Friday, June 28, 2013

মৌমাছি—বিস্ময়কর এক ভেক্টর গণিতবিদ !

মৌমাছি—বিস্ময়কর এক ভেক্টর গণিতবিদ !

- ম্যাভেরিক

 

তৈলাক্ত বাঁশের বানর
“আপুর বইয়ে একটা অঙ্ক দেখলাম, বাবা—তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উপরে উঠছে এক বানর। বানরটি এক মিনিটে ৩ মিটার উঠে, আবার পরের মিনিটেই পিছলে ১ মিটার নেমে যায়। বানররা কি এরকম করে, বাবা? আর এ অঙ্ক করেই বা কী কাজ হবে?” এক অপরাহ্নে, পারিবারিক চায়ের আসরে, আমার ছোট মেয়ে ফারিনের প্রশ্ন।
প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসেন মেয়েদের মা। মেয়ের চুল নেড়ে দিতে দিতে আমি বলি, “তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠার মতো বাঁদরামী বানররা হয়তো কখনো করবে না। অঙ্কটি যারা তৈরি করেছেন, তারা বাস্তব জীবনের সাথে মিল রেখে একে তৈরি করতে পারতেন। তবে কোনো গণিতই অর্থহীন নয়, কারণ গণিত চিন্তার জগতকে প্রসারিত করে। যেকোনো বিষয়কে সুশৃঙ্খল সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে পারে গণিত, ফলে তা বুঝতে সহজ হয়। আর গণিতের সবচেয়ে বড় উপকারটি হলো, এটি তোমার মনে মায়া মমতা সৃষ্টি করবে।”
“গণিত কিভাবে মমতা সৃষ্টি করে, বাবা?” বড় মেয়ে জেরিনের প্রশ্ন।
“তুমি যখন চারপাশে উড়ে যাওয়া পাখি, খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়া পিঁপড়া, কিংবা মধুর সন্ধান পাওয়া মৌমাছির দিকে তাকাও, মনে হতে পারে এগুলো নিতান্ত সাধারণ প্রাণীর সহজ সরল ঘটনা। কিন্তু তুমি যদি শোনো প্রাণীগুলি কতই না চমৎকার অথচ জটিল গাণিতিক নিয়ম মেনে চলে, খুব অবাক হবে। এই যে মৌমাছি, তাকে খুব উঁচু মাপের একজন গণিতবিদই বলা চলে—একথা যখন শুনবে, উপলব্ধি করবে মোটেও তুচ্ছ নয় সে, মানুষের কাছে রয়েছে তার সম্মানের দাবী। আর তখন, মৌমাছির প্রতি তোমার গড়ে উঠবে বিস্ময়মাখা এক মমতা।”
“মৌমাছি গণিত জানে!” হা হয়ে যায় ফারিনের মুখ।
“হ্যাঁ, বলছি তাহলে, শোনো। তার আগে স্থানাংকবিদ্যা (Coordinate System) নামে গণিতের একটি শাখার ব্যাপারে হালকা ধারণা থাকতে হবে তোমাদের।” আমি দ্রুত একটি ছবি এঁকে তুলে ধরি মেয়েদের সামনে।
লালমাটিয়ার বাড়ি

“মনে করো, এটি ঢাকার লালমাটিয়া এলাকা, যা A, B, C,... বিভিন্ন ব্লকে বিভক্ত। প্রতিটি ব্লকে আবার রয়েছে 1, 2, 3, ... করে বিভিন্ন বাড়ির নম্বর। এখন বলো, কেউ হাসপাতালটিকে কিভাবে খুঁজে পাবে?”
“তাকে E-ব্লকের 2-নম্বর বাড়িতে যেতে হবে।” জেরিন দ্রুত উত্তর দেয়।
“আর মসজিদটি হলো A-ব্লকের 5-নম্বর বাড়ি।” বোনের কথা শেষ হতে না হতে ফারিনও চিৎকার দিয়ে উঠে।
“হ্যাঁ, ঠিক বলেছ। কত সুন্দর ব্যবস্থা, দেখ। যেকোনো বাড়িতে যেতে হলে, তোমার শুধু দুটি জিনিস জানতে হবে: ব্লক নম্বর আর বাড়ির নম্বর। কেউ যদি বলে, ছবির বহুতল শপিং কমপ্লেক্সের ঠিকানা কী, তাহলে আরো সংক্ষেপে (D, 4) বললেই হবে। সাথে সাথে সবাই বুঝে যাবে, এটি D-ব্লকের 4-নম্বর বাড়ি।”
“কিন্তু লালমাটিয়া এলাকায় কি সত্যি সত্যি এভাবে বাড়ির নম্বর আছে! তাহলে মানুষ বাড়ি খুঁজে খুঁজে হয়রান হয়ে যায় কেন?”
“না, আমাদের দেশে এভাবে বাড়ির নম্বর দেয়া হয় না। যারা নগরের পরিকল্পনা করেন, তারা যদি ভালো গণিতও জানেন, গণিতকে ভালোবাসেন না। আর এ কারণে, আমাদের চারপাশে এত বিশৃঙ্খলা।
এখন দেখো—নীচের গাছ, রাস্তা, দালান বিশিষ্ট কোণার জায়গাটি, যেখান থেকে লালমাটিয়া এলাকা শুরু হয়েছে, তাকে আমরা বলি মূলবিন্দু (Origin)। মূলবিন্দু থেকে লালমাটিয়ার যেকোনো জায়গাকে দুটি মাত্র প্রতীক দ্বারা আমরা প্রকাশ করতে পারি। এভাবে সংক্ষেপে, সুশৃঙ্খলভাবে কোনো জায়গার অবস্থান নির্দেশ করার পদ্ধতিকেই বলা হয় স্থানাঙ্ক ব্যবস্থা। যদিও নগর পরিকল্পনায় এর প্রচলন ছিল বেশ বহু আগে থেকেই, গণিতে একে প্রথম প্রকাশ করেন মহান দার্শনিক বিজ্ঞানী রেনে ডেকার্তে (René Descartes)।”
ডেকার্তে'র মাছি
জনশ্রুতি আছে, তীব্র এক গরমের দিনে, বিছানায় শুয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে ছিলেন অসুস্থ ডেকার্তে—ক্লান্ত এক মাছি ছাদে ইতঃস্তত ঘোরাঘুরি করছে।
খুব মজা পেলেন ডেকার্টে, মনে মনে ভাবলেন, “বেচারা মাছিটি জানেও না, সে তার চলার পথে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার ফুটিয়ে তুলছে।” খানিক পর মনে হলো, “ইসস, যদি কোনোভাবে মাছিটির বক্রপথের বিন্দুগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের অবস্থান মাপা যেত, তাহলে হয়তো তার চলার পথটিকেও গাণিতিকভাবে প্রকাশ করা যেত।”
এক সময় হঠাৎ তিনি উপলব্ধি করলেন, আরে বিন্দুগুলোর অবস্থান তো খুব সহজেই মনে রাখা যায়! বিক্ষিপ্তভাবে ছাদের চার কোণা থেকে মাছির অবস্থান চিন্তা না করে, শুধু এক কোণা থেকে হিসেব করলেই তো হয়। এক কোণা থেকে বেরিয়ে যাওয়া, দেয়ালের দুই সংস্পর্শ লাইন থেকে দূরত্ব পরিমাপ করাই যথেষ্ট। তার মানে মাছিটি এক লাইন থেকে 3 ফুট, আরেক লাইন থেকে 4 ফুট দূরে হলে, মাছির অবস্থানকে সংক্ষেপে (3, 4) বললেই হবে। এভাবে মাছিটি কখনো (1, 1), (2, 1.5), (3, 3) এরূপ বিভিন্ন জায়গায় অব্স্থান করতে পারে। খাতায় দেয়ালের কোণা, লাইন এঁকে দেখালে ডেকার্তের মাছিটি দেখাবে:

ডেকার্তের নামানুসারে এর নাম কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থা (Cartesian Coordinate System)। আয়তাকার বলে, একে আয়তিক স্থানাংক ব্যবস্থা (Rectangular Coordinate System)ও বলা হয়।
কার্তেসীয় ব্যবস্থায় কোনো বিন্দুর অবস্থান জানতে তুমি আনুভূমিক ও উলম্ব অক্ষ বরাবর দুটি দূরত্ব বের কর। পোলার স্থানাংক ব্যবস্থা (Polar Coordinate System) নামে আরেকটি স্থানাংক ব্যবস্থা আছে, যেখানে মূলবিন্দু থেকে কাঙ্ক্ষিত বিন্দুর সরাসরি দূরত্ব এবং সেটি কত কোণে আছে জানলেই চলবে। যেমন ধর, কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থায় একটি বিন্দু (3, 4), অর্থাৎ বিন্দুটি মূলবিন্দু থেকে 3-ঘর ডানে, তারপর 4-ঘর উপরে অবস্থিত। পোলার স্থানাংকে সেটি মূলবিন্দু থেকে r দূরত্বে এবং অনুভূমিকের সাথে α কোণে হলে,

পীথাগোরাসের সূত্র প্রয়োগ করে পাও,
r^2 = 3^2 + 4^2
=> r^2 = 9 + 16
=> r^2 = 25
=> r = ±5
দূরত্ব যেহেতু ধনাত্মক, r = 5.
আর ত্রিকোণমিতির ট্যানজেন্ট সূত্র থেকে পাও,
tanα = 4/3
=> tanα = 1.33...
এখন ক্যালকুলেটরের সাহায্যে পাও, α = 53.1 ডিগ্রি (প্রায়)। অথবা চাঁদার সাহায্যেও কোণটি মাপতে পার।
সুতরাং কার্তেসীয়ে (3, 4) যে কথা, পোলারে (5, 53.1ডিগ্রি) একই কথা। এর মানে হলো, অনুভূমিকভাবে 3 ঘর, তারপর উলম্বভাবে 4 ঘর গিয়ে তুমি যেখানে পৌঁছবে, অনুভূমিকের সাথে প্রায় 53.1 ডিগ্রি কোণে 5 ঘর গেলে সেই একই বিন্দুতে পৌঁছবে। এভাবে কোণ আর দূরত্ব জানলেও তুমি যেকোনো জায়গা বের করে ফেলতে পার। এবার তাহলে আসি, আমাদের বিস্ময়কর গণিতবিদ মৌমাছির কথায়।
ভেক্টর গণিতজ্ঞ মৌমাছি
প্রতিদিন সকালে বেরিয়ে পড়ে অনুসন্ধানী (scout) মৌমাছি, উড়ে বেড়ায় এক ফুল থেকে আরেক ফুলে, যতক্ষণ না পর্যন্ত চমৎকার মানসম্পন্ন মধুর খোঁজ পায়। কাঙ্ক্ষিত ফুলের সন্ধান পাওয়ার পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে সে ফিরে আসে মৌচাকে, অন্যদেরকে জানায় তার আবিষ্কারের কথা। প্রথমে সে বয়ে আনা মকরন্দটি (nectar) তাকে গোল হয়ে ঘিরে ধরা কর্মী মৌমাছিদের মুখের কাছে নিয়ে নিয়ে স্বাদ দেয়, এতে তারা বুঝতে পারে মধুর গুণাগুণ। মধুর গুণের ব্যাপারে অন্যদের আস্থা জন্মানোর পর, মধুর উৎসের সন্ধান দেয় সে, অদ্ভুত এক উপায়ে, যা দেখে অন্যরা (recruit) উৎসের দিকে তাদের অভিযান শুরু করে।
কোন পথে উৎসটি বিদ্যমান এটি জানানোর জন্য স্পন্দন নৃত্য (Waggle Dance) নামে এক ধরণের নাচ শুরু করে স্কাউট মৌমাছিটি। এতে মৌচাকের একটি স্থান থেকে শুরু করে, প্রথমে শরীর কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে নির্দিষ্ট দিকে সোজা একটু দূরত্ব অতিক্রম করে সে, তারপর অর্ধবৃত্তাকার পথে সূচনা বিন্দুতে ফিরে আসে, আবার সোজা পথে শরীর কাঁপিয়ে কাঁপিয়ে পূর্বের দূরত্ব অতিক্রম করে, এবং অবশেষে বিপরীত দিক থেকে অর্ধবৃত্তাকার পথে ফিরে আসে—এভাবে বাংলা ৪-এর মত দেখতে বর্তনীপথ তৈরি করে। সঙ্গীদেরকে কয়েকবার সে এভাবে বর্তনী তৈরি করে দেখায়।

মধুর উৎসের দিক
বর্তনীর সোজা পথটুকুর দিক থেকে মধুর উৎসের দিকের সন্ধান পাওয়া যায়।

যেমন, উপরের ছবির প্রথম মৌমাছিটির খাবারের উৎস সূর্যের দিকে, তাই সে মৌচাকে আসার পর তার নাচের সোজা পথটি হবে মৌচাকের নীচ থেকে খাড়া উপরের দিকে। খাড়া উপরের দিক মানে সূর্যের দিক।
দ্বিতীয় মৌমাছিটির খাবারের উৎস হলো মৌচাক থেকে যেদিকে সূর্য, তার সাথে ৯০ ডিগ্রি কোণে ডান দিকে। তাই মৌচাকে আসার পর এর নাচের সোজা পথটিও খাড়া উপরের দিকের সাথে ৯০ ডিগ্রি কোণে ডান দিকে হবে।
অন্যদিকে তৃতীয় মৌমাছিটির খাবারের উৎস হলো, যেদিকে সূর্য, তার সাথে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বাম দিকে। তাই এর নাচের সোজা পথটি হবে খাড়া উপরের দিকের সাথে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বাম দিকে।


"তার মানে সংবাদবাহক মৌমাছি প্রথমে সূর্যের দিকটি দেখে, তারপর তার সাথে খাবারের উৎস কত ডিগ্রি কোণে, কোন দিকে আনত তা হিসেব করে। এবং মৌচাকে আসার পর, খাড়া উপরের দিকটিকে সূর্যের দিক ধরে নিয়ে, কোণটিকে সেভাবে ডানে বা বামে সমন্বয় করে অন্যদের দেখায়। অন্যরা তখন প্রথমে সূর্যকে দেখে সেভাবে খাবারের খোঁজে বেরিয়ে পড়ে।" জেরিন বলে।
"হ্যাঁ।" স্মিত হেসে সায় দেই আমি।
মধুর উৎসের দূরত্ব
“তার মানে ফুলটি কোন দিকে আছে এটি বোঝা গেল, কিন্তু কত দূরত্বে আছে এটি কীভাবে বুঝবে?” জেরিনের প্রশ্ন।
“এটিও মজার। যদি ফুলটি দূরে হয়, তাহলে সোজা পথটি অতিক্রম করার সময় মৌমাছিটি বেশি সময় নিবে, কাছে হলে কম সময়। সোজা পথের সময় দেখে অন্যরা হিসেব করে নেয় কত দূরে খাবারের উৎস। একটি বিশেষ প্রজাতির মৌমাছির উপর গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ১০০ মিটার দূরত্বের জন্য স্পন্দন নৃত্যের সময় ৭৫ মিলিসেকেণ্ড করে বেড়ে যায়। অন্য প্রজাতির ক্ষেত্রে ফলাফলটি ভিন্ন হতে পারে। তবে যেকোনো প্রজাতির ক্ষেত্রে দূরত্বের সাথে সময়ের সর্বদাই একটি সুনির্দিষ্ট সরলরৈখিক সম্পর্ক (linear relationship) বিদ্যমান। নিচে তোমাদেরকে এশীয় এবং ইউরোপীয় দুটি মৌমাছি প্রজাতির ক্ষেত্রে দূরত্ব বনাম স্পন্দন নৃত্যের স্থায়িত্বকাল-এর সম্পর্ক দেখাচ্ছি ”

1. এশীয় মৌমাছি Apis cerana cerana-এর দূরত্ব (x)বনাম সময় (y) রেখাঃ y=154+3.40x
2. ইউরোপীয় মৌমাছি Apis mellifera ligustica-এর দূরত্ব (x)বনাম সময় (y) রেখাঃ y=165+1.92x
Su et el.
“আচ্ছা, বাবা, সূর্য তো সব সময় এক জায়গায় থাকে না। যদি মৌমাছিটির আসতে দেরী হয়, তখন তার নাচ দেখে অন্যরা বের হয়ে গেলে তারা দিক ভুল করে ফেলবে না?”
মেয়ের প্রশ্নে চমৎকৃত হই। “হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ। প্রতি ৪ মিনিটে সূর্য ১ ডিগ্রি করে পশ্চিম দিকে সরতে থাকে। যদি অনুসন্ধানী (scout) মৌমাছিটির মৌচাকে আসতে বেশ সময় লাগে কিংবা মৌচাকে আসার অনেক পরে নাচ দেখায়, সূর্যের দিক পরিবর্তনের সাথে তার নৃত্য কোণটিও সেভাবে সমন্বয় করে নেয় সে, ফলে কোনো সমস্যা হয় না। এ এক অদ্ভুত ক্ষমতা। এটি না ঘটলে পরবর্তী মৌমাছিদের (recruit) অনেকেই মারা যেত, কারণ ভুল পথে চলে যাবার কারণে বাসা থেকে যে খাবার নিয়ে তারা বের হতো, তা শেষ হয়ে যেত, এবং খাবারের কোনো উৎস খুঁজে না পাওয়ায় ক্লান্তিতে আর ফিরে আসতে পারত না। কিন্তু এরকম কখনো হয় না।”
“সত্যিই খুব অদ্ভুত তো! কিন্তু যদি আসার পথে মেঘে সূর্য ঢেকে যায়, তাহলে কি করবে?”
“অতিবেগুনি রশ্মি (ultraviolet rays) কাজে লাগিয়ে, মৌমাছি অন্ধকারেও সূর্যের অবস্থান বুঝতে পারে, মামণি।”
আমি চুপ করে তাকিয়ে থাকলাম মেয়েদের দিকে। গণিত নিয়ে আলোচনার শেষের দিকে তাদের চোখের সেই চিরায়ত মুগ্ধ বিস্ময়।
“এর পর মৌমাছি দেখলে,” আমি ধীরে ধীরে বলি, “নিশ্চয়ই গভীরভাবে স্মরণ করবে তাদের গাণিতিক গুণের কথা, উপহাস ভরে উড়িয়ে দেবে না নিছক ক্ষুদ্র প্রাণী বলে। জগতে সবারই নিজের মত করে রয়েছে জ্ঞান, এ উপলব্ধি যখনই আসবে তোমার, তা শ্রদ্ধা জাগাবে জগতের অপার রহস্যের প্রতি, সৃষ্টি করবে সহনশীলতা আর সৃষ্টিজগতের প্রতি মমতা। এবং অবশ্যই সে সময় তোমার কৃতজ্ঞতা জানাবে মহান সেই গণিতবিদের প্রতি যিনি মৌমাছির ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে স্থাপন করে দিয়েছেন বিস্ময়কর এই জ্ঞান।”
[সংক্ষেপিত সংকলিত]
__________________________________
তোমার প্রভু প্রত্যাদেশ দিলেন মৌমাছিকে "নিবাস গড়ে তোল তোমরা পাহাড়ে এবং বৃক্ষে, এবং সেসব স্থাপনায় যা নির্মাণ করে মানুষ। অতঃপর খাও ফলসমূহ থেকে এবং গমন কর প্রভুর নির্ধারিত পথ ধরে, যা সুগম করা হয়েছে তোমাদের অনুসরণের জন্য।" এদের উদর হতে নির্গত হয় এক পানীয়, বিচিত্র তার বর্ণ, যাতে রয়েছে মানুষের রোগমুক্তি। নিঃসন্দেহে চিন্তাশীলদের জন্য এতে রয়েছে নিশ্চিত নিদর্শন।—আল কুরআন, সুরা আন-নহল: ৬৮-৬৯
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ২:৫১ |


মন্তব্য ও মন্তব্যের জবাব:
বাবুআনা বলেছেন: নাস্তিকের এই পোষ্টটি পড়ুক আর জানুক কতটা মুর্খের স্বর্গে তারা আছে। আল্লাহ্‌ আমাদের বোধ বিবেচনা বাড়িয়ে দিক; আমিন!  লেখক বলেছেন: শুভেচ্ছা। স্রষ্টা সবার বিবেচনাবোধই বাড়িয়ে দিন, সবাইকে বিনয়ী করুন। 

ধৈঞ্চা বলেছেন: সালটা মনে নাই দীর্ঘ গবেষণা করে মৌমাছির এই দিক নির্দেশনার রহস্যটি আবিস্কার করে নোবেল পেয়েছিলেন এক বিজ্ঞানী। সত্যিই কত বিচিত্র আমাদের এই সৃষ্টিজগৎ।  লেখক বলেছেন: শুভেচ্ছা। মন্তব্যে মূল্যায়নে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। হ্যাঁ, এ বিষয়ে ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন অস্ট্রীয় বিজ্ঞানী কার্ল ভন ফ্রিশ।

Source: http://www.somewhereinblog.net

Watch these Video: 


Description:  Dancing Honeybee Using Vector Calculus to Communicate with each other. Waggle dance of bees Description: By means of the waggle dance a bee communicates to its hivemates in which direction they must fly to reach a food source.

ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব : মুহাম্মদ (সা.) - তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন

ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব : মুহাম্মদ (সা.)
- সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (রহ.)

ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দু’একটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ্ট হবে। কিন্তু মহানবী (সা.)ই এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। এ ধরনের বহুমুখী গুণাবলীর অধিকারী অন্য কোন একজন মানুষের কথাও কি আপনার জানা আছে?

পৃথিবীর বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের মধ্যে কোন একজন মানুষও এমন নেই যে, কমবেশি স্বীয় পরিবেশের সৃষ্ট নয়। কিন্তু একমাত্র মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা সকলের চাইতে আলাদা যে, তার জীবন পরিগঠনে সমকালীন পরিবেশের কোনই অবদান দৃষ্টিগোচর হয় না। আর কোন যুক্তিতেই একথা সাব্যস্ত করা যেতে পারে না যে, ঐতিহাসিকভাবে তখনকার পরিবেশ এমন একজন মানুষের আগমন প্রত্যাশিত ছিল। অনেক টেনে হিঁচড়ে আপনি বড়জোর যতটুকু করতে পারনে তা এর চেয়ে বেশী নয় যে, তখনকার ঐতিহাসিক কার্যকারণ এমন এক নেতার আবির্ভাবের দাবি করছিল যে নাকি বিভিন্ন গোত্রীয় বিভেদকে নির্মূল করে একটি মাত্র জাতিতে পরিণত করতো। দেশের পর দেশ জয় করে আরবদের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন করতো, অর্থাৎ এমন একজন জাতীয়তাবাদী নেতার আবির্ভাবের দাবি করছিলো যেন সে সময়কার সকল আরব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে যে  জুলুম অত্যাচার রক্তপাত প্রতারণা মোটকথা সম্ভাব্য সকল কলাকৌশললের মাধ্যমে তার নিজ জাতিকে সমৃদ্ধশালী করার পথ প্রশস্ত করতো এবং একটি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য রেখে যেতো। এছাড়া সে সময়কার ইতিহাসের কোন দাবিই আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না।

হেগেলের ইতিহাস দর্শন, কিংবা মার্কসের ঐতিহাসিক বস্ত্তবাদী ব্যাখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি বড়জোর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন যে, আরবের তদানীন্তন পরিবেশে একটি জাতি গঠন এবং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যোগ্যতাসম্পন্ন নেতার আবির্ভাবের প্রয়োজন ছিল কিংবা আবির্ভাব হতে পারতো। কিন্তু হেগেল কিংবা মার্কসীয় দর্শন যা ঘটে গেল তার কি ব্যাখ্যা দিবে? সে সময় সে পরিবেশে এমন এক ব্যক্তি জন্ম নিলেন যিনি সর্বোত্তম নৈতিক চরিত্র শিক্ষা দিলেন। মানবতাকে সুসজ্জিত পরিশীলিত ও সুসংগঠিত করলেন। মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করলেন। জাহেলী ধ্যান ধারণা এবং হিংসা বিদ্বেষ নির্মূল করলেন। যার দৃষ্টি জাতি গোষ্ঠী এবং দেশের সীমা সরহদ ডিঙ্গিয়ে সমগ্র মানবতার ওপর পরিব্যাপ্ত হয়েছে। যিনি নিজের জাতির জন্যই নয় বরং গোটা বিশ্ব মানবতার একটা নৈতিক, আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। যা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে কল্পনার জগতে নয় বরং বাস্তবতার জগতে নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছেন। আধ্যাত্মিকতা এবং বস্ত্তবাদের এমন সুসম ভারসাম্যপূর্ণ মিশ্রণ তৈরি করেছেন যা সে কালের ন্যায় আজো জ্ঞান ও বিচক্ষণতার শ্রেষ্ঠতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এমন এক ব্যক্তিত্বকে আপনি কি করে তৎকালীন আরবের জাহেলী পরিবেশের সৃষ্ট বলতে পারেন? শুধু এতটুকুই নয় যে, সে ব্যক্তি তার পরিবেশের ফসল হিসেবে পরিদৃষ্ট হয় না বরং যখনই আমরা তার কৃতিত্বের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তখন মনে হয় তিনি স্থান-কাল-পাত্র থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার দৃষ্টি পরিবেশ পরিস্থিতির বন্ধন ছিন্ন করে শতাব্দী ও সহস্রাব্দের (Millennium) সীমানা সম্মুখে এগিয়ে গেছে।

তিনি মানুষকে দেখেছেন সকল যুগ ও পরিবেশের আলোকে। একই সাথে তার জীবন যাপনের জন্য এমন সব নৈতিক এবং ধর্মগত পথ নির্দেশনা দান করেছেন  যা সর্বকালে সর্বাবস্থায় একইভাবে খাপ খেয়ে যায়। তিনি সে সব লোকের অন্তর্ভুক্ত নন ইতিহাস যাদেরকে সেকেলে লোকদের তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের পরিচয় আমরা এভাবে দিতে পারি যে, তারা সে যুগের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক ছিলেন। মানবতার জন্য সবচেয়ে ব্যতিক্রম এবং বিশিষ্ট নেতা হলেন ঐ ব্যক্তি যিনি ইতিহাসের চলমান ধারার সাথে (March) এগিয়ে যেতে পারেন। যিনি তার যুগের যেমন আদর্শ ও উত্তম নেতা তেমনি প্রত্যেক যুগেই তিনি আধুনিক (Modern) নেতা প্রমাণিত হন যেমন তার পূর্বের যুগে ছিলেন। আপনি যাদেরকে উদারতার সাথে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করেন প্রকৃতপক্ষে তারা ইতিহাসের সৃষ্টি সমগ্র মানবেতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব একজনই। পৃথিবীর ইতিহাসে যত নেতাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তার অবস্থার ওপর পর্যালোচনার দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে লক্ষ্য করবেন যে, কার্যকারণ বা উপাদানগুলো স্বয়ং বিপ্লবের লক্ষ্য এবং পন্থা -নির্ধারণ করে দিচ্ছিল। বিপ্লবের নায়ক শুধু এতটুকু ভূমিকা পালন করেছে যে, সময়ের চাহিদানুযায়ী বিপ্লবের দিক ও পথ নির্দেশ করেছিল। বিপ্লবের নেতা অবস্থা ও পরিবেশের চাহিদাকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য এমন একজন অভিনেতার ভূমিকা পালন করেছেন যার জন্য মঞ্চ পূর্ব থেকে প্রস্ত্তত ছিল। কিন্তু ইতিহাস এবং বিপ্লব সৃষ্টিকারী উভয় শ্রেণীর মধ্যে মহানবী (সা.) এমন ব্যক্তি যেখানে বিপ্লবের উপাদান বিদ্যমান ছিল না সে ক্ষেত্রে তিনি নিজেই বিপ্লবের উপাদান কার্যকারণগুলো উদ্ভাবন করেন যেখানে লোকদের মধ্যে বিপ্লবের সৃষ্টি এবং কর্মক্ষমতার মধ্যে বর্তমান ছিল না সেখানে তার নিজস্ব চেষ্টায় বিপ্লবের উপযোগী লোক তৈরি করেন, নিজের প্রচন্ড ব্যক্তিত্বকে দ্রবীভূত করে সহস্র মানুষের দেহে প্রবিষ্ট করিয়ে তাদের এবং তাদেরকে নিজের মনের মত করে তৈরি করে নিয়েছেন। এমনি একজন ইতিহাস স্রষ্টা এবং এ ধরনের বিপ্লবী মানুষ মানবেতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কি?
 
উর্দু ডাইজেস্ট থেকে ভাষান্তর করেছেন আ. হ. ম. নূরুল হুদা

আত্মা হীন আজান- এখনো আজান আছে, বেলালের সেই দর্শন নেই।



আজান ইসলামের একটি প্রধান নিদর্শন। পাঁচ ওয়াক্ত আজানের ধ্বনিতে একটি মুসলিম সমাজের পরিচয় পাওয়া যায়। আজানের মধ্যে আছে ইসলামের বিপ্লবী চেতনার আহ্বান। কিন্তু বর্তমানে মোয়াজ্জিন-মুসল্লাী কেউই আজান থেকে এর তালিম গ্রহণ করে না । আল্লামা ইকবাল তার একটা কবিতায় বলেন- এখনো আজান আছে, বেলালের সেই দর্শন নেই। আজানের সেই চেতনা সম্পর্কে একটি প্রবন্ধ নীচে দেয়া হল:

আত্মা হীন আজান

Amazing animals signs of Allah

Yet some more signs of Allah. Surah 38:27 "And We created not the heaven and the earth and all that is between them in vain. That is the opinion of those who disbelieve. And woe unto those who disbelieve, from the Fire! "

Wednesday, June 12, 2013

মুসলমানদের ১০ যুগান্তকারী আবিস্কার


ইসলামভীতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ডাচ ইসলামবিরোধী নেতা গিয়ার্ট উইল্ডার্স থেকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে। তাদের এই ভয়ের পিছনে রয়েছে তাদের অজ্ঞতাও। তারা হয়তো জানেন না ইউরোপীয় সভ্যতা শত শত বছর ধরে ইসলামী প্রভাবে চমৎকারভাবে উপকৃত হয়েছে। ইসলামের জন্মলাভের পর প্রায় ১০০০ বছর ধরে মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। মুসলিম বিজ্ঞানীদের অনেক যুগান্তকারী আবিস্কারের পথ ধরেই এসেছে আজকের আধুনিক সভ্যতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যালজেবরা বা বীজগণিত, আকাশে উড্ডয়ন থেকে টুথব্রাশ, গিটার থেকে কফি, শল্য চিকিৎসা বা সার্জারি থেকে হাসপাতালসহ বহু অসাধারণ আবিস্কার এসেছে মুসলমানদের হাত ধরেই। মুসলিম শাসনের এক হাজার বছরে ১০০১টি যুগান্তকারী আবিস্কার নিয়ে একটি বই লিখেছেন দা ফাউন্ডেশন অব সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড সিভিলাইজেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সালিম আল-হাসানি। এই ১০০১টি আবিস্কার এখন লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামে প্রদর্শন করা হচ্ছে। সিএনএনকে আল-হাসানি বলেন, এক সময় মুসলমানরা স্পেন থেকে পর্তুগাল, উত্তর ইতালি থেকে চীনের একাংশ শাসন করতেন। এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে অমুসলিম বিশ্ব মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে জানতে পারবে। 
১. শল্য চিকিৎসার উদ্ভাবন মুসলিম রাজত্বের সময় স্পেনের আন্দালুসিয়ায় জন্মগ্রহণকারী ডাক্তার আল-বিউকাসিস (আবু আল কাসিম) মধ্যযুগের চিকিৎসা পরিসংখ্যান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তির নাম। শল্য চিকিৎসা সম্পর্কে তিনি ৩০টিরও বেশি বই লিখেন। ডাক্তার রোগীর ইতিবাচক সম্পর্ক চিকিৎসা বিজ্ঞানে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে বর্ণনা করেন দশম শতকের আরবের এই পণ্ডিত। তিনিই সর্বপ্রথম ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য একই মানের চিকিৎসা সেবার কথা প্রচার করেন। এছাড়াও তিনি মূত্রনালী, কান এবং খাদ্যনালী রোগের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচারের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন এবং তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি সর্বপ্রথম জটিল গর্ভাবস্থার বিষয় বর্ণনা করেন। তার এই উদ্ভাবনগুলো এতটা প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, ১৬ শতক পর্যন্ত বিশিষ্ট ইউরোপীয় চিকিৎসকরা তাকে উদ্ধৃত করতেন। তার এই ধারণাগুলো আধুনিক সার্জারির পথিকৃত। 
২. হাসপাতাল সর্বপ্রথম সেবিকাসহ আধুনিক হাসপাতাল এবং ডাক্তার-সেবিকাদের প্রশিণের জন্য একটি প্রশিণ কেন্দ্র কায়রোতে প্রতিষ্ঠিত হয়। ৮৭২ সালে আহমেদ ইবনে তিউলান নামে কায়রোতে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। এ হাসপাতালে সবধরনের রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়া হত। হাসপাতাল : হচ্ছে একটি মুসলিম ঐতিহ্য। মুসলিমরাই প্রথম এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। এর আগে বাগদাদে সামান্য কিছু চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাসপাতালের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু কায়রোর মডেলই বিশ্বজুড়ে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত। 
৩. বীজগণিত : অনেক পশ্চিমা, বিশেষ করে জার্মানরা তাদের প্রযুক্তি ও প্রকৌশলের কৃতিত্ব নিয়ে খুবই গর্ববোধ করে থাকে। কিন্তু বীজগণিত ছাড়া কে হতে পেরেছে একজন সফল প্রকৌশলী? ব্রিটেনের চেস্টারের ব্রিটিশ- অ্যারাবিক রবার্ট আরব পখিায়ারিজমি লেখা অনুবাদ করার মাধ্যমে দ্বাদশ শতাব্দীতে ইউরোপে গাণিতিক পদ্ধতি পরিচিতি লাভ করে। আল-খোয়ারিজমির অ্যালগোরিদম আধুনিক বীজগণিতের ডেভেলপার হিসেবে পরিচিত। এ জন্য আল-খোয়ারিজমিকে বীজগণিতের জনক বলা হয়ে থাকে। 
৪. আকাশের উড্ডয়নের যন্ত্র আকাশের উড্ডয়নের যন্ত্র বা ফাইং মেশিন প্রথম উদ্ভাবন করেন আব্বাস ইবনে ফিরনাস। নবম শতাব্দীতেই তিনি পাখির আদলে উড্ডয়নের যন্ত্রপাতির নকশা তৈরি এবং তা সংযোজন করেন। তিনি স্পেনের করডোভায় এসব যন্ত্র নিয়ে কিছুণ উড়েছিলেন। উড়তে গিয়ে পড়ে পিঠ ভেঙে যায় তার। আল-হাসানি বলেন, তার এ আবিস্কার কয়েকশ’ বছর পর ইতালির শিল্পী ও আবিস্কারক লিওনার্দো দা ভিঞ্চিকে অনুপ্রাণিত করে। 
৫. বিশ্ববিদ্যালয় : ৮৫৯ সালে মরক্কোর তরুণী রাজকুমারী ফাতিমা আল-ফিরহি প্রথম ফেজে ডিগ্রি অনুমোদনকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তার বোন মরিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়টির পাশেই একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এই কমপ্লেক্সটি কারাউইয়িন মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১২০০ বছর পর এটি এখনো সচল। অধ্যাপক হাসানি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এই কথাই স্মরণ করিয়ে দেয় যে শিা হলো ইসলামের প্রাণ। এই দুই বোনের কাহিনী আজ বিশ্বব্যাপী তরুণ মুসলিম নারীদের অনুপ্রেরণনার উৎস। 
৬. টুথব্রাশ : ইসলাম হচ্ছে বিশ্বের ধর্মগুলোর মধ্য প্রধান ধর্ম, বিশেষ করে শারীরিক স্বাস্থ্য ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার উপর জোর দেয়ার প্রতি। ধর্ম-কর্ম পালনের জন্য কুরআনে শরীরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, ইসলামের কারণেই দাঁত পরিষ্কারের বিষয়টি জনপ্রিয়তা লাভ করে। সর্বসম্মতভাবে সবাই স্বীকার করেছে যে, প্রাচীন মিসরীয়রাই সর্বপ্রথম দাঁত পরিষ্কারের জন্য গাছের ডাল ব্যবহার করতেন। তাদের ব্যবহার করা ডালই আজকের মেসওয়াক হিসেবে পরিচিত। হজরত মোহাম্মদ (সা.) দাঁত ব্রাশ করার জন্য নিয়মিত এই গাছের ডাল ব্যবহার করতেন। এরপর থেকেই এটি বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠে। 
৭. বিবর্ধক কাচ বা চশমা আরব বিশ্ব শুধুমাত্র গণিতেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি, তারা বিবর্ধক কাচ বা চশমার েেত্রও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। বসরা নগরীর বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিত আলহাজেন (আবু আল হাসান) সর্বপ্রথম বর্ণনা করেন চোখ কিভাবে কাজ করে। তিনিই প্রথম প্রতিফলিত উপকরণ নিয়ে পরীা-নিরীা চালান এবং প্রমাণ করে যে, চোখের দৃষ্টি রশ্মির সাথে পারিপার্শ্বিক অনুভূতি নেই। এছাড়াও বাঁকানো কাচের পৃষ্ঠতল বিবর্ধনের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে- এই মত তিনিই প্রথম দেন। বিবর্ধক চশমা সর্ম্পকে তিনিই প্রথম ‘রিডিং স্টোন’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। এর পর থেকে চশমার উন্নতি ঘটতে থাকে। এছাড়াও আলহাজেন জ্যোতির্বিজ্ঞান এবং আবহাওয়া বিদ্যার উপর পাণ্ডিত্যপূর্ণ গ্রন্থ লিখেছেন। 
৮. কফি মুসলিম বিশ্ব থেকেই সর্বপ্রথম কফি রফতানি করা হয়। এটি উৎপত্তি ঘটে ইথিওপিয়ায়। এরপর খুব দ্রুত আরব উপদ্বীপ অঞ্চলে এর বিস্তার ঘটে। এখানে এটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। মনে করা হয় যে, ১৭ শতকে অটোমান বণিকরা শিম ভিত্তিক পানীয় লন্ডনে নিয়ে আসেন। ১৬৪৫ সালে ভেনিসে প্রথম কফিহাউজ স্থাপিত হয়। ১৬৮৩ সালে জার্মানি অস্ট্রিয়া থেকে পশ্চাদপসারণ করে তুরষ্কে আসার পর তারা এটি সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে। জনশ্রুতি রয়েছে যে, সুলতানের সৈন্যরা এ কফি বস্তায় ভরে তাদের দেশে নিয়ে যায়। 
৯. কুচকাওয়াজ : ব্যান্ড সামরিক বাহিনীর কুচকাওয়াজের সর্বপ্রথম প্রচলন হয় অটোমান সাম্রাজ্যে। যুদ্ধ চলাকালীন পুরো সময়ে এ ব্যান্ড বাজানো হতো এবং এটি বাজানো তখনি শেষ হত, যখন সৈন্যরা পশ্চাদপসরণ করত কিংবা যুদ্ধ যখন শেষ হতো। অটোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধের সময় এই ব্যান্ড ইউরোপীয় সৈন্যদের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলত। এরপর থেকে ইউরোপীয়রা তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য এই নীতি গ্রহণ করে। 
১০. গিটার : আমরা আজকে গিটার হিসেবে যেটিকে জানি, তার উৎপত্তি হয়েছে এরাবিক উদ্ থেকে। এর নাম ছিল লিউট। মধ্যযুগে স্পেনে মুসলিম রাজত্বের সময় এটির প্রচলন হয়। বলা হয়ে থাকে যে, উমাইয়া শাসক দ্বিতীয় আবদেল রহমানের দরবারে নবম শতকে একজন সঙ্গীত শিক এটি নিয়ে আসেন। আধুনিক গিটার উন্নতি লাভ করেছে নানা পরিক্রমায়। কিন্তু এরাবিক লিউট আধুনিক গিটারের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বসুরী।  সূত্র : সিএনএন ও হাফিংটন পোস্ট। 

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য