পাখিদের উড্ডয়ন: রহস্য ও প্রজ্ঞার V
- ম্যাভেরিক
শীতের হিমেল হাওয়ায় ভেসে আসা অতিথি রাজহংস কিংবা সন্ধ্যায় নীড়ে ফেরা সরালীর
ঝাঁকে যদি কখনো তাকান, দেখতে পাবেন V আকারে এগিয়ে চলছে পাখির দল।
কেন এই V আকারে ভেসে চলা? কারণটি কি এই, পাখিরা E বা G কিংবা অন্য কোনো বর্ণ ফুটিয়ে তুলতে পারে না আকাশে!
অধিকাংশ পাখি-বিশেষজ্ঞ (ornithologist) বিশ্বাস করেন, বিন্যাসটি সুদক্ষ
উড্ডয়নের প্রয়োজনে গঠিত হয়, যদিও তারা এ ব্যাপারে অকাট্য প্রমাণ উপস্থাপন
করতে পারেননি বহুদিন। এই শতাব্দীর একেবারে শুরুতে বিজ্ঞানীদের একটি দল ছোট
বিমানের পেছন পেছন উড্ডয়নের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক ঝাঁক পেলিক্যানের উপর
গবেষণা করে দেখতে পান, V বিন্যাসে উড়ার সময় পাখির হৃদস্পন্দন, একা একা উড়ার
সময়কার হৃদস্পন্দনের চেয়ে কম থাকে। ধীরে ধীরে প্রমাণ মেলে পাখির
বায়ুগতিবিদ্যা (aerodynamics) সংক্রান্ত নানা বিস্ময়কর তথ্যের:
উড্ডয়নের জন্য ঝাঁকের একটি পাখি যখন ডানা ঝাপটায়, এর ঠিক পেছনের পাখিটির
উপর বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী ঘূর্ণাবর্ত (vortex) সৃষ্টি হয়। ঊর্ধ্বচাপের সুবিধা
কাজে লাগিয়ে পেছনের পাখিটি সামনেরটির চেয়ে একটু উপরে অবস্থান করে এবং
স্বাভাবিকের চেয়ে কম শক্তি ব্যয় করেও ভেসে থাকে। এভাবে পাখির ঝাঁকটি একা
একা উড্ডয়নে অতিক্রান্ত দূরত্বের চেয়ে ন্যূনতম ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত দূরত্ব
অতিক্রম করতে পারে!
যদি কোনো পাখি বিন্যাসের বাইরে চলে যায়, সাথে সাথে এটি বাতাসের অতিরিক্ত
টান (drag) ও বাধা অনুভব করে। পরিবর্তনটি বুঝতে পেরে পাখিটি দ্রুত বিন্যাসে
চলে আসে এবং সামনের পাখিটির কাছ থেকে সৃষ্ট উড্ডয়ন সুবিধা লাভ করে।
সামনের দলনেতা পাখিটি বাতাসের সবচেয়ে বেশি বাধা অনুভব করে, এবং ক্লান্ত হয়ে
গেলে পাখা ঝাপটানোর বেগ কমিয়ে দিয়ে এটি ঝাঁকের পেছন দিকে সরে আসতে থাকে।
পেছনের আরেকটি পাখি তখন নেতার স্থানটি গ্রহণ করে। মজার ব্যাপার হলো, V-এর দুই ডানার সবচেয়ে পেছনের পাখি দুটি আবার মাঝের
পাখিগুলির চেয়ে বেশি টান অনুভব করে, ফলে ক্লান্তি লাঘবের জন্য এদেরও নিয়মিত
স্থান পরিবর্তিত হতে থাকে। এভাবে পর্যায়ক্রমে সব পাখি ঝাঁকের মাঝখানে থেকে
সর্বোচ্চ সুবিধা লাভ করে এবং অগ্রভাগে নেতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বাধার
মুখোমুখি হয়।
V-বিন্যাস পাখিদের যোগাযোগ রক্ষার কাজটি সহজতর করে। এ বিন্যাসে পাখিরা
পরস্পরের সাথে খুব চমৎকার ঐক্ষিক যোগযোগ (visual contact) বজায় রাখতে পারে,
যা ঝাঁকটি সুসংহত, ঐক্যবদ্ধ রাখে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমার সময় এতে ঝাঁক থেকে
পাখি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কমে যায়। এ ছাড়া পেছনের পাখি
চিৎকার করে সামনের পাখিকে নিয়মিত উৎসাহ দিয়ে যায়, যাতে সামনের পাখি তার
গতিবেগ বজায় রাখে।
কোনো পাখি অসুস্থ, শিকারীর গুলিতে আহত, কিংবা খুব ক্লান্ত হয়ে বিন্যাসের
বাইরে চলে গেলে, তার সাথে আরো পাখি নেমে আসে সাহায্য ও নিরাপত্তার জন্য।
এরা অসহায় পাখিটির সাথে থেকে যায় যতক্ষণ না সে সুস্থ হয় বা মারা যায়। তারপর
তারা উড়ে মূল দলের কাছে পৌঁছে যায়, নতুবা অন্য কোনো দলের সাথে জুড়ে যায়,
কিংবা নিজেরাই নতুন বিন্যাস সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।
কত অপার রহস্য ছড়িয়ে রেখেছেন স্রষ্টা! চারপাশে বিরাজমান সহমর্মিতার কত না
নিদর্শন! পাখির কাছে বিজ্ঞান ও মানবতার কী গভীর প্রজ্ঞা!
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৯
মন্তব্য ও মন্তব্যের জবাব:
লেখাজোকা শামীম
বলেছেন:
দারুণ লাগল। দেখেছি অনেক, কিন্তু ভাবি নি কখনও। দ্যা ক্রেনস আর
ফ্লাইং সিনেমার প্রথম ও শেষ দৃশ্যে সারস পাখি ওড়ার এ রকম একটি দৃশ্য আছে।
লেখক বলেছেন: হ্যাঁ, বেশ মজার। বায়ুগতিবিজ্ঞানীরা এখন চেষ্টা করছেন
কিভাবে পাখির ঝাঁকের মতো এক ঝাঁক উড়োজাহাজের উড্ডয়নকে দক্ষ করা যায়।
কিন্তু পাখি যত দ্রুত বায়ুর সূক্ষ্ম পরিবর্তনের সাথে উড্ডয়ন অ্যাডজাস্ট
করতে পারে, তার এখনও বহু পেছনে অ্যারোডাইনামিক্স।
বিবেক সত্যি বলেছেন:
কী যে ভালো লাগলো !! +++++ পাখির উড়ার কৌশল কে আল্লাহ একটি নিদর্শন আর জ্ঞাণীদের জন্য চিন্তার খোরাক হিসেবে বলে দিয়েছেন ।
রুবাইয়াত ইসলাম সাদাত বলেছেন:
খুব খুব ভালো লাগলো পোস্ট টা পড়ে। অনেক কিছু জানলাম যা জানা ছিলোনা। আরো চাই এ ধরনের পোস্ট।
পাখিদের এই ওড়ার ব্যাপারে আরো একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানি যেটা সেটা হল পাখির ঝাঁক ওড়বার সময় ফিবোনাক্কি সিরিজ মেনে চলে। মানে প্রথমে একটি পাখি, তারপরেও একটি, এরপর দু'টি, এরপর তিনটি- এভাবে ওড়ে। "পাখির কাছে বিজ্ঞান ও মানবতার কী গভীর প্রজ্ঞা! " খুব ভালো লেগেছে কথাটা। লেখক বলেছেন: শুভেচ্ছা। খুব ভালো লাগল আপনাকে দেখে। পাখিদের ফিবোনাচি সিরিজ মেনে চলার ব্যাপারটি আসলেই খুব চমকপ্রদ। নিশ্চয়ই খুব সচেতনভাবে কাজটি করে পাখিরা।
পাখিদের এই ওড়ার ব্যাপারে আরো একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার জানি যেটা সেটা হল পাখির ঝাঁক ওড়বার সময় ফিবোনাক্কি সিরিজ মেনে চলে। মানে প্রথমে একটি পাখি, তারপরেও একটি, এরপর দু'টি, এরপর তিনটি- এভাবে ওড়ে। "পাখির কাছে বিজ্ঞান ও মানবতার কী গভীর প্রজ্ঞা! " খুব ভালো লেগেছে কথাটা। লেখক বলেছেন: শুভেচ্ছা। খুব ভালো লাগল আপনাকে দেখে। পাখিদের ফিবোনাচি সিরিজ মেনে চলার ব্যাপারটি আসলেই খুব চমকপ্রদ। নিশ্চয়ই খুব সচেতনভাবে কাজটি করে পাখিরা।
জানজাবিদ বলেছেন:
কোরআনের একটা আয়াত আছে পাখীদের ওড়ার ব্যাপারে। কেউ যদি বলতে পারেন খুশী হবো।
নাজনীন১ বলেছেন:
@ জানজাবিদ,সূরা নাহ্ল, আয়াত ৭৯ঃ
"Do they not see the birds held (flying) in the midst of the sky? None
holds them but Allah [none gave them the ability to fly but Allah].
Verily, in this are clear proofs and signs for people who believe (in
the Oneness of Allah)."
েমাহাম্মদ িমজানুর রহমান
বলেছেন:
এই জগতে 'স্রষ্টা' কত অপার রহস্য ছড়িয়ে রেখেছেন তার সবটুকু
আবিস্কার করা আসলেই মানুষের পক্ষে অসম্ভব। কি বিজ্ঞানময় আর সুনিপূন সেই
স্রষ্টা!
পাখী নিয়ে গবেষণা করেই মানুষ বিমান আবিস্কার করেছিল। পাখী নিয়ে গবেষণা করলে হয়তো আরও অবেক রহস্য রেরিয়ে আসবে। কুরআনুল কারীম পাখী নিয়ে গবেষণা করতে বলেছে: ''তারা কি লক্ষ্য করে না (গবেষণা করে না) তাদের উর্ধ্বদেশে পাখীদের প্রতি, যা পাখা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে আকাশে স্থির রাখেন (পড়ে যায় না)। তিনি সর্ব বিষয়ে দ্রষ্টা''(সূরা মূলক: আয়াত- ১৯) লেখক বলেছেন: শুভেচ্ছা। আমার ব্লগে আপনার বিচরণ আনন্দময় হোক।প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আমাদের শ্রদ্ধাশীল জ্ঞান দান করুন, যাতে সৃষ্টিজগতের প্রতি আমাদের মমতা নিরন্তর বাড়ে। আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সুখ শান্তিতে কাটুক জীবন।
পাখী নিয়ে গবেষণা করেই মানুষ বিমান আবিস্কার করেছিল। পাখী নিয়ে গবেষণা করলে হয়তো আরও অবেক রহস্য রেরিয়ে আসবে। কুরআনুল কারীম পাখী নিয়ে গবেষণা করতে বলেছে: ''তারা কি লক্ষ্য করে না (গবেষণা করে না) তাদের উর্ধ্বদেশে পাখীদের প্রতি, যা পাখা বিস্তার করে ও সংকুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই তাদেরকে আকাশে স্থির রাখেন (পড়ে যায় না)। তিনি সর্ব বিষয়ে দ্রষ্টা''(সূরা মূলক: আয়াত- ১৯) লেখক বলেছেন: শুভেচ্ছা। আমার ব্লগে আপনার বিচরণ আনন্দময় হোক।প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আমাদের শ্রদ্ধাশীল জ্ঞান দান করুন, যাতে সৃষ্টিজগতের প্রতি আমাদের মমতা নিরন্তর বাড়ে। আপনার চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সুখ শান্তিতে কাটুক জীবন।
নুভান বলেছেন: সত্যিই অসাধারন। পাখিদের এই উড্ডয়নকে পর্যাবেক্ষন করে গণিতের এক নতুন শাখার উৎপত্তি হয়েছে যার নাম PSO (Particle Swarm Optimization). ক্ল্যাসিক্যাল গানিতিক সমীকরণ সমাধানের পদ্ধতির চেয়ে এটা অনেক বেশী কার্যকর, এমন কি নিউরাল নেটওয়ার্ক এর চেয়েও, কারন এর প্রয়োগ খুব সহজ। রিসার্চ পেপারের কিছু লাইন তুলে দিলামঃ
"The birds may fly in different ways to search in the area. In the asynchronous scheme, the first bird flies a certain distance and in a certain direction based on his own experience and the known location of the best position found so far. When he is done flying, if his location is closer to the bread than the previous globally optimal position, he communicates this information to the second bird. (Otherwise, the global optimal location remains the same.) The second bird then uses this information to update his speed and position, and so on. Since in this method of searching an area the birds all update their speeds and directions at different times, it will be called asynchronous....A different method is obtained if all birds stop after flying in the same time interval, and communicate each other to get the current global best position. Once this communication is completed, the birds can update their directions and speeds based on their own history and the globally best information available, and fly again. This scheme will be called synchronous, as all of the birds update their information at the same time." রেফঃ Application of a Novel Parallel Particle Swarm Optimization tothe Design of Electromagnetic Absorbers Suomin Cui* and Daniel S. Weile লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ, নুভান ভাই, চমৎকার তথ্য দিলেন।
Source: http://www.somewhereinblog.net
Watch this Video:
Geese Fly in V Formation Why?
Comments: ksaALWAFi: There is God made that