আওলীয়া গনের কিরামতি
- মুহা, লুকমান রাকীব
কারামতে আওলীয়ার ব্যাপারে আহ্লুস্সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাসঃ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদার অন্যতম অংশহচ্ছে আউলীয়াদের কারামত এবং আল্লাহ তা’আলা তাদের হাতে অলৌকিক ও সাধারণঅভ্যাসের বিপরীত যে সমস্ত ঘটনা প্রকাশ করেন তাতে বিশ্বাস করা। তবে অলীহওয়ার জন্য কারামত প্রকাশিত হওয়া জরুরী নয়। আউলীয়াদের কারামত সত্য। আল্লাহতাআ’লা তাদের হাতে অলৌকিক ও সাধারণ নিয়মের বিপরীত এমন ঘটনা প্রকাশ করেথাকেন যাতে তাদের কোন হাত নেই। তবে কারামত চ্যালেঞ্জ আকারে প্রকাশিত হয় না; বরং আল্লাহই তাদের হাতে কারামত প্রকাশ করেন। এই উম্মাতের মধ্যে প্রচুরপরিমাণ ও বড় বড় কারামত প্রকাশিত হয়েছে। কারণ আমাদের নবীর মুজিযাগুলো হচ্ছেবড় বড় এবং আল্লাহ্ তাআলার নিকট তাঁর সম্মানও অনেক বড়।প্রত্যেক পরহেজগারমু’মিনই আল্লাহর অলী।আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ )
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ
“মনে রেখো যে, আল্লাহর অলীদের কোন ভয় নেই। আরতারা বিষন্নও হবেনা। তারা হচ্ছে সেই সমস্ত লোক যারা ঈমান এনেছে এবংপরহেজগারিতা অবলম্বন করে থাকে। তাদের জন্যে সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনেএবং পরকালেও”। (সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৪) এই আয়াতে আল্লাহর অলীর সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। ঈমান ও সৎকর্মই হচ্ছে আল্লাহর অলী হওয়ার পরিচয়। ঈমানদার, মুত্তাকী এবং শরীয়তেরপুরোপুরি অনুসারীর হাতে যদি আল্লাহ কারামাত বা অলৌকিক কিছু বের করেন তবেতিনি আল্লাহর অলী হিসেবে গণ্য হবেন। আর ইসলামী শরীয়তের পাবন্দী নয়, এমনলোকের হাতে যদি কারামাত প্রকাশিত হয়, তবে সে আল্লাহর অলী নয়; বরং সেআল্লাহর শত্রু এবং শয়তানের অলী। আল্লামা ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এ বিষয়েএকটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছেন। কিতাবটির নাম ‘আল-ফুরকানু বাইনাআউলীয়াউর্ রাহমান ওয়া আউলীয়াউশ শায়তান’। আল্লাহর প্রকৃত অলী এবং ভন্ডদের পার্থক্য সম্পর্কে এতে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। যারা এ বিষয়ে বেশী জানতে চান তাদের প্রতি কিতাবটি পড়ার অনুরোধ থাকল। কুরআন মযীদের সূরা কাহাফে এবং অন্যান্য সূরায় পূর্ব যামানার অলীদের যে সমস্ত কারামত বর্ণিত হয়েছে এবং এই উম্মাতের প্রথম যুগের তথা সাহাবী, তাবেয়ী, অন্যান্য সৎ লোকের হাতে যে সমস্ত কারামত প্রকাশিত হয়েছে তাতেও আমরা বিশ্বাস করি। কিয়ামত পর্যন্ত এই উম্মাতের আউলীয়াদের হাতে কারামত প্রকাশিত হতে থাকবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে শক্তিশালী করা, কাফের-মুশরিকদেরকে পরাজিত করা, হুজ্জত কায়েম করা এবং তার অলীদের সম্মান ওফজীলত বৃদ্ধি করার জন্যই কারামত প্রকাশ করেন।
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ لَهُمْ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ
“মনে রেখো যে, আল্লাহর অলীদের কোন ভয় নেই। আরতারা বিষন্নও হবেনা। তারা হচ্ছে সেই সমস্ত লোক যারা ঈমান এনেছে এবংপরহেজগারিতা অবলম্বন করে থাকে। তাদের জন্যে সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনেএবং পরকালেও”। (সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৪) এই আয়াতে আল্লাহর অলীর সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে। ঈমান ও সৎকর্মই হচ্ছে আল্লাহর অলী হওয়ার পরিচয়। ঈমানদার, মুত্তাকী এবং শরীয়তেরপুরোপুরি অনুসারীর হাতে যদি আল্লাহ কারামাত বা অলৌকিক কিছু বের করেন তবেতিনি আল্লাহর অলী হিসেবে গণ্য হবেন। আর ইসলামী শরীয়তের পাবন্দী নয়, এমনলোকের হাতে যদি কারামাত প্রকাশিত হয়, তবে সে আল্লাহর অলী নয়; বরং সেআল্লাহর শত্রু এবং শয়তানের অলী। আল্লামা ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) এ বিষয়েএকটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাব রচনা করেছেন। কিতাবটির নাম ‘আল-ফুরকানু বাইনাআউলীয়াউর্ রাহমান ওয়া আউলীয়াউশ শায়তান’। আল্লাহর প্রকৃত অলী এবং ভন্ডদের পার্থক্য সম্পর্কে এতে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। যারা এ বিষয়ে বেশী জানতে চান তাদের প্রতি কিতাবটি পড়ার অনুরোধ থাকল। কুরআন মযীদের সূরা কাহাফে এবং অন্যান্য সূরায় পূর্ব যামানার অলীদের যে সমস্ত কারামত বর্ণিত হয়েছে এবং এই উম্মাতের প্রথম যুগের তথা সাহাবী, তাবেয়ী, অন্যান্য সৎ লোকের হাতে যে সমস্ত কারামত প্রকাশিত হয়েছে তাতেও আমরা বিশ্বাস করি। কিয়ামত পর্যন্ত এই উম্মাতের আউলীয়াদের হাতে কারামত প্রকাশিত হতে থাকবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁর দ্বীনকে শক্তিশালী করা, কাফের-মুশরিকদেরকে পরাজিত করা, হুজ্জত কায়েম করা এবং তার অলীদের সম্মান ওফজীলত বৃদ্ধি করার জন্যই কারামত প্রকাশ করেন।
কতিপয় কারামাতে আওলীয়ার উদাহরণ:
পবিত্র কুরআনে অনেক কারামতের বিবরণ পাওয়া যায়।যেমন স্বামী ব্যতীত মরিয়ম (আঃ)এর গর্ভে ঈসা (আঃ)এর জন্ম গ্রহণ এবংঅলৌকিকভাবে আল্লাহর পক্ষ হতে রিযিক প্রাপ্ত হওয়া, সূরা কাহাফে বর্ণিতগুহাবাসীর কারামত, যুল-কারনাইনের ঘটনা, মুসা (আঃ)এর সাথে খিযির (আঃ)এর ঘটনাইত্যাদি। সহীহ হাদীছেও রয়েছে পূর্ব যুগের এবং অনেক সাহাবী ও তাবেয়ীর কারামতের ঘটনা।
উমার বিন খাত্তাব (রাঃ)এর কারামতঃ উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) মদীনার মিম্বার থেকেদেখতে পেলেন যে, ইরাকের নাহাওয়ান্দে যুদ্ধরত মুসলিম বাহিনী শত্রুদের আক্রমণের কবলে পড়তে যাচ্ছে। তাই তিনি সেনাপতি সারিয়াকে মদীনার মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে “ইয়া সারিয়া! আল- জাবাল” অর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয়নাও, বলে ডাক দিলেন। তাঁর আওয়াজ সিরিয়াতে অবস্থানরত সারিয়ার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। সারিয়া খলীফা উমারের সেই ডাক শুনে সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ের উপর আশ্রয় গ্রহণ করলেন এবং শত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলেন। উমার (রাঃ)এর কারামাতের বিস্তারিত বিবরণ এইযে, উমার (রাঃ) একদল সৈনিক পাঠালেন এবং সারিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করলেন। উমার (রাঃ) মদীনার মিম্বারে খুৎবারত অবস্থায় ইয়া সারিতা!আল-জাবাল, ইয়া সারিতা! আল-জাবাল বলে উচ্চস্বরে ডাক দিলেন। সৈনিকদের দূত মদীনায় এসে বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করতে গেলে তারা আমাদেরকে পরাজিত করে ফেলে। তখন আমরা একজন লোককে চিৎকার করে বলতে শুনলামঃ ইয়া সারিতা! আল-জাবাল। অর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয় নাও। এতে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করলাম। শত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলাম। আল্লাহ্ তাআলা শত্রুদেরকে পরাজিত করলেন। (মাজমূআয়েফাতাওয়া ইবনে তাইমীয়াঃ ১১/২৭৮, উয়ূনুল আছার ১/২৫২)
নীল নদের কাছে উমার (রাঃ)এর চিঠি লেখার ঘটনাটি ইবনে কাছীর তার গ্রন্থ আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া’তে উল্লেখ করেছেন। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, মিশরের শাসক আমর বিন আস উমার (রাঃ)কে সংবাদ দিল যে, মিশরবাসীরা প্রতিবছর নীল নদকে একটি করে কুমারী মেয়ে উৎসর্গ করলেই তা প্রবাহিত হয়। আমর বিন আসমিশরবাসীকে জানালেন যে, ইসলামে এধরণের কর্ম সম্পূর্ণ হারাম। স্বয়ং আমর বিনআস উমার (রাঃ)এর বরাবর এমর্মে একটি পত্র লিখে পাঠালেন। উমার (রাঃ) নীল নদেরকাছে এই পত্র লিখে পাঠালেনঃ من عبد الله عمر أمير المؤمنين إلى نيل مصر أما بعد: فان كنت تجري من قبلك ومن أمرك فلا تجر فلا حاجة لنا فيك وإن كان الله الواحد القهار هو الذي يجريك فنسأل الله أن يجريك فألقى عمرو البطاقة في النيل فجرى أفضل مما كان “আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমার (রা)এরপক্ষ হতে মিশরের নীল নদের প্রতি প্রেরিত এই পত্র। অতঃপর হে নীল নদ! তুমি যদি নিজের ক্ষমতা বলে ও নিজের পক্ষ হতে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে তুমি আজ হতে আর প্রবাহিত হয়ো না। তোমার কাছে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আর তুমি যদি মহা প্ররাক্রমশালী এক আল্লাহর হুকুমে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন। আমর (রাঃ) পত্রটি নীলনদে নিক্ষেপ করার সাথে সাথে তা পূর্বের চেয়ে আরো দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হতে লাগল। (দেখুনঃ বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৭/১০২)
জুরাইজের ঘটনাঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয নামের একজন পরহেজগার লোক ছিল। সে ইবাদতের জন্য একটি গীর্জা তৈরী করে তথায় সর্বদাইবাদতে লিপ্ত ছিল। সে এক দিন নামাযরত অবস্থায় ছিল। এমন সময় তার মা এসে ডাকদিল। জুরাইজ বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সেনামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে চলে গেল।পরের দিন তার মা আবার আগমণ করল। সেদিনও জুরাইয নামাযে ছিল। তার মায়ের কন্ঠশুনে সে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে আজও চলে গেল।তৃতীয় দিনেও তার মা এসে তাকে নামায রত পেল। জুরাইজ তার মার ডাকে সাড়া না দিয়েই নামাযেই রয়ে গেল। এবার তার মা রাগাম্বিত হয়ে জুরাইযের উপর এই বলে বদ্দু’আ করল যে, হে আল্লাহ! জুরাইয যেন বেশ্যা মহিলার মুখ দেখার পূর্বে মৃত্যু বরণ না করে। বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয এবং তার ইবাদতের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। তাদের মধ্যকার কিছু লোক তাকে পথভ্রষ্ঠ করার জন্য চক্রান- শুরু করল।একজন বেশ্যা মহিলা সেসময় সেজেগোজে ঘুরে বেড়াত। সে প্রস-াব করল যে, তোমরা যদি চাও আমি তাকে গোমরাহ করতে পারি। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর সেই মহিলা জুরাইযের কাছে গিয়ে নিজেকে পেশ করল। কিন’ জুরাইয সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলনা। জুরাইযের গীর্জায় একজন ছাগলের রাখাল আসা-যাওয়া করত। মহিলাটি জুরাইযের কাছে কোন সুযোগ না পেয়ে রাখালের কাছে গিয়ে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হল। এতে সে গর্ভবতী হয়ে গেল। প্রসব করার পর সে বলল এটি জুরাইযের সন্তান। লোকেরা দলে দলে আগমণ করে জুরাইযকে গীর্জা থেকে টেনে বের করল এবং তার গীর্জাটিও ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। লোকেরা মারতে শুরু করল। জুরাইয জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হল? আমাকে মারছ কেন? আমার ইবাদতখানাটিই বা কেন ভেঙ্গে ফেললে? লোকেরা বললঃ তুমি এই মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছ। যার কারণে মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছে। জুরাইয জিজ্ঞাসা করলঃ শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে অসল। জুরাইয বলল আমাকে নামায পড়ার জন্য একটু সময় দাও। তারা তাকে নামায পড়ার সুযোগ দিল। নামায শেষ করে শিশুটির কাছে গিয়ে তার পেটে খুচা দিয়ে বললঃ এই ছেলে? তোমার বাপ কে? ছেলেটি বলে দিল, ছাগলের রাখাল। নবী (সাঃ) বলেন, একথা শুনে লোকেরা আসল তথ্য অনুধাবন করতে পেরে জুরাইযকে চুম্বন করতে শুরু করল এবং তাকে জড়িয়ে ধরল। তারা নিজেদের ভুলের কারণে জুরাইযের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং বলল আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনার গীর্জাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইয বললঃ স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করার দরকার নেই; বরং যেমন ছিল তেমন করেই মাটি দিয়ে তৈরীকরে দাও। তারা তাই করল। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র)
তিন জন অলীর ঘটনাঃ ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেনযে, অতীত কালে তিনজন লোক পথ চলতেছিল। পথিমধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ল। উপর থেকে বিশাল আকারের একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তাদের জন্য বের হওয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট রইলনা। তাদের একজন অপরজনকে বলতে লাগল, তোমরা প্রত্যেকেই আপন আপন সৎ আমল আল্লাহর দরবারে তুলে ধরে তার উসীলা দিয়ে দু’আ কর। এতে হয়ত আল্লাহ আমাদের জন্য বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অতিবৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছিল, আমার কতিপয় শিশু সন্তানও ছিল। আমি ছিলাম তাদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারী। আমি প্রতিদিন ছাগল চরানোর জন্য মাঠে চলে যেতাম। বিকালে ঘরে ফেরত এসে দুধ দহন করে আমি প্রথমে পিতা-মাতাকে পান করাতাম, পরে আমার শিশু সন্তানদেরকে পান করাতাম। এটি ছিল আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। একদিন ঘাসের সন্ধানে আমি অনেক দূরে চলে গেলাম। এসে দেখি আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার অভ্যাসমত আমি দুধ দহন করে দুধের পেয়ালা নিয়ে তাদের মাথার পাশে দাড়িয়ে রইলাম। আমি তাদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত করাকে অপছন্দ করলাম। যেমনভাবে অপছন্দ করলাম পিতা-মাতার পূর্বে সন্তানদেরকে দুধ পান করানোকে। শিশুসন্তানগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করতেছিল। এভাবে সারা রাত কেটে গিয়ে ফজর উদীত হল। আমার পিতা-মাতা ঘুম থেকে জাগলেন। আমি তাদেরকে প্রথমে পান করালাম অতঃপর আমার ছেলে-মেয়েদেরকে পান করালাম। হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই জানেন যে, আমি একাজটি একমাত্র আপনার সন’ষ্টি অর্জনের জন্য সম্পাদন করেছি। এই আমলটির উসীলায় আমাদের জন্য বের হওয়ার রাস্তা করে দিন। এভাবে দু’আ করার সাথে সাথে পাথরটি একটু সরে গেল, তারা আকাশ দেখতে পেল, কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার একজন চাচাতো বোন ছিল। সে ছিল আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং একজন পুরুষ কোন মহিলার প্রতি যতদূর আসক্ত হতে পারে, আমি ছিলাম তার প্রতি ততটুকু আসক্ত। আমি তার কাছে আমার মনোবাসনা পেশ করলাম। সে একশত স্বর্ণমুদ্রা দেয়ার শর্তে তাতে সম্মত হল। আমি অনেক পরিশ্রম করে একশত স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করে তার কাছে গমণ করলাম। সে সম্মতি প্রকাশ করারপর আমি তার উভয় উরুর মধ্যে বসে পড়লাম। এমন সময় সে বলে উঠল, হে আল্লাহরবান্দা! আল্লাহকে ভয় কর, আমার স্বতীত্ব নষ্ট করোনা। একথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার ভয়ে সেদিন পাপের কাজ থেকে বিরত হয়েছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস’া করে দিন। সাথে সাথে পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি। তৃতীয়জন বললঃ হে আল্লাহ! নির্ধারিত বেতনের বিনিময়ে আমি একজন শ্রমিক নিয়োগ করলাম। কাজ শেষ করে সে আমার কাছে পারিশ্রমিক চাইলে আমি তা প্রদান করলাম, কিন’ সে উহা গ্রহণ না করেই চলে গেল। আমি তার প্রাপ্য টাকা বাড়াতে থাকলাম। একপর্যায়ে তা একপাল গরুতে পরিণত হল। আমি গরুগুলো মাঠে চরানোর জন্য একজন রাখালও নিয়োগ করলাম। অনেক দিন পর সেই লোকটি আমার কাছে এসে তার মজুরী চাইল। আমি বললামঃ তুমি রাখালসহ উক্ত গরুর পালটি নিয়ে চলে যাও। সে বলল, হেআল্লাহর বান্দা! আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং আমার সাথে বিদ্রুপ করোনা। আমি বললাম, বিদ্রুপ করি নাই। বরং এগুলো তোমার। আমি তোমার এক দিনের মজুরী দিয়ে এগুলো করেছি। তাই তুমি রাখালসহ গরুর পালটি নিয়ে চল। অতঃপর সে গরুর পালটি নিয়ে চলে গেল। একটিও রেখে যায়নি। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার সন’ষ্টির জন্য একাজটি করেছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। সাথেসাথে পাথরটি সম্পূর্ণরূপে সরে গেল। তারা নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে এল। (বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া)
এক বৃদ্ধ কৃষকের কারামতঃ অতীত কালে একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলছিল। হঠাৎ মাথার উপর মেঘমালা থেকে একটি শব্দ শুনল যে, অমুকের বাগানে বর্ষণ কর। লোকটি মেঘমালাকে অনুসরণ করে পথ চলতে থাকল। অবশেষে একটি যমিনে বৃষ্টি বর্ষণ হল। সেখানে দেখতে পেল একজন লোক কোদাল হাতে নিয়ে বাগানে কাজ করছে। লোকটি বাগানওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করল তোমার নাম কি? সে বললঃ আমার নাম অমুক। যে নামটি সেমেঘ থেকে শুনেছিল। তারপর বাগানের মালিক জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞাসা করছ? উত্তরে সে বললঃ যে মেঘ থেকে এই বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, আমি তোমার নামটি সেই মেঘের ভিতরে শুনতে পেয়েছি। তাই আমি তোমার নাম জিজ্ঞেস করছি। তোমার কাছে আমার আরো একটি প্রশ্ন হল, তুমি কিভাবে এই বাগানের ফসলব্যয় কর, তাও আমি জানতে চাই। সেবললঃ আমার যমিনে উৎপাদিত ফসলকে তিনভাগে বিভক্ত করি। একভাগ আমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করি। একভাগ পুনরায় ফসল আবাদের কাজে ব্যয় করি। আরএক ভাগ ফকীর, মিসকীন এবং মুসাফিরদের মাঝে বন্টন করে দেই। (মুসলিম, তাফসীরে ইবনে কাছীর)
উমার বিন খাত্তাব (রাঃ)এর কারামতঃ উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) মদীনার মিম্বার থেকেদেখতে পেলেন যে, ইরাকের নাহাওয়ান্দে যুদ্ধরত মুসলিম বাহিনী শত্রুদের আক্রমণের কবলে পড়তে যাচ্ছে। তাই তিনি সেনাপতি সারিয়াকে মদীনার মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে “ইয়া সারিয়া! আল- জাবাল” অর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয়নাও, বলে ডাক দিলেন। তাঁর আওয়াজ সিরিয়াতে অবস্থানরত সারিয়ার কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। সারিয়া খলীফা উমারের সেই ডাক শুনে সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ের উপর আশ্রয় গ্রহণ করলেন এবং শত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলেন। উমার (রাঃ)এর কারামাতের বিস্তারিত বিবরণ এইযে, উমার (রাঃ) একদল সৈনিক পাঠালেন এবং সারিয়া নামক এক ব্যক্তিকে সেনাবাহিনীর আমীর নিযুক্ত করলেন। উমার (রাঃ) মদীনার মিম্বারে খুৎবারত অবস্থায় ইয়া সারিতা!আল-জাবাল, ইয়া সারিতা! আল-জাবাল বলে উচ্চস্বরে ডাক দিলেন। সৈনিকদের দূত মদীনায় এসে বললেনঃ হে আমীরুল মুমিনীন! আমরা শত্রুদের মুকাবিলা করতে গেলে তারা আমাদেরকে পরাজিত করে ফেলে। তখন আমরা একজন লোককে চিৎকার করে বলতে শুনলামঃ ইয়া সারিতা! আল-জাবাল। অর্থাৎ হে সারিয়া পাহাড়ে আশ্রয় নাও। এতে আমরা সতর্কতা অবলম্বন করে পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করলাম। শত্রুদের আক্রমণের কবল হতে নিরাপদ হলাম। আল্লাহ্ তাআলা শত্রুদেরকে পরাজিত করলেন। (মাজমূআয়েফাতাওয়া ইবনে তাইমীয়াঃ ১১/২৭৮, উয়ূনুল আছার ১/২৫২)
নীল নদের কাছে উমার (রাঃ)এর চিঠি লেখার ঘটনাটি ইবনে কাছীর তার গ্রন্থ আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া’তে উল্লেখ করেছেন। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, মিশরের শাসক আমর বিন আস উমার (রাঃ)কে সংবাদ দিল যে, মিশরবাসীরা প্রতিবছর নীল নদকে একটি করে কুমারী মেয়ে উৎসর্গ করলেই তা প্রবাহিত হয়। আমর বিন আসমিশরবাসীকে জানালেন যে, ইসলামে এধরণের কর্ম সম্পূর্ণ হারাম। স্বয়ং আমর বিনআস উমার (রাঃ)এর বরাবর এমর্মে একটি পত্র লিখে পাঠালেন। উমার (রাঃ) নীল নদেরকাছে এই পত্র লিখে পাঠালেনঃ من عبد الله عمر أمير المؤمنين إلى نيل مصر أما بعد: فان كنت تجري من قبلك ومن أمرك فلا تجر فلا حاجة لنا فيك وإن كان الله الواحد القهار هو الذي يجريك فنسأل الله أن يجريك فألقى عمرو البطاقة في النيل فجرى أفضل مما كان “আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন উমার (রা)এরপক্ষ হতে মিশরের নীল নদের প্রতি প্রেরিত এই পত্র। অতঃপর হে নীল নদ! তুমি যদি নিজের ক্ষমতা বলে ও নিজের পক্ষ হতে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে তুমি আজ হতে আর প্রবাহিত হয়ো না। তোমার কাছে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আর তুমি যদি মহা প্ররাক্রমশালী এক আল্লাহর হুকুমে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন। আমর (রাঃ) পত্রটি নীলনদে নিক্ষেপ করার সাথে সাথে তা পূর্বের চেয়ে আরো দ্রুত গতিতে প্রবাহিত হতে লাগল। (দেখুনঃ বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৭/১০২)
জুরাইজের ঘটনাঃ বানী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয নামের একজন পরহেজগার লোক ছিল। সে ইবাদতের জন্য একটি গীর্জা তৈরী করে তথায় সর্বদাইবাদতে লিপ্ত ছিল। সে এক দিন নামাযরত অবস্থায় ছিল। এমন সময় তার মা এসে ডাকদিল। জুরাইজ বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সেনামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে চলে গেল।পরের দিন তার মা আবার আগমণ করল। সেদিনও জুরাইয নামাযে ছিল। তার মায়ের কন্ঠশুনে সে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার মা এবং আমার নামায। অর্থাৎ আমি এখন কি করব? আমার মায়ের ডাকে সাড়া দিব? না নামাযে লিপ্ত থাকব? এই বলে সে নামাযের মধ্যে রয়ে গেল। মায়ের ডাকে সাড়া দিলনা। মা ব্যর্থ হয়ে আজও চলে গেল।তৃতীয় দিনেও তার মা এসে তাকে নামায রত পেল। জুরাইজ তার মার ডাকে সাড়া না দিয়েই নামাযেই রয়ে গেল। এবার তার মা রাগাম্বিত হয়ে জুরাইযের উপর এই বলে বদ্দু’আ করল যে, হে আল্লাহ! জুরাইয যেন বেশ্যা মহিলার মুখ দেখার পূর্বে মৃত্যু বরণ না করে। বনী ইসরাঈলের মধ্যে জুরাইয এবং তার ইবাদতের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল। তাদের মধ্যকার কিছু লোক তাকে পথভ্রষ্ঠ করার জন্য চক্রান- শুরু করল।একজন বেশ্যা মহিলা সেসময় সেজেগোজে ঘুরে বেড়াত। সে প্রস-াব করল যে, তোমরা যদি চাও আমি তাকে গোমরাহ করতে পারি। নবী (সাঃ) বলেন, অতঃপর সেই মহিলা জুরাইযের কাছে গিয়ে নিজেকে পেশ করল। কিন’ জুরাইয সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলনা। জুরাইযের গীর্জায় একজন ছাগলের রাখাল আসা-যাওয়া করত। মহিলাটি জুরাইযের কাছে কোন সুযোগ না পেয়ে রাখালের কাছে গিয়ে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হল। এতে সে গর্ভবতী হয়ে গেল। প্রসব করার পর সে বলল এটি জুরাইযের সন্তান। লোকেরা দলে দলে আগমণ করে জুরাইযকে গীর্জা থেকে টেনে বের করল এবং তার গীর্জাটিও ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। লোকেরা মারতে শুরু করল। জুরাইয জিজ্ঞাসা করল, তোমাদের কি হল? আমাকে মারছ কেন? আমার ইবাদতখানাটিই বা কেন ভেঙ্গে ফেললে? লোকেরা বললঃ তুমি এই মহিলার সাথে ব্যভিচার করেছ। যার কারণে মহিলাটি সন্তান প্রসব করেছে। জুরাইয জিজ্ঞাসা করলঃ শিশুটি কোথায়? তারা শিশুটিকে নিয়ে অসল। জুরাইয বলল আমাকে নামায পড়ার জন্য একটু সময় দাও। তারা তাকে নামায পড়ার সুযোগ দিল। নামায শেষ করে শিশুটির কাছে গিয়ে তার পেটে খুচা দিয়ে বললঃ এই ছেলে? তোমার বাপ কে? ছেলেটি বলে দিল, ছাগলের রাখাল। নবী (সাঃ) বলেন, একথা শুনে লোকেরা আসল তথ্য অনুধাবন করতে পেরে জুরাইযকে চুম্বন করতে শুরু করল এবং তাকে জড়িয়ে ধরল। তারা নিজেদের ভুলের কারণে জুরাইযের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং বলল আপনি অনুমতি দিলে আমরা আপনার গীর্জাটি স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করে দিব। জুরাইয বললঃ স্বর্ণ দিয়ে তৈরী করার দরকার নেই; বরং যেমন ছিল তেমন করেই মাটি দিয়ে তৈরীকরে দাও। তারা তাই করল। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিক্র)
তিন জন অলীর ঘটনাঃ ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেনযে, অতীত কালে তিনজন লোক পথ চলতেছিল। পথিমধ্যে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।নিরাপদ আশ্রয় হিসাবে তারা একটি পাহাড়ের গুহায় ঢুকে পড়ল। উপর থেকে বিশাল আকারের একটি পাথর গড়িয়ে এসে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তাদের জন্য বের হওয়ার কোন সুযোগ অবশিষ্ট রইলনা। তাদের একজন অপরজনকে বলতে লাগল, তোমরা প্রত্যেকেই আপন আপন সৎ আমল আল্লাহর দরবারে তুলে ধরে তার উসীলা দিয়ে দু’আ কর। এতে হয়ত আল্লাহ আমাদের জন্য বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। তাদের একজন বলল, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা অতিবৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছিল, আমার কতিপয় শিশু সন্তানও ছিল। আমি ছিলাম তাদের জন্য একমাত্র উপার্জনকারী। আমি প্রতিদিন ছাগল চরানোর জন্য মাঠে চলে যেতাম। বিকালে ঘরে ফেরত এসে দুধ দহন করে আমি প্রথমে পিতা-মাতাকে পান করাতাম, পরে আমার শিশু সন্তানদেরকে পান করাতাম। এটি ছিল আমার প্রতিদিনের অভ্যাস। একদিন ঘাসের সন্ধানে আমি অনেক দূরে চলে গেলাম। এসে দেখি আমার পিতা-মাতা ঘুমিয়ে পড়েছে। আমার অভ্যাসমত আমি দুধ দহন করে দুধের পেয়ালা নিয়ে তাদের মাথার পাশে দাড়িয়ে রইলাম। আমি তাদেরকে ঘুম থেকে জাগ্রত করাকে অপছন্দ করলাম। যেমনভাবে অপছন্দ করলাম পিতা-মাতার পূর্বে সন্তানদেরকে দুধ পান করানোকে। শিশুসন্তানগুলো আমার পায়ের কাছে ক্ষুধার তাড়নায় চিৎকার করতেছিল। এভাবে সারা রাত কেটে গিয়ে ফজর উদীত হল। আমার পিতা-মাতা ঘুম থেকে জাগলেন। আমি তাদেরকে প্রথমে পান করালাম অতঃপর আমার ছেলে-মেয়েদেরকে পান করালাম। হে আল্লাহ! আপনি অবশ্যই জানেন যে, আমি একাজটি একমাত্র আপনার সন’ষ্টি অর্জনের জন্য সম্পাদন করেছি। এই আমলটির উসীলায় আমাদের জন্য বের হওয়ার রাস্তা করে দিন। এভাবে দু’আ করার সাথে সাথে পাথরটি একটু সরে গেল, তারা আকাশ দেখতে পেল, কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি। দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার একজন চাচাতো বোন ছিল। সে ছিল আমার কাছে অত্যন্ত প্রিয় এবং একজন পুরুষ কোন মহিলার প্রতি যতদূর আসক্ত হতে পারে, আমি ছিলাম তার প্রতি ততটুকু আসক্ত। আমি তার কাছে আমার মনোবাসনা পেশ করলাম। সে একশত স্বর্ণমুদ্রা দেয়ার শর্তে তাতে সম্মত হল। আমি অনেক পরিশ্রম করে একশত স্বর্ণমুদ্রা সংগ্রহ করে তার কাছে গমণ করলাম। সে সম্মতি প্রকাশ করারপর আমি তার উভয় উরুর মধ্যে বসে পড়লাম। এমন সময় সে বলে উঠল, হে আল্লাহরবান্দা! আল্লাহকে ভয় কর, আমার স্বতীত্ব নষ্ট করোনা। একথা শুনে আমি তাকে ছেড়ে দিলাম। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার ভয়ে সেদিন পাপের কাজ থেকে বিরত হয়েছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস’া করে দিন। সাথে সাথে পাথরটি আরো একটু সরে গেল কিন’ তখনও বের হওয়ার মত রাস্তা হয়নি। তৃতীয়জন বললঃ হে আল্লাহ! নির্ধারিত বেতনের বিনিময়ে আমি একজন শ্রমিক নিয়োগ করলাম। কাজ শেষ করে সে আমার কাছে পারিশ্রমিক চাইলে আমি তা প্রদান করলাম, কিন’ সে উহা গ্রহণ না করেই চলে গেল। আমি তার প্রাপ্য টাকা বাড়াতে থাকলাম। একপর্যায়ে তা একপাল গরুতে পরিণত হল। আমি গরুগুলো মাঠে চরানোর জন্য একজন রাখালও নিয়োগ করলাম। অনেক দিন পর সেই লোকটি আমার কাছে এসে তার মজুরী চাইল। আমি বললামঃ তুমি রাখালসহ উক্ত গরুর পালটি নিয়ে চলে যাও। সে বলল, হেআল্লাহর বান্দা! আমার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং আমার সাথে বিদ্রুপ করোনা। আমি বললাম, বিদ্রুপ করি নাই। বরং এগুলো তোমার। আমি তোমার এক দিনের মজুরী দিয়ে এগুলো করেছি। তাই তুমি রাখালসহ গরুর পালটি নিয়ে চল। অতঃপর সে গরুর পালটি নিয়ে চলে গেল। একটিও রেখে যায়নি। হে আল্লাহ! আপনি যদি মনে করেন যে, আমি আপনার সন’ষ্টির জন্য একাজটি করেছি, তাহলে আজ আমাদেরকে এখান থেকে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। সাথেসাথে পাথরটি সম্পূর্ণরূপে সরে গেল। তারা নিরাপদে সেখান থেকে বের হয়ে এল। (বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া)
এক বৃদ্ধ কৃষকের কারামতঃ অতীত কালে একজন লোক রাস্তা দিয়ে চলছিল। হঠাৎ মাথার উপর মেঘমালা থেকে একটি শব্দ শুনল যে, অমুকের বাগানে বর্ষণ কর। লোকটি মেঘমালাকে অনুসরণ করে পথ চলতে থাকল। অবশেষে একটি যমিনে বৃষ্টি বর্ষণ হল। সেখানে দেখতে পেল একজন লোক কোদাল হাতে নিয়ে বাগানে কাজ করছে। লোকটি বাগানওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করল তোমার নাম কি? সে বললঃ আমার নাম অমুক। যে নামটি সেমেঘ থেকে শুনেছিল। তারপর বাগানের মালিক জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞাসা করছ? উত্তরে সে বললঃ যে মেঘ থেকে এই বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে, আমি তোমার নামটি সেই মেঘের ভিতরে শুনতে পেয়েছি। তাই আমি তোমার নাম জিজ্ঞেস করছি। তোমার কাছে আমার আরো একটি প্রশ্ন হল, তুমি কিভাবে এই বাগানের ফসলব্যয় কর, তাও আমি জানতে চাই। সেবললঃ আমার যমিনে উৎপাদিত ফসলকে তিনভাগে বিভক্ত করি। একভাগ আমার পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করি। একভাগ পুনরায় ফসল আবাদের কাজে ব্যয় করি। আরএক ভাগ ফকীর, মিসকীন এবং মুসাফিরদের মাঝে বন্টন করে দেই। (মুসলিম, তাফসীরে ইবনে কাছীর)
উসায়েদ ইবনে হুযায়ের-এর কারামতঃ উসাইদ ইবনে হুযাইর (রাঃ) বলেন, আমি একদিন রাত্রি বেলায় সূরা বাকারা তেলাওয়াত করছিলাম। আমার ঘোড়াটি কাছেই বাধা ছিল। হঠাৎ করে ঘোড়াটিলাফিয়ে উঠল। আমি কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। ঘোড়াটিও থেমে গেল। আবার তেলাওয়াত শুরু করলাম। আবার ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করল। আমি আবার কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। ঘোড়াটিও থেমে গেল। তারপর আমি একেবারেই তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। কারণ আমার শিশু পুত্র ইয়াহয়া ঘোড়াটির পাশেই ঘুমন্ত ছিল।আমার ভয় হল যে, ঘোড়াটি হয়ত ইয়াহয়াকে আঘাত করতে পারে, এই ভয়েই আমি মূলত কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। অতঃপর আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম, মাথার উপরে অসংখ্য আলোক বর্তিকার মত কি যেন দেখা যাচ্ছে। আলোক বর্তিকাগুলো আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে গেল। একটিও অবশিষ্ঠ রইলনা। সকাল বেলা আমি রাসূল (সাঃ)এর নিকট গিয়ে ঘটনাটি বর্ণনা করলাম। বললাম হে আল্লাহর নবী! গত রাত্রে আমি কুরআন তেলাওয়াত করছিলাম। আমার ঘোড়াটি কাছেই বাধা ছিল। হঠাৎ করে ঘোড়াটি লাফিয়ে উঠল। আমি আবার কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। ঘোড়াটিও থেমে গেল। আবার তেলাওয়াত শুরু করলাম। আবার ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করল। আমি আবার কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। ঘোড়াটিও থেমে গেল। তারপর আমি একেবারেই তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। কারণ আমার শিশু পুত্র ইয়াহয়া ঘোড়াটির পাশেই ঘুমন- ছিল। আমার ভয় হল যে, ঘোড়াটি হয়ত ইয়াহয়াকে আঘাত করতে পারে, এই ভয়েই আমি মূলত কুরআন তেলাওয়াত বন্ধ করে দিলাম। অতঃপর আমি ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম, মাথার উপরে অসংখ্য আলোকবর্তিকার মত কি যেন দেখা যাচ্ছে। আলোক বর্তিকাগুলো আস্তে আস্তে উপরের দিকে উঠে গেল। একটিও অবশিষ্ঠ রইলনা। রাসূল (সাঃ) আমাকে বললেন, তুমি কি জান এগুলো কি? তারা হলো আল্লাহর ফেরেশতা।তোমার কুরআন তেলাওয়াত শুনার জন্য তারা আগমণ করেছিল। তুমি যদি সকাল পর্যন্ত তেলাওয়াত অব্যাহত রাখতে, তাহলে দুনীয়ার মানুষেরা তাদেরকে দেখতে পেত। কারণ কুরআন তেলাওয়াত শুনা ছেড়ে দিয়ে আত্মগোপন করা কখনই তাদের পক্ষে সম্ভব হতনা। (বুখারী, অধ্যায়ঃ ফাযায়িলুল কুরআন)
আব্বাদ বিন বিশরের করামাতঃ আব্বাদ বিন বিশ্র এবং উসাইদ ইবনে হুজাইর নবী (সাঃ)এর সাথে ইশা নামায আদায় করার পর অনেক ক্ষণ পর্যন্ত তাঁর সাথে কথাবার্তা বললেন। এতে অনেক রাত হয়ে গেল। রাত্রিটি ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন। কথাবার্তা শেষে তারা যখন নবী (সাঃ)এর দরবার থেকে বের হলেন তখন তাদের সামনে একটি আলোক বর্তিকা প্রকাশিত হয়ে রাস্তা আলোকিত করে দিল। আলোক বর্তিকাটি তাদের আগে আগে চলতে লাগল। রাস্তায় যখন তাদের পৃথক হওয়ার সময় হল একটি আলোকবর্তিকা দু’টিতে পরিণত হয়ে গেল। একটি আব্বাদ বিন বিশরের রাস্তাকে আলোকিত করে তার আগে আগে চলতে লাগল। আর তিনিও উক্ত আলোতে পথ চলতে চলতে বাড়িতে পৌঁছেগেলেন। এমনিভাবে অন্য আলোটি উসাইদ বিন হুজাইরের রাস্তাকে আলোকিত করলে তিনিও নির্ভিগ্নে বাড়িতে চলে গেলেন। (বুখারী, অধ্যায়ঃ আব্বাদ বিন বিশর ওউসাইদ বিন হুযায়েরের ফজীলত)
ওয়াইসআল-কারণীর ঘটনাঃ উসাইর ইবনে যাবের (রাঃ) বলেন, যখনই ইয়্যমেন থেকে কোন যুদ্ধের কাফেলা মদীনায় আগমণ করতেন, তখন উমার (রাঃ) তাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমাদের মাঝে ওয়াইস বিন আমের আল-কারণী নামে কোন লোক আছে কি? কোন এক সময় ওয়াইস বিন আমের আগমণ করেছে জানতে পেরে উমার (রাঃ) তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ওয়াইস বিন আমের? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি কার্ন গোত্রের মুরাদ শাখার লোক? উত্তরে তিনি বললেন হ্যাঁ। তোমার শরীরে কি শ্বেত রোগ ছিল, যা থেকে তুমি সুস্থ হয়েছ, কিন্তু সামান্য স্থানে তার চিহ্ন রয়ে গেছে। তিনিবললেন হ্যাঁ। উমার (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার মাতা জিবীত আছে? তিনিবললেন, হ্যাঁ। এরপর উমার (রাঃ) বললেন, আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, অদূর বভিষ্যতে তোমাদের কাছে ওয়াইস বিন আমের নামে একজন লোক আগমণ করবে। তার ছিল শ্বেতরোগ। সামান্য স্থান ব্যতীত তাঁর শরীরের চামড়া ভাল হয়ে গেছে। তিনিতাঁর ময়ের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচরণকারী এবং আনুগত্যশীল। সম্ভবতঃ সে কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে না। সে যদি আল্লাহর নামে কোন শপথ করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দেন। তুমি যদি তাকে পাও, তার কাছে তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করিও। সুতরাং তুমি আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। ওয়াইস আল-কারণী উমার (রাঃ)এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। অতঃপর উমার (রাঃ)জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এখন কোথায় যাবে? সে বলল, কূফার দিকে যাওয়ার ইচ্ছাপোষণ করছি। উমার (রাঃ) বললেন, কূফার গভর্ণরের কাছে তোমার জন্য কিছু লিখে দিব কি? সে বলল, না কোন কিছু লিখার প্রয়োজন নেই। আমি দারিদ্র হালতে এবংফকীর-মিসকীনদের সাথে বসবাস করা পছন্দ করি। পরবর্তী বছরে কূফার একজন লোক হজ্জ করতে আসল। উমার (রাঃ) তাকে ওয়াইস আল-কারণী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন।সে বললঃ আমি তাকে একটি পুরাতন ঘরের মধ্যে অসহায় অবস্থায় বসবাস করতে দেখে এসেছি। উমার (রাঃ) বললেনঃ আমি রাসূল (সাঃ)কে বলতে শুনেছি, অদূর বভিষ্যতে তোমাদের কাছে ওয়াইস বিন আমের নামে একজন লোক আগমণ করবে। তার ছিল শ্বেত রোগ।সামান্য স্থান ব্যতীত তাঁর শরীরের চামড়া ভাল হয়ে গেছে। তিনি তাঁর মাতার খেদমতে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচরণকারী এবংআনুগত্যশীল। সম্ভবতঃ সে কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে না। সে যদি আল্লাহরনামে কোন শপথ করে, আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দেন। তুমি যদি তাকেপাও, তার কাছে তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার আবেদন করিও।সুতরাং তুমিও তার কছে গিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করিও।কূফাবাসী লোকটি দেশে ফিরে গিয়ে ওয়াইস আল-কারণীর সাথে সাক্ষাত করে তার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে বললেন। প্রথমে সে এই বলে আবেদন প্রত্যাখ্যান করলেন যে, তুমি হজ্জের সফর থেকে কেবলমাত্র আগমণ করেছ। সুতরাং তুমিই আমার জন্য দু’আ কর। এ কথাটি সে কয়েকবার বলার পর জিজ্ঞাসা করল তুমি উমার (রাঃ)এর সাথে দেখা করেছ? কূফাবাসী বললঃ হ্যাঁ। অতঃপর ওয়াইস আল-কারণী তার জন্য দু’আ করলেন মানুষের কাছে ওয়াইসের বিষয়টি প্রকাশিত হয়ে গেলে সে অদৃশ্য হয়ে গেল। হাদীসের বর্ণনাকারী উসাইর ইবনে যাবের বলেন, আমি তাকে একটি চাদর দান করেছিলাম। যখনই মানুষ তাকে এই চাদরটি পরিহিত অবস্থায় দেখত, তারা বলতঃ ওয়াইসএই চাদরটি কোথায় পেল? (মুসলিম, অধ্যায়ঃ ফাযায়িলুস্ সাহাবাহ) আমাদের দেশে ওয়ইস আল-কারণী সম্পর্কে৩২ দাঁত ভাঙ্গার যে ঘটনা বর্ণনা করা হয়, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
আবু বকর (রাঃ)এর করামাতঃ আবু বকর (রাঃ)এর খেলাফতকালে আরবের কতিপয় গোত্রমুরতাদ হয়ে যাওয়ার সময় আল্লাহ্ তাঁর হাতে কারামত প্রকাশ করেন। আবু বকরের হাতে প্রকাশিত আরেকটি মুজিযা হচ্ছে, আবু যার্ (রাঃ) বলেনঃ রাসূলসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসন্ধান করার জন্য মদীনার কোন বাঘানে গেলাম। গিয়ে দেখলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে আছেন। আবুযার্ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছে গিয়ে তাঁকে সালাম দিলেন।আবু যার্ বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সামনে কতগুলো পাথর রাখা ছিল। তিনি সেগুলো হাতে নিলে সেগুলো তাসবীহ পাঠ করা শুরু করল।অতঃপর তিনি তা মাটিতে রাখলে তাসবীহ পাঠ বন্ধ করে দেয়। নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামসেগুলো হাতে নিয়ে আবু বকরের হাতে রাখলে আবার তাসবীহ পাঠশুরু করে দেয়। আবু বকর (রাঃ) সেগুলো মাটিতে রাখলে চুপ হয়ে যায়। হাদীছেবর্ণিত আছে যে, পাথর দানাগুলো উমার ও উছমানের হাতেও তাসবীহ পাঠ করেছিল। (ইবনু আবী আসেম, কিতাবুস্ সুন্নাহ। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা হাদীছ নং- ১১৪৬)
আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ)এর ঘোড়ার ঘটনা: আলা ইবনুল হাযরামী (রাঃ) অশ্বারোহী বাহিনী রোমানদের সাথে যুদ্ধের সময় ঘোড়ায় আরোহন করে সাগর পার হয়েছিল। ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এই যে, তিনি উমার (রাঃ)এর খেলাফতকালে একদল সৈনিক নিয়ে যুদ্ধে বের হলেন। শত্রু ও তার বাহিনীর মধ্যে একটি সাগর অন-রায় হয়ে দাঁড়াল। তিনি আল্লাহর কাছে দু’আ করে সাগরের উপর দিয়ে ঘোড়া ছুটালেন। সাগর পাড় হয়ে তিনি শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করে ফেরার পথে পুনরায় আল্লাহরকাছে দুআ করে মুসলিম বাহিনী নিয়ে সাগরের উপর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে পার হলেন। (দেখুন আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৬/১৬২)
আরো কিছু কারামত:
আরো কিছু কারামত:
. উরওয়াহ ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, সাঈদ
ইবনে যায়দ ইবনে আমর ইবনে নুফাইল রাদিয়াল্লাহু
আনহু-এর বিরুদ্ধে আরওয়া
বিনতে আওস নামক এক মহিলা মারওয়ান ইবনে হাকামের দরবারে মোকাদ্দামা পেশ করল; সে দাবি জানাল যে, ‘সাঈদ আমার কিছু জমি
আত্মসাৎ করেছেন।’ সাঈদ বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে (এ বিষয়ে ধমক) শোনার
পরও কি আমি তার কিছু জমি দাবিয়ে নিতে পারি?’ মারওয়ান বললেন, ‘আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
কাছে কি (ধমক) শুনেছেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে, “যে
ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারো এক বিঘত জমি দাবিয়ে নেবে, (কিয়ামতের
দিনে) সাত তবক জমিন তার গলায় লটকে দেওয়া হবে।” এ কথা শুনে
মারওয়ান বললেন, ‘এরপর আমি আপনার কাছে কোন প্রমাণ তলব করব না।’ সুতরাং সাঈদ (বাদী পক্ষীয়) মহিলার প্রতি বদ্দুআ করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! এ মহিলা যদি মিথ্যাবাদী হয়, তাহলে
ওর চক্ষু অন্ধ করে দাও এবং ওকে ওর জমিতেই মৃত্যু দাও।’
বর্ণনাকারী
বলেন, ‘মহিলাটির মৃত্যুর পূর্বে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে গিয়েছিল
এবং একবার সে নিজ জমিতে চলছিল। হঠাৎ একটি গর্তে পড়ে মারা গেল।’ -বুখারী ও মুসলিম
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, উহুদের
যুদ্ধ যখন সংঘটিত হয়। রাতে আমাকে আমার পিতা ডেকে বললেন, ‘আমার
মনে হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
সহচরবৃন্দের মধ্যে যারা সর্বপ্রথম শহীদ হবেন, আমিও তাঁদের
অন্তর্ভুক্ত। আর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর
পর, তোমাকে ছাড়া ধরা-পৃষ্ঠে প্রিয়তম আর কাউকে ছেড়ে যাচ্ছি
না। আমার উপর ঋণ আছে, তা পরিশোধ করে দেবে। তোমার বোনদের
সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।’ সুতরাং যখন আমরা ভোরে উঠলাম, তখন দেখলাম যে, সর্বপ্রথম উনিই শাহাদত বরণ
করেছেন। আমি তাঁর সাথে আর এক ব্যক্তিকে সমাধিস্থ করলাম। তারপর অন্যজনকে তাঁর সঙ্গে
একই কবরে দাফন করাতে আমার মনে শান্তি হল না। সুতরাং ছয়মাস পর আমি তাঁকে কবর হতে
বের করলাম। (দেখা গেল) তার কান ব্যতীত (তার দেহ) সেদিনকার মত অবিকল ছিল, যেদিন তাকে কবরে রাখা হয়েছিল। অতঃপর আমি তাকে একটি আলাদা কবরে
দাফন করলাম। .-বুখারী ]
.
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীর মধ্য থেকে দু’জন সাহাবী অন্ধকার রাতে তাঁর নিকট হতে বাইরে গমন করেন। আর তাঁদের
আগে আগে প্রদীপের ন্যায় কোন আলো বিদ্যমান ছিল। পরে যখন তাঁরা একে অপর থেকে আলাদা
হয়ে গেলেন, তখনও প্রত্যেকের সঙ্গে আলো ছিল। শেষ পর্যন্ত
তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ গৃহে পৌঁছে গেলেন। (এটিকে বুখারী কয়েকটি সূত্রে বর্ণনা করেছেন। কোন কোন
বর্ণনায়, ঐ দুই সাহাবীর নাম ছিল, উসাইদ
ইবনে হুযাইর ও আববাদ ইবনে বিশ্র। রাদিয়াল্লাহু আনহুমা।)
ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি
বলেন, “যখনই কোন বিষয়ে আমি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে বলতে শুনতাম, ‘আমার মনে হয়, এটা এই হবে’ তখনই (দেখতাম) বাস্তবে তাই হত; যা তিনি ধারণা করতেন!” (বুখারী)
ভন্ড নবী আসওয়াদ আনাসী আবু মুসলিম খাওলানী (রাঃ)কে আগুনে নিক্ষেপ করলে আবু মুসলিম আগুনের ভিতর নামায আদায় করেছেন। আবুমুসলিম খাওলানীর কারামাত এই যে, ভন্ড নবী আসওয়াদ আনাসী আবু মুসলিমখাওলানীকে ডেকে নিয়ে বললঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আমি আল্লাহর রাসূল? আবুমুসলিম বললনেঃ আমি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছি না। আসওয়াদ আনাসী পুনরায় বললঃতুমি কি এই সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল? আবু মুসলিম বললেনঃ হ্যাঁ। ইতিহাসের কিতাবগুলোতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক কারামাত নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামএর যুগে, তারপর সাহাবী, তাবেয়ীদের যুগে প্রকাশিত হয়েছে। এমনিভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এই কারামতগুলো তাদের পরবর্তী যুগে এবং বর্তমান যুগেও অব্যাহত রয়েছে। এমনিভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
ভন্ড নবী আসওয়াদ আনাসী আবু মুসলিম খাওলানী (রাঃ)কে আগুনে নিক্ষেপ করলে আবু মুসলিম আগুনের ভিতর নামায আদায় করেছেন। আবুমুসলিম খাওলানীর কারামাত এই যে, ভন্ড নবী আসওয়াদ আনাসী আবু মুসলিমখাওলানীকে ডেকে নিয়ে বললঃ তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে আমি আল্লাহর রাসূল? আবুমুসলিম বললনেঃ আমি তোমার কথা শুনতে পাচ্ছি না। আসওয়াদ আনাসী পুনরায় বললঃতুমি কি এই সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল? আবু মুসলিম বললেনঃ হ্যাঁ। ইতিহাসের কিতাবগুলোতে বিস্তারিতভাবে উল্লেখিত হয়েছে। এছাড়া আরও অনেক কারামাত নবী সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামএর যুগে, তারপর সাহাবী, তাবেয়ীদের যুগে প্রকাশিত হয়েছে। এমনিভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এই কারামতগুলো তাদের পরবর্তী যুগে এবং বর্তমান যুগেও অব্যাহত রয়েছে। এমনিভাবে কিয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে।
এখানে বিশেষভাবে স্মরণ রাখা দরকার যে, নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসারী নয় এমন লোকের হাতে যদি স্বাভাবিক অভ্যাসের বিপরীত কোন কিছু প্রকাশিত হয়, তবে তা কারামত নয়; বরং তা ফিতনা ও ভেলকিবাজি। যার হাতে এমন কিছু প্রকাশিত হবে, সে আল্লাহর অলী নয়; বরং শয়তানের অলী।