Wednesday, September 11, 2013

অলৌকিক রক্ষা-ব্যবস্থাই কাবার শ্রেষ্ঠতম মিরাকল

অলৌকিক রক্ষা-ব্যবস্থাই কাবার শ্রেষ্ঠতম মিরাকল



আবরাহার হস্তী/হাতি বাহিনীর কাহিনী(সূরা ফীলের কাহিনী অবলম্বনে)

সূরা ফীল একটি প্রাথমিক মক্কী সূরা, যার সময়কাল হচ্ছে শেষ নবী (সা) জন্মগ্রহণের বছর অর্থাৎ ৫৭০ খৃষ্টাব্দ। ৫২৫ খৃষ্টাব্দে আবেসিনিয়ার খৃষ্টান হাবশী নৃপতি ইয়েমেন জয় করেন। এদিকে আবরাহা ছিল হাবশার আদুলিস বন্দরের একজন গ্রীক ব্যবসায়ীর ক্রীতদাস। নিজের বুদ্ধিমত্তার জোরে সে ইয়ামন দখলকারী হাবশী সেনাদলে ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টিতে সক্ষম হয়। হাবশা সম্রাট তাকে দমন করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠায় কিন্তু এই সেনাদল হয় তার পক্ষে যোগ দেয় অথবা সে এই সেনাদলকে পরাজিত করে অবশেষে হাবশা সম্রাটের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী তাকে ইয়ামনে নিজের গভর্ণর হিসেবে স্বীকার করে নেয়।( গ্রীক ঐতিহাসিকগণ তার নাম বলেছেন আবরামিস ( Abrames) এবং সুরিয়ানী ঐতিহাসিকগণ তাকে আবরাহাম ( Abraham ) নামে উল্লেখ করেছেন। আবরাহা সম্ভবত এরই হাবশী উচ্চারণ কারণ আরবীতে তো এর উচ্চারণ ইবরাহীম। )

ব্যক্তি ধীরে ইয়ামনের স্বাধীন বাদশাহ হয়ে বসে তবে নামকাওয়াস্তে হাবশা সম্রাটের প্রাধান্যের স্বীকতি দিয়ে রেখেছিল এবং নিজের নামের সাথে সম্রাট প্রতিনিধি লিখতো। তার প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেশী অনেক বেড়ে গিয়েছিল একটি ব্যাপার থেকে সম্পর্কে অনুমান করা যেতে পারে। ৫৪৩ খৃষ্টাব্দে সদ্দে মাআরিব -- এর সংস্কার কাজ শেষ করে সে একটি বিরাট উৎসবের আয়োজন করে। এই উৎসবে রোমের কাইজার , ইরানের বাদশাহ , হীরার বাদশাহ এবং গাসসানের বাদাশাহর প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করে। সদ্দে মাআরিবে আবরাহা স্থাপিত শিলালিপিতে সম্পর্কিত পূর্ণ আলোচনা সংরক্ষিত রয়েছে। এই শিলালিপি আজো অক্ষুন্ন রয়েছে। গ্লীসার (Glaser) তার গ্রন্থে এটি উদ্ধৃত করেছেন।
 
এই অভিযান শুরুর গোড়াতেই রোমান সম্রাজ্য তার মিত্র হাবশী খৃষ্টানদের সামনে যে উদ্দেশ্য বর্তমান ছিল ইয়ামনে নিজের কর্তৃত্ব পুরোপুরি মজবুত করার পর আবরাহা সেই উদ্দেশ্য সফল করার কাজে আত্মনিয়োগ করে। এই উদ্দেশ্য ছিল , একদিকে আরবে খৃষ্ট ধর্ম প্রচার করা এবং অন্যদিকে আরবদের মাধ্যমে রোম সম্রাজ্যে প্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে যে ব্যবসা চলতো তাকে পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়ে আসে। ইরানের সাসানী সাম্রাজ্যের সাথে রোমানদের কর্তৃত্বের দ্বন্দের ফলে প্রাচ্য দেশে রোমানদের ব্যবসার অন্যান্য সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায়। কারণে এর প্রয়োজন আরো বেশী বেড়ে যায়।
 
উদ্দেশ্যে আবরাহা ইয়ামনের রাজধানীসানআ একটি বিশাল গীর্জা নির্মাণ করে আরব ঐতিহাসিকগণ একেআল কালীসবাআল কুল্লাইসনামে উল্লেখ করেছেন। একটি গ্রীক Ekklesia শব্দের আরবীকরণ মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনা মতে একাজটি সম্পন্ন করার পর সে হাবশার বাদশাহকে লিখে জানায় , আমি আরবদের হজ্জকে মক্কার কাবার পরিবর্তে সানআর গীর্জার দিকে ফিরিয়ে না দিয়ে ক্ষান্ত হবো না। * ইবনে কাসীর লিখেছেন , সে ইয়ামনে প্রকাশ্যে নিজের এই সংকল্পের কথা প্রকাশ করে এবং চতুর্দিকে ঘোষণা করে দেয়। আমাদের মতে তার ধরনের কার্যকলাপের উদ্দেশ্য ছিল এই যে , এর ফলে আরবরা ক্রুদ্ধ হয়ে এমন কোন কাজ করে বসবে যাকে বাহানা বানিয়ে সে মক্কা আক্রমণ করে কাবাঘর ধবংস করে দেবার সুযোগ লাভ করবে। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন , তার ধরনের ঘোষণায় ক্রুদ্ধ হয়ে জনৈক আরব কোন প্রকারে তার গীর্জার মধ্যে প্রবেশ করে সেখানে মল ত্যাগ করে। ইবনে কাসীর বলেন , কাজটি করেছিল একজন কুরাইশী অন্যদিকে মুকাতিল ইবনে সুলাইমানের বর্ণনা মতে , কয়েকজন কুরাইশ যুবক গিয়ে সেই গীর্জার আগুন লাগিয়ে দেয়। এর মধ্য থেকে যে কোন একটি ঘটনাই যদি সত্যি ঘটে থাকে তাহলে এতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কারণ আবরাহার ঘোষণাটি ছিল নিশ্চিতভাবে অত্যন্ত উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কারণে প্রাচীন জাহেলী যুগের কোন আরব বা কুরাইশীর অথবা কায়েকজন কুরাইশী যুবকের পক্ষে উত্তেজিত হয়ে গীর্জাকে নাপাক করা অথবা তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়া কোন অস্বাভাবিক বা দুর্বোধ্য ব্যাপার ছিল না। কিন্তু আবরাহার নিজের পক্ষেও নিজের কোন লোক লাগিয়ে গোপনে গোপনে এই ধরনের কোন কাণ্ড করে ফেলাটাও অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হয় না। কারণ সে এভাবে মক্কা আক্রমণ করার বাহানা সৃষ্টি করতে এবং কুরাইশদেরকে ধবংস সমগ্র আরববাসীকে ভীত - সন্ত্রন্ত করে দিয়ে নিজের উভয় উদ্দেশ্যে সফলকাম হতে পারবে বলে মনে করছিল। মোটকথা দুটি অবস্থার মধ্য থেকে যেকোন একটিই সঠিক হোক না কেন , আবরাহার কাছে যখন রিপোর্ট পৌঁছল যে , কাবার ভক্ত অনুরক্তরা তার গীর্জার অবমাননা করেছে তখন সে কসম খেয়ে বসে , কাবাকে গুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে না দেয়া পর্যন্ত আমি স্থির হয়ে বসবো না।
* ইয়ামনের ওপর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব লাভ করার পর খৃষ্টানরা মক্কার কাবাঘরের মোকাবিলায় দ্বিতীয় একটি কাবা তৈরি করার এবং সমগ্র আরবে তাকে কেন্দ্রীয় মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার জন্য অনবরত প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিল উদ্দেশ্যে তারা নারজরানেও একটি কাবা নির্মাণ করেছিল। সূরা বুরুজের টীকায় এর আলোচনা এসেছে।
তারপর ৫৭০ বা ৫৭১ খৃষ্টাব্দে সে ৬০ হাজার পদাতিক , ১৩ টি হাতি ( অন্য বর্ণনা মতে টি হাতি ) সহকারে মক্কার পথে রওয়ানা হয়। পথে প্রথমে যু- নফর নামক ইয়ামনের একজন সরদার আরবদের একটি সেনাদল সংগ্রহ করে তাকে বাধা দেয়। কিন্তু যুদ্ধে যে পরাজিত ধৃত হয়। তারপর খাশআম এলাকায় নুফাইল ইবনে হাবীব খাশআমী তার গোত্রের লোকদের নিয়ে তার পথ রোধ করে। কিন্তু সেও পরাজিত গ্রেফতার হয়ে যায় সে নিজের প্রাণ বাঁচাবার জন্য আবরাহার সেনাদলের পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব গ্রহণ করে। সেনাদল তায়েফের নিকটবর্তী হলে বনু সকীফ অনুভব করে এত বড় শক্তির মোকাবিলা করার ক্ষমতা তাদের নেই এবং এই সংগে তারা আশংকাও করতে থাকে যে , হয়তো তাদের লাত বেতার মন্দিরও তারা ভেঙে ফেলবে। ফলে তাদের সরদার মাসউদ একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আবরাহার সাথে সাক্ষাত করে। তারা তাকে বলে আপনি যে উপাসনালয়টি ভাঙতে এসেছেন আমাদের মন্দিরটি সে উপাসনালয় নয়। সেটি মক্কায় অবস্থিত কাজেই আপনি আমাদেরটায় হাত দেবেন না। আমরা মক্কার পথ দেখাবার জন্য আপানাকে পথপ্রদর্শক সংগ্রহ করে দিচ্ছি। আবরাহা তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করে। ফলে বনু সাকীফ আবু রিগাল নামাক এক ব্যক্তি তখন আল মাগাম্মাস বা আল মুগাম্মিস নামক স্থানে পৌঁছে আবু রিগাল মারা যায়। আরবরা দীর্ঘকাল পর্যন্ত তার কবরে পাথর মেরে এসেছে। বনী সাকীফকেও তারা বছরের পর বছর ধরে এই বলে ধিক্কার দিয়ে এসেছে। ----- তোমরা লাতের মন্দির বাঁচাতে গিয়ে আল্লাহর ঘরের ওপর আক্রমণকারীদের সাথে সহযোগিতা করেছো
মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাকের বর্ণনা মতে , আল মাগাম্মেস থেকে আবরাহা তার অগ্রবাহিনীকে সামনের দিকে এগিয়ে দেয় তারা তিহামার অধিবাসীদের কুরাইশদের উট , ছাগল , ভেড়া ইত্যাদি বহু পালিত পশু লুট করে নিয়ে যায়। এর মধ্যে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাদা আবদুল মুত্তালিবেরও দুশো উট ছিল। এরপর সে মক্কাবাসীদের কাছে নিজের একজন দূতকে পাঠায়। তার মাধ্যমে মক্কাবাসীদের কাছে এই মর্মে বাণী পাঠায় : আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে আসিনি। আমি এসেছি শুধুমাত্র এই ঘরটি ( কাবা ) ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে যদি তোমরা যুদ্ধ না করো তাহলে তোমাদের প্রাণ ধন - সম্পত্তির কোন ক্ষতি আমি করবো না। তাছাড়া তার এক দুতকেও মক্কাবাসীদের কাছে পাঠায়। মক্কাবাসীরা যদি তার সাথে কথা বলতে চায় তাহলে তাদের সরদারকে তার কাছে নিয়ে আসার নির্দেশ দেয়। আবদুল মুত্তালিব তখন ছিলেন মক্কার সবচেয়ে বড় সরদার। দূত তাঁর সাথে সাক্ষাত করে আবরাহার পয়গাম তাঁর কাছে পৌঁছিয়ে দেয়। তিনি বলেন , আবরাহার সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের নেই। এটা আল্লাহর ঘর তিনি চাইলে তাঁর ঘর রক্ষা করবেন। দূত বলে , আপনি আমার সাথে আবরাহার কাছে চলুন। তিনি সম্মত হন এবং দূতের সাথে আবরাহার কাছে যান। তিনি এতই সুশ্রী , আকর্ষণীয় প্রতাপশালী ব্যক্তিত্ব ছিলেন যে , আবরাহা তাকে দেখে অত্যন্ত প্রভাবিত হয়ে পড়ে। সে সিংহাসন থেকে নেমে এসে নিজে তাঁর কাছে বসে পড়ে। সে তাঁকে জিজ্ঞেস করে , আপনি কি চান ? তিনি বলেন , আমার যে উটগুলো ধরে নেয়া হয়েছে সেগুলো আমাকে ফেরত দেয়া হোক। আবরাহা বলল , আপনাকে দেখে তো আমি বড়ই প্রভাবিত হয়েছিলাম। কিন্তু আপনি নিজের উটের দাবী জানাচ্ছেন , অথচ এই যে ঘরটা আপনার আপনার পূর্বপুরুষদের ধর্মের কেন্দ্র সে সম্পর্কে কিছুই বলছেন না , আপনার বক্তব্য আপনাকে আমার দৃষ্টিতে মর্যাদাহীন করে দিয়েছে। তিনি বলেন , আমি তো কেবল আমার উটের মালিক এবং সেগুলোর জন্য আপনার কাছে আবেদন জানাচ্ছি আর এই ঘর। এর একজন রব , মালিক প্রভু আছেন তিনি নিজেই এর হেফাজত করবেন। আবরাহা জবাব দেয় , তিনি একে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আবদুল মুত্তালিব বলেন , ব্যাপারে আপনি জানেন তিনি জানেন একথা বলে তিনি সেখান থেকে উঠে পড়েন আবরাহা তাঁকে তাঁর উটগুলো ফিরিয়ে দেয়।
ইবনে আব্বাস (রা) ভিন্ন ধরনের বর্ণনা পেশ করেছেন। তাঁর বর্ণনায় উট দাবীর কোন কথা নেই। আবদ ইবনে হুমাইদ , ইবনুল মুনযির , ইবনে মারদুইয়া , হাকেম , আবু নুআইম বাইহাকী তাঁর থেকে যে ঘটনা বর্ণনা করেছেন তাতে তিনি বলেন , আবরাহা আসসিফাই ( আরাফাত তায়েফের পাহাড়গুলোর মধ্যে হারম শরীফের সীমানার কাছাকাছি একটি স্থান ) পৌঁছে গেলে আবদুল মুত্তালিব নিজেই তার কাছে যান এবং তাকে বলেন , আপনার এখানে আসার কি প্রয়োজন ছিল ? আপনার কোন জিনিসের প্রয়োজন থাকলে আমাদের কাছে বলে পাঠাতেন। আমরা নিজেরাই সে জিনিস নিয়ে আপনার কাছে পৌঁছে যেতাম। জবাবে সে বলে , আমি শুনেছি , এটি শান্তি নিরাপত্তার ঘর। আমি এর শান্তি নিরাপত্তা খতম করতে এসেছি। আবদুল মুত্তালিব বলেন , এটি আল্লাহর ঘর। আজ পর্যন্ত তিনি কাউকে এর ওপর চেপে বসতে দেননি। আবরাহা জবাব দেয় , আমি একে বিধ্বস্ত না করে এখান থেকে সরে যাবো না।আবদুল মুত্তালিব বলেন, আপনি যা কিছু চান আমাদের কাছ থেকে নিয়ে চলে যান কিন্তু আবরাহা অস্বীকার করে আবদুল মুত্তালিবকে পেছনে রেখে নিজের সেনাবাহিনী নিয়ে সে সামনে দিকে এগিয়ে যায়।
উভয় বর্ণনার বিভিন্নতাকে যদি আমরা যথাস্থানে রেখে দিই এবং এদের মধ্য থেকে একটিকে অন্যটির ওপর প্রাধান্য না দিই তাহলে যে ঘটনাটিই ঘটুক না কেন আমাদের কাছে একটি জিনিস অত্যন্ত সুস্পষ্ট সেটি হচ্ছে , মক্কা তার চারপাশের গোত্রগুলো এতবড় সেনাদলের সাথে যুদ্ধ করে কাবাকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখতো না। কাজেই একথা সহজেই অনুধাবন করা যায় যে , কুরাইশরা তাদেরকে বাধা দেবার চেষ্টাই করেনি। কুরাইশরা তো আহযাবের যুদ্ধের সময় মুশরিক ইহুদি গোত্রগুলোকে সাথে নিয়ে বড় জোর দশ বারো হাজার সৈন্য সংগ্রত করতে পেরেছিল। কাজেই তারা ৬০ হাজার সৈন্যের মোকাবিলা করতো কিভাবে ?
মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেন , আবরাহার সেনাদলের কাছ থেকে ফিরে এসে আবদুল মুত্তালিব কুরাইশদেরকে বলেন , নিজেদের পরিবার পরিজনদের নিয়ে পাহাড়ের ওপর চলে যাও , এভাবে তারা ব্যাপক গণহত্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। তারপর তিনি কুরাইশদের কয়েকজন সরদার হারম শরীফে হাযির হয়ে যান। তারা কাবার দরজার কড়া ধরে আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতে থাকেন যে , তিনি যেন তাঁর ঘর তাঁর কাদেমদের হেফাজত করেন। সে সময় কাবা ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। কিন্তু এই সংকটকালে তারা সবাই এই মূর্তিগুলোর কথা ভুলে যায়। তারা একমাত্র আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার জন্য হাত ওঠায় ইতিহাসের বইগুলোতে তাদের প্রার্থনা বাণী উদ্ধৃত হয়েছে তার মধ্যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারোর নাম পর্যন্ত পাওয়া যায় না। ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে আবদুল মুত্তালিবের নিম্নোক্ত কবিতাসমূহ উদ্ধৃত করেছেন :
 “ হে আল্লাহ ! বান্দা নিজের ঘর রক্ষা করে তুমিও তোমার ঘর রক্ষা করো।
 “ আগামীকাল তাদের ক্রুশ তাদের কৌশল যেন তোমার কৌশলের ওপর বিজয় লাভ না করে
 “ যদি তুমি ছেড়ে দিতে চাও তাদেরকে আমাদের কিবলাহকে তাহলে তাই করো যা তুমি চাও।
সুহাইলীরওযুল উনুফগ্রন্থে প্রসংগে নিম্নোক্ত কবিতাও উদ্ধৃত করেছেন :
 “ ক্রুশের পরিজন তার পূজারীদের মোকাবিলায় আজ নিজের পরিজনদেরকে সাহায্য করো।
আবদুল মুত্তালিব দোয়া করতে করতে যে , কবিতাটি পড়েছিলেন ইবনে জারীর সেটিও উদ্ধৃত করেছেন। সেটি হচ্ছে :
 “ হে আমার রব ! তাদের মোকাবিলায়
তুমি ছাড়া কারো প্রতি আমার আশা নেই,
হে আমার রব ! তাদের হাত থেকে
তোমার হারমের হেফাজত করো
এই ঘরের শত্রু তোমার শত্রু ,
তোমার জনপদ ধবংস করা থেকে
তাদের বিরত রাখো।

দোয়া করার পর আবদুল মুত্তালিব তার সাথীরাও পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন। পরে দিন আবরাহা মক্কায় প্রবশে করার জন্য এগিয়ে যায়। কিন্তু তার বিশেষ হাতী মাহমুদ ছিল সবার আগে , সে হঠাৎ বসে পড়ে। কুড়ালের বাঁট দিয়ে তার গায়ে অনেকক্ষণ আঘাত করা হয় তারপর বারবার অংকুশাঘাত করতে করতে আহত করে ফেলা হয়। কিন্তু এত বেশী মারপিট নির্যাতনের পরেও সে একটুও নড়ে না। তাকে উত্তর , দক্ষিণ পূর্ব দিকে মূখ করে চালাবরা চেষ্টা করলে সে ছুটতে থাকে কিন্তু মক্কার দিকে মুখ ফিরিয়ে দিলে সংগে সংগেই গ্যাট হয়ে বসে পড়ে। কোন রকমেই তাকে আর একটুও নড়ানো যায় না।
সময় ঝাঁকে ঝাকে পাখিরা ঠোঁটে পাঞ্জার পাথর কণা নিয়ে উড়ে আসে তারা সেনাদলের ওপর পাথর বর্ষণ করতে থাকে। যার ওপর পাথর কণা পড়তো তার দেহ সংগে সংগে গলে যেতে থাকতো। মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক ইকারামার বর্ণনা মতে, সেটা ছিল বসন্ত রোগ এবং আরব দেশে সর্বপ্রথম বছরই বসন্ত দেখা যায়। ইবনে আব্বাসের (রা) বর্ণনা মতে যার ওপরই পাথর কণা পড়তো তার সারা গায়ে ভীষণ চুলকানি শুরু হতো এবং চুলকাতে চূলকাতে চামড়া ছিঁড়ে গোশত রক্ত পানির মতো ঝরতে থাকতো এবং হাড় বের হয়ে পড়তো। আবরাহা নিজে এই অবস্থার সম্মুখীন হয়। তার শরীর টুকরো টুকরো হয়ে খসে পড়তো এবং যেখান থেকে এক টুকরো গোশত খসে পড়তো সেখান থেকে রক্ত পুঁজ ঝরে পড়তে থাকতো বিশৃংখলা হুড়োহুড়ি ছুটাছুটির মধ্যে তারা ইয়ামনের দিকে পালাতে শুরু করে। খাশআম এলাকা থেকে যে নুফাইল ইবনে হাবীব খাশআমীকে তারা পথপ্রদর্শক হিসেবে নিয়ে আসে তাকে খুঁজে পেয়ে সামনে নিয়ে আসা হয় এবং তাকে ফিরে যাবার পথ দেখিয়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু সে সরাসরি অস্বীকার করে বসে সে বলে :
 “এখন পালাবার জায়গা কোথায়
যখন আল্লাহ নিজেই করছেন পশ্চাদ্ধাবন ?
আর নাককাটা আবরাহা পরাজিত
সে বিজয়ী নয়।

এই পলায়ন তৎপরতার মধ্যে লোকেরা পথে ঘাটে এখানে সেখানে পড়ে মরতে থাকে। আতা ইবনে ইয়াসার বর্ণনা করেছেন তখনই এক সাথে সবাই মারা যায়নি। বরং কিছু লোক সেখানে মারা পড়ে আর দৌড়াতে দৌড়াতে কিছু লোক পথের ওপর পড়ে যেতে থাকে এভাবে সারাটা পথে তাদের লাশ বিছিয়ে থাকে। আবরাহাও খাশআম এলাকায় পৌঁছে মারা যায়। *
* মহান আল্লাহ হাবশীদেরকে শুধূমাত্র শাস্তি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি বরং তিন চার বছরের মধ্যে ইয়ামনের ওপর থেকে হাবশী কর্তৃত্ব পুরোপুরি খতম করে দেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় , হাতির ঘটনার পর ইয়ামনে তাদের শক্তি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে ইয়ামনী সরদাররা ইরানের বাদশাহর কাছ থেকে সামরিক সাহায্য গ্রহণ করে। ছয়টি জাহাজে চড়ে ইরানের এক হাজার সৈন্য ইয়ামনে অবতরণ করে। হাবশী শাসনের অবসান ঘটাবার জন্য এক হাজার সৈন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হয়। এটা ৫৭৫ খৃষ্টাব্দের ঘটনা।
মুযদালিফা মিনার মধ্যে অবস্থিত মহাসাব উপত্যকার সন্নিকটে মুহাসসির নামক স্থানে ঘটনাটি ঘটে। ইমাম মুসলিম আবু দাউদের বর্ণনা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায় হজ্জের যে ঘটনা ইমাম জাফর সাদেক তাঁর পিতা ইমাম বাকের থেকে এবং তিনি হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ থেকে উদ্ধৃত করেছেন , তাতে তিনি বলেন : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে চলেন তখন মুহাসসির উপত্যকায় তিনি চলার গতি দ্রুত করে দেন। ইমাম নববী এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন , আসহাবে ফীলের ঘটনা এখানেই অনুষ্ঠিত হয়। তাই জায়গাটা দ্রুত অতিক্রম করে যাওয়াটাই সুন্নাত মুআত্তায় ইমাম মালিক রেওয়ায়াত করেছেন , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন মুযদালিফার সমগ্র এলাকাটাই অবস্থান স্থল। তবে মুহাসসির উপত্যকায় অবস্থান না করা উচিত ইবনে ইসহাক নুফাইল ইবনে হাবীবের যেসব কবিতা উদ্ধৃত করেছেন তাতে এই ঘটনার প্রত্যক্ষ বিবরণ এভাবে পেশ করা হয়েছে :
 “ হায় যদি তুমি দেখতে হে রুদাইনা !
তবে তুমি দেখতে পাবে না যা কিছু দেখেছি আমি
মুহাসসাব উপত্যকার কাছে।
আল্লাহ শোকর করেছি আমি
যখন দেখেছি পাখিদেরকে
শংকিত হচ্ছিলাম বুঝিবা পাথর ফেলে আমাদের ওপরও
নুফাইলের সন্ধানে ফিরছিল তাদের সবাই
আমি যেন হাবশীদের কাছে ঋণের দায়ে বাঁধা

এটা একটা মস্তবড় ঘটনা ছিল। সমগ্র আরবে ঘটনার কথা ছড়িয়ে পড়ে অনেক কবি নিয়ে কবিতা লেখেন। সমস্ত কবিতার একক বৈশিষ্ট হচ্ছে এই যে , সবখানেই একে আল্লাহর অলৌকিক ক্ষমতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। কোন একটি কবিতাতেই ইশারা - ইংগিতেই একথা বলা হয়নি যে , কাবার অভ্যন্তরে রক্ষিত যেসব মূর্তির পূজা করা হতো তাদের কারো এতে সামান্যতম হাত ছিল। উদাহরণ স্বরূপ আবদুল্লাহ ইবনে যিবারা বলেন :
 “ ষাট হাজার ছিল তারা
ফিরতে পারেনি নিজেদের স্বদেশ ভূমিতে,
আর ফেরার পরে তাদের রুগ্ন ব্যক্তি ( আবরাহা ) জীবিত থাকেনি।
এখানে তাদের পূর্বে ছিল আদ জুরহুম ,
আর আল্লাহ বান্দাদের ওপর রয়েছেন ,
তাদেরকে রেখেছেন তিনি প্রতিষ্ঠিত করে।
আবু কায়েস ইবনে আসলাত তার কবিতায় বলেন :
 “ ওঠো , তোমার রবের ইবাদাত করো ,
এবং মক্কা মিনার পাহাড়গুলোর মাঝখানে
বায়তুল্লার কোণগুলো স্পর্শ করো।
আরশবাসীদের সাহায্য যখন পৌঁছুল তোমাদের কাছে
তখন সেই বাদাশাহর সেনাবাহিনী
তাদের ফিরিয়ে দিল এমন অবস্থায় ---
তাদের কেউ পড়ে ছিল মৃত্তিকার পরে
আর কেউ ছিল প্রস্তরাঘাতে ছিন্নভিন্ন

শুধু এখানেই শেষ নয় বরং হযরত উম্মে হানী ( রা) যুবাইর ইবনুল আওয়ামের () বর্ণনা অনুযায়ী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : কুরাইশরা ১০ বছর ( অন্য রেওয়ায়াত অনুযায়ী বছর ) পর্যন্ত এক লাশরীক আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করেনি। উম্মে হানীর রেওয়ায়াতটি ইমাম বুখারী তাঁরতারীখগ্রন্থে এবং তাবারানী , হাকেম , ইবনে মারদুইয়া বাইহাকী তাদের হাদীস গ্রন্থে উদ্ধৃত করেছেন। আর তাবারানী , ইবনে মারদুইয়া ইবনে আসাকির হযরত যুবাইরের (রা) বর্ণনাটি উদ্ধৃত করেছেন খতীব বাগদাদী তার ইতিহাস গ্রন্থে হযরত ইবনুল মুসাইয়েবের যে মুরসাল রেওয়ায়াতটি উদ্ধৃত করেছেন তা থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়।
যে বছর ঘটনাটি ঘটে , আরববাসীরা সে বছরটিকেআমূল ফীল ’ ( হাতির বছর ) বলে আখ্যায়িত করে। সেই বছরেই রসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম হয়। আসহাবে ফীলের ঘটনাটি ঘটে মহররম মাসে এবং রসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম হয় রবিউল আউয়াল মাসে। বিষয়ে সকল মুহাদ্দিস ঐতিহাসিক একমত পোষণ করেন। অধিকাংশের মতে , রসূলের (সা) জন্ম হয় হাতির ঘটনার ৫০ দিন পরে
সুরা ফীলের বাংলা অনুবাদসহ তেলাওয়াতের ভিডিওটি দেখুন:


সুরা ফীলের তাফসিরের ভিডিওটি দেখুন: 
 

সুরা ফীলের তাফসিরের ভিডিওটি ডাউনলোড করার জন্য এই লিংকে ব্রাউজ করুন: সুরা ফীলের তাফসির

সুরা ফীলের তাফহীমুল কোরআনের তাফসিরটি ডাউনলোড করার জন্য এই লিংকে ব্রাউজ করুন: সুরা ফীল






Tuesday, September 10, 2013

কোরআনের ভাষ্যমতে মক্কা একটি নিরাপদ নগরী, তো সেখানে দুর্ঘটনা কেন ঘটে?

নিরাপত্তা’র ব্যখ্যায় আজো পর্যন্ত কোন তাফসীরবেত্তা এ কথা বলেন নি যে, মক্কা ও হারামের নিরাপদ হওয়ার অর্থ-‘মক্কায় মনুষ্যসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না’। বরং অন্য দশটি শহরের মতো মক্কাতেও এসব ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি কা’বাকেও স্পর্শ করতে পারে। যেমনটি ইতিপূর্বে একাধিকবার ঘটেছেও বটে। সুতরাং সেসবের সাথে কুরআনে বর্ণিত নিরাপত্তার ঘোষণার কোন সাংঘর্ষিকতা নাই।
মক্কায় কাল তুমুল বৃষ্টি হচ্ছিল, সেই সাথে বইছিল প্রচণ্ড বাতাস। এরই মাঝে ক্রেন ভেঙ্গে ঘটে গেলো মক্কার ইতিহাসের পঞ্চম বড় দূর্ঘটনা। আবরাহার হস্তি বাহিনীর আক্রমনের পর অত্যাচারী শাসক হাজ্জাজ বিন ইউসুফের যুগে মক্কায় ঘটেছিল দ্বিতীয় হতাহতের ঘটনা। যাতে হাজ্জাজের আক্রমনে একজন সাহাবীসহ বহু লোক নিহত হন। আর তৃতীয় হতাহতের ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৯ সালে- শিয়াদের বিদ্রোহের সময়। তখনও বহু মানুষ হতাহত হয়েছ। এরপর ১৯৮৯ সালে দুইটি ভয়াবহ বিস্ফোরণের ফলে মক্কায় ঘটেছিল চতুর্থতম আরেকটি বড় দুর্ঘটনা। এতে একজন নিহত ও ১৬জন আহত হন। আর পঞ্চম অথচ আকারে সবচে মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে গেলো ১১ সেপ্টেম্ব ২০১৫। যাতে এখনো পর্যন্ত ১৩২জন নিহত ও ১৮৪জন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় মুসলিম উম্মাহর প্রতিটি সদস্যের হ্রদয়ে রক্ষক্ষরণ শুরু হয়েছে, নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

আল্লাহ তাআলা কুরআনের একাধিক জায়গায় মক্কাকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কেন মক্কায় এমন একটি দুর্ঘটনা ঘটলো এবং কেন এমন হতাহতের সংবাদ এলো? সম্প্রতি ক্রেন ভেঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পর এই প্রশ্নটি হয়তো বহু মানুষের মনেই জাগ্রত হয়েছে। সুরা আলে ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন –‘যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কার হারাম) প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে’। সুরাতুল আনকাবুতের (আয়াত নং ৬৭) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘তারা কি দেখে না যে, আমি (মক্কা নগরীকে) একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়’। সুরা তীনে আল্লাহ তাআলা মক্কাকে নিরাপদ শহর হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুরা বাকারায় (আয়াত ১২৫) আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-‘আর স্মরণ করো তখনকার কথা যখন আমি এই গৃহকে (কাবা) লোকদের জন্য কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল গণ্য করেছিলাম’।
সম্প্রতি সৌদি আরবের মক্কায় ঘটে যাওয়া দূর্ঘটনাটি নিয়ে যে বা যারাই এমন প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থানে রয়েছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি, কুরআনে বর্ণিত উপরোল্লেখিত মক্কা ও মক্কার মসজিদকে ‘নিরাপদ’ বলে আখ্যায়িত করার বিখ্যাত কয়েকটি ব্যাখ্যা রয়েছে। ব্যাখ্যাগুলো নিন্মরূপ-
১. আয়াতে উল্লেখিত নিরাপত্তা বলতে জাহেলী যুগের নিরাপত্তার কথা বুঝানো হয়েছে। তখন হারামে কেউ প্রবেশ করলে আর তাকে কেউ কোন ধরণের আক্রমন করতো না। অনেকে সাধারণ অর্থে হারামে প্রবেশকারীর নিরাপদ থাকার অর্থ করেছেন। অর্থাৎ হারামকে আল্লাহ তা’আলা এতোটা মর্যাদা ও গাম্ভীর্য দান করেছেন যে, কোন খুনির কাছ থেকেও কেউ সেখানে খুনের বদলা নিয়ে নিজের হাত রক্তে রাঙ্গাতে চায় না।
২. কোন কোন তাফসীরবেত্তার মতে হারাম শরীফের নিরাপত্তার মানে হলো, মানুষের গুনাহের ফলে আল্লাহ প্রদত্ত যে আযাব-গজব নাজিল হয়ে থাকে, তা থেকে মক্কার এই মসজিদ নিরাপদ থাকবে। (এই দু’টি ব্যখ্যা ইমাম তাবারীর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।) যেমনটি (সুরাতুল বাকারা ১২৬ নং আয়াতে) ইবরাহিম [আ.] দু’আ করেছিলেন।
৩. কেয়ামতের পূর্বলগ্নে পৃথিবির কোন শহর ও জনপদ দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে না। প্রতিটি স্থানে সে হানা দিবে। কিন্তু মক্কা (এবং মদীনা) নগরীতে সে প্রবেশ করতে পারবে না। এমর্মে সহীহ বোখারী ও মুসলিমে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এর আলোকে অনেক মুফাসসির বলেন-মক্কা ও তাতে প্রবেশ কারীর নিরাপত্তা বলতে মনবিতিহাসের সবচে বড় ফিতনা দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে।
৪. অনেকের মতে, এখানে ‘সংবাদ সূচক শব্দ’ ব্যবহার করা হলেও উদ্দেশ্য নির্দেশ জারি করা। যা কুরআনের বহুল প্রচলিত ও প্রশিদ্ধ একটি পদ্ধতি। উদ্দেশ্য হলো, সাশকগণ যেন হারামে প্রবেশকারীদের কোন প্রকার অনিষ্ট সাধন না করেন, বরং তাদের নিরাপত্তা বিধান করেন। ইমাম জাসসাস সহ অনেকেই এমনটি ইঙ্গিত করেছেন।
৫. অনেকে বলেছেন, মক্কার হারামে প্রবেশকারীকে নিরাপদ বলার অর্থ হলো, সেখানে কোনরূপ দণ্ড বাস্তবায়ন চলবে না। সুতরাং সেখানে কোন খুনী বা কাফেরকে হত্যা করা যাবে না, চোরের হাত কাটা যাবে না ইত্যাদি।
৬. বিগত ৫ হাজার বছরে মক্কা কখনো বহির্শক্তি দ্বারা আক্রান্ত হয় নি। ইবরাহিম [আ.] -এর দোআর ভিত্তিতে সেই দিক থেকে (বহির্শক্তির আক্রমন ও দখল হতে) নিরাপদ রাখার অর্থও হতে পারে। সুরাতুল আনকাবুতের ৬৭ নং আয়াতে এদিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
মোদ্দাকথা হলো, নিরাপত্তা’র ব্যখ্যায় আজো পর্যন্ত কোন তাফসীরবেত্তা এ কথা বলেন নি যে, মক্কা ও হারামের নিরাপদ হওয়ার অর্থ-‘মক্কায় মনুষ্যসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না’। বরং অন্য দশটি শহরের মতো মক্কাতেও এসব ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি কা’বাকেও স্পর্শ করতে পারে। যেমনটি ইতিপূর্বে একাধিকবার ঘটেছেও বটে। সুতরাং সেসবের সাথে কুরআনে বর্ণিত নিরাপত্তার ঘোষণার কোন সাংঘর্ষিকতা নাই।
– আহমাদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ দেলোয়ার হুসাইন, ইসলামিক কালচারাল অফিস, দাম্মাম, সৌদি আরব

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য