নতাত্ত্বিক ১৯৯৮ সাল থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস অনুসন্ধানের মধ্য দিয়ে জীবনের আরেক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। লালমনিরহাটে দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীন মসজিদের খোঁজ পেয়ে এই অঞ্চলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার যে নেশা তাঁকে পেয়ে বসেছে তা থেকে মুক্ত হতে চান না তিনি। তাই তো নিজ উদ্যোগে ও খরচে চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁর শখের প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা
বাংলাদেশের ওই হারানো মসজিদের ওপর আরও গবেষণা হওয়া উচিত এই আকুতি রেখে টিম বলেনওই মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস খুঁজে পেলে হয়তো বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ইতিহাসের সঙ্গে বিশ্ব সভ্যতার সম্পর্কের আরেক ইতিহাস জানার পথ খুলে যাবে। রোমানচৈনিকআরব আর বাংলাএই চার অঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক জানা গেলে হয়তো পৃথিবীর ইতিহাস অন্যভাবে লিখতে হবে। টিম স্টিলের গবেষণায় প্রতীয়মান হচ্ছেএটি এক হাজার তিন শ চৌষট্টি বছর আগের মসজিদ! যার সূত্র ধরে পাল্টে যাবে দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিমদের আগমনের ইতিহাস

Source: প্রথম আলোতারিখ: ১৯-১০-২০১২



See This Video:

 

Browse this link please For aljazeera Report with video:

Ancient mosque unearthed in Bangladesh 


''Sign of Rasulullah'' Label's Other Link:


Sunday, July 14, 2013

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো কিছু মসজিদ

পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো কিছু মসজিদ
 -


Masjid al-Qiblatain

এই মসজিদটি সাওদিয়া আরবের মদিনা নগরীতে অবস্থিত। ৬২৩ইং সালে মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়। মূলত সুন্নী মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত। 

Great Mosque of Kufa
এই মসজিদটি ইরাকের কুফা নগরীতে অবস্থিত। ৬৩৯ইং সালে মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়। মূলত শিয়া মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত।  

Mosque of Uqba
এই মসজিদটি তিউনিশিয়ার Kairouan নগরীতে অবস্থিত। ৬৭০ইং সালে মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়। মূলত সুন্নী মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত। 

Imam Hussain Mosque
এই মসজিদটি ইরাকের কারবালা নগরীতে অবস্থিত। ৬৮০ইং সালে মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়। মূলত শিয়া মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত।  

Al-Zaytuna Mosque
এই মসজিদটি তিউনিশিয়ার তিউনিশ নগরীতে অবস্থিত। ৭০৯ইং সালে মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়। মূলত সুন্নী মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত। 

Umayyad Mosque
এই মসজিদটি সিরিয়ার দামেস্ক নগরীতে অবস্থিত। ৭১৫ইং সালে মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়। মূলত সুন্নি মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত।

Great Mosque of Xi'an
এই মসজিদটি চীনের Xi'an, Shaanxi নগরীতে অবস্থিত। ৭৪২ইং সালে মসজিদটি প্রথম তৈরি করা হয়। মূলত সুন্নী ও শিয়া মুসলমানদের মসজিদ হিসেবে পরিচিত। 

Great Mosque of Xi’an, China

Great Mosque of Xi’an, China


Located near the Drum Tower on Huajue Lane of Xi’an, Shaanxi Province, the Great Mosque of Xi’an is one of the oldest, largest and best-preserved Islamic mosques in China. It is really well worth a trip to see the Great Mosque, not only for its centuries-old history but also for its particular design of mixed architecture combining traditional Muslim and Chinese styles.
The Great Mosque was originally built in 742 during the Tang Dynasty (618-907) to honor the founders of Islam in China. Islam was introduced into Northwest China by Arab merchants and travelers from Persia and Afghanistan during the mid-7th century when some of them settled down in China and married Han people. Their descendants became Muslim of today.
The Great Mosque is about 250 meters from east to west and 50 meters from south to north, covering an area of 13,000 square meters. Unlike most mosques in Middle Eastern or Arab countries, this mosque has neither domes nor traditional-style minarets; it has the layout of a Chinese temple, with successive courtyards on a single axis and pavilions and pagodas adapted to suit Islamic function. Unlike a typical Buddhist temple, however, the grand axis of the Great Mosque of Xi’an is aligned from east to west, facing Mecca. The complex consists of four courtyards, each with a signature pavilion, screen, or freestanding archway, leading to the prayer hall located at the western end of the axis. Landscaped with gardens, the further you stroll into its interior, the more serene you feel.
At the center of the courtyard is an imposing wooden archway, dating back to the 17th century. This nine-meter high archway is a four columned roofed structure buttressed on all sides by wooden props, anchored into stone bases. Multiple tiers of meticulously carved dougong brackets support its blue glazed tile roof. Three chambers stand either side of the archway, in which is now displayed some furniture preserved from the Ming and Qing dynasties.

In the center of the second courtyard there is a stone memorial archway, behind which stand two steles on both sides. On one stele is the script of a famous calligrapher named Mi Fu of the Song Dynasty; the other is from Dong Qichang, a calligrapher of the Ming Dynasty. Their calligraphy is considered to be a great treasure in the art of handwriting due to the elegant yet powerful characters.

At the entrance to the third courtyard is a hall that contains many steles from ancient times. As you enter the courtyard, you will see the Xingxin Tower (Tower for Introspection). This brick tower is over ten-meter tall with three stories separated by eaves and wrapped by wooden balconies. Its eaves are decorated with blue glazed tiles and dragon heads are carved into the ridges. Inside, a moveable staircase leads up to the ceiling caissons, which are carved and brightly painted with lotus flowers.

The prayer hall, preceded by a large platform, is at the western end of the fourth courtyard. Before the platform stands the Phoenix Pavilion. Its roofline connects three distinct pavilions, extending from the central hexagonal structure towards two pyramidal roofed gazebos. This apparently Chinese roofline conceals the wooden cupola that crowns the central space, carried on squinches, attesting to the continued use of imported Islamic elements in interior space.

The Prayer Hall covers an area of 1,300 square meters. Its ceilings are carved with over 600 classical scriptures. Huge wooden boards inscribed with the Koran in Arabic and Chinese are placed in the hall. They are marvelous carvings of art, rarely seen in the other mosques in the world. This hall can hold more than 1,000 Muslims in service and prayer services are held five times everyday respectively at dawn, noon, afternoon, dusk and night according to traditional custom.

The Great Mosque is the largest Islamic service center in Xi’an, and it is the only mosque in the country that is open to visitors. Non-Muslims, however, are not admitted to the main prayer hall or during times of prayer.


Watch this video:

আলহামদুল্লিাহ! ইউরোপজুড়ে গির্জা ভেঙে গড়ে উঠছে পবিত্র মসজিদ

আলহামদুল্লিাহ! ইউরোপজুড়ে গির্জা ভেঙে গড়ে উঠছে পবিত্র মসজিদ 

লিখেছেন: মহানন্দা

 

যুক্তরাজ্যের একটি ক্যাথলিক গির্জা মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। কব্রিজের সেন্ট পিটার্স ক্যাথলিক চার্চের স্থানে গড়ে উঠবে ‘মদীনা মসজিদ’ নামক পবিত্র মসজিদ। উপাসনাকারীর সংখ্যা অস^াভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় গির্জাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
গির্জার একজন মুখপাত্র বলেছে, এই গির্জাটির রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এর পূজারির সংখ্যা এতটাই কমে গেছে যে, এখানে একজন যাজক রাখা এবং ভবনের রক্ষণাবেক্ষণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এভাবে ইউরোপজুড়েই খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি খ্রিস্টান ধর্মের স্থান দখল করে নিচ্ছে পবিত্র দ্বীন ইসলাম।
ফ্রান্সের বিখ্যাত এমানুয়েল মুনিয়ার, জর্জেস বার্নানোস, ফ্রাসোয়া মরিয়াক, জ্যাক মরিটেইন, তেইলহার্ড ডি চার্ডিনসহ বহু গির্জার স্থানে মজসিদ, শো-রুম ও শপিং মল গড়ে উঠছে। দা অবজার্ভেটরি ফর রিলিজিয়াস হেরিটেজ জানায়, প্রথমবারের মত (খ্রিস্টান) উপাসনালয়গুলো ভেঙে সেখানে পার্কিং সুবিধা, রেঁস্তোরা, বুটিক হাউস, বাগান ও ঘরবাড়ি গড়ে উঠছে।
ফ্রান্সের সিনেট জানিয়েছে, দেশটির ২,৮০০ খ্রীস্ট ধর্মীয় ভবন উচ্ছেদ করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ও ফ্রান্সে ৪০,০০০ যাজক ছিলো। এখন সেই সংখ্যা নেমেছে ৯০০০-এ। অনেক গির্জা ভেঙে গড়ে উঠেছে মসজিদ।
সেইন্ট ক্রিস্টোফারের পুরাতন গির্জা কুই মালাকফ নান্টিসের স্থানে গড়ে উঠেছে ‘ফোরকান মসজিদ’।
ইতিহাসবিদ ডিডিয়ার রিকনার লিখেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম গির্জাগুলো গুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গত জুনে ভিরজনের সেইন্ট-ইলোই গির্জাকে মসজিদে রূপান্তর করা হয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেই দা ন্যাশনাল ফেডারেশন অব দা গ্রেট মস্ক অব প্যারিস খালি পড়ে থাকা গির্জাগুলোকে জুমার নামাযের জন্য ভাড়া দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছে।
জার্মানির বড় বড় গির্জাগুলোকে নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। ব্রান্ডেবার্গের সেইন্ট বার্নার্ড গির্জাটি বিক্রির দাম হাকা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার ইউরো। গত ১০ বছরের এই এলাকায় এটি নিয়ে ২৫টি গির্জা বিক্রি হবে। ‘ঈশ্বর মৃত’ সেøাগান দিয়ে জার্মানির গির্জাগুলো বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন স্পিরিটের হিসেবে, আগামী দুই বছরের মধ্যে জার্মানির ৪৫ হাজার গির্জার মধ্যে ১৫ হাজার বা প্রায় এক তৃতীয়াংশই উচ্ছেদ অথবা বিক্রি হয়ে যাবে।
তবে দাবি করা হচ্ছে, অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে গির্জাগুলো বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে না। জার্মানরা ক্রমেই ধর্ম ত্যাগ করছে। প্রতি ৭৫ সেকেন্ডে একজন জার্মান গির্জায় যাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে।
জার্মানি ইভানজেলিকাল চার্চই ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে ৩৪০টি গির্জা বন্ধ করে দিয়েছে। সম্প্রতি হামবুর্গে মুসলিম সম্প্রদায় একটি গির্জা কিনে নিয়েছে।
জার্মানির প্রভাবশালী দার স্পাইজেল সাময়িকী জানায়, স্পানদাউয়ে সেন্ট রাফায়েল গির্জাকে মুদি দোকানে রূপান্তর করা হয়েছে, নাস্তিক কাল মার্কসের শহরে একটি গির্জাকে জিমে পরিণত হয়েছে। কোলোনে একটি গির্জাকে বিলাসবহুল বাসভবেন পরিণত করা হয়েছে, যেখানে প্রাইভেট পুলও তৈরি করা হয়েছে।
ফ্রাঙ্কফুটে গত শতাব্দীর ৫০ এর দশকে প্রোটেস্ট্যান্টের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজারে। এখানকার এক চতুর্থাংশ গির্জাই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
নেদারল্যান্ডে প্রতি সপ্তাহে দুটি খ্রীস্ট ধর্মীয় ভবন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যাজক জান স্টুইট বলেছে, ‘নেদারল্যান্ডে রবিবার গির্জায় ক্যাথলিকদের উপস্থিতি ছিল ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, শতকরা ৯০ জন। এখন এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১০ জনে।’
নেদারল্যান্ডে প্রতি বছর ৬০টি খিস্টীয় উপাসনালয় উচ্ছেদ, বন্ধ অথবা বিক্রি হয়ে যায়। ১৯৭০ সাল থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ২০৫টি গির্জা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ সময় ১৪৮টি গির্জাকে লাইব্রেরি, রেঁস্তোরা, জিম, অ্যাপার্টমেন্ট ও মসজিদে রূপান্তর করা হয়েছে। আমস্টারডামে একটি গির্জার জায়গায় গড়ে উঠেছে ফিটি কামি পবিত্র মসজিদ। শহরের সবচেয়ে পুরনো সেইন্ট জ্যাকোবাস গির্জাটিকে বিলাসবহুল বাসভবনে রুপান্তর করা হয়েছে।
এই শহরের প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জাগুলোর অনুসারীর সংখ্যা প্রতি বছর ৬০,০০০ করে কমছে। এই হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালে এখানে আর কোনো প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান থাকবে না।
সম্প্রতি ইউট্রেস্টট ও আমস্টারডামের দুটি গির্জাকে মসজিদে রুপান্তর করা হয়েছে। এই হলো পাশ্চাত্যের বর্তমান অবস্থা। সূর্যাস্তের দেশগুলোয় খ্রীস্ট ধর্মের সূর্য এরূপ করুণভাবে অস্ত যাচ্ছে। সেখানে উদিত হচ্ছে প্রাচ্যের নতুন সূর্য ‘পবিত্র দ্বীন ইসলাম’।


সাগরের পানিতে ভাসমান মসজিদ

সাগরের পানিতে ভাসমান মসজিদ

- কাব্য রহমান


প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্যের একটি ব্যাবিলনের ঝুলন্ত উদ্যানের কথা শুনলে মনে হয় বিশাল এক বাগান যেন শূন্যে ঝুলে আছে আর বাতাসে দোল খাচ্ছে। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়। তেমনি দূর থেকে দেখলে মনে হবে ভেসে আছে কিন্তু আসলে ভেসে নেই, এমন একটি মসজিদ আছে মরক্কোয়।

বাদশাহ দ্বিতীয় হাসান এ মসজিদটি তৈরি করেছেন কাসাব্লাঙ্কা শহরে। মসজিদটির নির্মাণ কাজ করেছেন ফরাসি কোম্পানি বয়গিসের প্রকৌশলীরা। আর এর নকশা তৈরি করেছিলেন বাদশা হাসানের ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনচিউ।
মসজিদটিকে যে কারণে ভাসমান মসজিদ বলা হয় সেটি হলো মসজিদটির তিনভাগের একভাগ আটলান্টিক মহাসাগরের ওপর অবস্থিত। দূরের কোনো জাহাজ থেকে দেখলে মনে হয়, ঢেউয়ের বুকে যেন মসজিদটি দুলছে আর মুসলি্লরা যেন নামাজ পড়ছেন পানির ওপর।
মসজিদটি কিন্তু ছোটখাটো নয়। এখানে প্রায় ১ লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। এর মিনারের উচ্চতা ২০০ মিটার! আর মেঝে থেকে ছাদের উচ্চতা ৬৫ মিটার। মসজিদের ছাদটি প্রতি ৩ মিনিট পরপর যান্ত্রিকভাবে খুলে যায়। ফলে মসজিদের ভেতরে প্রাকৃতিক আলো ও মুক্ত বাতাস প্রবেশ করতে পারে। তবে বৃষ্টির সময় ছাদটি খোলা হয় না। মসজিদটি এতই বড় যে, এর মূল কাঠামোর ভেতরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গির্জা সেন্ট পিটার্সকেও অনায়াসে বসিয়ে দেওয়া যাবে। ২২.২৪ একর জায়গার ওপর অবস্থিত এ মসজিদের মূল ভবনের সঙ্গেই আছে লাইব্রেরি, কোরআন শিক্ষালয়, ওজুখানা এবং কনফারেন্স রুম।


২৫০০ পিলারের ওপর স্থাপিত এ মসজিদের ভেতরের পুরোটাই টাইলস বসানো। শুধু তাই নয়, কোথাও কোথাও আবার সোনার পাত দিয়ে মোড়া। মসজিদ এলাকার আশপাশে সাজানো আছে ১২৪টি ঝরনা এবং ৫০টি ক্রিস্টালের ঝাড়বাতি। এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৮৭ সালের আগস্টে। প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক ও কারুশিল্পীর দিনে দুই শিফট শ্রমের ফলে প্রায় সাত বছরে নির্মিত হয় এ মসজিদ।
মসজিদটির উদ্বোধন করা হয় ১৯৯৩ সালের ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর দিনে। বিলাসবহুল এ মসজিদটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে তৎকালীন ৮০ কোটি ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা!
 

Source: http://www.somewhereinblog.net

 

Watch these video:  

Thursday, July 11, 2013

The most beautiful and famous Mosques around the world

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী

মসজিদে নববী মানে নবীর মসজিদ। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনা শরিফে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। পবিত্র কাবা শরিফ মসজিদে হারামের পরেই মদিনা মসজিদের অবস্থান। মহানবীর হিজরতের আগ পর্যন্ত মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ইয়াসরিবের নাম পাল্টে রাখেন মদিনা। হিজরতের পর মুসলমানদের নামাজের জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক নির্মিত হয় মদিনা মসজিদ। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরের পর থেকে শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাল নির্ধারণ করা হয়।
 নির্মাণপ্রক্রিয়া
মুহাম্মদ(সা:) মদিনা মসজিদের নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই জন বালকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন। এর ক্ষুদ্র একটি অংশে বাসস্থান নির্মাণ করতঃ বাকী অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রতিটি কোণ থেকে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো একটি ক্ষেত্র। বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ দাৎড়ালো ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। অর্থাৎ মদিনা মসজিদের প্রাথমিক আয়তন ছিল ১০০*১০০ হাত বা ৫৬*৫৬ গজ। মসজিদের ভিত্তি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তর নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্র-শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এই রৌদ্র-শুষ্ক ইট বাকী আল-খাবখাবা উপত্যাকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর করার জন্য, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার উপর কাঁদামাটির আস্তরণ লেপে দেয়া হয়েছিল। সে সময় মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে যা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতেন ও বাহির হতেন। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ যা "বাবে রহমত" নামে পরিচিত। তৃতীয় প্রবেশ পথটি ছিল পূর্ব দেয়ালে যা দিয়ে মুহাম্মদ (সা:) এ মসজিদে প্রবেশ করতেন। এ জন্য এটির নাম হয় "বাব উন নবী", ঐতিহাসিক উইনসিংকের মতে, মদিনা মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। মদিনা মসজিদেই সর্ব প্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান বা মিনার ও ওজুর স্থান সংযোজন করা হয়। বর্তমানে মদিনা মসজিদে আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত। সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে এটিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মুসল্লীর নামাযের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। 
সংস্কার ও সম্প্রসারণ

মদিনা মসজিদ বা মসজিদে নববী মুসলমান শাসকদের দ্বারা বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সা:) ওফাতের পর হযরত ওমর (রা:) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে রববীর সম্প্রসারণ করেন। তিনি মসজিদটি উত্তর দিকে ৩০ হাত, দক্ষিণ দিকে ১০ হাত, পশ্চিম দিকে ২০ হাত সম্প্রসারণ করেন। হযরত ওমর (রা:) এর সময় মসজিদের পরিমাণ দাঁড়ায় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত, পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত। হযরত ওসমান (রা:) এর সময় ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুরপাতার পরিবর্তে ছাদে সেগুণ কাঠ ব্যবহার করা হয়। ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০*১৩০ হাত। এ সময় সম্প্রসারিত হয়ে মসজিদের আকার দাঁড়ায় উত্তর দক্ষিণে ১৬০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত। খলিফা আল ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে মসজিদে নববীকে সাজিয়ে তোলেন। তাঁর সময় মসজিদে নববীর পরিমাপ দাঁড়ায় ২০০*২০০ হাত। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সর্ব প্রথম মদিনা মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার নির্মাণ করেন আল ওয়ালিদ। তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত এবং প্রস্থে ছিল ৮ হাত। খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন ৩০০*৩০০ হাত। আর মামলুক সুলতান কয়েত-বে মসজিদে নববীতে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন। এতে গম্বুজ করা হয় ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে। গম্বুজ সবুজ রং-এর আস্তরণ দিয়েছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমান আধুনিকায়নে মসজিদ-এ নববীর রূপদান করেন সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ। এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ মসজিদ আধুনিকায়ন করা হয়। বিশালকার মসজিদে নববীর সমস্ত রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের।
জিয়ারত 
ইসলামে ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে তিন মসজিদে ভ্রমণ করার অনুমোদন আছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো মক্কা মুকাররমা বা কাবা শরীফ (সৌদি আরব)। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মসজিদ আল-আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস : ইসলামের প্রথম কিবলা (ফিলিস্তিন)। তৃতীয়টি হলো মদীনা আল-মুনাওয়ারার মসজিদে নববী : নবীজিকে যেখানে চির শয়নে শায়িত করা হয়েছে। মদীনা নবীর শহর, একে আরবিতে বলা হয় ‘মদীনাতুন নবী।’ আর মদীনার প্রাণকেন্দ্র হলো ‘মসজিদে নববী।’ মদীনার ৯৯টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) মদীনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন, একে হারাম বা সম্মানিত ঘোষণা করেছেন।
* হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, ঘর থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়লে একটি উমরাহ্র সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে নববী থেকে সামান্য দূরে ইসলামের ১ম মসজিদ কুবা অবস্থিত।
* মসজিদে নববীর ভেতরে স্বয়ংক্রিয় ছাদের ব্যবস্থা আছে, যা দিনের বেলা সুইচের মাধ্যমে খুলে দেওয়া হয় আর রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মসজিদে নববীতে নারীদের জন্য আলাদা নামাজ পড়ার জায়গা আছে। ভেতরে কিছুদূর পরপর পবিত্র কোরআন মজিদ রাখা আছে, আর পাশে আছে জমজম পানি খাওয়ার ব্যবস্থা।
*পাশেই ‘জান্নাতুল বাকি’ গোরস্তান। এখানে হযরত ফাতেমা (রা.), বিবি হালিমা (রা.) ও হযরত ওসমান (রা.) সহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামের কবর রয়েছে। এর একপাশে নতুন কবর হচ্ছে প্রত্যহ। এখানে শুধু একটি পাথরের খন্ড দিয়ে চিহ্নিত করা আছে একেকটি কবর।
* মসজিদে নববীর উত্তর দিকের গেট দিয়ে বেরিয়েই সাহাবাদের মসজিদ। পাশাপাশি দু’টি এবং একটি একটু দূরে একই ডিজাইনে করা তিনটি মসজিদ। এগুলোকে ‘সাহাবা মসজিদ’ বলা হয়। হযরত আলী, ওমর ফারুক ও আবু বকর (রাহ.) মসজিদ।
* মসজিদে নববীতে সালাত আদায় ও দোয়া করার উদ্দেশ্যেই মদীনায় গমন এবং সালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা ও সালাম পৌঁছানোর ইচ্ছা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের থাকে।
* জিয়ারত ও নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মদীনায় যাওয়া সুন্নত। মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার ফজিলত বেশি।
* মসজিদে নববীতে জিয়ারতের জন্য ইহরাম বাঁধতে বা তালবিয়া পড়তে হয় না। তবে মদীনা থেকে যদি মক্কায় আবার আসতে হয়, তাহলে মিকাত বীর আলী পার হলে ইহরাম বেঁধে আসতে হবে।

Watch these Video:




Same Label's Other Link
http://isignbd.blogspot.com/2013/09/blog-post_18.html

Wednesday, July 10, 2013

ইস্তানবুলের পথেঃ মুসলিম স্থাপত্য কলার অপূর্ব নিদর্শন ব্লু মস্ক

ইস্তানবুলের পথেঃ মুসলিম স্থাপত্য কলার অপূর্ব নিদর্শন ব্লু মস্ক

- এম ই জাভেদ

 

ছোট বেলায় খুব বইয়ের পোকা ছিলাম আমি । একেবারে বুক ওয়ার্ম যাকে বলে আর কি। পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি সময় পেলেই কোন না কোন গল্পের বই নিয়ে বসে যেতাম। একবার কোন বই নিয়ে বসলে ওটা শেষ না হওয়া অবধি দুদণ্ড স্বস্তি মিলত না মনে। কর্ম জীবনে এসে ব্যস্ততার অজুহাতে সে অভ্যাসকে নির্বাসনে পাঠিয়েছি বহু আগে। এখন আমার অবসরের সঙ্গী ইন্টারনেটের গুগল, ফেসবুক, অনলাইন পত্রিকা আর বাংলা ব্লগ। ছোট বেলার অভ্যাসের সূত্রে ইস্তাম্বুলের গল্প পড়েছি সম্ভবত সৈয়দ মুজতবা আলির কোন এক বইয়ে। সে থেকেই পরবর্তীতে একটু একটু করে জেনেছি মুসলিম সভ্যতার অনেক ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ইস্তাম্বুল শহরকে। এ শহরে আছে মুসলিম শৌর্য বীর্যের প্রতীক অটোমান সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদ – তপকাপি প্যালেস। এ প্যালেস এক সময় ছিল বর্তমান হোয়াইট হাউজের মত বিশ্ব শাসনের কেন্দ্র বিন্দু। তাছাড়া এ শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, যার মধ্যে অন্যতম সুলতান আহমেদ মসজিদ বা ব্লু মস্ক। ইস্তাম্বুলের বুক চিরে প্রবাহমান রয়েছে বসফরাস প্রণালী যা বিনি সুতোর মালার মত দুই দিক থেকে সংযুক্ত করে রেখেছে মর্মর সাগর আর কৃষ্ণ সাগরকে। বিশ্ব মানচিত্রে ইস্তাম্বুলই এক মাত্র শহর যার এক অংশ পড়েছে এশিয়ায় অন্য অংশ ইউরোপে। এক শহরে অবস্থান করে দুই মহাদেশের টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের আমেজ নেওয়ার সুযোগ যে কোন মনুষ্য সন্তানের জন্য অবশ্যই পরম কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। মনে তাই সুপ্ত বাসনা জেগেছিল কোন একদিন সময় সুযোগ হলে এ শহরটি ঘুরে দেখার। সৌভাগ্যক্রমে কিছুদিন পূর্বে আবিদজান থেকে বাংলাদেশে ছুটি গমনের প্রাক্কালে একটা সুযোগ হাতে এসে ধরা দেয়।

আইভরিকোস্ট থেকে বাংলাদেশ ভ্রমনের সব চেয়ে সহজ রুট আবিদজান- দুবাই- ঢাকা। সঙ্গত কারনে এমিরেটস এয়ার লাইন্স ই একমাত্র ভরসা। এমিরেটস আর তার ট্রাভেল এজেন্ট সাতগুরু এ দেশে একচেটিয়া দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল দীর্ঘদিন।কোন ভাল অপশন না থাকায় তাদের নিকট হতে চড়া দামে টিকেট কেনা ছাড়া অন্য কোন গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু গত বছরের জুলাই মাসে তাদের এ একচেটিয়া ব্যবসায় ছাই ঢেলে দেয় টার্কিশ এয়ার লাইন্স। তারা সরাসরি আবিদজান থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে এমিরেটস এর চেয়ে অনেক কম রেটে। ব্যাপারটা আমার জন্য হয়ে দাঁড়ায় একেবারে সোনায় সোহাগায়। 

আবিদজানে টার্কিশের এ শুভাগমন আমার মত আরও অনেক ভ্রমণ পিপাসুর কাছে গ্রীষ্মের দীর্ঘ তপ্ত দহনের পর এক পশলা বৃষ্টি রূপেই আবির্ভূত হয়। আগে টার্কিশের ফ্লাইট ধরতে হলে যেতে হত ঘানায়। কাল বিলম্ব না করে ছুটির পরিকল্পনা অনুযায়ী টার্কিশ এয়ার লাইন্সের টিকেট কেটে ফেললাম । 


যাক, আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক কিভাবে দেশটিকে গড়ে তুলেছেন ইউরোপের আদলে তা স্বচক্ষে দেখা যাবে এবার। আমার পরিকল্পনা ছিল ঢাকা যাওয়ার পথে ইস্তানবুলে যাত্রা বিরতি করবো কিছুদিনের জন্য। একে একে দেখে নিব এখানকার সকল দর্শনীয় স্থান। কিন্তু বাধ সাধে আমার অদৃষ্ট। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা যেতে হয় আমাকে এক অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে। আর সে সময় সহযাত্রী হিসাবে যাদের পেয়েছি তাদের কেউই ইস্তানবুলে অবস্থানে ইচ্ছুক ছিল না। তারা সরাসরি বাংলাদেশ যেতে চায়। এতে কিছুটা হতাশায় পড়ে গেলাম। অবশ্য ইচ্ছে করলে দলছুট হয়ে আমি দুই একদিন থেকে যেতে পারতাম ইস্তানবুলে। কিন্তু একা একা ভ্রমনে আমি ঠিক স্বস্তি পাইনা। আর আমার দেশে ফেরার তাড়াও ছিল। অগত্যা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত ৮ ঘণ্টার ট্রানজিট টাইম কাজে লাগানোর সিদ্বান্ত নিলাম। শুনেছি টার্কিশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য সিটি টুরের ব্যবস্থা রয়েছে। 

নির্ধারিত দিনে আবিদজান থেকে রাতের ফ্লাইটে চড়ে বসলাম ইস্তানবুলের উদ্দেশ্যে। বিমানে এক ঝাঁক ডানা কাটা টার্কিশ পরীদের আতিথেয়তায় বেশ মুগ্ধ হলাম। শুনেছি টার্কিশ এয়ার লাইন্স তাদের দুর্দান্ত সার্ভিস দিয়ে ২০১২ সালে ইউরোপের সেরা এয়ার লাইন্সের খেতাব জিতে নিয়েছে। আমার ও মনে হল – দে ডিজার্ব দিস। সব কিছু মিলিয়ে তাদের সেবার মান যথেষ্ট ভাল।
সকাল আটটায় আমাদের বিমান ইস্তানবুলের মাটি স্পর্শ করল। 


ইমিগ্রেশানে আমাদের গ্রুপের একজনের পাসপোর্টে কোন এক সমস্যা ধরা পড়ে। ইমিগ্রেশান পুলিশকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে কনভিন্স করে বের হতে একটু দেরি হয়ে যায় আমাদের। ফলশ্রুতিতে টার্কিশ এয়ার লাইন্সের সিটি ট্যুর প্যাকেজটা মিস করে ফেলি। কি আর করা, অভাগা যে দিকে চায় …..সাগর শুকিয়ে যায়! সিদ্বান্ত নিলাম নিজেরাই ঘুরব। এয়ারপোর্ট থেকে মেট্রো ট্রামের টিকেট কেটে চড়ে বসলাম তাতে। গাড়ি গুলো দেখতে খুবই সুন্দর। ইউরোপের আমেজ টের পেয়ে গেলাম এয়ারপোর্টেই। আমার হাতে ইস্তানবুল শহরের ছোট একটা ম্যাপ। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো, কিভাবে কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মেট্রোট্রাম পরের স্টপেজে থামলে দেখি টার্কিশ এয়ার লাইন্সেরই এক এয়ার হোস্টেস( না ডানা কাটা পরী! এরা এত সুন্দর হয় কেন? ) আমার পাশে এসে বসল। মনে মনে ভাবলাম একে জিজ্ঞেস করলে কিছুটা গাইডলাইন পাওয়া যেতে পারে। আমি হায় হ্যালো বলে বেশ জমিয়ে ফেললাম তার সাথে। মেয়েটা বেশ আন্তরিক ভাবে আমাকে বুঝিয়ে দিল কিভাবে যেতে হবে দর্শনীয় স্থান গুলোতে। আমি মুসলিম শুনে বেশ খুশি হল সে। তার সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে খেয়াল করলাম সহযাত্রীরা কেমন যেন ঈর্ষার চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কিন্তু তাদেরকে ঈর্ষার আগুনে বেশিক্ষণ আর পোড়ার চান্স না দিয়ে মেয়েটি পরের স্টেশনে নেমে গেল। আমাকে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলল- বা…ই , হ্যাভ এ নাইস ট্যুর। আমরা এগিয়ে চললাম ব্লু মস্ক এর উদ্দেশ্যে। মেয়েটির নির্দেশনা মোতাবেক একবার ট্রাম চেঞ্জ করতে হল এক স্টেশনে এসে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।  
                                        
ব্লু মস্কের আসল নাম সুলতান আহমেদ মস্ক। মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অপূর্ব নিদর্শন এ ব্লু মস্ক। মসজিদের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে নীল টাইলসের আধিক্যের ( প্রায় ২০,০০০) কারনেই মসজিদের এমন নামকরণ। সুলতান আহমেদ -১ এর শাসনকালে ১৬০৯- ১৬১৬ সালের মধ্যে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এ মসজিদের আর্কিটেক্ট ছিলেন মেহমেত আগা। তিনি অটোমান মস্ক এবং বাইজান টাইন চার্চের কম্বিনেশনে এ মসজিদের সম্পূর্ণ ডিজাইন তৈরি করেন। 





সুলতানের ইচ্ছা ছিল এ মসজিদ হবে নিকটবর্তী আয়াসোফিয়ার ( কেউ কেউ বলেন হাগিয়া সোফিয়া) চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সুন্দর। মসজিদ নির্মাণ নিয়ে সুলতান এত বেশি উদগ্রীব ছিলেন যে মাঝে মধ্যে তিনি নিজেও এসে মসজিদ নির্মাণের কাজে হাত লাগাতেন। দুঃখ জনক ভাবে মসজিদ নির্মাণের এক বছর পরই মেহমেত আগা ২৭ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু বরণ করেন। তাকে সপরিবারে মসজিদের বাইরের কম্পাউন্ডে সমাহিত করা হয়েছে। তার মৃত্যু আমার কাছে কেন জানি একটু রহস্য জনক মনে হল। আমাদের মসলিন শাড়ির ইতিহাস মনে পড়ে গেল হঠ ৎ করে।
                                   
এ মসজিদের ধারণ ক্ষমতা ১০,০০; মসজিদের উচ্চতা ৭২ মিটার, ডোমের সংখ্যা ৮ ( মুল ডোমের উচ্চতা ৪৩ মিটার) , মিনার আছে ৬ টা( উচ্চতা ৬৪ মিটার); ধারণা করা হয় এ মসজিদের মিনার সংখ্যা বায়তুল হারামের মিনার সংখ্যার সমান হয়ে গেলে সুলতান লোক পাঠিয়ে বায়তুল হারামে আরেকটা নতুন মিনার তৈরি করে দেন।

                                 
আমরা মসজিদ এলাকায় প্রবেশ করলাম। গাছ গাছালীর আধিক্যের কারণে দূর থেকে মসজিদটা ভাল মত দেখা যাচ্ছিলো না।

                                   

উত্তর পাশের গেট দিয়ে আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। প্রচুর নারী ও পুরুষ পর্যটকের ভিড় এখানে। ভেতরে ঢুকে দেখলাম মূল মসজিদের বাইরে আছে বেশ বড় সড় খোলা মেলা চত্বর                                                                                                                                          
পশ্চিম পার্শ্বের গেট দিয়ে সুলতান ঘোড়ায় চড়ে টগবগিয়ে সরাসরি চলে আসতেন এ চত্বরে। গেটের প্রবেশ মুখে একটা লোহার চেইন ঝোলানো থাকত যাতে ভেতরে প্রবেশের সময় সুলতানকে মস্তক অবনত করে ঢুকতে হতো। মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে পরাক্রমশালী সুলতান ও গোলামের মত- বিষয়টা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতেই এ লোহার চেইন রাখা। আমরা ঘুরে ঘুরে বিমুগ্ধ নয়নে দেখলাম মসজিদটির স্থাপত্য নকশা, ক্যালিগ্রাফি, সুউচ্চ ডোম, মিনার ইত্যাদি। 


মসজিদের খোলা চত্বরে মূল মসজিদের একটা রেপ্লিকা ও দেখা গেল। 



দলে দলে মুসুল্লিরা অজু করে জুতা খুলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করছে।

 

কিছু সাদা চামড়ার তরুণ তরুণীকে দেখলাম মসজিদের খোলা চত্বর এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, ছবি তুলছে। সবার পরনে আঁটসাঁট টিশার্ট, হাফ প্যান্ট অথবা শর্টস। মসজিদের এ পবিত্র পরিবেশে বিষয়টা বেশ দৃষ্টি কটু লাগল। বুঝতে পারলাম এটা হচ্ছে কামাল আতাতুর্কের ইউরোপীয়করনের ফল। কাক হয়ে ময়ূর পুচ্ছ ধারণের চেষ্টা করলেও ই ইউ তে তুরস্কের ঠাই হয়নি এখনো।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ 

মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন

মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন

-শেখ মারূফ সৈকত

 আমাদের জীবনধারায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিদর্শন মূর্ত হয়ে ওঠে। এগুলো সম্পর্কে সম্যক জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। কেননা, এগুলো একটা জাতির চিন্তা-চেতনা, জীবনাচার, জাতির উদ্ভব প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে। এভাবে উঁচু দালান, প্রাসাদের চূড়া, মূলত একটা জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস ও শক্তিসামর্থ্যকে ধারণ করে গড়ে ওঠে। সভ্যতার শুরুতে গড়ে ওঠা এসব স্থাপত্যের সৃষ্টির নেপথ্য কাহিনী সত্যিই খুবই চমকপ্রদ! নগর বা শহর, দেশ এবং একটা জাতি তাদের গর্বের প্রতীক বা নিদর্শন প্রকাশের নিমিত্তে এই টাওয়ার নির্মাণ করে থাকে। এ থেকে আমরা তাদের ঐতিহাসিকভাবে উপস্থিতিও জানতে পারি। যেমন : ভাষার লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্মিত মিনার; বিত্তবৈভবের নিদর্শনরূপে দণ্ডায়মান মেসোপটেমিয়ার ‘জি¹ুরাট’; শহরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বাক্ষর ‘ইতালির টাওয়ার’; প্রযুক্তির আধার ‘আইফেল টাওয়ার’ ইত্যাদি। এগুলোর সবই মানুষের চিন্তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আমাদের জানতে সহায়তা করে। প্রত্যেক স্থপতিরই নিজস্ব একটা ইচ্ছা বা বাসনা থাকে যে তার স্থাপত্যটি অন্যের চেয়ে স্বতন্ত্র, উঁচু ও অধিক ইতিহাসনির্ভর হবে।

ইসলামের সভ্যতায় স্থাপত্যশিল্পের বড় অবদান হচ্ছে ‘মিনার’। এর নির্মাণশৈলী অন্য সকল স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। আর মিনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বোধ করি তোমাদের সকলেরই কমবেশি আছে। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় তাই এই মিনারকে কেন্দ্র করেই।

কিভাবে এলো মিনার

আমরা যখন আকাশছোঁয়া একটা মিনারের দিকে চোখ তুলে তাকাই তখন সত্যিই অবাক হতে হয় যে, এত উঁচু একটি মিনার নির্মাণ করা
আকাশছোয়া একটা মিনার
আকাশছোয়া একটা মিনার
কিভাবে সম্ভব হলো এবং কিভাবেই বা তার এই আকৃতি ও নকশা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। মিনার প্রধানত মহান প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শানে প্রার্থনা জানানোর উৎস হিসেবে নির্মিত হয়। হিজরতের পর রাসূলে পাক (সা) মদিনায় পৌঁছলে যে স্থানে তার উট থেমে যায় সেখানেই প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তবে আজান দেয়ার জন্য তখন কোনো উঁচু জায়গাকে বেছে নেয়া হতো। এর অনেক পর অন্য বাড়িগুলো থেকে পৃথক করার জন্য এবং পাশাপাশি মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনিকে আরও দূরে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদগুলোতে উঁচু মিনার তৈরি করা হয়।
ইসলাম একটি শাশ্বত জীবনবিধান। সকল উম্মাহর জন্য মুক্তির একমাত্র পথ। নিয়মানুয়ায়ী নামাজের সময় উপস্থিত হলে যেখানে মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করা হয় সেটা মসজিদ। কিন্তু মসজিদগুলোকে অন্যান্য বাড়িঘর থেকে আলাদা করার জন্য তার গঠন-কাঠামো কিছুটা ভিন্ন করা হয়, তা না হলে দূর হতে তা চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের উপস্থিতি মুসলমানদের কাছে জানানো প্রয়োজন।
মসজিদ সামাজিক কর্মকাণ্ডের একটা উৎসও বটে। এটা আল্লাহর ইবাদত করা, দ্বীনের প্রশিক্ষণ দেয়া, সমাজের বিচারকার্য পরিচালনা করা, অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা এবং একটি অঞ্চল বা কমিউনিটির সমস্ত ব্যবস্থাপনারও স্থান।
মুসলিম সমাজের লোকদের নামাজের জন্য এই প্রধানতম স্থান তথা মসজিদে আসার জন্য আজান দিয়ে আহ্বান করা হয়। মিনার মূলত এই আজান দেয়ার স্থান হিসেবেই গড়ে ওঠে। অবশ্য অনেক মিনার আজানের পাশাপাশি মুসলিম সভ্যতার ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করার লক্ষ্যকে সামনে রেখেও নির্মিত হয়েছে। সেগুলো সত্যিই খুবই আকর্ষণীয় ও অনন্য।

একটি অনন্য নিদর্শন

স্থাপত্য অথবা যে কোনো নিদর্শনই তাদের মূল্য সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা প্রদান করে। এবং এগুলো যুগ যুগ ধরে জ্ঞানপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। সেজন্য আমাদেরকেও এসব স্থাপত্য শিল্প কেবল দেখলেই চলবে না। বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাটাকেই প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সবার মধ্যে একটা উদ্ভাবনী শক্তির উদ্ভব হতেও পারে। অন্যথায় সবটাই হবে বৃথা শ্রম।
মিনার মুসলিম বিশ্বের বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান সভ্যতা যার তথ্য-প্রযুক্তি অতি দ্রুতই পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান হচ্ছে, সহযোগিতা ও সংহতির ক্ষেত্রে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা তাই মানুষের জন্য ভাবনার বিষয় হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। এই কারণেই মানুষের ঐক্যকে সুসংহত করার জন্য মিনারবিশিষ্ট উঁচু প্রাসাদের প্রয়োজন অপরিহার্য। কেননা, এখানে মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে বিশ্বমুসলিমের জন্য করণীয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সর্বোপরি একটা আধ্ম্যাত্মিকতা তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
মানুষের জন্য প্রচুর জ্ঞানসমৃদ্ধ ও মানব সভ্যতার উন্নতিকল্পে আলমোহ্যাড জাতি ‘তিনমাল মসজিদ’ নির্মাণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

নির্মাণের উদ্দেশ্য

মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মিনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মিনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
মুসলমান অধ্যুষিত যেকোনো এলাকার মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজের জন্য ডাকার একটি ঐতিহাসিক নির্দিষ্ট স্থান হচ্ছে মসজিদের মিনার। কিছু প্রাচীন মসজিদের মিনার দূরদর্শনের টাওয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যেমন দামেস্কের ‘গ্রেট মসজিদ’-এর মিনার। বর্তমান সময়ে মিনারগুলো কেবল বিশ্বাসী মুসলমানকে নামাজের জন্য আহ্বানের উদ্দেশ্যে আজান দেয়ার জন্যই ব্যবহৃত হয় না। এই শতাব্দীতে আজানের জন্য মিনারের ব্যবহার অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে। এখন আজান দেয়ার জন্য মাইক্রোফোন এবং মাইক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মসজিদের ভেতর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোনে আজান দেয়ার কাজটি সারা হয়। পোহাতে হয় না মিনারে উঠে কষ্ট করে আজান দেয়ার ঝামেলা। আরও মজার বিষয় হলো কোনো কোনো মসজিদের মিনার তো প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সূর্যের আলো (তাপ) মিনারের চূড়ায় পড়ার কারণে মসজিদ গরম হয়ে যেতে পারে। এ কারণে মিনার প্রাকৃতিক ভেন্টিলেটারের কাজ করে থাকে।
আরবি বর্ণমালার প্রথম হরফ ‘আলিফ’। মসজিদের মিনারও আলিফের মতো খাড়া হয়ে থাকে। মনে করা হয় মিনার হচ্ছে ‘দুনিয়া ও বেহেশতের মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ’।
পৃথিবীর উচ্চতম মিনার হচ্ছে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা মসজিদের মিনার যার উচ্চতা ২১০ মিটার। আর ইটের তৈরি পৃথিবীর উচ্চতম মিনারটি দিল্লির কুতুব মিনার। এছাড়া ইরানে আছে এইরকম উচ্চ আরও দু’টি মিনার।

নির্মাণকৌশল

মিনার সাধারণত তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। যথাÑ
ভিত্তি বা অধোভাগ : যে কোনো মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তিটা মজবুত হওয়া প্রয়োজন। এজন্য এটা বেশ যতেœর সাথে তৈরি করা হয়। কাঁকর-নুড়ি এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে ভিত্তি প্রস্তুত করা হয়। আর এই নির্মাণশৈলী খুবই অসাধারণ!
মাঝের অংশ :
সিঙ্গল মিনারগুলো চোঙাকৃতির, সিলিন্ডার আকৃতির অথবা বহুভুজাকৃতির হয়ে থাকে। উচ্চশিখরে ওঠার জন্য সিঁড়িও তৈরি করা হয়। এছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও অনেক প্রযুক্তি মিনার নির্মাণে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
শীর্ষভাগ : মিনারের শীর্ষদেশে মুয়াজ্জিনের আজান দেয়ার জন্য একটি অবৃত্তাকার ঝুলবারান্দা রাখা হয়। এর ওপর দিয়ে ছাদ-সদৃশ নকশাদার অংশ নির্মিত হয়। এই নকশাসমূহ ইট ও টাইলস দিয়ে করা হয়। তৈরি করা হয় কার্নিশ, খিলান এবং পাথরে খোদিত কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বাণী সেখানে লাগানো হয়। আর যে মিনারগুলো এতো নকশাদার করা হয় না সেগুলোও বেশ জমকালো করা হয়।

নানা প্রকার মিনার

মিনার ছাড়া কোনো মসজিদ কল্পনা করা যায় না। কেননা, মুসলমানদের কাছে মিনার মসজিদেরই একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের বিখ্যাত আর্কিটেকচার ব্রিটিশ কেএসি ক্রেসওয়েলের বিভাগীয় ডিন যিনি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রথম বিশেষজ্ঞ, তিনি ঘোষণা করেন, ‘হযরত মুহাম্মদের (সা) সময় মসজিদে কোনো মিনার ছিল না।’ তিনি প্রথম যে মিনারের কথা বলেন তা হলো মুহাম্মদ (সা)-এর মৃত্যুর ৪১ বছর পর ৬৭৩ সালে দামেস্কে নির্মিত মিনার। তাই বলা যায় নামাজের উদ্দেশ্যে মানুষকে আহ্বানের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে উঁচু রাস্তা বা মসজিদের ছাদ ব্যবহৃত হতো। গ্রাম অঞ্চলের মসজিদে তো মিনারের আশা প্রায় করাই যেত না।
বিভিন্ন ধরনের মিনার
বিভিন্ন ধরনের মিনার
ঐতিহ্যের স্বাক্ষী মিনার
ঐতিহ্যের স্বাক্ষী মিনার
এই আর্কিটেকচার বলেন যে, তখন আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের বাড়িতে পাথরের তৈরি একটি থাম ছিল যার ওপর দাঁড়িয়ে আজান দেয়া হতো। এটা হিজরি দশ সালের কথা। এ জন্য তখন আজান খুব বেশি দূর থেকে শোনা যেত না।
নবম হিজরিতে (৭০৩ সাল) আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ মসজিদে নববীর চার কোনায় চারটি মিনার নির্মাণ করেন। প্রত্যেকটি মিনারের উচ্চতা ছিল প্রায় ৯ মিটার (৩০ ফুট) এবং এগুলোর ভিত্তি ছিল ১৬ মিটার বা ৫২ ফুট। ফলে মুয়াজ্জিনের আজান অনেক দূর থেকে শোনা যেত।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পৃথিবীর উচ্চতম মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার বা ৬৩০ ফুট। এটি মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত ‘দ্বিতীয় হাসান মসজিদ’ যেটা তৈরি করা হয়েছিল মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসানের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে। মক্কার কা’বা ঘরের পর এটিই বৃহত্তম ধর্মীয়-স্মৃতিস্তম্ভ। এর ভেতরে একসঙ্গে ২৫ হাজার ও বাইরে ৮০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। ২১০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এই মিনারটি রাত ও দিনে ভালোভাবেই দেখা যায়। এর নির্মাণশৈলী অনেকটা কুতুবিয়া মিনারের মতো। কুতুবিয়া মিনার ১১৯৫ সালে মরক্কোর মারাকেসে নির্মাণ করা হয় যার উচ্চতা ৭৭ মিটার বা ২৩০ ফুট।
মোঙ্গলদের বিদায়ের পর ঘুরিদ সাম্রাজ্যের রাজধানী ফিরুজকুতে ১৯৫৭ সালে একটি বিখ্যাত মসজিদ আবিষ্কৃত হয়েছে যেটি নির্মাণ করা হয় ১১৯৪ সালে। এটি ‘জাম’ টাওয়ার নামে পরিচিত। ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ১১ থেকে ১৩ শতাব্দীতে আকর্ষণীয় মিনারগুলো নির্মিত হয়েছে। আফগানিস্তানে মাটি থেকে ৬০ মিটার উঁচুতে একটি পর্বতের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় এরূপ একটি মিনার। অষ্টভুজাকৃতির এই মিনারটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। আধোয়ান তৈরি হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা মরিয়ামে বর্ণিত ‘কুফিক’ কৌশলে। ইট কেটে সতর্কতার সাথে সদৃশ করা হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ঘুরিদ শাসক ঘুরিয়া আল-দিন মুহাম্মাদ (১১৬৩-১২০৩) নামে। নীল সিরামিকের জমকালো নকশা এর বৈশিষ্ট্য।
বর্তমান সময়ে নির্মিত প্রত্যেকটি মসজিদের মিনারই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এগুলোর সবই লম্বা, মাধুর্যপূর্ণ এবং শক্ত রড দিয়ে আকৃতি প্রদান করা হয়। কোনো কোনোটা আবার অবতল বা ধনুকাকৃতির হয়ে থাকে এবং মসজিদের ছাদের ওপরে এগুলো নির্মিত হয়। আর মিনারবিহীন মসজিদ তো বর্তমানে কল্পনাাই করা যায় না।

মিনার থাকবে

যে কোনো নিদর্শন সংশ্লিষ্ট কলোনির বিশ্বাসের ভিত্তি, উক্ত অঞ্চলের গুরুত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রভৃতিকে ধারণ করে। মহান প্রভুর দেয়া একমাত্র জীবনবিধান ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বাক্ষর রাখতে হয়েছে। তবেই মজবুত হয়েছে এর ভিত্তি এবং গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র একটি ঐতিহ্য। তাই এর প্রযুক্তিও অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা। শুধু আলাদাই নয়, ইসলামের সকল স্থাপত্য ও নিদর্শনের পেছনে আছে এক একটি ইতিহাস, এক একটি ঐতিহ্য, এক একটি সংগ্রাম ও বিজয়ের কীর্তিগাথা। আর মিনার হচ্ছে সেরকমই একটি নিদর্শন।
এখন বলা যায় পৃথিবীর যেখানে যে প্রান্তে মসজিদ নির্মিত হবে তার মিনারটিও হবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সেটা হবে সেই এলাকার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও। তবে মিনার নির্মাণের পেছনে যতই সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দিকটি থাক না কেন, এর মূল উদ্দেশ্য তৎসংলগ্ন সম্প্রদায়ের লোকদেরকে একত্রিত করার বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। প্রতিদিন পাঁচবার এই মিনার থেকে শোনা যাবে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবার’ আজান ধ্বনি। আর বিশ্বাসী মু’মিনরা দলবেঁধে ছুটবে মহান রব্বুল আ’লামিনের দরবারে মস্তক অবনত করে নামাজ আদায়ের জন্য। মিনার তাই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের হৃদয়ে স্রষ্টার প্রতি অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসার ফল্গুধারা বইয়ে দিতে থাকবে আর নিজেদেরকে উচ্চে তুলে ধরতে আশাবাদ শুনিয়ে যাবে।

Source: http://www.kishorkanthabd.com

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য