Saturday, September 28, 2013

মক্কা মদীনার ইসলামিক নিদর্শনসমূহ

মক্কা মদীনার ইসলামিক নিদর্শনসমূহ

 -জাকির হোসাইন আজাদী




আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সৃষ্টির মধ্যে তাঁর প্রেরিত দূত নবী রসূলগণ জগতের শ্রেষ্ঠতম মানুষ। এই পৃথিবীতে তাঁরা যে সকল স্থানে আগমন করেছেন। পদচারণা করেছেন। দ্বীনের দাওযাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং বিভিন্ন মু'জিজা প্রদর্শন করেছেন সেই সকল স্থানগুলো বিশেষভাবে তাত্পর্যমণ্ডিত, ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত। যা দর্শন করলে ঈমানও মজবুত হয়। যাঁরা হজ্বে যাচ্ছেন তাঁরা ঐসব স্থান গুলোও দেখে আসার চেষ্টা করবেন যেমন—১। রাহমাতুল্লীল আলামীনের পবিত্র জন্মস্থান (ছওকুল্লাইল)। ২। হযরত খাদিজা (রা.)-এর ঘর। ৩। দারুল আরকাম বিন আবিল আরকাম। ৪। হযরত আলীর জন্মস্থান। ৫। জান্নাতুল মুয়াল্লাহ্ (কবরস্থান)। ৬। ওয়াদিয়ে ছারফ্ হযরত উম্মুল মুমেনীন মায়মুনা (রা.)-এর বিয়ে ও কবর। ৭। জাবালে নূর-এর গারে হেরা গুহা (কুরআন শরীফ নাযিলের পাহাড়)। ৮। জাবালে ছওর (হজরত রাসূলে করীম (স.) হিযরতের সময় যে পাহাড়ে ৩ দিন আত্মগোপন করেছিলেন।) ৯। মিনা (হযরত ইসমাইল আলাইহিচ্ছালামের কুরবানীর জায়গা)। ১০। মুযদালিফাহ্— (হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-দ্বয়ের পৃথিবীর প্রথম বাসর রাত বা ঘুমের জায়গা)। ১১। আরাফাহ—হজের ময়দান, যেখানে হযরত আদম ও হাওয়া (আ.)-এর পৃথিবীর প্রথম পরিচয় হয়েছিল। ১২। ওয়াদিয়ে মুহাসসার—বাদশাহ্ আবরাহার ধ্বংসস্থল। ১৩। ওয়াদীয়ে মুহাস্সাব—মিনা থেকে হরম শরীফে ফেরার পথে হুজুর (স.) এই জায়গায় অবতরণ করেন এবং মাগরিবের নামায আদায় করেন। এখানে একটি সুন্দর মসজিদ আছে। ১৪। হুদায়বিয়া—বর্তমান নাম (ছুমাইসীয়া, মক্কা থেকে ২১ কি.মি. দূর)। ১৫। ওয়াদিয়ে ফাতেমা—মক্কা বিজয়ের সময় মুসলিম বাহিনীর অবতরণস্থল। ১৬। হুনাইন— মক্কা বিজয়ের পর এখানে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ হয়, আল্লাহ ফেরেশতা দিয়ে এই যুদ্ধে মুসলমানদেরকে সাহায্য করেন। ১৭। জেরানা, বড় ওমরার জায়গা রাসূলুল্লাহ (স.) হুনাইন যুদ্ধের পর এখান থেকে ওমরার ইহরাম বাঁধেন, এটাই শ্রেষ্ঠ মিকাত। এখানে একটি মসজিদ আছে, যাকে মসজিদে রাসূল (স.) বলা হয়। ১৮। নাখলা—মক্কা থেকে ৪৫ কি.মি. দূরে মক্কা ও তায়েফের মাঝামাঝি এই উপত্যকা। এখানে খেজুর বাগান ছিল, এই অঞ্চলের নাম 'নাখলা'। এই জায়গাটি মিষ্টি পানির জন্য প্রসিদ্ধ। আল্লাহর নবীর জবানে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত শুনে জ্বীন জাতির ইসলাম গ্রহণ করার ঘটনা এখানেই ঘটে বলে জায়গাটি ঐতিহাসিক। মক্কা শরীফের ঐতিহাসিক প্রসিদ্ধ মসজিদ :১। মসজিদে আবুবকর (রা.) এখানে হযরত আবুবকর (রা.)-এর বাড়ি ছিল। ২। মসজিদে খালেদ বিনওয়ালিদ। ৩। মসজিদে জ্বীন। ৪। মসজিদে বাইআহ্। ৫। মসজিদে খায়েফ। ৬। মসজিদে নামেরা। ৭। মসজিদ তাইঈম। মক্কার ঐতিহাসিক পাহাড়সমূহ :১। জবলে নূর। ২। জাবালে সওর। ৩। জাবালে আবু কোবাইস। ৪। জাবালে রহমত। কাবা শরীফ ও মক্কা শরীফের রহস্যপূর্ণ জায়গাসমূহ :১। আল্লাহর ঘরের ভেতরে, তবে সেখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করা সম্ভব নয় তাই হাতীমে (বাইতুল্লাহর পাশে গোলাকার দেয়াল ঘেরা কিছু উন্মুক্ত খালি জায়গা) নামায পড়ার সুযোগ আছে। ২। মুলতাজাম বা কা'বা ঘরের দরজা, ১৩৬৩ হিজরীতে বাদশা আব্দুল আজীজ আসেসৗদ একটি সুন্দর কাঠের দরজা লাগান, সেটি তৈরি করতে তিন বছর সময় লেগেছিল। বর্তমান দরজাটি বাদশা খালেদ লাগিয়েছেন। এতে ২৮৬ কি. গ্রা. খাঁটি স্বর্ণ লাগানো আছে, এতে আল্লাহর ও কুরআন শরীফের আয়াত— 'কুল ইয়া ইবাদিয়াল্লাজিনা আছরাফু আলা আনফুছিহীম, লাতাকনাতুমির রাহমাতিল্লাহ্, ইন্নাল্লাহা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা জামিয়া লেখা আছে। তাই এই আয়াত পড়ে এর উসিলা দিয়ে দোয়া করলে অবশ্যই দোয়া কবুল হয়। ৩। কাবা ঘরের পেছনের দেয়াল অর্থাত্ রোকনে ইয়ামানীর কাছে এখানো দোয়া কবুল ও নিষ্পাপ হওয়ার দলিল আছে। যেহেতু হুজুর (স.) হিযরতের পর এখানে দাঁড়িয়েই ১৬ মাস বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে নামায আদায় করেছেন এবং কেবলা পরিবর্তনের দোয়া করেছিলেন। ৪। হাতীম বা হিজরে ইসমাইল হিজরে ইসমাইলের অপর নাম হচ্ছে হাতীমে কা'বা। এই হাতীমে হযরত ইসমাইল (আ.) ও তাঁর মা হযরত হাজেরা (আ.)-এর কবর আছে বলে নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইসমাইল (আ.)-এর দোয়ার বরকতে এই বেহেশতি ঝরনা প্রবাহিত হচ্ছে। আল্লাহর ঘরের ভেতর নামায পড়ার ইচ্ছা করলে হাতীমে পড়ে নিলেই তা আদায় হয়ে যাবে। ৫। হাজরে আসওয়াদ, বাইতুল্লাহ শরীফের পূর্বকোণে ৩/৪ ফুট উঁচুতে দেয়ালের ভেতরে সংরক্ষণ করা সেই পাথর বেহেশতের সবচেয়ে মূল্যবান পাথর। রূহের জগতে এই পাথরের উপরে হাত রেখে হুজুর (স.)-এর রূহ মুবারক আমরা আল্লাহর বান্দা ও আল্লাহ আমাদের প্রভু এই প্রতিশ্রুতি পাঠ করিয়েছিলেন। হযরত আদম (আ.) পৃথিবীতে আসার সময় আল্লাহ পাক সেই পাথর তার সাথে দিয়ে দেন, পরবর্তীতে তিনি সেটা জাবালে আবু কোবাইছে রাখেন তখন সে পাথর বরফের মত সাদা ও সূর্যের মত আলোকিত ছিল। নূহ (আ.)-এর বন্যার সময় আল্লাহ পাক পুনরায় আসমানে উঠিয়ে নেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দ্বারা কা'বা ঘর তৈরির সময় আবার তা ফেরেশতার মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং ইব্রাহীম (আ.) সেই পাথরকে আল্লাহর ঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপন করেন। তাই এখান থেকেই তাওয়াফ শুরু হয়। হাদীস শরীফে আছে—হজরে আসওয়াদ প্রথম আবু কুবাইছ পাহাড়ে নাজিল হয়, সেখানে তা ৪০ বছর পর্যন্ত থাকে। তারপর তা হযরত ইব্রাহীম (আ.) এর আগেই-ভিত্তির ওপর লাগানো হয়। অর্থাত্-মাকামে ইব্যাহীম ও হিজরাল আসওয়াদ এই পাথর দু'টিই বেহেশতের পাথর। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আগেই হাজরে আসওয়াদ নাজিল হয়েছে। বন্যার সময় এটিকে আসমানে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। তারপরই ইব্রাহীম (আ.) এর কাবা শরীফ নির্মাণের সময় জিব্রাইল (আ.) তা নিয়ে আসেন।

যতবড় কঠিন হূদয়ের অধিকারী মানুষ হোন না কেন, আল্লাহর অসংখ্য নবী ও রসূলের স্মৃতিবিজড়িত দর্শনীয় স্থানগুলিতে গেলে মন মানসিকতার আমূল পরিবর্তন সূচিত হয়। প্রায় প্রত্যেকেই বলে থাকেন, যখন স্বচক্ষে কাবা শরীফ দেখলাম। কাবায় প্রবেশ করলাম। নামাজ পড়লাম। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকলাম। তখন থেকেই মনের মাঝে অহর্নিশ আল্লাহ প্রেম, রসূল প্রেমের ঝড় বইতে শুরু করলো। কোথায় পরিবার-পরিজন, কোথায় ব্যবসা বাণিজ্য, কোথায় বন্ধু-বান্ধব, দুনিয়ার কোনো কিছুই মনে থাকে না, ভালো লাগে না, হূদয়ে এসে ভিড় জমেনা। হূদয় কন্দরে, রন্ধ্রে-রন্ধ্রে, তন্ত্রীতে-তন্ত্রীতে, রক্তের প্রবাহে কেবল আল্লাহর মহব্বতের বেহেশতি আবহ প্রবাহিত হয়ে যায়। ঢেউ খেলে যায় রসূল প্রেমের উত্তাল তরঙ্গমালা। মুখে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত ও গুঞ্জরিত হয় আল্লাহর জপমালা। কাবা শরীফ, মাকামে ইব্রাহিম, কাবার হাতিম, হিজরে আসওয়াদ, জমজম কূপ জাবালে আবু কুবাইস, জাবালে নূর, জাবালে সওর, হযরত আবু বকর (রা.) এর বাড়ী, রসূলের জন্মস্থান, খাদিজা (রা.)-এর বাড়ী, জান্নাতুল মুয়াল্লা, ওয়াদিয়ে মুহাসসার, দারুল আরকাম, আরাফা ময়দান, মুজদালেফার প্রান্তর, মিনার ঐতিহাসিক প্রান্তর, তায়েফ ও সাফা-মারওয়া পাহাড় এ সমস্ত স্থানে যাওয়া ও দেখার পর প্রত্যেক হাজীর মন কেঁদে ওঠে, চোখ অশ্রুসিক্ত না হয়ে পারে না। আর মদীনা শরীফ যাওয়ার পর রসূলের রওজার কাছে গিয়ে হজ্ব পালনকারীগণ কেঁদে জারে জার হয়ে যান। কেননা এটা সেই স্থান যেখানে শায়িত রয়েছেন, আমাদের শাফায়াতের কাণ্ডারি যার সুপারিশ ছাড়া মুক্তির কোনো উপায় নাই। যিনি উম্মত হিসেবে আমাদের না চিনলে নিষ্কৃতির কোনো রাস্তা নেই। যিনি হাশরের ময়দানে অগণিত মানুষের মধ্য হতে তাঁর উম্মতদের বাছাই করবেন ও নিজ হাতে হাউজে কাওছারের পানি পান করাবেন এবং সঙ্গে করে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। যেখানে রসূল (স.) এর রওজা হয়েছে ঐ স্থানে তাঁর সঙ্গে তাঁর দুইসহচর হয়রত আবু বকর ও হযরত ওমর (রা.) রয়েছেন তাদের কথাও স্মরণে আসে। কারণ ইসলাম ধর্মের প্রচার ও প্রসারে হযরত আবু বকরের অবদান অনস্বীকার্য। বাল্যকাল থেকে রসূল (স.) এর ইন্তেকাল পর্যন্ত প্রতিটি মুহূর্তে বিপদে আপদে যুদ্ধে সন্ধিতে সকল সময়, সকল স্থানে ছায়ার মত সাথে সাথে থেকেছেন। রসূল (স.) বলেছেন, আবু বকর আমার বাল্যকালের সাথী, হিজরতের সাথী জান্নাতেরও সাথী। আরো বলেছেন, দুনিয়ার সব মানুষের ঈমান যদি এক পাল্লায় দেয়া হয়, আর আবু বকরের ঈমান যদি আর এক পাল্লায় দেয়া হয় তাহলে আবুবকরের ঈমানের পাল্লা ভারী হয়ে যাবে। আর ওমর (রা.) ছিলেন এমন একজন ব্যক্তিত্ব জাহেলিয়াতের যুগের মানুষেরা যার ভয়ে সর্বদা প্রকম্পিত ছিল। যখন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, তখন প্রকাশ্য দিবালোকে ফিরে আসে ইসলাম। রসূল (স.) তাঁর জীবদ্দশায় বলে গেছেন, লা নাবিয়্যা মিম বাআদি, লাকানা ওমার, আমার পরে কোনো নবী নেই, যদি আল্লাহ কারো নবী বানাতেন তাহলে অবশ্যই ওমরকে আল্লাহ নবী বানিয়ে দিতেন। আর একজনের জায়গা খালি রয়েছে, যেখানে হযরত ঈসা (আ.) কে দাফন করা হবে। রসূল (স.) এর রওজা ও মিম্বর এর মাঝে একটি জায়গা রয়েছে। যার নাম রিয়াজুল জান্নাহ। অর্থাত্ বেহেশতের টুকরা। সেখানে নামাজ পড়া অনেক সৌভাগ্যের বিষয়। মসজিদে নববীতে ৮ দিনে মোট ৪০ ওয়াক্ত নামাজ পড়া বিশেষ মর্যাদার। কেননা মসজিদে নববীতে এক রাকাআত নামাজ পড়া ৫০ হাজার রাকাআত নামাজ পড়ার সমান। মসজীদে নববীর পার্শ্বেই রয়েছে জান্নাতুল বাকী কবরস্থান। যেখানে রসূল (স.) এর হাজার হাজার সাহাবীর কবর রয়েছে। তাছাড়া সেখানে রসূল (স.) এর প্রিয় কন্যা ফাতিমা (রা.), হযরত হাসান (রা.), জয়নুল আবেদীন, হযরত আয়শা (রা.)সহ সকল উম্মুল মুমেনীনগণ (কেবলমাত্র খাদিজা (রা.) ছাড়া) হযরত আবু হরায়রা (রা.), হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (রা.), আবু আইয়ুব আনসারী (রা.)সহ প্রায় ৩০ হাজার সাহাবীর কবর এখানে রয়েছে। রসূল (স.) তাঁর ইন্তেকালের আগে এই জান্নাতুল বাকীতে গিয়ে বিদায়ী ছালাম জানিয়ে বলেছিলেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া দারু কউমি মু'মিনীন। তার পর মসজিদে কেবলাতাইন বা দুই কেবলার মসজিদ। রসূল (স.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করার পর ১৭ মাস ধরে মসজিদে আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ পড়েন। সেই সময় প্রায় প্রায় তিনি আকাশের দিকে তাকাতেন এই আশা নিয়ে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যদি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত কাবাঘরকে কেবলা নির্ধারণ করে দিতেন তাহলে খুবই ভালো হতো। আল্লাহ পাক রসূল (স.) এর মনের আকুতি বোঝেন, তাঁর চোখের ভাষা উপলব্ধি করেন। অবশেষে একদিন আসরের নামাজে দুই রাকায়াত পড়ার শেষে আয়াত নাজিল করে মসজিদে হারামকে কাবা হিসেবে পুনরায় ফিরিয়ে দেন। যে আয়াতে বলা হয়েছে, 'ফাওয়াল্লি অজহাকা শাতরল মসজিদিল হারাম' অর্থাত্ হে নবী (স.), আপনি আপনার চেহারা এখুনি মসজিদে হারামের দিকে ফেরান তখন বাকী দুই রাকাআত মসজিদে হারামের দিকে ফিরেই পড়েন। এটাও দর্শনীয় একটি স্থান। তারপর মসজিদে জুমআ। রসূল (স.) হিজরতের পর মদীনায় আসার সময় এই স্থানে জুমআ ফরজ হয়। মক্কার ১৩ বছরের নবুয়াতি জীবনে এই জুমআ ফরজ ছিল না। যখন ফরজ ঘোষণা হলো রসূল (স.) সেখানেই জুমআ পড়লেন। এই স্থানে সুন্দর মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। তারপর মসজিদে কুব্বা যা ইসলামের ইতিহাসে নির্মিত প্রথম মসজিদ। আল্লাহ কুরআনে বলেন, ইন্না আওয়ালু উসসিসা আলাত তাকওয়া হুয়া মসজিদু কুব্বা। অর্থাত্ তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রথম নির্মিত মসজিদই হলো কুব্বা। রসূল (স.) যখন হিজরতে বের হয়েছিলেন। এই কুব্বার মানুষেরাই তাকে প্রথম স্বাগত জানিয়েছিলেন। তারা প্রতিদিন একটি উঁচু টিলার ওপর বসে মরুভূমির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আর রাত হলে ঘরে ফিরতেন। একদিন তারা ঘরে ফেরার পর দুর থেকে রসূলের হিজরতের কাফেলা দেখে একজন ইহুদী কুব্বার লোকদের বলেছিলেন, হে কুব্বাবাসি, তোমরা প্রতিদিন যার জন্য অধীর আগ্রহে মরুপানে অপলক দৃষ্টি দিয়ে অপেক্ষা করো, তিনি আসছেন। ঐ দেখো, তাঁর কাফেলা দেখা যায়। তখন কুববায় জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল। তাঁরা আল্লাহর প্রিয় নবী, প্রিয় রসূল (স.) কে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। নবীজী (স.) সেখানে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। সেখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এটা অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। তারপর বদরের প্রান্তরটি সময় থাকলে যাওয়া উচিত্। যেখানে ইসলামের প্রথম ভাগ্য নির্ধারণী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। আল্লাহ সুবহানাহ ওয়ালা সেখানে এক হাজার ফেরেশতা সৈনিক দিয়ে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন করেন। এরপর ওহুদের প্রান্তরে গিয়ে সেই ঘটনার উপলব্ধি করা। যেখানে রসূল (স.) এর রক্ত ঝরেছে। দাঁত মোবারক শহীদ হয়েছে। চাচা আমীর হামজা শহীদ হয়েছেন। ৭০ জন সাহাবী শহীদ হয়েছেন। এসব স্থানগুলি দর্শন করে আসতে পারলে যতদিন বেঁচে থাকবেন, শয়তান ধোকা দিয়ে সহজেই বিপথগামী করতে পারবে না। আল্লাহ সকল হজ্বযাত্রীকে এসমস্ত দর্শনীয় স্থানগুলি দেখে আসার তাওফীক দান করুন, আমীন। 

ই-মেইল :mzhazadi @ yahoo.Com
Source: http://www.ittefaq.com.bd


Releted Link:

জাযীরাতুল আরব বা সৌদি আরব:ইসলামী ঐতিহ্য ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন - সম্প্রসাণের কাজ করতে গিয়ে সুকৌশলে ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন সমূহ ধ্বংশ করা হচ্ছে

 


 Bee






Saturday, September 21, 2013

দুই সাহাবী (রাঃ)’র অলৌকিক রক্ষিত লাশ মুবারক

দুই সাহাবী (রাঃ)’র অলৌকিক রক্ষিত লাশ মুবারক

আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ৪০ মাইল দূরে সালমান পার্ক একটি প্রাচীন জনপদ। সেই ঐতিহ্যবাহী নগরী সালমান পার্কে একটি অলৌকিক ঘটনা আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। ঘটনাটি ঘটেছিল আজ থেকে ৭৭ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৩২ সালে।
সালমান পার্কে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে সর্বপ্রথম কবরস্থ হন বিখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফারসী (রাঃ)। এরপর প্রায় তেরশত বছর পর সেখানে সমাহিত করা হয় আরো দু’জন সাহাবীকে। তার মধ্যে একজন হলেন- (০১) হযরত হুযাইফা (রাঃ) এবং অপরজন (০২) হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)।
শেষাক্তো দু’জন সাহাবীর কবর প্রথমে সালমান পার্কে ছিল না। তাঁদের কবর ছিল সালমান পার্ক থেকে দু’ ফালং দুরে একটা অনাবাদী জায়গায়। যার অতি নিকট দিয়ে কলকল রবে বয়ে চলেছে ঐতিহাসিক দজলা নদী। দীর্ঘদিন পর একটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের (কবরস্থ সাহাবীদের) কে সেখান থেকে সরিয়ে এনে সালমান পার্কে দাফন করা হয়।
যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাঁদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, সেটি ছিল বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম বিস্ময়কর ঘটনা। সেই সময় ইরাকের বাদশাহ ছিলেন বাদশাহ ফয়সাল।
একদিন বাদশাহ ফয়সাল ঘুমিয়ে আছেন। হঠাৎ স্বপ্নে দেখেন- হযরত হুযায়ইফা (রাঃ) তাঁকে বলছেন- “আমাদের বর্তমান অবস্থান থেকে সরিয়ে অন্যত্র দাফন করা হোক। কেননা, আমার কবরে পানি জমতে শুরু করেছে, আর হযরত জাবের (রাঃ)-এর কবরে পানি প্রবেশ করার উপক্রম হয়েছে।”
কিন্তু বাদশাহ ফয়সাল ব্যস্ততার কারণে পরদিন স্বপ্নের কথা ভুলে যান। এরপর দ্বিতীয় রাতেও তিনি একই স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু নানাবিধ ঝামেলার কারণে সেদিনও স্বপ্নের নির্দেশ পালন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
তখন হযরত হুযাইফা (রাঃ) তৃতীয় রাত্রে একইভাবে স্বপ্নযোগে ইরাকের মুফতীয়ে আজমকে একাজ সমাধা করার দায়িত্ব দেন। সেই সঙ্গে এও বলেন যে, ‘আমি পর পর দু’রাত ধরে বাদশাহকে এ ব্যাপারটি অবহিত করে আসছি। কিন্তু তিনি দিনের বেলায় ভুলে যাওয়ার কারণে এ পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হননি। এখন আপনার দায়িত্ব হচ্ছে – আমার নির্দেশটি তাঁকে স্বরণ করিয়ে দেয়া এবং যথাশীঘ্রই আমাদেরকে স্তানান্তর করার ব্যবস্থা করা।’
স্বপ্নযোগে এ দৃশ্য দেখে মুফতীয়ে আজম কালবিলম্ব না করে পরদিন সকালেই ইরাকের প্রধানমন্ত্রী নুরী আল সাঈদকে সংগে নিয়ে বাদশাহর দরবারে হাজির হন এবং তাঁকে স্বীয় স্বপ্নের কথা বিস্তারিরত ভাবে খূলে বলেন।বাদশাহ ব্যাপারটা বিশদভাবে আলোচনা করার পর এরূপ একটি স্পর্শকাতর পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বে মুফতীয়ে আজম-এর নিকট ফতওয়া তলব করেন। মূফতীয়ে আজম লাশ স্থানান্তরের অনুকূলে ফতুওয়া প্রদান করেন।
অতঃপর সিন্ধান্ত হয় যে, কুরবানীর ঈদের দিন বাদ যোহর সাহাবীদ্বয়ের কবর খুঁড়ে তাঁদের লাশ মুবারক অন্য কোন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরিত হবে। ইরাক সহ দেশ বিদেশের সংবাদ মাধ্যম গুলো তে খবরটি প্রচারিত হওয়ার সাথে সাথে সর্বত্র আলোচনার সৃষ্টি হয়। জনগন সাহাবীদ্বয়কে দেখতে পাবার আনন্দে বিভোর হয়ে যায়। তখন বিশ্বে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন মক্কা নগরীতে সমবেত। কারণ, সেসময় ছিল হজ্জের মৌসুম। এ সংবাদ শ্রবণে হাজীগণ বাদশাহ ফয়সালের কাছে আবেদন করলেন -আমরাও মহান সাহাবীদ্বয়ের চেহারা মোবারক দর্শনে আগ্রহী। অনুগ্রহ পূর্বক তারিখটা আরো ক’দিন পিছিয়ে দেয়া হোক। এদিকে ইরান, তুরস্ক, লেবানন, ফিলিস্তিনি, হেজায, বুলগেরিয়া, উত্তর আফ্রিকা , রাশিয়া, ভারত বাংলাদেশ সহ প্রভূতি রাষ্ট্র থেকে বাদশাহ ফয়সালের নিকট একই আবেদন সম্বলিত অসংখ্য বার্তা আসতে লাগল।
বাদশাহ্ ফয়সাল মহাবিপদে পড়লেন। একদিকে গোটা মুসলিম বিশ্বের তারিখ পেছানোর জোড়ালো অনুরোধ, অন্যদিকে দ্রুত স্থানান্তরের স্বাপ্নিক নির্দেশ। উভয় সংকটে পড়লেন। অবশেষে এ ব্যাপারে সিন্ধান্ত হলো , কিছুদিন যাতে কবরের ভিতর পানি প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য নদীর দিক থেকে দশ ফুট দুরে একটি গভীর গর্ত খনন করে সেখানে কাঁকর ফেলা হবে। আর সারাবিশ্বের মুসলমানদের আগ্রহের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তারিখটি আরো দশ দিন পিছিয়ে দেয়া হল।এ ঘোষনার পর ক’দিনের মধ্যেই সালমান পার্কের ছোট বসতিটি লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, রাষ্ট্রদূত, উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এবং লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ঢল নামল এ পার্কে। তাঁবুতে তাঁবুতে পরিপূর্ণ হয়ে গেল মাদায়েনের ঐতিহাসিক মাঠটি। একটি গ্রহণযোগ্য হিসাব অনুযায়ী আগত দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল পাঁচ লক্ষ।
শেষ পর্যন্ত সেই প্রতিক্ষিত দিনটি এসে গেল। লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতিতে কবর খোঁড়া হলো। দেখা গেল -সত্যিই হযরত হুযায়ফা (রাঃ)-এর কবরে কিছু পানি জমে গেছে এবং হযরত জাবের (রাঃ)-এর কবরে কিছুটা আদ্রতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে সমবেত জনতা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন। তাঁদের কণ্ঠে বার বার উচ্চারিত হতে লাগল -”আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।” চোখে নেমে আসে অশ্রুর বন্যা।
বাদশাহ ফয়সালের নেতৃত্বে তাঁর মন্ত্রী ও কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশ থেকে আগত রাষ্ট্রদুতগণের সহযোগীতায় প্রথমে হযরত হুযাইফা (রাঃ) -এর লাশ মুবারক কবর থেকে ক্রেনের দ্বারা তোলা হল। ক্রেনের সাহায্যে তাঁর পবিত্র লাশ টি এমন ভাবে উঠানো হয় যে, মুবারক লাশটি আপনাতেই ক্রেনের মাথায় ফিট করে রাখা ট্রেচারে এসে পৌঁছায়। অতঃপর ট্রেচারটি ক্রেন থেকে পৃথক করে নেয়া হল। বাদশাহ ফয়সাল, মুফতী সাহেব, সিরিয়া এবংতুরস্কের নির্বাচিত মন্ত্রীবর্গ এবংমিশরের যুবরাজ শাহ ফারুক অত্যন্ত যত্ন ও তা’জীম সহকারে লাশ মুবারককে তুলে এনে একটি কফিনের ভিতর রাখেন। অতঃপর একই ভাবে হযরত জাবের (রাঃ)-এর পবিত্র লাশটিও তুলে আনা হয়।
আশ্চর্যের বিষয় হলো- শত শথ বছর কেটে গেলেও শুধু তাঁদের লাশ মোবারকই নয়, কাফন বাঁধার ফিতা গুলোর মধ্যেও কোন পরিবর্তন আসেনি। সুবাহানাল্লাহ্‌! লাশ দুটি দেখে কেউ কেউ কল্পনাও করতে করতে পারছিল না যে, এগুলো দীর্ঘ তেরশত বছরের প্রাচীণ লাশ।
আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো- তাঁদের চোখগুলো ছিল খোলা, সেই খোলা চোখ থেকে রহস্যময় অপার্থিব জ্যোতি এমনভাবে ঠিকরে পড়ছিল, যে, অনেকেই তাঁদের চোখ ভাল ভাবে দেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখ থেকে বেরিয়ে আসা অতি উজ্জ্বল আলোর কারণে কেউই দৃষ্টি ঠিক রাখতে পারছিলেন না।
এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে বড় বড় ডাক্তার গণ হতবাক হয়ে যান। এ সময় আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন জৈনিক জার্মান চক্ষু বিশেষজ্ঞ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে সবকিছু খুঁটে খুঁটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষন করে মূফতি সাহেবের হাত ধরে বললেন- “ইসলামের সত্যতা এবং সাহাবীগণের উচ্চ মর্যাদার সপক্ষে এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?” এ বলে তিনি কালিমা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে মুসলমান হয়ে যান।
অতঃপর পবিত্র লাশ দু’টিকে কফিনে রাখার পর উপস্থিত জনতা তাঁদের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’আ করেন। এরপর আলেমগণ ও মন্ত্রীবর্গ কফিন দু’টো কাঁধে উঠিয়ে নেন। কিছুদুর যাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিবর্গ এবং সবশেষে বাদশাহ ফয়সাল কাঁধ পেতে নেন।
দীর্ঘ চার ঘন্টা পর চরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পবিত্র লাশ দুটি সালমান পার্কে এসে পৌঁছে। যে সৌভাগ্যবান লাশ দু’টিকে প্রথমে কফিনে রেখেছিলেন, তারাই কফিন দু’টি নবনির্মিত কবরে নামিয়ে রাখেন। আর এভাবেই জনতার আল্লাহু আকবার ধ্বনির মধ্যে ইসলামের এই মহান সাহাবীদ্বয়কে মাটির কোলো শুয়ে দেওয়া হয়।

Thursday, September 19, 2013

প্রথম ভারতীয় সাহাবী হযরত তাজউদ্দীন চেরামান পেরুমল (রাঃ) - রাছুলুল্লাহ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজার ইন্ডিয়ান সাক্ষী



ভারতীয় সাহাবী তাজউদ্দীন রা: এর কবর

চেরামান পেরুমল উপমহাদেশের সর্বপ্রথম নাগরিক যিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পবিত্র সাহচর্য লাভ করে সাহাবী হবার গৌরব অর্জন করেন। উনার নিবাস ছিল ভারতের বর্তমান কেরালা প্রদেশের মালাবার অঞ্চলের ’Kodungaloor ‘কোডুঙ্গোলর’ এলাকায়। উনি উক্ত অঞ্চলের সম্রাট ছিলেন। একাধারে ২৬টি বৎসর তিনি রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পুরো দক্ষীণ ভারতের ২৫০০ মাইলেরও বেশী এলাকা জুড়ে উপকুলীয় এ রাজ্যের সীমানা ছিল বিশাল। অনেক ঐতিহাসিক উনার ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রাচীন বইয়ের মধ্যে এম. হামিদুল্লাহ রচিত “মুহাম্মাদ রসূলুল্লহ” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 
‘চক্রবতী ফারমাস’ যা চেরামান পেরুমল এর অন্য একটি উপাধি; নিজ অঞ্চলে থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা বা অলৌকিক ঘটনা স্বচক্ষে পর্যবেক্ষণ করেণ।  পবিত্র কোর’আনের সূরা-ক্বমার এ এই চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজার কথা উল্লেখ আছে। তাফসিরে মা’আরিফুল কোর’আনে উক্ত সূরার ব্যাখ্যায় এই পূন্যাত্মা সাহাবীর ইসলাম ধর্ম গ্রহনের কথা উল্লেখ আছে। ওখানে আরো বলা আছে যে, মালাবারের এই মহারাজা ডায়েরী লিখতেন। যেদিন এই চন্দ্রদ্বিখন্ডনের মু’জেজা সংগঠিত সেই, উনি সেইদিনের ঘটনা সবিস্তারে তারিখ সহ লিখে গেছেন। উনার রচিত সেই ডায়েরী এখনও সংরক্ষিত আছে।
মক্কার কাফেরদের দাবীর মুখে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা হাতের ইশারায় চাঁদকে দিখন্ডিত করে দেখান। চাঁদের একটা অংশ আকাশের পূর্বাংশে আর অপরাংশ পশ্চিম দিকে সরে যায় কিছুক্ষণের জন্য। উপস্থিত অনেকেই সে রাতে এ দৃশ্য দেখেছিল। কাফেরদের কেউ কেউ এটা বিশ্বাস করলেও নিজের চোখে দেখা সত্তেও কেউ কেউ তা যাদু হিসেবে অভিহিত করে।

জোৎস্নারাতে রাজা চেরুমল রাজপ্রসাদের ছাদে বসে ছিলেন রাণী সাথে করে। হঠাৎ চাঁদকে দ্বিখন্ডিত হতে দেখে রাণীসহ তিনি ও তার সভাসদরা যারপরনাই বিষ্মত হন। এ বিষয়ে তিনি রাজজ্যোতিষীদের কাছে জানতে চান। মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই মালাবার উপকুলে আগত আরব বণীকদের মাধ্যমে স্থানীয় আরব বণীক ও তাদের ভারতীয় দোসররা জানতে পারেন যে, আরবে এক নবী আত্বপ্রকাশ করেছেন, তিনি একত্ববাদ প্রচার করেন, তিনিই নিজ হাতের ইশারায় চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন। এ কথা শুনে অভিভূত রাজা চেরামান পেরুমল আরবের সেই নবীর সাথে স্বাক্ষাতের জন্য মরীয়া হয়ে উঠেন, শেষ পর্যন্ত তিনি মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন একদল আরব বণীকদের সাথে।

হিজরতের পূর্বে সম্ভবত ৬১৯-৬২০ খৃষ্টাব্দে, ২৭ শে শাওয়াল সকাল নয়টার দিকে প্রিয় রাসুলুল্লাহ সা: এর সাথে তাঁর দেখা হয়। সেখানেই তিনি স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সা: এর কাছে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবু বক্কর রা: সহ আরও কয়েকজন সাহাবীর উপস্থিতিতে স্বয়ং আল্লাহর হাবীব সা: তার নাম রাখে তাজউদ্দীন। রাজা চেরামান পেরুমল রাসুলুল্লাহ সা: এর জন্য উপঢৌকন হিসেবে দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত আচার নিয়ে গিয়েছিলেন। ভারতীয় এক বাদশাহ কর্তৃক আদার সংমিশ্রণে তৈরী সেই আচার সংক্রান্ত একটা হাদিসও আমরা দেখতে পাই, প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাইদ খুদরী রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে হাদিসটি। 
হাদীস সঙ্কলনকারী হাকিম (রঃ) তার ‘মুস্তাদরাক’ নামক কিতাবে হাদীসটি সঙ্কলন করেছেন। হাদীসের বর্ণনাকারী সাহাবী হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রাঃ), চেরামান পেরুমল (রাঃ) কে ‘মালিকুল হিন্দ’ তথা ‘ভারতীয় মহারাজ’ বলে সম্বোধন করেন।
عن ابى سعيد الخدرى (رضى لله عنه) قال اهدى ملك الهند الى النبى (صلى الله عليه وسلم) جرة فيها زنجبيل فاطعم اصحابه قطعة قطعة واطعمنى منها قطعة
[رواه المستدرك حاكم]
হযরত আবু সাঈদ সা’দ বিন মালিক বিন সিনান আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘ভারতীয় মহারাজ নবীজী (সাঃ) এর জন্য এক বয়াম আচার নিয়ে আসলেন যার মধ্যে আদার টুকরা ছিল। নবীজী (সাঃ) সেই টুকরাগুলা তার সাহাবীদের ভাগ করে দিলেন। আমিও খাবার জন্য একটি টুকরা ভাগে পেয়েছিলাম’।
প্রখ্যাত সাহাবী হযরত মালিক ইবনে দীনারের বোন রাজিয়া’র সাথে রাজা পেরুমল তথা সাহাবী তাজউদ্দীন রা: এর বিয়ে হয়। তিনি সেখানে প্রায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ বৎসর অবস্থান করে রাসুলুল্লাহ সা: এর নির্দেশে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তার সাথে মালিক ইবনে দীনারসহ আরও ক’জন সাহাবী ছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে দক্ষিণপূর্ব আরবের এক বন্দরে (বর্তমান ওমানের সালালা শহর) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই মৃত্যু বরণ করেন। আজও তার কবর রয়েছে ওমানের সালালা শহরে, মর্যাদাবান এক সাহাবী হিসেবে বিশ্বের মুসলমানদের কাছে সেটি এক অনবদ্য আকর্ষণ।

ওদিকে মালিক ইবনে দিনার রা: এবং তার বোন রাজিয়া রা:সহ অন্যান্য মুসলমানগণ ঠিকই কেরালাতে আসেন, মৃত্যু আসন্ন বুঝতে পেরে চেরুমান পেরুমল তথা তাজউদ্দীন রা: তার আত্বীয়স্বজনদের কাছে চিঠি লিখে পাঠান সাহাবী মালিক ইবনে দিনারের হাতে।

সাহাবী মালিক ইবনে দিনার, তার বোন রাজিয়া দলবল সহ কেরালায় আসেন এবং এখানেই তারা বসতী স্থাপন করেন। এর আগে থেকেই সেখানে এক বিরাট আরব বণীকদের বসতী গড়ে উঠেছিল। সাহাবী মালিক ইবনে দিনার সেখানে ভারতের প্রথম মসজিদ স্থাপন করেন। সেখানেই এই মহান সাহাবী ও তার বোন হযরত রাজিয়া রা: এর কবল আজও বিদ্যমান রয়েছে।

Source: http://www.postpoems.org  and http://www.bdtomorrow.net

Watch this Video: 
Hazrath Tajuddin (R) The first Muslim & Sahabi Rasool (S) from INDIAN Region. 

For more information browse this website: http://www.mohdiqbal.webs.com/ 


 ``Sign of Rasulullah" Label's Other Link:


Tuesday, September 17, 2013

আমাদের রাছুল (সাঃ) -এর কোন মোজেজা স্থায়ী? -আল্লামা সাঈদী, মৌলানা মিজানুর রহমান আজহারী এবং উস্তাদ নোমান আলী খান


সব নবীদের ইন্তেকালের পর তাঁদের মোজেজাও শেষ হয়ে গেলো কিন্তু বিশ্ব নবী (সা) এর ইন্তেকালের পরেও তাঁরমোজেজা শেষ হয়নি, শেষ হবেনা কেয়ামত পর্যন্ত
- আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সাহেব

নীচের দু'টি ভিডিও দেখুন এবং শেয়ার করুন প্লীজঃ

আল-কুরআন: চূড়ান্ত মু'জিজা || উস্তাদ নোমান আলী খান

Monday, September 16, 2013

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য

এক অসাধারণ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি:
ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য 
সংকলনে: শাহাদাতুর রহমান সোহেল


দরূদ পাঠ মুসলিম সমাজের একটি নিদর্শন, রাছুলুল্লা­াহ (সাঃ)- এর প্রতি ভালবাসার অন্যতম নিদর্শন, গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী আমল। আর আমাদের সমাজে প্রচলিত একটি অসাধারণ না’তসহ দরূদ হল- বালাগাল উলা বি-কামালিহি ......।

       বালাগাল উলা বি-কামালিহি,/কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,/হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি,/সাল্লু আলায়হে ওয়া আলিহি।।  - আমাদের দেশে দরূদ হিসেবে প্রচলিত এই ছন্দোবদ্ধ আরবী চতুস্পদীটি বলতে হবে, অসম্ভব জনপ্রিয় সর্বমহলে। জ্ঞানী-গুণী পীর-মাশায়েখদের কাছে যেমন, তেমনি নারী-পুরুষ, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সর্বসাধারণ মানুষের কাছেও সমানভাবে সমাদৃত। মীলাদ মাহফিলে ওয়ায়েজ যখন সুর দিয়ে দরূদটি পড়েন, তখন উপস্থিত ছোট-বড় সবাই তাঁর সঙ্গীত মাধুরিতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালবাসায় বিমোহিত হন। তাঁরাও সমস্বরে পাঠ করেন রাসূল প্রেমের আরশি, অমৃত সুধার আধার এই চতুস্পদী। অর্থ না বুঝেই যে আবেগ তৈরী করে অর্থ-তাৎপর্য, ইতিহাস ইত্যাদি জানলে এই দরূদের দ্বারা অনেক বেশী আবেগ-চেতনা তৈরী হত এবং নিঃসন্দেহে বেশী সওয়াবেরও কারণ হত। আসুন নাত- সহকারে এই অসাধারণ দরূদটি আমরা শুনি:            

            অন্য দরূদের সাথে এর পার্থক্য হল এটি না’তসহকারে দরূদ এবং এই না’তটির মধ্যেও আছে বিন্দুর মধ্যে সিন্ধুর ব্যঞ্জনা।  না’ত মানে প্রশংসা। রাসূলে পাকের প্রশংসাকে বলা হয় না’ত। এটি আমাদের ধর্মীয় পরিভাষা। মানুষ যখন আল্লাহ পাকের প্রশংসা করে, তাকে বলা হয় ‘হামদ’। আর রাসূলে পাকের ক্ষেত্রে হলে না’ত। আমাদের দেশে ধর্মীয় মাহফিলের শুরুতে তেলাওয়াতে কুরআনের পরপর হামদ ও না’ত এর প্রচলন এখনও পুরোদমে বিদ্যমান। আমাদের আলোচ্য না’ত সহ দরূদটি আরবি ভাষায় লেখা। তবে এর রচয়িতা একজন ফারসি কবি। বিশ্ব বিখ্যাত সাধক কবি শেখ সা’দী (রা.)। আসল  নাম  মুশাররফ উদ্দীন মুসলেহ ইবনে আব্দুল্লাহ শিরাজী বর্তমান ইরানের ফার্স প্রদেশ বা প্রাচীন পারস্যের রাজধানী শিরাজ নগরীতে তাঁর জন্ম এবং সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত। তার জন্মসাল নির্দিষ্ট নয়, তবে মৃত্যু ৬৯১ ও ৬৯৫ হিজরির মধ্যবর্তী সময়ে। বর্তমানে ১৪৩৩ হিজরী চলছে । অর্থাৎ এখন থেকে অন্তত: সাড়ে আটশ বছর আগে। উচ্চ শিক্ষার জন্য শেখ সা’দী (রহঃ) সে সময়কার বিশ্ব সাহিত্যের পাদপীঠ হাজারো সাহাবীর পদধন্য বাগদাদে চলে আসেন এবং জমানার মুজাদ্দিদ গাউসুল আজম হযরত আবদুল কাদের জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহির নিকট এলেমি শিক্ষা লাভ করেন | মহান হজ্বব্রত পালন শেষে তিনি বিশ্ব ভ্রমনে বেড়িয়ে পড়লেন | বলা হয় ইবনে বতুতার পর প্রাচ্যে তিনিই সবচেয়ে বড় পরিব্রাজক | ইতিহাস ঘেটে দেখে গেছে যে তিনি একজন বীর মুজাহিদ ও বটে | জেরুজালেমের পবিত্র বায়তুল মোকাদ্দেস (আল আকসা) নিয়ে খৃষ্টানদের সাথে ঐতিহাসিক যুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহন ছিল | জেরুজালেমের পথে প্রান্তরে দিবানিশি শেখ সাদীর কবিতা হামদ রচনা মুসলীম মুজাহিদগন আবৃত্তি করে একে অপরকে উত্সাহ জোগাতেন | অতএব দেখা যাচ্ছে, সেই জিহাদে শেখ সাদী(রহঃ)-এর অংশগ্রহণ ছিল নেতৃস্থানীয় এবং প্রভাবশালী। সম্মিলিত ইউরোপের ক্রুসেডের বিরুদ্ধে সেই জিহাদে মুসলমানরা বিজয় অর্জন করে। ফলে শেখ সাদী(রহঃ) হন গাজী। বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সৃষ্টি তাঁর দুটি মহাগ্রন্থ গুলিস্তা এবং বোস্তা | জন্মের সাড়ে ৮০০ বছর পরও এ মহাকবি আজও অমর তাঁর কালজয়ী সাহিত্য কর্মের সুবাদে | তিনি ফারসি গদ্য ও পদ্য সাহিত্যে সবার শিরোমণি। আবার আরবিতে তাঁর পান্ডিত্য কত উঁচু মানের তা প্রমাণের জন্য এ চারটি চরণই যথেষ্ট। আল্লাহ পাকের হাম্দের পর রাসূলের পাকের (সা.) প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি অবতারণা করেছেন একটি চতুস্পদির। প্রায় সাড়ে আটশ বছর পরেও সেই চারটি লাইন হাজার হাজার মাইল দূরের এই দেশে আমরা ভক্তিভরে পাঠ করি, রাসূলের মহববতের সুধা পান করি। আমাদের মজলিস- মাহফিল তখন মদীনার প্রেমে গুলে গুলজার হয়। মদীনার বাগানের সমীরণ আমাদের মনপ্রাণ ছুঁয়ে যায়। আমরা জেগে উঠি, দুলতে থাকি ভক্তিতে, শ্রদ্ধায়, সালামে মদীনার সবুজ গম্বুজকে চেতনার মিনারায় দেখে দেখে- বালাগাল উলা  বেকামালিহী …      …                          …                      … অর্থ বুঝি না, অনেকেই বুঝে না। কিন্তু ছন্দ, দোল, ঝংকার, সুর ও ব্যঞ্জনা দোল দেয় মনে। রাসূল প্রেমের শিহরণ আনে প্রাণে। শেখ সাদীর লেখা এই না‘ত কিংবা দরূদ এ দেশের প্রতিটি মু’মিনের প্রাণপ্রিয় সংগীত, ভক্তকুলের গলার মালা। কিন্তু কী আছে এই চারটি লাইনে? এমন জনপ্রিয়তার রহস্য কোথায়?
          আলোচ্য দরূদ সম্পর্কে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল- শেখ সাদী (রহঃ) এই চতুষ্পদীর প্রথম তিন লাইন লেখার পর চতুর্থ লাইন মেলাতে পারছিলেন না। অনেক দিন-মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায়। শেখ সাদী (রহঃ) এখানে একটি সন্তোষজনক লাইন পেতে ব্যর্থ হন। এসময় তিনি রাছুলুল্লা­হ (সাঃ)কে স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্নে রাছুলুল্লা­হ (সাঃ) তাঁকে এই চতুর্থ লাইনে লিখে দিতে বলেন - সাল্লু আলায়হে ওয়া আলিহি। ‘সাল্লু ’ মানে তোমরা দরূদ পাঠাও। আর ‘দরূদ’ অর্থ কারও জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করা। ‘আলাইহি’ তার প্রতি। ‘ওয়া’ মানে এবং, ও ‘আলিহী’ অর্থ তাঁর বংশধর। শেখ সা’দী স্বপ্নযোগে এ আদেশ পেলেন স্বয়ং হযরতের কাছ থেকে। একজন কবির জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া কী হতে পারে? এর চাইতে বড় গৌভাগ্য কী কল্পনা করা যায়! স্বয়ং নবীজির সাক্ষাৎ পাওয়া। যাঁর প্রশংসায় কবি তিনটি চরণ লিখছেন, স্বয়ং তিনি এসে চতুর্থ লাইন মিলিয়ে দেয়া। এভাবে রচিত হয় এই অসাধারণ না’তসহ দরূদটি। এভাবে এই চতুষ্পদীটি তৈরীতে সহায়তা করায় এটা বুঝা যায় যে, এটি রাছুলুল্লা­হ (সাঃ) -এর পছন্দনীয়।  এখানে একটা কথা উল্লেখ্য যে, যে কোন লোক স্বপ্নযোগে এভাবে কিছু পাওয়ার দাবী করলে তা সব সময় গ্রহণযোগ্য হয় না । কিন্তু শেখ সাদী (রহঃ) -এর মত একজন বিশ্ব বিখ্যাত আল্লা­হ্’র ওলী জানানোতে তা অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য। সম্ভবত: এখানেই ‘বালাগাল উলার…’ জনপ্রিয়তার রহস্য নিহিত। নচেত এটি চার লাইনের একটি চতুস্পদী। সরল সহজ ভাষায় বর্ণনা। কবিত্বের অলংকার নাই, তত্ত্ব-দর্শনের মারপ্যাঁচ নেই। এত সহজ প্রকাশের এত বড় পাওয়া নিশ্চয়ই অকল্পনীয়। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এর বিশ্বজনীন স্বীকৃতি, সমাদর। সারা দুনিয়ার মুসলিমরা গায় এই বালাগাল উলা। নবীপ্রেমের সুধা পান করে এর সুরের ব্যঞ্জনায়। এই চতুস্পদীর অন্তরালে মহা নেয়ামত নহর  কাওসার, আবে হায়াত যমযম লুকিয়ে না থাকলে শত শত বছর ধরে এই না’তসহ দরূদ নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-কিশোর সবার গলার মালা হয়ে গীত হত না পরম ভক্তিতে- মসজিদে, মাহফিলে, দুনিয়ার সর্বত্র। সত্যিই নবী প্রেমের আরশি ‘বালাগাল উলা বি কামালিহী’।
          এই পর্যায়ে আমরা আলোচ্য দরূদটির অর্থ ও তাৎপর্য জেনে নেই। অনেকে অনুবাদ করেছেন, অনুবাদ করতে চেয়েছেন এই চতুস্পদী ফারসিতে, উর্দুতে বা বাংলায়। কিন্তু সার্থক অনুবাদ কোনটিই হয়নি। আমরা জানি, কবিতার অনুবাদ হয় না। আরও পরিষ্কারভাবে বলা যায়, কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, তা অন্য ভাষায় হুবহু অনুবাদ করা যায় না। অনুবাদ করলেও দাবি করা যাবে না যে, কবি যা বলতে চেয়েছেন- বুঝিয়েছেন, তার সবটুকুই ভাষান্তর করতে পেরেছি। এ তো গেল ভাষা, ভাব ও অর্থের কথা। ছন্দ, ঝংকার ও ব্যঞ্জনা- যা কবিতার প্রাণ, তার রূপান্তর মোটেও সম্ভব নয়। তথাপি আমরা এখানে কিছু অনুবাদ উল্লে­খ করছি।  বালাগাল উলা বি-কামালিহি,/কাশাফাদ্দুজা বি-জামালিহি,/হাসুনাৎ জামিয়ু খিসালিহি,/সাল্লু আলায়হে ওয়া আলিহি।। -এর মোটামুটি সরল অর্থ হলোঃ ১) পূর্ণতায় তিনি সুউচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন, ২) বিদুরিত হয়েছে সকল অন্ধকার তাঁর সৌন্দর্যের ছটায়, ৩) সম্মিলন ঘটেছে তাঁর মাঝে সকল উন্নত চরিত্রের, ৪) পেশ করুন তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি দরুদ ও সালাম |”  এর অনুবাদ . মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী করেন এভাবে: সুউচ্চ শিখরে সমাসীন  তিনি নিজ মহিমায় / তিমির-তমসা কাটিল  তার রূপের প্রভায়, / সুন্দর আর সুন্দর তার স্বভাব চরিত্র  তামাম / জানাও তাঁর ও তাঁর বংশের ‘পরে দরূদ-সালাম।”  প্রখ্যাত কবি আবদুল মান্নান সৈয়দ তাঁর “সকল প্রশংসা তাঁর” কাব্যগ্রন্থে এর রূপান্তর করেন এভাবে: তাবৎ পূর্ণতা নিয়ে শীর্ষে হয়েছেন উপনীত, / অপার সৌন্দর্যে তিনি আলো করেছেন তমসাকে, / আশ্চর্য চারিত্র তাঁর অতুলন সৌন্দর্যে মন্ডিত, / রাহমাতুল্লিল আ’লামীন-হাজার সালাম তাঁকে।।” অন্য একজন কবির রূপান্তর হলোঃ  অতি উচ্চতা মহিমা মহান পূর্ণগুণজ্ঞানে হে নবী / তব মাধুরীত অমর আঁধার বিদূরিত আজিরে সবি / অতীব সুন্দর অতীব সুন্দর তোমার সকল আচার ব্যবহারই /সহস্র সালাম উপরে তোমার হে নবী রাসূলে আরবি। (এই অনুবাদের কবির নাম জানা নাই। কেউ জানলে অনুগ্রহপূর্বক এই ই-মেইল এড্রেসে জানালে ভালো হয়: sohelict@gmail.com)

ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের আমির ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী  উক্ত চতুষ্পদীর অর্থ ও তাৎপর্য তুলে ধরেন এভাবে: “আরবিতে ‘বালাগা’ অর্থ পৌঁছে গেছেন। ‘উলা’ মানে উচ্চতা। তাতে ‘বালাগাল উলা’ মানে তিনি পৌঁছে গেছেন উচ্চতার শীর্ষে, শিখরে। ‘বিকামালিহী’ এখানে বি অক্ষরটি হর্ফ বা অব্যয়। অর্থ হল সঙ্গ, সহ দ্বারা, দিয়া। ‘কামাল’ এর সঙ্গে ‘হী’ অক্ষরটি সর্বনাম। মানে ‘তার’। এখন দেখা যাক ‘কামাল’ অর্থ কী ? ‘কামাল’ আরবি শব্দ। আমরা ‘কামালিয়াত’ বলে একটি পরিভাষার সাথে পরিচিত। ‘কামাল’ ও কামালিয়াত এর অর্থ ‘পূর্ণতা’। এখান থেকেই কামেল- পূর্ণতাপ্রাপ্ত। যেমন বলা হয় লোকটি  কামেল। ‘কামাল’ এর আভিধানিক অর্থ পূর্ণতা। এই পূর্ণতা মানবীয় চরিত্রের, মানবিক গুণাবলির। মানুষ হিসেবে আমরা জীব। তবে অন্যান্য জীবজন্তু থেকে আমরা আলাদা। কারণ, আমাদের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য বা গুণ আছে, যেগুলো অন্যান্য জীবের নেই। সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, পরোপকার, ত্যাগ, ধৈর্য প্রভৃতি মানুষের অনেক গুণ আছে যেগুলো অন্য প্রাণীর নেই। আবার এসব গুণ যে মানুষের মধ্যে যে পরিমাণ বিদ্যমান, তিনি তত বড় মাপের মানুষ।

আমরা সাধারণত বলি ‘তিনি বড় লোক’। সাধারণভাবে তখন বুঝি, লোকটি বড় পয়সাওয়ালা অথবা অনেক ক্ষমতাধর। কিন্তু এই গুরুত্ব যতদিন ক্ষমতায় থাকে বা পয়সার মালিক থাকেন, ততদিন। ক্ষমতা হারালে, পয়সা ফুরালে ফুটো বেলুনের মত চুপসে যান। কিন্তু যারা মানবীয় গুণাবলিতে পূর্ণতার অধিকারী তাঁরা সর্বদা আমাদের কাছে স্মরণীয়-বরণীয়। আর সত্যিকার ‘বড় লোক’ হওয়ার মাপকাঠিও হচ্ছে এসব গুণে গুণবান হওয়া। এই গুণ যখন পূর্ণতায় পৌঁছে তখন তাকে কামাল বা কামালিয়াত বলা হয়। আর লোকটিকে বলা হয় কামেল। এমনও হতে পারে যে, কারও মধ্যে দু’একটি গুণ পূর্ণতায় পৌঁছে। যেমন দানশীল হিসেবে আমরা হাতেম তাঈ ও হাজী মুহাম্মদ মহসিনের কথা বলতে পারি। বীরত্বের বিচারে হযরত আলী (রা.), খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) প্রমুখের উদাহরণ আনতে পারি। আধ্যাত্মিকতায় বড়পীর আবদুল কাদের জিলানী (রা.) বা খাজা আজমিরী (রা.)-এর প্রসঙ্গ আসতে পারে। কিন্তু সকল মানবীয় গুণের চূড়ামত্ম পর্যায়ের গুণান্বিত একজন মাত্র মানুষকেই পাওয়া যাবে পৃথিবীর ইতিহাসে। তিনি হচ্ছেন আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। শেখ সা’দী সে কথাই বলছেন প্রথম চরণে- ‘বালাগাল উলা বি কামালিহী’- সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছেন তিনি নিজ কামালিয়াতে, মানবীয় গুণাবলির পূর্ণতায় তিনি উচ্চতার স্বর্ণ শিখরে উপনীত, সুউচ্চ শিখরে সমাসীন  তিনি আপন মহিমায়।
পরের চরণটিতে বলেছেন, ‘কাশাফাদ দুজা বি জামালিহী’। ‘কাশাফা’-এর মূল ধাতু ‘কাশ্ফ্’ অর্থ খোলা, প্রসারিত হওয়া। ‘দুজা’ অর্থ ঘন-অন্ধকার, দিনের শেষে রাত নামলে পৃথিবী অাঁধারে ছেয়ে যায়। তবুও আকাশে চাঁদ আর তারারা ভাসলে মিটিমিটি আবছা আলোর রেখা আঁচ করা যায়। কিন্তু যদি রাতটি হয় অাঁধিয়ারার, অমাবশ্যার রাত, মুষলধারে বৃষ্টি, চারদিকে ঘোর অমানিশা, তখন নিজের হাতটিও দেখা সম্ভব নয়।। ‘দুজা’ বলতে সেই অমানিশা ও ঘন-অন্ধকারকেই বুঝানো হয়। বি অব্যয় মানে দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক। ‘জামাল’ এর পরে ‘হী’ হল সর্বনাম। ‘জামাল’ শব্দটিও ‘কামাল’-এর সমার্থক। অর্থ: রূপ, সৌন্দর্য। তবে দৈহিক সৌন্দর্যের সাথে চরিত্রের সৌন্দর্য মিলিত হয়ে যে অপরূপ কামিত্ম ফুটে ওঠে তাকেই বলা হয় কামাল, মহিমা। তাহলে দাঁড়ায় ‘অাঁধার দূরিভূত হল তার সৌন্দর্য মহিমায়। অাঁধিয়ারা অমানিশা তিরোহিত হল তার রূপের আভায়, তিমির-তমসা কাটিল  তার সৌন্দর্যের প্রভায় ।
‘জামাল’ (সৌন্দর্য) বুঝতে হলেও বিষয়টি একটু খোলাসা করা দরকার। মানুষের সৌন্দর্য বুঝার একটি লক্ষণ তার গায়ের রং। তবে শুধু গায়ের রং ফর্সা, চেহারা হলুদাভ, চাঁদের বরণ টুকটুকে হলেই সুন্দর বলা যাবে না। দেহের গড়ন, সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরিমিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া অনিবার্য শর্ত। তার পরে চেহারায় মমতার আবরণ, ব্যক্তিত্বের আভা, গাম্ভীর্যের ছাপ, কথা-বার্তার ওজন সবকিছু মিলিয়ে ঠিক করা হবে কোন্ মানুষ কতখানি সুন্দর। কাজেই আসল সুন্দর মানুষের রঙ, রূপ, দৈহিক গঠনে, গড়নে নয়; বরং চরিত্রে। এই চরিত্রই চাঁদ সূরুজের মত আলোকোজ্জ্বল করে লোকটিকে। তখন তার চরিত্র মাধুর্য আলো বিকিরণ করে চারদিকে। সমাজ থেকে দূর করে সকল অসুন্দর-অমঙ্গল।
ধরুন, রাতের আকাশে চাঁদ নেই, দিনের বেলা সূর্যও নেই। তখন মানব সমাজ হবে ভুতুড়ে জনপদ। আমরা এখন যন্ত্র সভ্যতার যাঁতাকলে বিদ্যুৎ নির্ভর জীবনে অভ্যস্ত। মনে করুন, বিশাল ঢাকা মহানগরীতে কোন দুর্ঘটনায় একটানা কয়েক দিন বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন। জেনারেটরগুলোও দিন দুয়েক ঝনঝন করে পরে থেমে গেছে। রাত নেমেছে। ঘোর অন্ধকার চারদিকে, চোর ডাকাতের তান্ডব। রাস্তায় বের হওয়া দায়। প্রাণ নিয়ে উৎকণ্ঠা। বর্তমানে তো আলো বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায়ও প্রাণের বা সম্পদের নিরাপত্তা প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে। তার ওপর যদি বিদ্যুৎ  একেবারে না থাকে, তাহলে দুর্যোগের ভয়াবহতা কি অনুমান করা যায়? দেখা গেল ঘোর অমানিশা, অরাজক হাহাকারের মধ্যে একদিন নিশিরাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ এসে গেল, বাতি জ্বলল। এসি, ফিরুজ চালু হল, যানবাহন রাস্তায় নামল, তখন চারদিকে আনন্দের কোলাহল দেখা দেবে নিশ্চয়। হযরতের আগমনও এই বিদ্যুতের ঝলকানীর মত, মধ্য আকাশে চন্দ্র বা সূর্যের আলোর বন্যার ন্যায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে
‘ক্বাদ জাআকুম মিনাল্লাহি নূরুন ওয়া কিতাবুন মুবীন’
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে এসে গেছে আল্লাহর পক্ষ হতে মহান নূর এবং একটি উজ্জ্বল কিতাব।’’
এই আলোর বন্যায় উদ্ভাসিত হয়েছে মুসলিম সমাজ, গোটা বিশ্ব মানবতা। ইতিহাসে হযরতের আগমন-পূর্ব যুগকে ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ বলা হয়। অজ্ঞতার যুগ, অন্ধকার যুগ। কেন অন্ধকার যুগ বলা হবে? তখন কি আকাশে দিনের বেলায় সূর্য, রাতে চাঁদ-তারারা ছিল না? অজ্ঞতার যুগ বলা হবে কোন্ যুক্তিতে? সাহিত্যে-কবিতায়, সঙ্গীতে আরবরাই তো দুনিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল, এখনও শ্রেষ্ঠ। এজন্যই তো তারা অনারবদের বলতে পারত আজমী- বোবা। তাহলে আসল কারণটি কেথায়? এই অন্ধকার ও অজ্ঞতা ছিল মানব চরিত্রের চরম অধঃপতনের। চুরি-ডাকাতি-রাহাজানীকে তখন মনে করা হত অর্থ উপার্জনের বৈধ পন্থা। এখন যেমন চোরাকারবার ও শেয়ার বাজার লুট করা ধনী হওয়ার বৈধ (?) ব্যবস্থা বলে স্বীকৃত। তখন মদ, জুয়া বেশ্যাবৃত্তির ছাড়াছড়ি ছিল সর্বত্র। অবশ্য মেয়েরা তখনও মাথায় কাপড় দিত। বর্তমানের ন্যায় উলঙ্গ, অর্ধ উলঙ্গ ছিল না। নারীর মর্যাদার অবনতি কতখানি হয়েছিল তার একটি প্রমাণ, কারও ঘরে মেয়ে শিশু জন্ম নিলে অপমানের ভয়ে পিতা নিজে গিয়ে জীবিত শিশুটিকে করব দিয়ে আসত। সেই অন্ধকার যুগে হযরত এসে সৌন্দর্য বিতরণ করলেন, আলো ছড়ালেন। হানাহানি, রক্তপাতের পরিবর্তে মুসলমানরা ভাই ভাই শিক্ষা দিলেন, মেয়ে সমত্মান বেহেশতের সারথি- এই বিশ্বাস বদ্ধমূল করলেন। মায়ের পায়ের তলায় বেহেশত- এই শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হল মুসলমান। প্রেম মমতা, ত্যাগ, পরোপকার, যাকাত প্রভৃতির মাধ্যমে মায়া-মমতার একটি বেহেশতী সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন। তাঁর এই শিক্ষা ও চরিত্রের সৌন্দর্যের জোয়ার ছড়িয়ে পড়ল চারদিকে। আরব উপদ্বীপ ছাড়িয়ে ভারতবর্ষেও আমাদের পূর্ব-পুরুষরা ইসলামের ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিল সেই সৌন্দর্য মহিমায় মুগ্ধ হয়ে।
একজন গবেষক বলেছেন : দুনিয়ার বুকে মানব সমাজে যেখানে যতটুকু নৈতিক শিক্ষা বা মানবীয় চরিত্রের সৌন্দর্য বিদ্যমান তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হযরতের শিক্ষার কাছে ঋণী। কারণ, অন্য কোন মহাপুরুষের নৈতিক শিক্ষা জগতে অত অবিকৃতভাবে বিদ্যমান নেই। তাই অন্য জাতির মাঝে ন্যায়বোধ, সততা, মানবপ্রেম, স্বার্থ ত্যাগের যেসব শিক্ষা বিদ্যমান তা তারা ইসলামের নবীর কাছ থেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গ্রহণ করেছে। আল্লাহ পাক নিজে হযরতের এই অনুপম চরিত্রের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন:
‘‘আপনি মহান চরিত্র আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত।’’
মহানবী (সা.) নিজেই বলেছেন
‘‘আমি সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা বিধানের জন্য প্রেরিত হয়েছি।’’
বস্ত্তত শেখ সা’দী ‘জামাল’ বলতে হযরতের এই চরিত্র সুষমাকেই বুঝিয়েছেন। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে তিনি গেয়েছেন : ‘কাশাফাদ দুজা বে জামালিহী’- তার রূপে অপসারিত মানব সমাজের ঘন অমানিশা। ‘তিমির-তমসা কাটিল  তার সৌন্দর্যের প্রভায়’।
তৃতীয় পঙ্ক্তিতে তিনি উপসংহার টেনে বলছেন, আসলে হযরতের প্রশংসা-তারিফ কীভাবে করব? তাঁর চারিত্রের, শিক্ষার, ব্যক্তিত্বের কোন্ দিকটি নিয়ে বলব ? মাওলানা সুলাইমান নদভী সাহেবের একটি বক্তৃতা সংকলন পড়েছিলাম, ‘পয়গামে মুহম্মাদী’ নামে ।  সেখানে মাওলানা সুলাইমান নদভী হযরতের চরিত্র মাধুর্য বিশেষণ করতে গিয়ে বলেছেন : হযরত (সা.) ছিলেন সর্বযুগের সব মানুষের সুন্দরতম আদর্শ। কেউ যদি আদর্শ স্বামী হতে চায়, তাহলে হযরত খাদিজা ও আয়েশা (রা.)-এর আদর্শ স্বামী মুহাম্মাদুর রাসূলুলাহ তার জন্য আদর্শ। কেউ যদি রাষ্ট্রনায়ক হয় তার জন্য আদর্শ হচ্ছেন মদীনার রাষ্ট্রনায়ক মহানবী (সা.)। সেনাপতি ও যোদ্ধার জন্য মহান আদর্শ হলেন বদর-উহুদের মহান সেনাপতি। দুগ্ধপোষ্য শিশুর জন্য আদর্শ, মা হালিমার কোলের শিশু মুহাম্মদ। এভাবে মানব জাতির প্রতিটি অংশের জন্য সুন্দর চরিত্র ও উদাহরণ রয়েছে মহানবীর জীবনে। কুরআন মাজীদে তাই বলা হয়েছে :
তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের জীবনে সুন্দরতম আদর্শ রয়েছে।
হযরতের জীবনের এসব দিক, গুণ-বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্যে শেখ সা’দী আত্মহারা। তিনি সে কথাই ব্যক্ত করেছেন প্রেম-ভালবাসার ডালা সাজিয়ে- হাসুনাত জামিয়ু খিসালিহী- ‘তার সকল স্বভাব আচরণই সুন্দর, সুন্দর আর সুন্দর তার স্বভাব চরিত্র  তামাম।’
‘হাসুনাত’ মানে সুন্দরে পরিপূর্ণ, সুন্দর আর সুন্দর। ‘জামীয়ু’ অর্থ সকল, যাবতীয়। ‘খিসাল’ হচ্ছে ‘খাসলত’ এর বহুবচন। খাসলত শব্দের মূল অর্থ স্বভাব, আচার-ব্যবহার বা চরিত্র। ‘হী’ অক্ষরটি সর্বনাম। অর্থাৎ হযরতের সকল চরিত্রই সুন্দর আর সুন্দর। এই তিনটি চরণে শেখ সা’দী হযরতের পুরো জীবনের একটি স্কেচ এঁকেছেন। একবার একজন বড় শিল্পী এক পত্রিকা অফিসে এসে কলমের অাঁচড় কেটে নজরুলের একটি স্কেচ অাঁকেন। সেটি পত্রিকার প্রথম পাতায় ছাপা হয়। দেখলাম, দু’তিনটি ছোট্ট রেখা। শিল্পীকে মোটেও বেগ পেতে হয়নি এটি আঁকতে। অথচ রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সুন্দর অবয়বের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে তাতে। পূর্ণ ছবি না হলেও এই দু’তিনটি রেখাতেই পুরো রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যেন হাসছেন। দক্ষ হাতের কারিশমা এখানেই। শেখ সা’দীর রচনায়ও হযরতের পূর্ণাঙ্গ তারিফ হয়নি, কারও পক্ষে সম্ভবও নয়; কিন্তু স্কেচের মত তিনটি চরণে যেন আমাদের মনের পর্দায়, চোখের সামনে ভেসে ওঠে হয়রতের অপূর্ব অনুপম চরিত্র মাধুরী। তাই ভক্তিতে, আসক্তিতে আপ্লুত হৃদয়ে শেখ সা’দীর কণ্ঠে কণ্ঠ রেখে আমরা গেয়ে পরম তৃপ্তি পাই-‘বালাগাল উলা… ’
                   বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম আলোচ্য চতুষ্পদীটি অবলম্বনে একটা না’ত রচনা করেছেন। না’তটি হলঃ
কুল মখলুক গাহে হযরত
বালাগাল উলা বেকামালিহী।
অাঁধার ধরায় এলে আফতাব
কাশাফাদ দুজা  বেজমালিহী \

রৌশনীতে আজো ধরা মশগুল
তাইতো ওফাতে করি না কবুল,
হাসনাতে আজো উজালা জাহান
হাসুনাত জমিউ খেসালিহী \

নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহাল
জাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামাল
খুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশত
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী \

কাজী নজরুল ইসলামের না’তটি সম্পর্কে ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেনঃ ‘‘নজরুল যা করেছেন তাকে অনুবাদ না বলে নতুন নির্মাণ, নব সৃষ্টি বললেই সুন্দর হবে। অর্থাৎ তিনি নিজেই বাংলায় বালাগাল উলা রচনা করেছেন। যার মধ্যে শেখ সা’দীর বর্ণনার আবহ আছে। বাংলা ভাষার গাথুনীতে ফারসি-আরবি শব্দের মুক্তমালা গ্রথিত হয়েছে। সব মিলে ভাব, ভাষা, ছন্দ, ঝংকারে অসামান্য অনুবাদ, কিংবা বলব নব নির্মিত বাংলা বালাগাল উলা। নজরুল গেয়েছেন-
কুল মখলুক গাহে হযরত
বালাগাল উলা বেকমালিহী
প্রথম লাইনের চারটি শব্দের তিনটিই আরবি ও ফারসি। অথচ একটি বাংলা শব্দ দিয়ে তিনটি শব্দই বাঙময় হয়েছে। সারা সৃষ্টি জগৎ হযরতের প্রশংসা গীতি গায়। শেখ সা’দীর কণ্ঠে যেন গোটা বিশ্ব বলে:
অাঁধার ধরায় এলে আফতাব
কাশাফাদ দুজা  বেজমালিহী
শেষের লাইনের আমরা অর্থ করেছি ঘন অমানিশা দূরিভূত হয়েছে তার সৌন্দর্য মহিমায়, ‘তিমির-তমসা কাটিল  তার সৌন্দর্যের প্রভায় ।’ নজরুলের নব নির্মাণে দেখুন ব্যঞ্জনাটি কী রকম! আপনি আফতাব- দেদীপ্যমান সূর্য। অাঁধার পৃথিবীতে আপনি এসেছেন। সূর্যের সাথে নবীজিকে তুলনা করে বুঝিয়েছেন, সূর্য উদিত হলে যেমন সব অন্ধকার দূরীভূত হয়ে জগৎ আলোর বন্যায় ভাসে তেমনি আপনার আগমনেও সকল তমসার অবসান হয়ে আজ জগৎ উজালা হয়েছে।
রৌশনীতে আজো ধরা মশগুল
তাই তো ওফাতে করি না কবুল।
আপনার রৌশনী, আলো, ঔজ্জল্য-দীপ্তি এখনও ফুরায়নি। গোটা পৃথিবী, এই ধরাধাম আপনার রৌশনীতে, আলোতে মশগুল, বিভোর, সমাহিত। জগতে যত মায়া-দয়া-মনুষত্ব আছে, সব আপনার অবদান। তাই আপনার ওফাত আমি কবুল করি না। অপনি আমাদের মাঝ থেকে চলে গেছেন, অমত্মর্ধান হয়েছে, একথা আমি মানি না।
হাসনাতে আজো উজালা জাহান
হাসুনাত জমিউ  খেসালিহী
‘হাসনাতে’ সৌন্দর্য সুষমায় এখনও জগৎ উজালা। আপনার সকল স্বভাব-চরিত্র সুন্দর, অনুপম, উজ্জ্বল। আপনার আনীত শিক্ষা ও আদর্শের মূল পাঠ কোন্টি, সেখানে চলে গেছে এখন নজরুলের সন্ধানী মন। বলেছেন-
নাস্তিরে করি’ নিতি নাজেহাল
জাগে তাওহীদ দ্বীন-ই কামাল
কালেমার দু’টি অংশ তাওহীদ ও রেসালাত। তাওহীদের দু’টি অংশ। একটি শির্ককে অস্বীকার করা, তারপর আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা। নজরুল বলেন, হযরতের আনীত শিক্ষায় নাস্তি, নাস্তিকতা নিত্য নাজেহাল হয়ে চলেছে। নাস্তিকতার অস্তিত্ব বিশ্বে  বিপন্ন। এর পক্ষে শক্ত কোন যুক্তি পৃথিবীতে এখন আর নেই। সর্বত্র জেগে উঠছে তাওহীদ- একত্ববাদ, একেশ্বরবাদ; এটিই পূর্ণাঙ্গ দ্বীন- দ্বীন-ই কামাল। কামালিয়াত লাভের ধর্ম এটিই। মানবীয় গুণাবলির বিকাশ চাইলে, মানব জীবনে পূর্ণতা পেতে হলে এই দ্বীনের কোন বিকল্প নাই। সেই দ্বীনের ডঙ্কা আজ দুনিয়ার দিকে দিকে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত।
খুশবুতে খুশী দুনিয়া বেহেশত
সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী।
হযরতের আনীত আদর্শ, চরিত্রের সৌন্দর্য সুষমা, মানুষত্বের শিক্ষার খুশবুতে সারা দুনিয়া আজ মাতোয়ারা। সকল ভাবুক, মহাপুরুষ তাঁর উদ্দেশ্যে ভক্তি অর্ঘ নিবেদন করে। মুসলমানরা পাঁচ ওয়াক্ত আযানে, নামাযে তাঁরই মহিমা ঘোষণা করে। তাঁর প্রতি সালাম জানায়, দরূদ পাঠায়। দুনিয়া সেই খুশবুতে আনন্দে মাতোয়ারা, নজরুলের চেতনায় দুনিয়াটাই বেহেশতে পরিণত হয়েছে। কাজেই যাঁর আগমনে, যাঁর অবদানে মানব জাতি, গোটা সৃষ্টি এমন সৌভাগ্যবান তাঁর প্রতি ও তাঁর বংশের প্রতি হাজারো দরূদ ও সালাম।’’ কাজী নজরুল ইসলামের না’তটি সম্পর্কে মোস্তফা জামান আব্বাসী বলেনঃ ‘‘ধারণা করি, শেখ সাদি রচিত আকাশউচ্চ বচন ‘বালাগাল উলা’-এর পর নজরুল যে স্তবক তিনটি উপহার দিয়েছেন, সাদির রচনার সাহিত্য ও আধ্যাত্মিক মূল্যের চেয়েও তা কোনো অংশে কম নয়।’’ 
  
                  এ পর্যায়ে এর বিরোধিতার জবাব দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে কিছূ উগ্রপন্থী বলছে, এই না’তসহ দরূদটি পড়লে গুনাহ হবে। কোন কোন সৌদি আলেম বলেছেন- এখানে কামাল(পূর্ণতা)-এর কথা বলা হয়েছে। কামাল আল্লাহ্’র জন্য। এজন্য এতে শিরকের গন্ধ পাওয়া যায়। এর জবাব হল- শিরকের বিষয়ে সতর্কতা ভালো, তবে যা শিরক নয় তাকে শিরক বলাও অপরাধ। এটা বড় ধরণের মিথ্যা অপবাদ এবং দ্বীনের বিকৃতিসাধনও অবশ্যই।  এখানে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) ক্ষেত্রে পূর্ণতা হলো - মানবীয় চরিত্র ও আদর্শের পূর্ণতা, আধ্যাত্মিক উন্নতির পূর্ণতা, আল্লাহ্’র নৈকট্যের পূর্ণতা ইত্যাদি আল্লাহ্’র রাছুল হিসাবে পূর্ণতার যতদিক আছে তার সবকিছুতে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) সুউচ্চ পর্যায়ে আরোহন করেছেন। এখানে শিরকের গন্ধ পাওয়া আশ্চর্জজনক এবং দুঃখজনকও। এখানে উপরে উক্ত পূর্ণতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লামা সাইয়েদ সুলায়মান নদভী (রহঃ)-এর ‘পয়গামে মুহাম্মদী’ গ্রন্থে এই পূর্ণতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (বিশ্বখ্যাত ‘পয়গামে মুহম্মাদী’ গ্রন্থটি বর্তমানে আবদুল মান্নান তালিবের অনুবাদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রকাশনা বিভাগের দ্বারা প্রকাশিতঃ ফোন নং-৮৩৫৮৯৮৭, ৯৩৩১২৩৯ -ঢাকা।) আল্লামা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (রহ.) বলেন,“ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দুএকটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ হবে। কিন্তু মহানবী (সা.) এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না” (http://www.weeklysonarbangla.net, ১৮ মার্চ ২০১১) অন্যদিকে বিচার করলে উক্ত শিরকের গন্ধের অভিযোগ হাস্যস্পদও। হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধার জন্য একটা দৃষ্টান্ত দেয়া হচ্ছে- কোন একটা বিদ্যালয়ে একজন পরিদর্শক আসলো। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিদর্শককে একটি ছাত্রকে দেখিয়ে বললেন- এ ছেলেটি সর্বশ্রেষ্ঠ। তখন পরিদর্শক প্রধান শিক্ষককে বললেন - আপনি কেন এ ছেলেকে সর্বশ্রেষ্ঠ বললেন? সর্বশ্রেষ্ঠ তো আল্লাহ। এখানে শিরকের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এখানে পরিদর্শকের কথা যেমন হাস্যস্কর ঠিক তেমনি কামাল শব্দের মধ্যে শিরকের গন্ধ পাওয়াও হাস্যষ্পদ। এসব শব্দতো নিতান্তই আপেক্ষি। মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরীকে উক্ত শিরকের গন্ধ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তিনি সৌদি আলেমদের সমমনা হলেও এ বিষয়ে বললেন- আমি এটা শিরক মনে করি না। এটা আপেক্ষি কেউ “বালাগাল উলা বি-কামালিহি” লিখে ইউটিউবে সার্চ দিলে মাওলানা কামালউদ্দিন জাফরীর সম্পূর্ণ বক্তব্য জানতে পারবেন। এখানে ভিডিওটি দেয়া হলঃ 
ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দু’একটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ্ট হবে। কিন্তু মহানবী (সা.)ই এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। - See more at: http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=879#sthash.9vHvaagf.dpufঅন্যদিকে এটি হাস্যস্পদও। হৃদয়ঙ্গম করতে সুবিধার জন্য একটা দৃষ্টান্ত দেয়া হচ্ছে-
 
ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দু’একটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ্ট হবে। কিন্তু মহানবী (সা.)ই এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। - See more at: http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=879#sthash.9vHvaagf.dpuf  
 
(একবার ক্লিক করে ভিডিও চালু না হলে ২য় বার ক্লিক করুন)

আগের বর্ণনায় জেনেছি এবং এখন এখানে ভিডিওতে জানলাম যে, রাছুলুল্লাহ (সাঃ) উক্ত চতুষ্পদীটি রচনায় শেখ সাদীকে স্বপ্নযোগে সাহায্য করেছেন। বুঝা যায়, উক্ত চতুষ্পদীর প্রথম তিন লাইন রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর পছন্দ হওয়াতে তিনি স্বপ্নযোগে চতুর্থ লাইন রচনায় সাহায্য করেছেন -এতে সম্পূর্ণ চতুষ্পদীটি মহান গৌরব অর্জন করে। এটা বিস্ময়ের বিষয় হলো,  রাছুলুল্লাহ (সাঃ) পছন্দ ও সাহায্যধন্য সেই চতুষ্পদীতে কিছু ব্যক্তি শিরকের গন্ধ খুঁজে পেলেন! েক্ষাভের সাথেই বলতে হয়, তারা কি রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর চেয়েও বেশী তৌহিদ-শিরক বুঝেন? তারা নিঃসন্দেহে ভুল করেছেন এবং উপরে দেখিয়েছি, সেটা হাস্যস্পদ ভুল। বরং এর বিপরীতে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) -এর ‘কামালিয়াত’ (পূর্ণতা)-’র ধারণা দ্বীন ইসলামের একটি চুড়ান্ত সত্য এবং ঈমানের অনিবার্য দাবী। কলেমা তাইয়্যেবা অনুসারে একমাত্র আল্লাহ্’র গোলাম ও রাছুলুল্লাহ(সাঃ) -এর উম্মত (অনুসারী) হওয়ার অনিবার্য দাবী হলো রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত জীবনাদর্শ  পরিপূর্ণ হওয়া। এর অস্বীকৃতি বড় ধরণের শিরক এবং কুফর। আল্লাহ্ প্রদত্ত এবং  রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত পরিপূর্ণ জীবনাদর্শ প্রতিষ্ঠাই মু’মিন জীবনের চরম লক্ষ্য।  বর্তমান মুসলিম সমাজের প্রাথমিক এবং প্রধান সমস্যা হলো রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত জীবনাদর্শকে  পরিপূর্ণ হিসাবে না মানা।  আল্লাহ্ প্রদত্ত এবং  রাছুলুল্লাহ(সাঃ) প্রদর্শিত জীবনাদর্শকে পরিপূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনই সকল সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এবং তাদের দালাল রাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, পাশ্চাত্য গণতন্ত্র ইত্যাদির চরম দুশমন।  সম্মিলিত ইউরোপের ক্রুসেডের বিরুদ্ধে জেহাদে বিজয়ী বীর মুজাহিদ শেখ সাদী (রহঃ) এই আলোচ্য চতুষ্পদীতে রাছুলুল্লাহ (সাঃ)-এর কামালিয়াতের (পূর্ণতার) কথা বলে বিশ্ব-মুসলিম এবং বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের পরমপ্রিয় সত্যকেই প্রকাশ করেছেন। বিরোধিতার কারণে রাছুলুল্লাহ (সাঃ) পছন্দ ও সাহায্যধন্য আলোচ্য চতুষ্পদীর জনপ্রিয়তাই বৃদ্ধি পাবে, ইনশাল্লাহ॥ এ চতুষ্পদীর বিষয়ে অগভীর চিন্তা ও বিদ্বেষ প্রসূত  তাদের আরো অভিযোগ আছে। আলোচ্য চতুষ্পদী সম্পর্কে ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদীর উপরের আলোচনায় তার জবাব আছে।  তাই এখানে আলোচনা থেকে বিরত থাকলাম।  আল্লাহ্ সবাইকে হেদায়াত করুন। যাদের অধিক জবাব জানার প্রয়োজন তারা এই লিংকটি ব্রাউজ করুন:  'বালাগাল 'উলা বি কামালিহী' দো'আটি পাঠ করা যাবে কি? জবাব দানে: :  


                   প্রসঙ্গক্রমে দরূদের গুরুত্ব সম্পর্কে ড. মওলানা মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী বলেনঃ ..........এ আদেশ তো নবী (সা.)-এর নয়; স্বয়ং আল্লাহর। এ কারণে দরূদ শরীফ আল্লাহর নিখাদ ইবাদাত রূপে গণ্য। আমরা দরূদ পড়ছি আল্লাহর নবীর প্রতি; অথচ গণ্য-গৃহীত হচ্ছে আল্লাহর ইবাদাত হিসেবে। বিষয়টি খুবই চমৎকার। এ আদেশও কত তাৎপর্যপূর্ণ, একটু গভীর দৃষ্টি দিলেই বোধগম্য হবে। তাফসীরে কাশফুল আসরারের গ্রন্থকার বলেন, কুরআন মাজীদে দু’টি বিষয়কে আল্লাহ তা’আলা নিজে করেন, ফেরেশতারা করেন ও মুমিন মুসলমানরা করেন আর করণীয় বলে বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়া নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত বা অন্য কোন আমলের ক্ষেত্রে এমন নিয়মের কথা উলেখ নাই। এর একটি হল আল্লাহর তাওহীদের সাক্ষ্য, অপরটি রাসূলে পাকের প্রতি দরূদ। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন :
আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ (উপাস্য ও প্রভু) নেই। আর ফেরেশতারাও একই সাক্ষ্য দিচ্ছে এবং ন্যায়বিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত জ্ঞানী ব্যক্তিরাও এই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
আল্লাহর তাওহীদকে স্বীকার করেই আমরা মুসলমান। সেই তাওহীদের সাক্ষ্যের ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহ ও ফেরেশতাকুল শামিল থাকা নিশ্চয়ই এর অতুলনীয় গুরুত্বের পরিচায়ক। অনুরূপ নবীজির প্রতি সালাত ও সালামের বেলায় কুরআন মাজীদের ভাষ্য :
নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাকুল সালাত পাঠায় নবীর ওপর। কাজেই হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার ওপর যথাযোগ্য মর্যাদায় সালাত পাঠাও, আর সালাম জানাও।
এই নির্দেশের প্রতিটি অক্ষর ও বর্ণনাশৈলী নিয়ে চিন্তা করলে অবাক হতে হয়। আল্লাহর নবী এসেছেন, তাঁকে দেখে দেখে যেন মানুষ অনুসরণ করে। জীবন সুন্দর হয় ও পরকালীন জীবনে সাফল্য আসে। এখানে দরূদ.তারিফ বা মহববতের এত তাগাদা কেন-প্রশ্ন আসতে পারে। আসলে সেই আনুগত্য ও অনুসরণের অনুভূতি তাৎপর্যময় হওয়ার জন্যই প্রয়োজন তাঁর প্রতি গভীর ভালবাসা পোষণ করা, তাঁর তারিফ করা ও সকাল-সন্ধ্যা বেশি বেশি দরূদ শরীফ পড়া। আয়াতের শেষে ‘তাসলীমা’ শব্দটি তাগিদ বুঝানোর জন্য মাফউলে মুতলাক। তার মানে যথাযোগ্য সম্মান সহকারে। কেন এই নির্দেশ? ইবনে আববাস (র) এর মতে, আল্লাহর পক্ষ হতে সালাত মানে, আল্লাহ পাক নবীজির প্রতি অহরহ রহমত নাযিল করেন ও নবীজির প্রশংসা করেন। আর ফেরেশতাদের দরূদ মানে, আল্লাহর দরবারে তারা দোয়া করেন ও মাগফিরাত কামনা করেন। মনীষী আবুল আলিয়া আরো পরিষ্কার করে বলেন, আল্লাহর দরূদ মানে ফেরেশতাদের মাঝে নবীজির প্রশংসা করা আর ফেরেশতাদের দরূদ মানে হযরতের জন্য আল্লাহর  দরবারে তাদের দোয়া। মু’মিনদের প্রতি সালাত পাঠানোর নির্দেশের তাৎপর্য হচ্ছে, তোমরা আল্লাহর  রসূলের প্রতি অফুরান রহমত নাযিলের জন্য দোয়া কর আর সালাম জানাও মানে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী নবীজির প্রতি শ্রদ্ধাভরে সালাম পাঠাও।
কাসীদায়ে বোর্দা রাসূলে পাক (সা.)-এর শানে আরবিতে আরেকটি না‘তের অনবদ্য সৃষ্টি। এ সম্পর্কিত আলোচনার জন্য অনেক দীর্ঘ সময় চাই। এই কবিতার শত শত ব্যাখ্যা ও তরজমা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আমার কাছে ফারসি কবিতা ও পদ্যে অনুবাদের একটি কপি আছে কুর্দিস্থান নিবাসী তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়য়ের একজন প্রফেসরের লেখা। এর ভূমিকায় তিনি কিছু মূল্যবান কথা বলেছেন। তন্মধ্যে একটি কথা হচ্ছে, মুসলমানদের প্রতি তথা গোটা বিশ্ববাসীর প্রতি হযরতের অনুগ্রহ, দয়া ও অবদান অপরিসীম। তাঁর উসিলাতে আমরা আল্লাহকে চিনেছি। সত্যের পথ পেয়েছি। পশুত্বের জীবন থেকে মনুষ্যত্বের জীবনের সন্ধান পেয়েছি। বেহেশতের সুসংবাদ পেয়েছি। দোযখ থেকে বাঁচার পথ ও তাগিদ পেয়েছি। তার বিনিময়ে আমরা হযরতকে কী দিতে পারি, কী দেয়া উচিত? তিনি বলেন : উম্মতের পক্ষে যেটুকু দেয়া সম্ভব ও উচিত তা হল, অহরহ সালাত ও সালাম। শেখ সা’দীর লেখা ঐ বয়েতটিতেও সেই তাগাদার অনুরনণ হয়েছে। তাঁর বংশধরের প্রতি দরূদ পাঠের যুক্তি বুঝতে হলে আমরা যে নামাযের শেষ  বৈঠকে  ‘ওয়াআলা আলে মুহাম্মদ’ (মুহাম্মদের বংশধরের উপর দরূদ) পড়ি তার তাৎপর্য বুঝতে হবে।” (www.mashikdeendunia.com)
                আলোচ্য চতুষ্পদীটির প্রথম চার লাইনের পরে আরো কিছু লাইন একসূত্রে পাওয়া যায়, সেগুলো হল: “বালাগাল উলা বে-কামালিহী / কাশাফাদ- দোজা বে-জামালিহি / হাসুনাত জামিউ খেসালিহী / সাল্লু আলাইহে ওয়ালিহি। / খাসাফাল কামারু লে-জামালিহি /  মুলিয়াল খালাউ বে-খবরিহি। / নাত্বাকাল হাজারু বে-জালালিহি / মাসাগা জা'কাল লে-গাইরিহি / নুসিখাল মিলালু বে-জুহুরিহী / মাসাবাশ-শিবাহু বে-কায়ানিহি” (http://www.chandpur-kantho.com) এর আরো লাইন আছে কিনা জানিনা, কেউ জানলে এই ই-মেইল এড্রেসে ই-মেইল করে জানালে কৃতজ্ঞ থাকবো: sohelict@gmail.com
                      শেখ সাদী (রহঃ)-এর আলোচ্য চতুষ্পদী অবলম্বনে সারা পৃথিবীতে নানা ভাষায় অনেক না'তে রাছুল রচিত হয়েছে। বাংলাদেশেও হয়েছে। এর একটি হল:  বালাগাল উলা বি কামালিহি / কাশাফুদ্দুজা বি জামালিহি / হাসুনাত জামিউ খিসলিহি / সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহি।। //// তুমি এলে তাই মরুর বুকে ফুটলো যে ফুল, / উঠলো গেয়ে বাগে বুলবুল। / খেজুর বিথিকায় পিউপাপিয়া / থেমে থেমে উঠলো ডাকি।। //// পুরানো রবি আর উঠলোনা সেদিন লজ্জা পেয়ে, / তোমার আলোয় ধরা গেল গো ছেয়ে। / গ্রহ চাঁদ সিতারা উথলে উঠে / তব পায়ে পড়ল লুটি।কথা ও সুরঃ আব্দুস শাকুর তুহিন এরূপ একটি সুন্দর না'তে রাছুলের ভিডিও দেখি এখানেঃ
                    আল্লাহ আমাদের আলোচ্য দরূদসহ অন্যান্য দরূদের মাধ্যমে সার্বিক কল্যাণলাভের এবং রাছুলুল্লাহ (সাঃ) প্রদর্শিত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধানের অনুসরণ, প্রচার ও প্রতিষ্ঠার তৌফিক দান করুন, আমীন।

..................................................................................................................

এথানে এসম্পর্কে আরো ভিডিও দেখুন প্লীজ:

বালাগাল উলা বিকামালিহী - আপত্তির জবাব

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য