Wednesday, July 10, 2013

সামন্তযুগে বাংলাদেশে হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (র:)'র ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দীপনাময় কাহিনী

সামন্তযুগে বাংলাদেশে হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (র:)'র ইসলাম প্রচার ও প্রতিষ্ঠার উদ্দীপনাময় কাহিনী-

নেত্রকোনার পূন্য ভূমি মদনপুরে মুসলিম সভ্যতা বিকাশের ঊষা লগ্নে পূর্ব বঙ্গে সামন্ত প্রভূদের অত্যাচার যখন তুঙ্গে উঠে, তখন সূদুর আরব দেশ থেকে ওলীয়ে তাপস মণি হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) বঙ্গে প্রথম ইসলামের ডংকা বাজিয়ে ছিলেন। ডংকার সেই বজ্র ধ্বনি সম্প্রীতির সেতু বন্ধনে আজও বহমান রয়েছে নেত্রকোনার মদনপুরে।  

ঐতিহাসিকদের মতে খ্রীষ্টিয় অষ্টম শতকের মধ্য ভাগে পাল বংশ বাংলায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়। পাল শাসক ন্যায় পাল (১০৪৩-৫৪) বাংলার শাসন কর্তা ছিলেন। এসময় শাসকগণ সাম্রাজ্যকে কয়েকটি পরগনায় ভাগ করে স্থানীয় রাজাদের সামন্ত শাসক হিসেবে নিযুক্ত করে তাদের উপর শাসন কার্য পরিচালনার ভার দিতেন। ১০৩৮ সালে সম্রাট প্রথম মহী পালের মৃত্যুর পর পাল সাম্রাজ্য পতনের দিকে যেতে থাকলে সাম্রাজ্যে দেখা দেয় চরম বিশৃংখলা। পাল রাজ ন্যায়পাল পরবর্তী রাজাগণ রাজ্য শাসনে অক্ষমতার পরিচয় দিতে থাকলে রাজধানী গৌড়ে তাদের ক্ষমতা সিমাবদ্ধ হয়ে যায়। দুর্বলতার সুযোগে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলের সামন্ত শাসকগণ স্বাধীনতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

মো: সাজ্জাদুর রহমান ফকির সম্পাদিত হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) জীবনি গ্রন্থ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, ময়মনসিংহ অঞ্চলের গৌরীপুরের বোকাই নগর এবং নেত্রকোনার মদনপুর পরগনায় সে সময় সামন্ত রাজা ছিলেন বোকাই কোচ মদন মোহন কোচ। এদের অত্যাচারে এলাকার অধিবাসীগণ তখন অতীষ্ট হয়ে পড়েন। বোদ্ধ ধর্মাবলম্বী হয়েও রাজ্যের নৃপতিগণ শংখরাজৈর প্রভাবে হিন্দু দেবতাদের পূজায় নিমগ্ন হয়ে আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া হয়ে উঠে। হিন্দু দেব-দেবীর উপাসনালয়ে যেরূপমন্ত্র ব্রাহ্মনগণ পাঠ করতো কালক্রমে বোদ্ধরা এগুলো অনুসরণ করে হিন্দু মতবাদে রূপান্তরিত হয়ে প্রজা সাধারণের উপর তা চাপিয়ে দেওয়া হয়। এমনি এক অমানিশার অন্ধকার যুগে সূদুর আরব দেশ থেকে ৪৪৫ হিজরী সালে (১০৫৩খ্রীঃ) অলীয়ে কামেল তাপস মণি হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (রঃ) ১২০ জন সঙ্গী নিয়ে নদী পথে বঙ্গদেশে আগমন করেন। তিনি রোমের বাদশাহ ছিলেন। তিনি প্রথমে চট্টগ্রামের চট্টল বন্ধরে অবতরন করে কিছুদিন অবস্থান করেন। ১২০ সদস্যের আরবীয় ইসলাম প্রচারকারী মিশনের নেতৃত্ব নিয়ে তিনি বঙ্গদেশে এসে কয়েকটি উপদলে বিভক্ত হয়ে দক্ষিন বঙ্গে ইসলামের শান্তির বাণি পোঁছাতে শুরু করেন। চট্টগ্রাম থেকে হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমী (:) এঁর কাফেলা খুলনার দিকে চলে যায়। হযরত শাহ্ সৈয়দ মাহমুদ বলখী (:) নেতৃত্বে একটি উপদল যমুনা পথে বগুড়ায় ইসলাম প্রচার কার্যে গমন করে। বগুড়ার সুশাসনকর্তা ছিলেন পালরাজের অধীনস্থ সামন্তরাজ পরশুরাম। হযরত সৈয়দ মাহমুদ শাহী শেয়ার (:) সদলবলে রাজা পরশুরামের রাজধানী মহাস্থ নগড়ে অবস্থান নিলেন। সেখান হতে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে পুশুর রামের দরবারে দূত পাঠালেন। পরশুরাম ইসলামের কাফেলারে কথা শুনে ভীষন ক্ষীপ্ত হয়ে দৃতকেবন্দী করে কাফেলা অতর্কিত আক্রমন করেন। অতর্কিত আক্রমনে দলনেতা হযরত সৈয়দ মাহমুদ শাহী শেয়ার বলখী (:) হযরত মোঃ ফারুক শাহ্ (:) হযরত শাহ্ মিয়া গাজী (:) হযরত মোঃ কাবিল শাহ্ (:) সহ অনেকেই শাহাদত বরণ করেন। বগুড়ায় মুসলমানদের পরাজয়ের সংবাদ পেয়ে শাহ্ সুলতান রুমী (:) সদল বলে বগুড়ার উদেশ্যে যাত্রা করেন। সঙ্গীদের মৃত্যুতে তিনি শোকাহত হন এবং প্রতিশোধের নেশায় তাঁর অন্তরে আগুন জ্বলে উঠলো। এদিকে মুসলীম বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে রাজা পরশুরাম প্রতি রক্ষা বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হয়ে যুদ্ধ শুরু করলেন। মাত্র শতেক সংগী নিয়ে হযরত শাহ্ সুলতান (:) পরশুরামের বিশাল বাহিনীকে পরাস্ত করেন। যুদ্ধে মুসলমি বাহিনীর জন শহীদ হন আর রাজা পরশুরাম সহ শতার্ধিক সৈন্য নিহত হয়। এযুদ্ধে বিজয়ের ফলে বগুড়া মুসলমানদের করতলগত হয় এবং দলেদলে বিধর্মীরা ইসলামের কলমা পাঠ করে মুসলমান হয়। কিছুদিন তিনি সেখানে থাকার পর কিছু সঙ্গী নিয়ে পূর্ব বঙ্গে যাত্রা শুরু করেন। সময় টাঙ্গাইলের মধুপুর এবং জামালপুর জেলার দুর্মোট অঞ্চলে কিছুদিন ইসলাম প্রচার শেষে মোমেন শাহ্ (:) কামাল শাহ্ (:) নামে সঙ্গীদের সেখানকার দায়িত্ব অর্পন করে তিনি অপর সঙ্গীসহ ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব তীরে বোকাইনগর পরগনায় অবস্থান নেন। সেখানকার সামন্ত শাসক বোকাই কোচ নির্দিধায় ইসলামের দাওয়াত কবুল করেন। সেখানে কিছুদিন তিনি ইসলাম প্রচার করে খ্রীষ্টীয় একাদশ শতকের মধ্যভাগে হিজরী ৪৪৫ সালে ৪০ জন সঙ্গীসহ সামন্ত রাজ মদন মোহন কোচের পরগনা মদনপুর আগমন করেন। জনশ্রুতি রয়েছে মদন কোচের রাজধানী পশ্চিম সিমান্তের কাছে এসে পরিশ্রান্ত সঙ্গীদের নিয়ে তিনি এক নির্জন স্থানে অবস্থান নেন। সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য ভাললাগায় রাত্রি যাপনের উদ্দ্যেশ্যে তাবু গাঁড়েন। মাগরিব নামাজ শেষে কোরান পাঠান্তে যখন তিনি তছবিহ্ জপতে থাকেন তখন তাঁর কানে গায়েবী আওয়াজ হতে থাকেহে কমর উদ্দিন তোমার অভীষ্ট কর্মক্ষেত্রে পৌঁছে গেছো। ভোর থেকেই ধম্য প্রচারে আত্ম নিয়োগ কর আওয়াজ শুনে তিনি আল্লাহর কাছে শোকরিয়ার জন্য সঙ্গীদের নিয়ে এখানে রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। সে সময় থেকে এস্থানটিনামাজ খানানামে পরিচিত। কারো মতে, এখানে যে কবরস্থান রয়েছে তাতে হযরত শাহ্ কমর উদ্দিন রুমী (:) অন্যতম এক সংগী শায়িত রয়েছেন। ৭৫ বছর বয়স্ক বৃদ্ধ খাদেম হাছেন আলী জানিয়েছেন, নামাজ খানার নামে একর ২০ শতক জমি পীর পাল লাখেরাজ রয়েছে।

অলৌকিক ঘটনা
হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) মদনরাজার বাড়ি থেকে কি:মি: পশ্চিমে নামাজ খানায় অবস্থান কালে তাঁর অন্যতম সহচর হযরত রূপশ মল্লিক (:) কে দূত হিসেবে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য রাজ দরবারে প্রেরন করলেন। সামন্ত রাজ মদন কোচ মুসলীম বাহিনীর আগমনের কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়েন। ইতি পূর্বেই মুসলীম বাহিনীর সাময়িক দক্ষতার কথা জেনে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন নাস্তিক-ঝড়বাদী এবং ক্রোধপরায়ন। প্রেরীত দূত যখন তার রাজ দরবারে ুউপস্থিত হলেন এবং ইসলামের দাওয়াত পৌঁছালেন। তখন তিনি প্রকাশ্যে কিছু না বলে কৌশলে মুসলীম বাহিনীকে ধ্বংশ করার পরিকল্পনা করেন। তার ভাবনা ছিল তান্ত্রিক শক্তিতে বলীয়ান মুসলীম ফকিরের প্রস্তাব প্রকাশ্যে প্রতাক্ষান করার ফল শুভ হবেনা। তাই তিনি তার পারিষদ বর্গকে নিয়ে পরামর্শ করলেন মুসলীম বাহিনীকে দাওয়াত করে এনে খাদ্যে বিষ মিশিয়ে হত্যা করবেন। রাজার সৈন্যগণ ইতি মধ্যে মুসলীম বাহিনীর ওপর আক্রমনে ব্যর্থ হয়ে কলেমা পাঠ করে দলে দলে ইসলাম গ্রহন করতে থাক। হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) কে হত্যার উদ্যেশ্যে প্রেরিত সেনা দলের আত্ম সমর্úনের খবর শুনে রাজার অন্তরে ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়। রাজা মদন কোচ কিছু সৈন্য সংগে নিয়ে ফকিরের তাবুর কাছে গিয়ে স্থান ত্যাগ করে তার রাজ্য সীমার বাইরে চলে যেতে নির্দেশ দেন। রাজার দিকে তাকিয়ে স্থান ত্যাগের আপত্তি জানালে রাজা তা মানতে রাজী হননি। তখন স্বীয় আসনের জায়নামাজ দেখিয়ে পরিমাণ জায়গার জন্য অনুরোধ জানান। রাজার উদ্যত আচরনে ফকির স্বীয় জায়নামাজ উর্দ্দে ছুড়ে মারার সংগে সংগে তা তীব্র গতিতে বেড়ে সমস্ত এলাকা আচ্ছাদিত করে ফেলে। অলৌকিক ঘটনা প্রত্যক্ষ করে ভয়ে ধর্ম গ্রহণ করার ছলনা করে মুসলীম বাহিনীকে তার বাড়িতে দাওয়াত করেন। হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) এর কাফেলা ফজরের নামাজের পূর্বেই রাজবাড়ির সন্নিকটে এসে নামাজ আদায় করেন। রাজা তাদের আগমনে খুশি হয়ে রাজ দরবারে বসতে দিলেন এবং পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে বিষ মিশানো তরল পানিয় মেহমানদের মাঝে পরিবেশন করা হলো। হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) ধ্যানে রাজার কুট চাল জানতে পেরে সঙ্গীদেরকে পানীয় পানের নিষেধ করেন। তিনি একাই বিষ মিশ্রিত তরল পানীয় পান করেন। কথিত আছে পানীয়ের সঙ্গে ১৪ তোলা বিষ মিশানো ছিল। বিষ মিশ্রিত পানীয় পানের ফলে তাঁর দেহে সামান্য অবসন্নতা দেখা দিলেও ঐশ্যরিক গুনে কিছুক্ষনের মধ্যেই তিনি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। বিষ প্রয়োগে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়ে রাজা তাঁর পারিষদ বর্গ মহান অলীর কাছে ক্ষমা চেয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। রাজার অনুরোধে মদনপুর সহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানের নাম তার আত্মীয়দের নামানুসারে রাখা হয়। ইসলামের পতাকা হাতে নিয়ে হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) মদনপুর সাইডুলী নদীর পাড়ে আস্তানা গেঁড়ে ইসলামের ডংকা বাজালেন। কালক্রমে দলে দলে বিভিন্ন এলাকার বিধর্মীগণ ইসলামের পতাকাতলে সমাবেত হতে থাকেন। ইসলামের শান্তির বাণী প্রচারে সঙ্গীদেরকে বিভিন্ন উপদলে বিভক্ত করে এলাকায় প্রেরণ করেন। ইসলামী শিক্ষা প্রচারে সামন্ত রাজার রাজ প্রাসাদেজামে-উল-উলুম নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করেন। বঙ্গের সর্বপ্রথম প্রাতিষ্টানিক ইসলামী শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করেছিনে তিনি। ইসলাম প্রচার শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি সালাত কায়েমের জন্য নিজ হাতে তাঁর খানকাহ্ পাশে একটি জামে মসজিদ প্রতিষ্টা করেন। মসজিদে তিনি ঈমামতি করতেন। মদনপুর বাসীর দাবী, বাংলার মাটিতে প্রথম প্রতিষ্টিত মসজিদ  থেকেই হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) তাঁর দীক্ষা গুরু সৈয়দ সুরখ্ সুরতনী (:) এঁর পরামর্শক্রমে দ্বীনি শিক্ষা ইসলাম প্রচার করতেন।

তাঁর ওফাত
যখন তিনি বুঝতে পারলেন্ তাঁর জীবনের শেষ সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে তখন তিনি ইসলাম প্রচার সমাজ সেবার দায়িত্ব সঙ্গীদের উপর অর্পন করে খানকা শরীফে এবাদত বন্দীগিতে মগ্ন হয়ে পড়েন। আনুমানিক ৫০ বছর এখানে বসবাসের পর মহান অলি সুফি সাধক হিজরী ৫০ শতাবদীর শেষ দিকে সকল ভক্তদের শোকসাগরে বাসিয়ে পরপাড়ে চলে গেলেন। খানকা বাড়ীতে তাঁকে সমাহিত করা হলে এখানেই তাঁর পবিত্র মাজার শরীফ প্রতিষ্টিত হয়। হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) বঙ্গে আগমনকারী প্রথম ইসলাম প্রচার কারী আরবিয় মিশন প্রধান। যিনি একাধারে আধ্যাত্বিক তত্ব জ্ঞানী, সুফি সাধক, আলেম, সমর বিষারদ, যুগান্তকারী সমাজ সংস্কারক এবং শ্রেষ্ট রাজনৈতিক দূর দর্শি সম্পন্ন ইসলাম প্রচারক ছিলেন। তাঁর হাতেই বাংলা তথা উপ-মহাদেশে ইসরামী সমাজ সংস্কৃতির গোড়া পত্তন হয়েছিল। এদেশে সর্ব প্রথম ইসলামের ডংকা বাজালেও বাংলার ইসলামী সংস্কৃতিতে তাঁর অবদান অনেকটাই খাটো করে দেখা হয়। একথা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট, হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) বঙ্গে আগমন করেন ১০৫৩ খ্রিঃ অন্যদিকে হযরত খাজা মঈন উদ্দিন চিশতি (:) ১১৯৩ খ্রিঃ আজমিরে এবং হযরত শাহ্ জালাল (:) সিলেটে আগমন করেন ১৩০৩ খ্রিঃ। তাঁদের চেয়ে দেড়শ আড়াইশ বছর আগে যখন বাংলায় হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) এঁর আগমন  ঘটে তখন বংগে কোন মুসলিম শাসক ছিলেন না। 

প্রখ্যাত মুসলিম দরবেশের ৪০ জন সঙ্গীর পরিচয়:
          হযরত শাহ্ সৈয়দ উদ্দিন সূরখ ছুরতনী (:)  (প্রকাশ মীর সাহেব হুজুর)
          হযরত মোগল শাহ্ (:) (দলনেতা)
         হযরত দুয়ারী শাহ্ (:) (ওরফে জুবায়ের শাহ্)
          হযরত সৈয়দ শাহ্ (:)
          হযরত শাহ্ কামাল (:)
         হযরত বুড়াপীর শাহ্ (:)
          হযরত শাহাব উদ্দিন শাহ্ (:) (ছিলা শাহ্)
         হযরত করীম শাহ্ (:)
          হযরত হোসেন শাহ্ (:)
১০        হযরত শাহ্ নেওয়াজ (:)
১১        হযরত বালক শাহ্ (:)
১২        হযরত শাহ্ কিবরিয়া (:)
১৩       হযরত মিছকিন শাহ্ (:)
১৪        হযরত জামাল শাহ্ (:)
১৫        হযরত পাগল শাহ্ (:)
১৬       হযরত গোলাপ শাহ্ (:)
১৭        হযরত মজিদ শাহ্ (:)
১৮       হযরত শাহজাহান শাহ্ (:) (শাহ্ বাজ
১৯       হযরত আজর শাহ্ (:)
২০        হযরত রাখাল শাহ্ (:)
২১        হযরত আলম শাহ্ (:)
২২        হযরত দরবেশ শাহ্ (:)
২৩       হযরত বলাইশা শাহ্ (:)
২৪        হযরত ঈসমাইল শাহ্ (:)
২৫        হযরত করীম উল্লাহ (:)
২৬       হযরত সৈয়দ উল্লাহ (:)
২৭        হযরত খন্দকার জরগিল শাহ্ (:)
২৮       হযরত সৈয়দ গরিব শাহ্ (:)
২৯        হযরত আলী শাহ্ (:) ওরফে আনোয়াপীর
৩০       হযরত বিবি ঊষা (:) (সৈয়দা নূরজাহান)
৩১       হযরত বিবি ছিমা (:)
৩২       হযরত বিবি জাহেরা (:)
৩৩       হযরত বিবি সুলতানা (:) (সোয়া বিবি)
৩৪       হযরত সৈয়দ ছিদ্দিক শাহ্ (:)
৩৫       হযরত মাখন শাহ্ (:)
৩৬      হযরত রহমত উল্লাহ শাহ্ (:)
৩৭       হযরত দেওয়ান শাহ্ (:)
৩৮      হযরত দুধা দেওয়ান শাহ্
৩৯       হযরত মিয়া শাহ্ (:)
৪০        সৈয়দ রুস্তম শাহ্ (:)

নেত্রকোণার মদনপুরে সামন্তযুগে প্রচারিত ইসলামের মর্মবানী ভক্তদের জড়ো করতে ডংকা বাজানোর প্রথা চালু করেছিলেন হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) সে সময় থেকে চালু ডংকা বাজানোর প্রথা এখনও সাধকের মাজারে নিশি শেষে এবং গোধুলী লগ্নে বেজে উঠে। নেত্রকোণা জেলার প্রথম ঐতিহাসিক নিদর্শন ইসলামী ঐতিহ্যের ধারক হযরত শাহ্ সুলতান কমর উদ্দিন রুমি (:) রোমের রাজত্ব ফেলে রেখে ফকিরি বেশে এসে মদনপুর শায়িত রয়েছেন। প্রাচীন বাংলার এ ঐতিহাসিক ইসলামী নিদর্শনটি হতে পারে আন্তজার্তিক মানের একটি উল্লেখ যোগ্য পর্যটন কেন্দ্র।


''Sign of Rasulullah'' Label's Other Link
 Indian Sahabi

ইস্তানবুলের পথেঃ মুসলিম স্থাপত্য কলার অপূর্ব নিদর্শন ব্লু মস্ক

ইস্তানবুলের পথেঃ মুসলিম স্থাপত্য কলার অপূর্ব নিদর্শন ব্লু মস্ক

- এম ই জাভেদ

 

ছোট বেলায় খুব বইয়ের পোকা ছিলাম আমি । একেবারে বুক ওয়ার্ম যাকে বলে আর কি। পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি সময় পেলেই কোন না কোন গল্পের বই নিয়ে বসে যেতাম। একবার কোন বই নিয়ে বসলে ওটা শেষ না হওয়া অবধি দুদণ্ড স্বস্তি মিলত না মনে। কর্ম জীবনে এসে ব্যস্ততার অজুহাতে সে অভ্যাসকে নির্বাসনে পাঠিয়েছি বহু আগে। এখন আমার অবসরের সঙ্গী ইন্টারনেটের গুগল, ফেসবুক, অনলাইন পত্রিকা আর বাংলা ব্লগ। ছোট বেলার অভ্যাসের সূত্রে ইস্তাম্বুলের গল্প পড়েছি সম্ভবত সৈয়দ মুজতবা আলির কোন এক বইয়ে। সে থেকেই পরবর্তীতে একটু একটু করে জেনেছি মুসলিম সভ্যতার অনেক ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ইস্তাম্বুল শহরকে। এ শহরে আছে মুসলিম শৌর্য বীর্যের প্রতীক অটোমান সাম্রাজ্যের রাজপ্রাসাদ – তপকাপি প্যালেস। এ প্যালেস এক সময় ছিল বর্তমান হোয়াইট হাউজের মত বিশ্ব শাসনের কেন্দ্র বিন্দু। তাছাড়া এ শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, যার মধ্যে অন্যতম সুলতান আহমেদ মসজিদ বা ব্লু মস্ক। ইস্তাম্বুলের বুক চিরে প্রবাহমান রয়েছে বসফরাস প্রণালী যা বিনি সুতোর মালার মত দুই দিক থেকে সংযুক্ত করে রেখেছে মর্মর সাগর আর কৃষ্ণ সাগরকে। বিশ্ব মানচিত্রে ইস্তাম্বুলই এক মাত্র শহর যার এক অংশ পড়েছে এশিয়ায় অন্য অংশ ইউরোপে। এক শহরে অবস্থান করে দুই মহাদেশের টক ঝাল মিষ্টি স্বাদের আমেজ নেওয়ার সুযোগ যে কোন মনুষ্য সন্তানের জন্য অবশ্যই পরম কাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়। মনে তাই সুপ্ত বাসনা জেগেছিল কোন একদিন সময় সুযোগ হলে এ শহরটি ঘুরে দেখার। সৌভাগ্যক্রমে কিছুদিন পূর্বে আবিদজান থেকে বাংলাদেশে ছুটি গমনের প্রাক্কালে একটা সুযোগ হাতে এসে ধরা দেয়।

আইভরিকোস্ট থেকে বাংলাদেশ ভ্রমনের সব চেয়ে সহজ রুট আবিদজান- দুবাই- ঢাকা। সঙ্গত কারনে এমিরেটস এয়ার লাইন্স ই একমাত্র ভরসা। এমিরেটস আর তার ট্রাভেল এজেন্ট সাতগুরু এ দেশে একচেটিয়া দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছিল দীর্ঘদিন।কোন ভাল অপশন না থাকায় তাদের নিকট হতে চড়া দামে টিকেট কেনা ছাড়া অন্য কোন গত্যন্তর ছিল না। কিন্তু গত বছরের জুলাই মাসে তাদের এ একচেটিয়া ব্যবসায় ছাই ঢেলে দেয় টার্কিশ এয়ার লাইন্স। তারা সরাসরি আবিদজান থেকে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে এমিরেটস এর চেয়ে অনেক কম রেটে। ব্যাপারটা আমার জন্য হয়ে দাঁড়ায় একেবারে সোনায় সোহাগায়। 

আবিদজানে টার্কিশের এ শুভাগমন আমার মত আরও অনেক ভ্রমণ পিপাসুর কাছে গ্রীষ্মের দীর্ঘ তপ্ত দহনের পর এক পশলা বৃষ্টি রূপেই আবির্ভূত হয়। আগে টার্কিশের ফ্লাইট ধরতে হলে যেতে হত ঘানায়। কাল বিলম্ব না করে ছুটির পরিকল্পনা অনুযায়ী টার্কিশ এয়ার লাইন্সের টিকেট কেটে ফেললাম । 


যাক, আধুনিক তুরস্কের জনক মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক কিভাবে দেশটিকে গড়ে তুলেছেন ইউরোপের আদলে তা স্বচক্ষে দেখা যাবে এবার। আমার পরিকল্পনা ছিল ঢাকা যাওয়ার পথে ইস্তানবুলে যাত্রা বিরতি করবো কিছুদিনের জন্য। একে একে দেখে নিব এখানকার সকল দর্শনীয় স্থান। কিন্তু বাধ সাধে আমার অদৃষ্ট। জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা যেতে হয় আমাকে এক অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে। আর সে সময় সহযাত্রী হিসাবে যাদের পেয়েছি তাদের কেউই ইস্তানবুলে অবস্থানে ইচ্ছুক ছিল না। তারা সরাসরি বাংলাদেশ যেতে চায়। এতে কিছুটা হতাশায় পড়ে গেলাম। অবশ্য ইচ্ছে করলে দলছুট হয়ে আমি দুই একদিন থেকে যেতে পারতাম ইস্তানবুলে। কিন্তু একা একা ভ্রমনে আমি ঠিক স্বস্তি পাইনা। আর আমার দেশে ফেরার তাড়াও ছিল। অগত্যা দুধের সাধ ঘোলে মেটানোর মত ৮ ঘণ্টার ট্রানজিট টাইম কাজে লাগানোর সিদ্বান্ত নিলাম। শুনেছি টার্কিশের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য সিটি টুরের ব্যবস্থা রয়েছে। 

নির্ধারিত দিনে আবিদজান থেকে রাতের ফ্লাইটে চড়ে বসলাম ইস্তানবুলের উদ্দেশ্যে। বিমানে এক ঝাঁক ডানা কাটা টার্কিশ পরীদের আতিথেয়তায় বেশ মুগ্ধ হলাম। শুনেছি টার্কিশ এয়ার লাইন্স তাদের দুর্দান্ত সার্ভিস দিয়ে ২০১২ সালে ইউরোপের সেরা এয়ার লাইন্সের খেতাব জিতে নিয়েছে। আমার ও মনে হল – দে ডিজার্ব দিস। সব কিছু মিলিয়ে তাদের সেবার মান যথেষ্ট ভাল।
সকাল আটটায় আমাদের বিমান ইস্তানবুলের মাটি স্পর্শ করল। 


ইমিগ্রেশানে আমাদের গ্রুপের একজনের পাসপোর্টে কোন এক সমস্যা ধরা পড়ে। ইমিগ্রেশান পুলিশকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে কনভিন্স করে বের হতে একটু দেরি হয়ে যায় আমাদের। ফলশ্রুতিতে টার্কিশ এয়ার লাইন্সের সিটি ট্যুর প্যাকেজটা মিস করে ফেলি। কি আর করা, অভাগা যে দিকে চায় …..সাগর শুকিয়ে যায়! সিদ্বান্ত নিলাম নিজেরাই ঘুরব। এয়ারপোর্ট থেকে মেট্রো ট্রামের টিকেট কেটে চড়ে বসলাম তাতে। গাড়ি গুলো দেখতে খুবই সুন্দর। ইউরোপের আমেজ টের পেয়ে গেলাম এয়ারপোর্টেই। আমার হাতে ইস্তানবুল শহরের ছোট একটা ম্যাপ। কিন্তু কোথা থেকে শুরু করবো, কিভাবে কোথায় যাব কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মেট্রোট্রাম পরের স্টপেজে থামলে দেখি টার্কিশ এয়ার লাইন্সেরই এক এয়ার হোস্টেস( না ডানা কাটা পরী! এরা এত সুন্দর হয় কেন? ) আমার পাশে এসে বসল। মনে মনে ভাবলাম একে জিজ্ঞেস করলে কিছুটা গাইডলাইন পাওয়া যেতে পারে। আমি হায় হ্যালো বলে বেশ জমিয়ে ফেললাম তার সাথে। মেয়েটা বেশ আন্তরিক ভাবে আমাকে বুঝিয়ে দিল কিভাবে যেতে হবে দর্শনীয় স্থান গুলোতে। আমি মুসলিম শুনে বেশ খুশি হল সে। তার সাথে আলাপচারিতার ফাঁকে খেয়াল করলাম সহযাত্রীরা কেমন যেন ঈর্ষার চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কিন্তু তাদেরকে ঈর্ষার আগুনে বেশিক্ষণ আর পোড়ার চান্স না দিয়ে মেয়েটি পরের স্টেশনে নেমে গেল। আমাকে মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলল- বা…ই , হ্যাভ এ নাইস ট্যুর। আমরা এগিয়ে চললাম ব্লু মস্ক এর উদ্দেশ্যে। মেয়েটির নির্দেশনা মোতাবেক একবার ট্রাম চেঞ্জ করতে হল এক স্টেশনে এসে। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে।  
                                        
ব্লু মস্কের আসল নাম সুলতান আহমেদ মস্ক। মুসলিম স্থাপত্যকলার এক অপূর্ব নিদর্শন এ ব্লু মস্ক। মসজিদের ইন্টেরিয়র ডিজাইনে নীল টাইলসের আধিক্যের ( প্রায় ২০,০০০) কারনেই মসজিদের এমন নামকরণ। সুলতান আহমেদ -১ এর শাসনকালে ১৬০৯- ১৬১৬ সালের মধ্যে মসজিদটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। এ মসজিদের আর্কিটেক্ট ছিলেন মেহমেত আগা। তিনি অটোমান মস্ক এবং বাইজান টাইন চার্চের কম্বিনেশনে এ মসজিদের সম্পূর্ণ ডিজাইন তৈরি করেন। 





সুলতানের ইচ্ছা ছিল এ মসজিদ হবে নিকটবর্তী আয়াসোফিয়ার ( কেউ কেউ বলেন হাগিয়া সোফিয়া) চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সুন্দর। মসজিদ নির্মাণ নিয়ে সুলতান এত বেশি উদগ্রীব ছিলেন যে মাঝে মধ্যে তিনি নিজেও এসে মসজিদ নির্মাণের কাজে হাত লাগাতেন। দুঃখ জনক ভাবে মসজিদ নির্মাণের এক বছর পরই মেহমেত আগা ২৭ বছর বয়সে অকাল মৃত্যু বরণ করেন। তাকে সপরিবারে মসজিদের বাইরের কম্পাউন্ডে সমাহিত করা হয়েছে। তার মৃত্যু আমার কাছে কেন জানি একটু রহস্য জনক মনে হল। আমাদের মসলিন শাড়ির ইতিহাস মনে পড়ে গেল হঠ ৎ করে।
                                   
এ মসজিদের ধারণ ক্ষমতা ১০,০০; মসজিদের উচ্চতা ৭২ মিটার, ডোমের সংখ্যা ৮ ( মুল ডোমের উচ্চতা ৪৩ মিটার) , মিনার আছে ৬ টা( উচ্চতা ৬৪ মিটার); ধারণা করা হয় এ মসজিদের মিনার সংখ্যা বায়তুল হারামের মিনার সংখ্যার সমান হয়ে গেলে সুলতান লোক পাঠিয়ে বায়তুল হারামে আরেকটা নতুন মিনার তৈরি করে দেন।

                                 
আমরা মসজিদ এলাকায় প্রবেশ করলাম। গাছ গাছালীর আধিক্যের কারণে দূর থেকে মসজিদটা ভাল মত দেখা যাচ্ছিলো না।

                                   

উত্তর পাশের গেট দিয়ে আমরা ভেতরে প্রবেশ করলাম। প্রচুর নারী ও পুরুষ পর্যটকের ভিড় এখানে। ভেতরে ঢুকে দেখলাম মূল মসজিদের বাইরে আছে বেশ বড় সড় খোলা মেলা চত্বর                                                                                                                                          
পশ্চিম পার্শ্বের গেট দিয়ে সুলতান ঘোড়ায় চড়ে টগবগিয়ে সরাসরি চলে আসতেন এ চত্বরে। গেটের প্রবেশ মুখে একটা লোহার চেইন ঝোলানো থাকত যাতে ভেতরে প্রবেশের সময় সুলতানকে মস্তক অবনত করে ঢুকতে হতো। মহান সৃষ্টি কর্তার কাছে পরাক্রমশালী সুলতান ও গোলামের মত- বিষয়টা সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিতেই এ লোহার চেইন রাখা। আমরা ঘুরে ঘুরে বিমুগ্ধ নয়নে দেখলাম মসজিদটির স্থাপত্য নকশা, ক্যালিগ্রাফি, সুউচ্চ ডোম, মিনার ইত্যাদি। 


মসজিদের খোলা চত্বরে মূল মসজিদের একটা রেপ্লিকা ও দেখা গেল। 



দলে দলে মুসুল্লিরা অজু করে জুতা খুলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করছে।

 

কিছু সাদা চামড়ার তরুণ তরুণীকে দেখলাম মসজিদের খোলা চত্বর এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, ছবি তুলছে। সবার পরনে আঁটসাঁট টিশার্ট, হাফ প্যান্ট অথবা শর্টস। মসজিদের এ পবিত্র পরিবেশে বিষয়টা বেশ দৃষ্টি কটু লাগল। বুঝতে পারলাম এটা হচ্ছে কামাল আতাতুর্কের ইউরোপীয়করনের ফল। কাক হয়ে ময়ূর পুচ্ছ ধারণের চেষ্টা করলেও ই ইউ তে তুরস্কের ঠাই হয়নি এখনো।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ 

মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন

মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন

-শেখ মারূফ সৈকত

 আমাদের জীবনধারায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিদর্শন মূর্ত হয়ে ওঠে। এগুলো সম্পর্কে সম্যক জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। কেননা, এগুলো একটা জাতির চিন্তা-চেতনা, জীবনাচার, জাতির উদ্ভব প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে। এভাবে উঁচু দালান, প্রাসাদের চূড়া, মূলত একটা জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস ও শক্তিসামর্থ্যকে ধারণ করে গড়ে ওঠে। সভ্যতার শুরুতে গড়ে ওঠা এসব স্থাপত্যের সৃষ্টির নেপথ্য কাহিনী সত্যিই খুবই চমকপ্রদ! নগর বা শহর, দেশ এবং একটা জাতি তাদের গর্বের প্রতীক বা নিদর্শন প্রকাশের নিমিত্তে এই টাওয়ার নির্মাণ করে থাকে। এ থেকে আমরা তাদের ঐতিহাসিকভাবে উপস্থিতিও জানতে পারি। যেমন : ভাষার লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্মিত মিনার; বিত্তবৈভবের নিদর্শনরূপে দণ্ডায়মান মেসোপটেমিয়ার ‘জি¹ুরাট’; শহরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বাক্ষর ‘ইতালির টাওয়ার’; প্রযুক্তির আধার ‘আইফেল টাওয়ার’ ইত্যাদি। এগুলোর সবই মানুষের চিন্তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আমাদের জানতে সহায়তা করে। প্রত্যেক স্থপতিরই নিজস্ব একটা ইচ্ছা বা বাসনা থাকে যে তার স্থাপত্যটি অন্যের চেয়ে স্বতন্ত্র, উঁচু ও অধিক ইতিহাসনির্ভর হবে।

ইসলামের সভ্যতায় স্থাপত্যশিল্পের বড় অবদান হচ্ছে ‘মিনার’। এর নির্মাণশৈলী অন্য সকল স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। আর মিনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বোধ করি তোমাদের সকলেরই কমবেশি আছে। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় তাই এই মিনারকে কেন্দ্র করেই।

কিভাবে এলো মিনার

আমরা যখন আকাশছোঁয়া একটা মিনারের দিকে চোখ তুলে তাকাই তখন সত্যিই অবাক হতে হয় যে, এত উঁচু একটি মিনার নির্মাণ করা
আকাশছোয়া একটা মিনার
আকাশছোয়া একটা মিনার
কিভাবে সম্ভব হলো এবং কিভাবেই বা তার এই আকৃতি ও নকশা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। মিনার প্রধানত মহান প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শানে প্রার্থনা জানানোর উৎস হিসেবে নির্মিত হয়। হিজরতের পর রাসূলে পাক (সা) মদিনায় পৌঁছলে যে স্থানে তার উট থেমে যায় সেখানেই প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তবে আজান দেয়ার জন্য তখন কোনো উঁচু জায়গাকে বেছে নেয়া হতো। এর অনেক পর অন্য বাড়িগুলো থেকে পৃথক করার জন্য এবং পাশাপাশি মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনিকে আরও দূরে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদগুলোতে উঁচু মিনার তৈরি করা হয়।
ইসলাম একটি শাশ্বত জীবনবিধান। সকল উম্মাহর জন্য মুক্তির একমাত্র পথ। নিয়মানুয়ায়ী নামাজের সময় উপস্থিত হলে যেখানে মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করা হয় সেটা মসজিদ। কিন্তু মসজিদগুলোকে অন্যান্য বাড়িঘর থেকে আলাদা করার জন্য তার গঠন-কাঠামো কিছুটা ভিন্ন করা হয়, তা না হলে দূর হতে তা চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের উপস্থিতি মুসলমানদের কাছে জানানো প্রয়োজন।
মসজিদ সামাজিক কর্মকাণ্ডের একটা উৎসও বটে। এটা আল্লাহর ইবাদত করা, দ্বীনের প্রশিক্ষণ দেয়া, সমাজের বিচারকার্য পরিচালনা করা, অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা এবং একটি অঞ্চল বা কমিউনিটির সমস্ত ব্যবস্থাপনারও স্থান।
মুসলিম সমাজের লোকদের নামাজের জন্য এই প্রধানতম স্থান তথা মসজিদে আসার জন্য আজান দিয়ে আহ্বান করা হয়। মিনার মূলত এই আজান দেয়ার স্থান হিসেবেই গড়ে ওঠে। অবশ্য অনেক মিনার আজানের পাশাপাশি মুসলিম সভ্যতার ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করার লক্ষ্যকে সামনে রেখেও নির্মিত হয়েছে। সেগুলো সত্যিই খুবই আকর্ষণীয় ও অনন্য।

একটি অনন্য নিদর্শন

স্থাপত্য অথবা যে কোনো নিদর্শনই তাদের মূল্য সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা প্রদান করে। এবং এগুলো যুগ যুগ ধরে জ্ঞানপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। সেজন্য আমাদেরকেও এসব স্থাপত্য শিল্প কেবল দেখলেই চলবে না। বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাটাকেই প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সবার মধ্যে একটা উদ্ভাবনী শক্তির উদ্ভব হতেও পারে। অন্যথায় সবটাই হবে বৃথা শ্রম।
মিনার মুসলিম বিশ্বের বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান সভ্যতা যার তথ্য-প্রযুক্তি অতি দ্রুতই পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান হচ্ছে, সহযোগিতা ও সংহতির ক্ষেত্রে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা তাই মানুষের জন্য ভাবনার বিষয় হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। এই কারণেই মানুষের ঐক্যকে সুসংহত করার জন্য মিনারবিশিষ্ট উঁচু প্রাসাদের প্রয়োজন অপরিহার্য। কেননা, এখানে মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে বিশ্বমুসলিমের জন্য করণীয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সর্বোপরি একটা আধ্ম্যাত্মিকতা তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
মানুষের জন্য প্রচুর জ্ঞানসমৃদ্ধ ও মানব সভ্যতার উন্নতিকল্পে আলমোহ্যাড জাতি ‘তিনমাল মসজিদ’ নির্মাণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

নির্মাণের উদ্দেশ্য

মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মিনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মিনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
মুসলমান অধ্যুষিত যেকোনো এলাকার মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজের জন্য ডাকার একটি ঐতিহাসিক নির্দিষ্ট স্থান হচ্ছে মসজিদের মিনার। কিছু প্রাচীন মসজিদের মিনার দূরদর্শনের টাওয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যেমন দামেস্কের ‘গ্রেট মসজিদ’-এর মিনার। বর্তমান সময়ে মিনারগুলো কেবল বিশ্বাসী মুসলমানকে নামাজের জন্য আহ্বানের উদ্দেশ্যে আজান দেয়ার জন্যই ব্যবহৃত হয় না। এই শতাব্দীতে আজানের জন্য মিনারের ব্যবহার অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে। এখন আজান দেয়ার জন্য মাইক্রোফোন এবং মাইক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মসজিদের ভেতর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোনে আজান দেয়ার কাজটি সারা হয়। পোহাতে হয় না মিনারে উঠে কষ্ট করে আজান দেয়ার ঝামেলা। আরও মজার বিষয় হলো কোনো কোনো মসজিদের মিনার তো প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সূর্যের আলো (তাপ) মিনারের চূড়ায় পড়ার কারণে মসজিদ গরম হয়ে যেতে পারে। এ কারণে মিনার প্রাকৃতিক ভেন্টিলেটারের কাজ করে থাকে।
আরবি বর্ণমালার প্রথম হরফ ‘আলিফ’। মসজিদের মিনারও আলিফের মতো খাড়া হয়ে থাকে। মনে করা হয় মিনার হচ্ছে ‘দুনিয়া ও বেহেশতের মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ’।
পৃথিবীর উচ্চতম মিনার হচ্ছে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা মসজিদের মিনার যার উচ্চতা ২১০ মিটার। আর ইটের তৈরি পৃথিবীর উচ্চতম মিনারটি দিল্লির কুতুব মিনার। এছাড়া ইরানে আছে এইরকম উচ্চ আরও দু’টি মিনার।

নির্মাণকৌশল

মিনার সাধারণত তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। যথাÑ
ভিত্তি বা অধোভাগ : যে কোনো মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তিটা মজবুত হওয়া প্রয়োজন। এজন্য এটা বেশ যতেœর সাথে তৈরি করা হয়। কাঁকর-নুড়ি এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে ভিত্তি প্রস্তুত করা হয়। আর এই নির্মাণশৈলী খুবই অসাধারণ!
মাঝের অংশ :
সিঙ্গল মিনারগুলো চোঙাকৃতির, সিলিন্ডার আকৃতির অথবা বহুভুজাকৃতির হয়ে থাকে। উচ্চশিখরে ওঠার জন্য সিঁড়িও তৈরি করা হয়। এছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও অনেক প্রযুক্তি মিনার নির্মাণে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
শীর্ষভাগ : মিনারের শীর্ষদেশে মুয়াজ্জিনের আজান দেয়ার জন্য একটি অবৃত্তাকার ঝুলবারান্দা রাখা হয়। এর ওপর দিয়ে ছাদ-সদৃশ নকশাদার অংশ নির্মিত হয়। এই নকশাসমূহ ইট ও টাইলস দিয়ে করা হয়। তৈরি করা হয় কার্নিশ, খিলান এবং পাথরে খোদিত কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বাণী সেখানে লাগানো হয়। আর যে মিনারগুলো এতো নকশাদার করা হয় না সেগুলোও বেশ জমকালো করা হয়।

নানা প্রকার মিনার

মিনার ছাড়া কোনো মসজিদ কল্পনা করা যায় না। কেননা, মুসলমানদের কাছে মিনার মসজিদেরই একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের বিখ্যাত আর্কিটেকচার ব্রিটিশ কেএসি ক্রেসওয়েলের বিভাগীয় ডিন যিনি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রথম বিশেষজ্ঞ, তিনি ঘোষণা করেন, ‘হযরত মুহাম্মদের (সা) সময় মসজিদে কোনো মিনার ছিল না।’ তিনি প্রথম যে মিনারের কথা বলেন তা হলো মুহাম্মদ (সা)-এর মৃত্যুর ৪১ বছর পর ৬৭৩ সালে দামেস্কে নির্মিত মিনার। তাই বলা যায় নামাজের উদ্দেশ্যে মানুষকে আহ্বানের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে উঁচু রাস্তা বা মসজিদের ছাদ ব্যবহৃত হতো। গ্রাম অঞ্চলের মসজিদে তো মিনারের আশা প্রায় করাই যেত না।
বিভিন্ন ধরনের মিনার
বিভিন্ন ধরনের মিনার
ঐতিহ্যের স্বাক্ষী মিনার
ঐতিহ্যের স্বাক্ষী মিনার
এই আর্কিটেকচার বলেন যে, তখন আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের বাড়িতে পাথরের তৈরি একটি থাম ছিল যার ওপর দাঁড়িয়ে আজান দেয়া হতো। এটা হিজরি দশ সালের কথা। এ জন্য তখন আজান খুব বেশি দূর থেকে শোনা যেত না।
নবম হিজরিতে (৭০৩ সাল) আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ মসজিদে নববীর চার কোনায় চারটি মিনার নির্মাণ করেন। প্রত্যেকটি মিনারের উচ্চতা ছিল প্রায় ৯ মিটার (৩০ ফুট) এবং এগুলোর ভিত্তি ছিল ১৬ মিটার বা ৫২ ফুট। ফলে মুয়াজ্জিনের আজান অনেক দূর থেকে শোনা যেত।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পৃথিবীর উচ্চতম মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার বা ৬৩০ ফুট। এটি মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত ‘দ্বিতীয় হাসান মসজিদ’ যেটা তৈরি করা হয়েছিল মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসানের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে। মক্কার কা’বা ঘরের পর এটিই বৃহত্তম ধর্মীয়-স্মৃতিস্তম্ভ। এর ভেতরে একসঙ্গে ২৫ হাজার ও বাইরে ৮০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। ২১০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এই মিনারটি রাত ও দিনে ভালোভাবেই দেখা যায়। এর নির্মাণশৈলী অনেকটা কুতুবিয়া মিনারের মতো। কুতুবিয়া মিনার ১১৯৫ সালে মরক্কোর মারাকেসে নির্মাণ করা হয় যার উচ্চতা ৭৭ মিটার বা ২৩০ ফুট।
মোঙ্গলদের বিদায়ের পর ঘুরিদ সাম্রাজ্যের রাজধানী ফিরুজকুতে ১৯৫৭ সালে একটি বিখ্যাত মসজিদ আবিষ্কৃত হয়েছে যেটি নির্মাণ করা হয় ১১৯৪ সালে। এটি ‘জাম’ টাওয়ার নামে পরিচিত। ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ১১ থেকে ১৩ শতাব্দীতে আকর্ষণীয় মিনারগুলো নির্মিত হয়েছে। আফগানিস্তানে মাটি থেকে ৬০ মিটার উঁচুতে একটি পর্বতের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় এরূপ একটি মিনার। অষ্টভুজাকৃতির এই মিনারটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। আধোয়ান তৈরি হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা মরিয়ামে বর্ণিত ‘কুফিক’ কৌশলে। ইট কেটে সতর্কতার সাথে সদৃশ করা হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ঘুরিদ শাসক ঘুরিয়া আল-দিন মুহাম্মাদ (১১৬৩-১২০৩) নামে। নীল সিরামিকের জমকালো নকশা এর বৈশিষ্ট্য।
বর্তমান সময়ে নির্মিত প্রত্যেকটি মসজিদের মিনারই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এগুলোর সবই লম্বা, মাধুর্যপূর্ণ এবং শক্ত রড দিয়ে আকৃতি প্রদান করা হয়। কোনো কোনোটা আবার অবতল বা ধনুকাকৃতির হয়ে থাকে এবং মসজিদের ছাদের ওপরে এগুলো নির্মিত হয়। আর মিনারবিহীন মসজিদ তো বর্তমানে কল্পনাাই করা যায় না।

মিনার থাকবে

যে কোনো নিদর্শন সংশ্লিষ্ট কলোনির বিশ্বাসের ভিত্তি, উক্ত অঞ্চলের গুরুত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রভৃতিকে ধারণ করে। মহান প্রভুর দেয়া একমাত্র জীবনবিধান ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বাক্ষর রাখতে হয়েছে। তবেই মজবুত হয়েছে এর ভিত্তি এবং গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র একটি ঐতিহ্য। তাই এর প্রযুক্তিও অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা। শুধু আলাদাই নয়, ইসলামের সকল স্থাপত্য ও নিদর্শনের পেছনে আছে এক একটি ইতিহাস, এক একটি ঐতিহ্য, এক একটি সংগ্রাম ও বিজয়ের কীর্তিগাথা। আর মিনার হচ্ছে সেরকমই একটি নিদর্শন।
এখন বলা যায় পৃথিবীর যেখানে যে প্রান্তে মসজিদ নির্মিত হবে তার মিনারটিও হবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সেটা হবে সেই এলাকার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও। তবে মিনার নির্মাণের পেছনে যতই সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দিকটি থাক না কেন, এর মূল উদ্দেশ্য তৎসংলগ্ন সম্প্রদায়ের লোকদেরকে একত্রিত করার বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। প্রতিদিন পাঁচবার এই মিনার থেকে শোনা যাবে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবার’ আজান ধ্বনি। আর বিশ্বাসী মু’মিনরা দলবেঁধে ছুটবে মহান রব্বুল আ’লামিনের দরবারে মস্তক অবনত করে নামাজ আদায়ের জন্য। মিনার তাই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের হৃদয়ে স্রষ্টার প্রতি অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসার ফল্গুধারা বইয়ে দিতে থাকবে আর নিজেদেরকে উচ্চে তুলে ধরতে আশাবাদ শুনিয়ে যাবে।

Source: http://www.kishorkanthabd.com

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য