Wednesday, July 10, 2013

মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন

মিনার : মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন

-শেখ মারূফ সৈকত

 আমাদের জীবনধারায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নিদর্শন মূর্ত হয়ে ওঠে। এগুলো সম্পর্কে সম্যক জেনে রাখা খুবই প্রয়োজন। কেননা, এগুলো একটা জাতির চিন্তা-চেতনা, জীবনাচার, জাতির উদ্ভব প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে। এভাবে উঁচু দালান, প্রাসাদের চূড়া, মূলত একটা জাতিগোষ্ঠীর ইতিহাস ও শক্তিসামর্থ্যকে ধারণ করে গড়ে ওঠে। সভ্যতার শুরুতে গড়ে ওঠা এসব স্থাপত্যের সৃষ্টির নেপথ্য কাহিনী সত্যিই খুবই চমকপ্রদ! নগর বা শহর, দেশ এবং একটা জাতি তাদের গর্বের প্রতীক বা নিদর্শন প্রকাশের নিমিত্তে এই টাওয়ার নির্মাণ করে থাকে। এ থেকে আমরা তাদের ঐতিহাসিকভাবে উপস্থিতিও জানতে পারি। যেমন : ভাষার লড়াইয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ নির্মিত মিনার; বিত্তবৈভবের নিদর্শনরূপে দণ্ডায়মান মেসোপটেমিয়ার ‘জি¹ুরাট’; শহরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার স্বাক্ষর ‘ইতালির টাওয়ার’; প্রযুক্তির আধার ‘আইফেল টাওয়ার’ ইত্যাদি। এগুলোর সবই মানুষের চিন্তার বিশুদ্ধতা সম্পর্কে আমাদের জানতে সহায়তা করে। প্রত্যেক স্থপতিরই নিজস্ব একটা ইচ্ছা বা বাসনা থাকে যে তার স্থাপত্যটি অন্যের চেয়ে স্বতন্ত্র, উঁচু ও অধিক ইতিহাসনির্ভর হবে।

ইসলামের সভ্যতায় স্থাপত্যশিল্পের বড় অবদান হচ্ছে ‘মিনার’। এর নির্মাণশৈলী অন্য সকল স্থাপত্যের প্রতিনিধিত্ব করে। আর মিনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ বোধ করি তোমাদের সকলেরই কমবেশি আছে। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় তাই এই মিনারকে কেন্দ্র করেই।

কিভাবে এলো মিনার

আমরা যখন আকাশছোঁয়া একটা মিনারের দিকে চোখ তুলে তাকাই তখন সত্যিই অবাক হতে হয় যে, এত উঁচু একটি মিনার নির্মাণ করা
আকাশছোয়া একটা মিনার
আকাশছোয়া একটা মিনার
কিভাবে সম্ভব হলো এবং কিভাবেই বা তার এই আকৃতি ও নকশা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে। মিনার প্রধানত মহান প্রভু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শানে প্রার্থনা জানানোর উৎস হিসেবে নির্মিত হয়। হিজরতের পর রাসূলে পাক (সা) মদিনায় পৌঁছলে যে স্থানে তার উট থেমে যায় সেখানেই প্রথম মসজিদ নির্মাণ করা হয়। তবে আজান দেয়ার জন্য তখন কোনো উঁচু জায়গাকে বেছে নেয়া হতো। এর অনেক পর অন্য বাড়িগুলো থেকে পৃথক করার জন্য এবং পাশাপাশি মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনিকে আরও দূরে পৌঁছে দেয়ার উদ্দেশ্যে মসজিদগুলোতে উঁচু মিনার তৈরি করা হয়।
ইসলাম একটি শাশ্বত জীবনবিধান। সকল উম্মাহর জন্য মুক্তির একমাত্র পথ। নিয়মানুয়ায়ী নামাজের সময় উপস্থিত হলে যেখানে মিলিত হয়ে নামাজ আদায় করা হয় সেটা মসজিদ। কিন্তু মসজিদগুলোকে অন্যান্য বাড়িঘর থেকে আলাদা করার জন্য তার গঠন-কাঠামো কিছুটা ভিন্ন করা হয়, তা না হলে দূর হতে তা চেনা কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদের উপস্থিতি মুসলমানদের কাছে জানানো প্রয়োজন।
মসজিদ সামাজিক কর্মকাণ্ডের একটা উৎসও বটে। এটা আল্লাহর ইবাদত করা, দ্বীনের প্রশিক্ষণ দেয়া, সমাজের বিচারকার্য পরিচালনা করা, অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা এবং একটি অঞ্চল বা কমিউনিটির সমস্ত ব্যবস্থাপনারও স্থান।
মুসলিম সমাজের লোকদের নামাজের জন্য এই প্রধানতম স্থান তথা মসজিদে আসার জন্য আজান দিয়ে আহ্বান করা হয়। মিনার মূলত এই আজান দেয়ার স্থান হিসেবেই গড়ে ওঠে। অবশ্য অনেক মিনার আজানের পাশাপাশি মুসলিম সভ্যতার ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করার লক্ষ্যকে সামনে রেখেও নির্মিত হয়েছে। সেগুলো সত্যিই খুবই আকর্ষণীয় ও অনন্য।

একটি অনন্য নিদর্শন

স্থাপত্য অথবা যে কোনো নিদর্শনই তাদের মূল্য সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারণা প্রদান করে। এবং এগুলো যুগ যুগ ধরে জ্ঞানপিপাসু মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। সেজন্য আমাদেরকেও এসব স্থাপত্য শিল্প কেবল দেখলেই চলবে না। বরং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করাটাকেই প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সবার মধ্যে একটা উদ্ভাবনী শক্তির উদ্ভব হতেও পারে। অন্যথায় সবটাই হবে বৃথা শ্রম।
মিনার মুসলিম বিশ্বের বিশ্বাসের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমান সভ্যতা যার তথ্য-প্রযুক্তি অতি দ্রুতই পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদান হচ্ছে, সহযোগিতা ও সংহতির ক্ষেত্রে পরবর্তী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা তাই মানুষের জন্য ভাবনার বিষয় হয়ে আবির্ভূত হচ্ছে। এই কারণেই মানুষের ঐক্যকে সুসংহত করার জন্য মিনারবিশিষ্ট উঁচু প্রাসাদের প্রয়োজন অপরিহার্য। কেননা, এখানে মুসলিমগণ একত্রিত হয়ে বিশ্বমুসলিমের জন্য করণীয় বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং সর্বোপরি একটা আধ্ম্যাত্মিকতা তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে।
মানুষের জন্য প্রচুর জ্ঞানসমৃদ্ধ ও মানব সভ্যতার উন্নতিকল্পে আলমোহ্যাড জাতি ‘তিনমাল মসজিদ’ নির্মাণ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

নির্মাণের উদ্দেশ্য

মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মিনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
মুসলমান অধ্যুষিত এলাকায় মিনার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
মুসলমান অধ্যুষিত যেকোনো এলাকার মানুষকে নির্দিষ্ট সময়ে নামাজের জন্য ডাকার একটি ঐতিহাসিক নির্দিষ্ট স্থান হচ্ছে মসজিদের মিনার। কিছু প্রাচীন মসজিদের মিনার দূরদর্শনের টাওয়ার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যেমন দামেস্কের ‘গ্রেট মসজিদ’-এর মিনার। বর্তমান সময়ে মিনারগুলো কেবল বিশ্বাসী মুসলমানকে নামাজের জন্য আহ্বানের উদ্দেশ্যে আজান দেয়ার জন্যই ব্যবহৃত হয় না। এই শতাব্দীতে আজানের জন্য মিনারের ব্যবহার অনেকটা শিথিল হয়ে গেছে। এখন আজান দেয়ার জন্য মাইক্রোফোন এবং মাইক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মসজিদের ভেতর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে মাইক্রোফোনে আজান দেয়ার কাজটি সারা হয়। পোহাতে হয় না মিনারে উঠে কষ্ট করে আজান দেয়ার ঝামেলা। আরও মজার বিষয় হলো কোনো কোনো মসজিদের মিনার তো প্রাকৃতিক এয়ারকন্ডিশনার হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে। সূর্যের আলো (তাপ) মিনারের চূড়ায় পড়ার কারণে মসজিদ গরম হয়ে যেতে পারে। এ কারণে মিনার প্রাকৃতিক ভেন্টিলেটারের কাজ করে থাকে।
আরবি বর্ণমালার প্রথম হরফ ‘আলিফ’। মসজিদের মিনারও আলিফের মতো খাড়া হয়ে থাকে। মনে করা হয় মিনার হচ্ছে ‘দুনিয়া ও বেহেশতের মধ্যে সেতুবন্ধনস্বরূপ’।
পৃথিবীর উচ্চতম মিনার হচ্ছে মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কা মসজিদের মিনার যার উচ্চতা ২১০ মিটার। আর ইটের তৈরি পৃথিবীর উচ্চতম মিনারটি দিল্লির কুতুব মিনার। এছাড়া ইরানে আছে এইরকম উচ্চ আরও দু’টি মিনার।

নির্মাণকৌশল

মিনার সাধারণত তিনটি অংশের সমন্বয়ে গঠিত। যথাÑ
ভিত্তি বা অধোভাগ : যে কোনো মিনার নির্মাণের জন্য ভিত্তিটা মজবুত হওয়া প্রয়োজন। এজন্য এটা বেশ যতেœর সাথে তৈরি করা হয়। কাঁকর-নুড়ি এবং অন্যান্য উপাদান দিয়ে ভিত্তি প্রস্তুত করা হয়। আর এই নির্মাণশৈলী খুবই অসাধারণ!
মাঝের অংশ :
সিঙ্গল মিনারগুলো চোঙাকৃতির, সিলিন্ডার আকৃতির অথবা বহুভুজাকৃতির হয়ে থাকে। উচ্চশিখরে ওঠার জন্য সিঁড়িও তৈরি করা হয়। এছাড়া সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আরও অনেক প্রযুক্তি মিনার নির্মাণে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।
শীর্ষভাগ : মিনারের শীর্ষদেশে মুয়াজ্জিনের আজান দেয়ার জন্য একটি অবৃত্তাকার ঝুলবারান্দা রাখা হয়। এর ওপর দিয়ে ছাদ-সদৃশ নকশাদার অংশ নির্মিত হয়। এই নকশাসমূহ ইট ও টাইলস দিয়ে করা হয়। তৈরি করা হয় কার্নিশ, খিলান এবং পাথরে খোদিত কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বাণী সেখানে লাগানো হয়। আর যে মিনারগুলো এতো নকশাদার করা হয় না সেগুলোও বেশ জমকালো করা হয়।

নানা প্রকার মিনার

মিনার ছাড়া কোনো মসজিদ কল্পনা করা যায় না। কেননা, মুসলমানদের কাছে মিনার মসজিদেরই একটি অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের বিখ্যাত আর্কিটেকচার ব্রিটিশ কেএসি ক্রেসওয়েলের বিভাগীয় ডিন যিনি মুসলিম স্থাপত্যশিল্পের প্রথম বিশেষজ্ঞ, তিনি ঘোষণা করেন, ‘হযরত মুহাম্মদের (সা) সময় মসজিদে কোনো মিনার ছিল না।’ তিনি প্রথম যে মিনারের কথা বলেন তা হলো মুহাম্মদ (সা)-এর মৃত্যুর ৪১ বছর পর ৬৭৩ সালে দামেস্কে নির্মিত মিনার। তাই বলা যায় নামাজের উদ্দেশ্যে মানুষকে আহ্বানের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে উঁচু রাস্তা বা মসজিদের ছাদ ব্যবহৃত হতো। গ্রাম অঞ্চলের মসজিদে তো মিনারের আশা প্রায় করাই যেত না।
বিভিন্ন ধরনের মিনার
বিভিন্ন ধরনের মিনার
ঐতিহ্যের স্বাক্ষী মিনার
ঐতিহ্যের স্বাক্ষী মিনার
এই আর্কিটেকচার বলেন যে, তখন আবদুল্লাহ ইবনে ওমরের বাড়িতে পাথরের তৈরি একটি থাম ছিল যার ওপর দাঁড়িয়ে আজান দেয়া হতো। এটা হিজরি দশ সালের কথা। এ জন্য তখন আজান খুব বেশি দূর থেকে শোনা যেত না।
নবম হিজরিতে (৭০৩ সাল) আবদুল্লাহ ইবনে আজিজ মসজিদে নববীর চার কোনায় চারটি মিনার নির্মাণ করেন। প্রত্যেকটি মিনারের উচ্চতা ছিল প্রায় ৯ মিটার (৩০ ফুট) এবং এগুলোর ভিত্তি ছিল ১৬ মিটার বা ৫২ ফুট। ফলে মুয়াজ্জিনের আজান অনেক দূর থেকে শোনা যেত।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, পৃথিবীর উচ্চতম মিনারটির উচ্চতা ২১০ মিটার বা ৬৩০ ফুট। এটি মরক্কোর কাসাব্লাঙ্কায় অবস্থিত ‘দ্বিতীয় হাসান মসজিদ’ যেটা তৈরি করা হয়েছিল মরক্কোর রাজা দ্বিতীয় হাসানের ৬০তম জন্মদিন উপলক্ষে। মক্কার কা’বা ঘরের পর এটিই বৃহত্তম ধর্মীয়-স্মৃতিস্তম্ভ। এর ভেতরে একসঙ্গে ২৫ হাজার ও বাইরে ৮০ হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। ২১০ মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট এই মিনারটি রাত ও দিনে ভালোভাবেই দেখা যায়। এর নির্মাণশৈলী অনেকটা কুতুবিয়া মিনারের মতো। কুতুবিয়া মিনার ১১৯৫ সালে মরক্কোর মারাকেসে নির্মাণ করা হয় যার উচ্চতা ৭৭ মিটার বা ২৩০ ফুট।
মোঙ্গলদের বিদায়ের পর ঘুরিদ সাম্রাজ্যের রাজধানী ফিরুজকুতে ১৯৫৭ সালে একটি বিখ্যাত মসজিদ আবিষ্কৃত হয়েছে যেটি নির্মাণ করা হয় ১১৯৪ সালে। এটি ‘জাম’ টাওয়ার নামে পরিচিত। ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে ১১ থেকে ১৩ শতাব্দীতে আকর্ষণীয় মিনারগুলো নির্মিত হয়েছে। আফগানিস্তানে মাটি থেকে ৬০ মিটার উঁচুতে একটি পর্বতের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় এরূপ একটি মিনার। অষ্টভুজাকৃতির এই মিনারটি সম্পূর্ণ ইটের তৈরি। আধোয়ান তৈরি হয়েছে পবিত্র কুরআনের সূরা মরিয়ামে বর্ণিত ‘কুফিক’ কৌশলে। ইট কেটে সতর্কতার সাথে সদৃশ করা হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ঘুরিদ শাসক ঘুরিয়া আল-দিন মুহাম্মাদ (১১৬৩-১২০৩) নামে। নীল সিরামিকের জমকালো নকশা এর বৈশিষ্ট্য।
বর্তমান সময়ে নির্মিত প্রত্যেকটি মসজিদের মিনারই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। এগুলোর সবই লম্বা, মাধুর্যপূর্ণ এবং শক্ত রড দিয়ে আকৃতি প্রদান করা হয়। কোনো কোনোটা আবার অবতল বা ধনুকাকৃতির হয়ে থাকে এবং মসজিদের ছাদের ওপরে এগুলো নির্মিত হয়। আর মিনারবিহীন মসজিদ তো বর্তমানে কল্পনাাই করা যায় না।

মিনার থাকবে

যে কোনো নিদর্শন সংশ্লিষ্ট কলোনির বিশ্বাসের ভিত্তি, উক্ত অঞ্চলের গুরুত্ব, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস-ঐতিহ্য প্রভৃতিকে ধারণ করে। মহান প্রভুর দেয়া একমাত্র জীবনবিধান ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার স্বাক্ষর রাখতে হয়েছে। তবেই মজবুত হয়েছে এর ভিত্তি এবং গড়ে উঠেছে স্বতন্ত্র একটি ঐতিহ্য। তাই এর প্রযুক্তিও অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা। শুধু আলাদাই নয়, ইসলামের সকল স্থাপত্য ও নিদর্শনের পেছনে আছে এক একটি ইতিহাস, এক একটি ঐতিহ্য, এক একটি সংগ্রাম ও বিজয়ের কীর্তিগাথা। আর মিনার হচ্ছে সেরকমই একটি নিদর্শন।
এখন বলা যায় পৃথিবীর যেখানে যে প্রান্তে মসজিদ নির্মিত হবে তার মিনারটিও হবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। সেটা হবে সেই এলাকার পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণও। তবে মিনার নির্মাণের পেছনে যতই সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় দিকটি থাক না কেন, এর মূল উদ্দেশ্য তৎসংলগ্ন সম্প্রদায়ের লোকদেরকে একত্রিত করার বিষয়টি অবশ্যই প্রাধান্য পাবে। প্রতিদিন পাঁচবার এই মিনার থেকে শোনা যাবে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবার’ আজান ধ্বনি। আর বিশ্বাসী মু’মিনরা দলবেঁধে ছুটবে মহান রব্বুল আ’লামিনের দরবারে মস্তক অবনত করে নামাজ আদায়ের জন্য। মিনার তাই যুগ যুগ ধরে মুসলমানদের হৃদয়ে স্রষ্টার প্রতি অগাধ ভক্তি ও ভালোবাসার ফল্গুধারা বইয়ে দিতে থাকবে আর নিজেদেরকে উচ্চে তুলে ধরতে আশাবাদ শুনিয়ে যাবে।

Source: http://www.kishorkanthabd.com

মসজিদে জীন, মক্কার ঐতিহাসিক নিদর্শন

মসজিদে জীন, মক্কার ঐতিহাসিক নিদর্শন



শাবিস্তান বার্তা সংস্থার রিপোর্ট: মসজিদটি হাজুন পর্বতের নীচে এবং হাজুন ব্রিজের পঞ্চাশ মিটার দূরে অবস্থিত। সূরা জীনের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে মসজিদটিকে জীন মসজিদ নামকরণ করা হয়েছে। এই মসজিদের পাশ দিয়ে একটি ছোট্ট পথ চলে গেছে যাকে জীন মসজিদের সড়ক বলা হয়।
এই মসজিদে সূরা জীন অবতীর্ণ হওয়ার কারণে এটাকে জীন মসজিদ নামকরণ করা হয়েছে। আল্লাহ এই সূরায় বলছেন: জীনরা আল্লাহর আয়াত শুনেছে এবং তার প্রতি ঈমান এনেছে।
যে স্থানে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় সেখানে এই মসজিদ তৈরি করা হয়। জীনরা এই স্থানে রাসূল(সা.)-এর হাতে বয়াত করেছিল বলে এই মসজিদকে মসজিদুল বয়াতও বলা হয়।
রাসূল(সা.) তায়েফ থেকে ফেরার পথে একটি খোরমা গাছের নীচে বিশ্রাম নেন এবং রাত্রে নামাজ পড়ে কুরআন তিলাওয়াত করেন। ঐ সময়ে সাতটি জীন রাসূল(সা.)-এর কুরআন তিলাওয়াত শুনে অন্যদের কাছে গিয়ে খবর দেয়। রাসূল(সা.) এর পরও কয়েকবার সেখানে গিয়ে জীনদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। এখানেই সূরা জীনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং রাসূল(সা.)-কে জীনদের ঈমান আনার সংবাদ দেয়।
বর্তমানের মসজিদটিও ঠিক পূর্বের স্থানেই রয়েছে এবং মসজিদটির সংস্কার করার পর বর্তমানে এর আয়তন ৬০০ বর্গ মি.।

Watch these vedio

Tuesday, July 9, 2013

জাযীরাতুল আরব বা সৌদি আরব:ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন - সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে

সৌদি আরব:ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন 
- সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে


এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে লোহিত সাগর, আরব সাগর ও পারস্যোপসাগরের নীল বারিরাশি বাহু বেষ্টনে অবস্থান করছে এক বিশাল ভূখন্ড, যাকে বলা হয় জাযীরাতুল আরব বা সৌদি আরব। যেখানে রয়েছে বিশ্ব মুসলিমের প্রাণ কেন্দ্র মসজিদুল হারাম বেষ্টিত বায়তুল্লাহ শরীফ। এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর কাবা শরীফ (দুই হাজার বছর আগে কাবা শরীফের স্থানটি) সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এর ফাউন্ডেশন সাত জমীনের নীচ পর্যন্ত প্রোথিত রয়েছে। বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার পাশে রয়েছে হাজরে আসওয়াদ, বায়তুল্লাহর দরজার ২ গজ ডানে মেঝেতে গেঁথে রাখা কয়েকটি লাল পাথরের সোজা নীচে হযরত ইব্রাহীম (আ:) কাবার সংস্কারকালে মসল্লা তৈরী করেছিলেন। কাবার উত্তর পাশে রয়েছে হাতীমে কাবা। এর সোজাসুজি উপরে মিজাবে রহমত। এর ঠিক নীচে নীল রঙ্গের একটি পাথর ছিল, আর ঠিক এ স্থানেই হযরত ইসমাঈল (আ:)’র কবর শরীফ এবং তাঁর পূর্বপার্শ্বে মা হাজেরা (আ:) এর কবর শরীফ রয়েছে। এতে রয়েছে জমজম কূপ, মিম্বরে রাসুলিল্লাহ (দ:) সহ অসংখ্য ইসলামী নিদর্শন। অনুরূপভাবে ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে মদিনা মনোয়ারায় মসজিদে নববী শরীফে। এটি ঐ শহর, যাকে উদ্দেশ্য করে হযরত উমর (রা:) বলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তোমার রাস্তায় শাহাদাতের মৃত্যু দাও এবং তোমার নবীর শহরে আমাকে মৃত্যু দান করিও। (বুখারী) এ পূণ্যভূমি কেবল উম্মতে মুহাম্মদীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে, এমনটি নয়, বরং স্বয়ং নবীজি (দ:) অধিক পরিমাণে ভালবাসতেন। আর মহান আল্লাহর দরবারে দো’আ করতেন, হে আল্লাহ! আমাদের অন্তরে মদিনা শরীফের ভালবাসা দান করুন যেমন আমরা ভালবাসি মক্কা শরীফকে অথবা এর চাইতে বেশি। (জাযবুল কুলুব ইলা দিয়ারিল মাহবুব)
প্রতিবছর বিশ্বের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ আশেকে রাসুল (দ:) ছুটে যান মক্কা-মদিনার পানে। দিন দিন হাজিদের সংখ্যা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব হাজিদের স্থান সংকুলানের ব্যবস্থা করতে সম্প্রসারণ সময়ের দাবি এটি যেমন সত্য। ঠিক তেমনি ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ সংরক্ষণ ও রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব। পবিত্র কুরআন করিমে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- “কেউ আল্লাহর নির্দশনাবলীকে সম্মান করলে এটাতো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই বহি:প্রকাশ।’ (হাজ্জ্ব:৩২) ইতিহাস সাক্ষ্য বহন করে, ওসমানী ও আব্বাসী খেলাফত আমলে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর এ বাণীর প্রতি লক্ষ্য রেখে কাজ সম্পাদন করেছে, যা অব্যাহত ছিল তুর্কী খেলাফতকাল পর্যন্ত। কিন্তুু দুভার্গ্য হলেও সত্য যে, ১৪৩৪ হিজরী মোতাবেক ২০১৩ সালে সৌদি বাদশাহ আবদুলাহ কর্তৃক গৃহিত সম্প্রসারণ প্রকল্প এর ব্যতিক্রম নীতি অবলম্বন করেছে। যার কারণে এটি বিজ্ঞমহলের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ।
সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে মসজিদে হারামে মহানবী (দ:) এর মেরাজ তথা উর্ধ্বগমন যাত্রার স্থানটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে এবং তাঁর জন্মস্থানটিও নিশ্চিহ্ন হতে যাচ্ছে। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘ডেইলি দি ইনডিপেনডেন্ট’ গত ১৫ মার্চ ‘দ্য ফটোস সৌদি আরাবিয়া ডাজন’ট, ওয়াল্ট সিন-অ্যান্ড প্রুফ ইসলাম’স মোষ্ট হলি বেলিকস আর বিং ডিমলিশড ইন মেক্কা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ইনডিপেনডেন্টের হাতে ছবিতে দেখা গেছে, শ্রমিকরা ড্রিল মেশিন ও যান্ত্রিক খননযন্ত্র দিয়ে কিভাবে মসজিদুল হারামের পূর্ব পার্শ্বে ওসমানী ও আব্বাসী খেলাফত আমলে স্থাপিত নিদর্শগুলো ধ্বংসের কাজ শুরু করেছে। অনেক সংস্কার কাজের পরও মসজিদুল হারামে গত কয়েকশ বছরের পুরনো কয়েকটি স্তম্ভ থেকে যায়। কাবা শরীফকে ঘিরে মারবেল পাথরের নির্মিত মেঝের ঠিক পরপরই মসজিদুল হারামের এসব কলামের অবস্থান।
ওসমানী ও আব্বাসী খেলাফত আমলে মক্কা শরীফে মসজিদুর হারামে অনেক কলামে জটিল কিছু আরবীয় ক্যালিওগ্রাফি খোদাই করা হয়েছিল। যাতে মুহাম্মদ (দ:) এর সাহাবীদের নাম এবং তাঁর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তগুলোর কথা উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে এমন একটি স্তম্ভ ইতিমধ্যে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যেখানে বিশ্বনবী (দ:) বোরাকের মাধ্যমে রাতের কিছু অংশে উর্ধ্বগমন করে ফিরে এসেছিলেন।
সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহ এই সম্প্রসারণ কাজের তত্ত্বাবধায়ক হিসাবে মসজিদুল হারামের ইমাম আবদুর রহমান সুদাইসিকে নিয়োগ দিয়েছি। আর এ সম্প্রসারণ কাজের দায়িত্বে পেয়েছে দেশটির অন্যতম নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সৌদি বিন লাদেন গ্রুপ।
বিজ্ঞ সমালোচকরা সৌদি শাসকদের ইসলামের পবিত্র শহরদ্বয়ে ইসলামের প্রত্নতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি অনৈতিকভাবে অসম্মান প্রদর্শন করার দায়ে অভিযুক্ত করেছেন। ওয়াশিংটন ভিত্তিক সংস্থা গালফ ইনষ্টিউড এর প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা দেখা যায়, আধুনিকায়নের পথে মক্কায় হাজার বছরের ৯৫ শতাংশ ভবন কেবল গত দুই দশকেই ইবনে সওদের বংশধরের হাতে ধবংস হয়েছে। ইসলামের সূচনাকালের নিদর্শন কয়েক ডজন ঐতিহাসিক স্থান এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে। ঐতিহাসিক নিদর্শন রক্ষায় কর্তৃপক্ষকে প্রত্নতাত্ত্বিক ও পন্ডিতদের অব্যাহত তাগাদার মধ্যেই এই ধবংসযজ্ঞও বেড়েই চলেছে। অনতি বিলম্বে বাইত আল মাউলিদ বা মুহাম্মদ (দ:) এর জন্মস্থানটি ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
ইসলামিক হেরিটেজ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. ইরফান আল আলভি ছবিগুলো দেখার পর বলেন, মসজিদুল হারামের ওসমানী ও আব্বাসী স্তম্ভগুলো অপসারনের ঘটনাটি ইসলামী ঐতিহ্য সম্পর্কে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম অনীহা প্রদর্শন করতে পারে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে অনেক কিছুই ঘটতে পারে। কারণ মসজিদটির নির্দিষ্ট কিছু এলাকার স্তম্ভের দারুণ তাৎপর্য রয়েছে, বিশেষ করে যেখানে হুজুর (দ:) বসতেন এবং নামাজ আদায় করতেন। এসব ঐতিহাসিক রেকর্ড মুছে ফেলা হচ্ছে। একজন নতুন মুসলমান কখনই এমন কোন সূত্র খুজে পাবে না, যাতে এসব জায়গা আবার খুজে বের করা যায়। তিনি আরো বলেন, “মক্কা ও মদিনা সম্প্রসারণ করতে আপনার কাছে তো অনেক উপায় আছে, যাতে ঐতিহাসিক স্থানও রক্ষা পায়।”
লন্ডন সৌদি দূতাবাসের কাছে যখন ফোন করে জানতে চাওয়া হয়, মক্কা ও মদিনা সম্প্রসারণের কাজের ব্যাপারে এবং ঐতিহাসিক স্থানসমূহ কেন সংরক্ষণ করা হচ্ছে না? ইত্যাদি বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলা হয়, কল করার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তুু কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।
অথচ নবীদের কর্মকান্ড স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ সংরক্ষণের রীতি নীতি শিক্ষা দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন। যেমন “মকামে ইব্রাহীম” যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইব্রাহীম (আ:) কাবাঘর পূর্ণনির্মাণ করেছিলেন। কাবাঘর নির্মাণ কাজ এসে ইব্রাহীম (আ:) পাথরটি বর্তমানে অবস্থিত জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে একে মকামে ইব্রাহীম বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং নামাজের জায়গা হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। আর তাই প্রত্যেক হাজীকে কাবা শরীফের তাওয়াফ শেষে মকামে ইব্রাহীমকে সামনে রেখে দু’রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে একথা সুষ্পষ্ট হয় যে, হজ্জ্বের প্রত্যেকটি আহকাম কোন নবী কিংবা কোন পূণ্যবানমনিষীর স্মৃতিচারণ।
আর বিংশ শতাব্দীতে এসে ইসলামী ঐতিহ্য ও নিদর্শন মুছে ফেলা সুপরিকল্পিতভাবে- এটা নবীবিদ্বেষ ছাড়া অন্য কিছু নয়। আর মহান আল্লাহ নবী বিদ্বেষীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে বারণ করে ইরশাদ করেন, [ওহে রাসূল (দ:)] আপনি আল্লাহ এবং আখেরাতের বিশ্বাসী মুমিন সম্প্রদায়কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (দ:) এর বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্বস্থাপনকারী রূপে দেখতে পাবেন না। (মুজাদালাহ:২২)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মালেকী মজহাবের বিখ্যাত ইমাম কাজ্বী আয়াজ মালেকী (রা:) তাঁর রচিত শেফা শরীফে বর্ণনা করেন- আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (দ:) এর প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন হলো- আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (দ:) এর প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা এবং তাদের শত্রুদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা। (শেফা শরীফ, ২য় খন্ড)
পরিপূর্ণ ঈমানদারের পরিচয় দিতে গিয়ে নবী করিম (দ:) ইরশাদ করেন- তোমাদের মধ্যে কেউ পরিপূর্ণ মুমিনরূপে গণ্য হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি নবী তার নিকট নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্তুুতি এবং অন্যান্য সকল লোকের চেয়ে অধিকতর প্রিয়ভাজন হবো না। (ছহীহ বুখারী শরীফ)
অতএব, ওআইসি এবং জাতিসংঘের উচিত বিশ্বের মুসলমানদের প্রাণকেন্দ্র মক্কা-মদীনা শরীফে ইসলামী ঐতিহ্য ও নিদর্শন বিশেষত রাসূল (দ:) এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান সমূহ সংরক্ষনে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অন্যথায় বিশ্ব মুসলিম এর যথার্থ জবাব দিতে প্রস্তুত।

একটি অসাধারণ ন্যায়বিচার ও খ্রীস্টানদের ইসলাম কবুলের ঘটনা

একটি অসাধারণ ন্যায়বিচার ও খ্রীস্টানদের ইসলাম কবুলের ঘটনা

একদিন আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রীস্টান পল্লীতে হৈ চৈ পড়ে গেল । কে একজন গত রাত্রে যীশু খ্রীস্টের প্রস্তর নির্মিত প্রতিমূর্তির নাক ভেঙ্গে ফেলেছে । খ্রীস্টানরা উত্তেজিত হয়ে উঠেছে । তারা ধরে নিল যে, এটা একজন মুসলমানেরই কাজ ।

খ্রীস্টান নেতারা মুসলিম সেনাপতি আমরের কাছে এলো বিচার ও অন্যায় কাজের প্রতিশোধ দাবী করতে । আমর সব শুনলেন । শুনে অত্যন্ত দুঃখিত হলেন । ক্ষতিপূরণ স্বরূপ তিনি প্রতিমূর্তিটি সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি করে দিতে চাইলেন । কিন্তু খ্রীস্টান নেতাদের প্রতিশোধ নেবার বাসনা ছিল অন্যরূপ । তাদের সংকল্প প্রকাশ করে একজন খ্রীস্টান নেতা বললো, "যীশু খ্রীস্টকে আমরা আল্লাহর পুত্র বলে মনে করি । তাঁর প্রতিমূর্তির এরূপ অপমান হওয়াতে আমরা অত্যন্ত আঘাত পেয়েছি । অর্থ এর যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ নয় । আমরা চাই আপনাদের নবী মুহাম্মাদের প্রতিমূর্তি তৈরী করে ঠিক অমনি ভাবে তাঁর অসম্মান করি।"
এ কথা শুনে বারুদের মত জ্বলে উঠলেন আমর । ভীষণ ক্রোধে মুখমন্ডল উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো তাঁর । কিছুক্ষণ নীরব থেকে নিজেকে সংযত করে নিয়ে তিনি খ্রীস্টান বিশপকে লক্ষ্য করে বললেন, "আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যে কোন প্রস্তাব করুন আমি তাতে রাজি আছি । আমাদের যে কোন একজনের নাক কেটে আমি আপনাদের দিতে প্রস্তুত, যার নাক আপনারা চান।" খ্রীস্টান নেতারাও সকলেই এ প্রস্তাবে সম্মত হলো ।

পরদিন খ্রীস্টানরা ও মুসলমানরা বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো । মিশরের শাসক সেনাপতি আমর সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন, "এদেশ শাসনের দায়িত্ব আমার । যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসন দুর্বলতাই প্রকাশ পেয়েছে । তাই তরবারি গ্রহণ করুন এবং আপনিই আমার নাসিকা ছেদন করুন।"

এই কথা বলেই তিনি বিশপকে একখানি তীক্ষ্মধার তরবারি হাতে দিলেন । জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, খ্রীস্টানরা স্তম্ভিত । চারদিকে থমথমে ভাব । সে নীরবতায় নিঃশ্বাসের শব্দ করতেও যেন ভয় হয় । সহসা সেই নীরবতা ভঙ্গ করে একজন মুসলিম সৈন্য এলো । চিৎকার করে বললো, "আমি-ই দোষী ! সিপাহসালারের কোন অপরাধ নেই । আমি-ই মূর্তির নাসিকা কর্তন করেছি, এই তা আমার হাতেই আছে!" সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারির নীচে নিজের নাসিকা পেতে দিল ।

স্তম্ভিত বিশপ! নির্বাক সকলে । বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল । তরবারি ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিশপ বললেন, "ধন্য সেনাপতি, ধন্য এই বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মুহাম্মাদ যাঁর মহান আদর্শে আপনাদের মত মহৎ, উদার, নির্ভীক ও শক্তিমান ব্যক্তি গড়ে উঠেছে । যীশু খ্রীস্টের প্রতিমূর্তির অসম্মান করা অন্যায় হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চাইতেও অন্যায় হবে যদি আজ আমি এই সুন্দর ও জীবন্ত দেহের অঙ্গহানি করি । সেই মহান ও আদর্শ নবীকেও আমার সালাম জানাই।"
মূল - আমরা সেই সে জাতি
- আবুল আসাদ
Web Source: http://www.alomoy.com
 
''Sign of Rasulullah'' Label's Other Link: 
 

Sunday, July 7, 2013

আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির কিছু নিদর্শন - একটি খুতবার ভিডিও

আল্লাহ তাআলার মহাবৈশ্বয়িক কিছু নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করা আল্লার অসীম শক্তি সম্পর্কে বান্দার ঈমান বাড়িয়ে দেয়।আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে তার আসমান জমিনের প্রতি দৃষ্টি দেয়ার নর্দেশ দিয়েছেন, যাতে বান্দা বুঝতে পারে এ মহাবিশ্বের একজন পরিচালক রয়েছেন

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য