Thursday, June 6, 2013

কুরআনে ভুল খুঁজতে গিয়ে নিজেই মুসলমান হলেন খ্রিস্টান গবেষক


অধ্যাপক ড. গ্যারি মিলার ছিলেন কানাডার সাবেক খ্রিস্টধর্ম প্রচারক। তিনি পবিত্র কুরআনের মধ্যে ভুল খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। কুরআনের ভুল বের করে যাতে ইসলাম ও কুরআন বিরোধী প্রচারণা চালানো সহজ হয় সেজন্য তিনি এ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কুরআন পড়ার পর তার ভিতরে অদ্ভুত পরিবর্তন আসে। ফলে নিজেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মুসলমান হন। ইসলাম গ্রহণের পর তার দেয়া হয়েছে আবদুল আহাদ উমার।
অধ্যাপক ড. গ্যারি মিলার বলেন, আমি একদিন কুরআন সংগ্রহ করে তা পড়া শুরু করলাম। প্রথমে ভেবেছিলাম কুরআন নাযিল হয়েছিল আরবের মরুচারীদের মধ্যে। তাই এতে নিশ্চয় মরুভূমি সম্পর্কে কথা থাকবে। কুরআন নাযিল হয়েছিল ১৪০০ বছর আগে। তাই খুব সহজেই এতে অনেক ভুল খুঁজে পাব ও সেসব ভুল মুসলিমদের সামনে তুলে ধরব।
কিন্তু কুরআন পড়ার পরে বুঝলাম আমার এসব ধারণা ঠিক নয়, বরং আমি অনেক আকর্ষণীয় তথ্য পেলাম। বিশেষ করে সূরা নিসার ৮২ নম্বর আয়াতটি আমাকে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত করে। সেখানে আল্লাহ বলেন, এরা কী লক্ষ্য করে না কুরআনের প্রতি? এটা যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে নাযিল হতো, তবে এতে অবশ্যই বহু বৈপরিত্য দেখা যেত’।
এরপর আরো গভীরভাবে কুরআন অধ্যয়ন করলেন গ্যারি মিলার। আর তার এই অধ্যয়নই তাকে নিয়ে গেল ইসলামের পথে। ইসলামের দোষ খুঁজতে গিয়ে তিনি হয়ে গেলেন একজন মুসলিম— তথা মহাসত্যের কাছে সমর্পিত একজন।
তিনি বলেছেন, আমি খুব বিস্মিত হয়েছি যে কুরআনে ঈসার (আ.) মাতা মারিয়ামের নামে একটি বড় পরিপূর্ণ সূরা রয়েছে। আর এ সূরায় তার এত ব্যাপক প্রশংসা ও সম্মান করা হয়েছে যে এত প্রশংসা বাইবেলেও দেখা যায় না। পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে বিশ্বনবী মুহাম্মাদ (সা.)-এর নাম মাত্র ৫ বার এসেছে।

Wednesday, June 5, 2013

ধর্ষণে শীর্ষ স্থানাধিকারী ১০ টি দেশ : নেই কোন মুসলিম দেশ

সারা বিশ্বে ক্রমেই বেড়ে চলেছে ধর্ষণ, নারী নিগ্রহের ঘটনা। নারীর সম্ভ্রম লুঠ করার প্রবণতা বাংলাদেশের মতো দেশেও হচ্ছে। তবে পশ্চিমা দেশগুলোতে ধর্ষনের সংখ্যা বেশি। ধর্ষণে শীর্ষ স্থানাধিকারী ১০টি দেশের মধ্যে নেই মুসলমান প্রধান দেশ। প্রতিবেশি দেশ ভারতের স্থান পঞ্চম।
ধর্ষনের চিত্র বলছে এই অপরাধ সারা বিশ্বেই ক্রমবর্ধমান। কঠোর থেকে কঠোরতর আইন প্রণয়ন করেও এই অপরাধকে সেভাবে ঠেকানো যাচ্ছে না। বিভিন্ন দেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা হিসাবে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড। তাও এই প্রবণতা কমেনি। ২০১২ সালে দিল্লিতে বাসের মধ্যে একটি মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা সারা বিশ্বে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল। সেই ‘নির্ভয়া কাণ্ড’ ঘটার পর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল সারা ভারতে। তা সত্ত্বেও রাজধানী দিল্লিতেই প্রতিদিন মেয়েরা ধর্ষিতা হচ্ছেন।
সারা ভারতের চিত্র কমবেশি একই রকম। এবং সারা বিশ্বের ক্ষেত্রেও তা খুব একটা আলাদা নয়। প্রতিটি দেশেই ধর্ষণ নামক মারাত্মক অপরাধ সংঘটিত হয়ে চলেছে। নিচে দেয়া হলো বিশ্বের প্রথম ১০ টি ধর্ষণপ্রবণ দেশের চিত্র।
১.মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র : বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ধনী ও শক্তিশালী দেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নারী নিরাপত্তার হার চিন্তা করার মতো বিষয়। এদেশে ধর্ষণের শিকার হওয়াদের মধ্য়ে ৯১ শতাংশ মহিলা ও বাকী ৯ শতাংশ পুরুষ।
২.যুক্তরাজ্য : ইংল্ন্ড পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশগুলির অন্যতম। অথচ সেদেশে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটে বিস্তর। তথ্য বলছে, বছরে প্রায় ৮৫ হাজার মহিলা ধর্ষিতা হন গ্রেট ব্রিটেনে। প্রতি বছর যৌন হয়রানির শিকার হন প্রায় ৪০ হাজার মহিলা।
৩.দক্ষিণ আফ্রিকা : দক্ষিণ আফ্রিকায় কমবয়সী ও শিশুকন্যার ধর্ষণের ঘটনা ঘটে সবচেয়ে বেশি। আর সেদেশে সাজাও অত্যন্ত কম। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে সাজা হয় মাত্র ২ বছরের জেল।

৪.সুইডেন : সুইডেনে প্রতি চারজনে একজন মহিলা ধর্ষণের শিকার হন। এবং প্রতিবছর ধর্ষণের সংখ্য়া হুহু করে বাড়ছে সুইডেনে।
.ভারত: বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারতে প্রতিমুহূর্তেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। নির্ভয়া কাণ্ডের পর সেভাবে কোনও প্রভাব পড়েনি সমাজজীবনে বা ধর্ষণের ঘটনাও কমার কোনও লক্ষণ চোখে পড়েনি।
৬.জার্মানি : ইউরোপের আর এক উন্নত দেশ জার্মানিতে এখনও পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনার প্রাণ হারিয়েছেন ২ লক্ষ ৪০ হাজার মানুষ।
৭.ফ্রান্স: ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সে ধর্ষণের ঘটনা অপরাধ হিসাবে গণ্য হতো না। পরে তা অপরাধের তালিকায় স্তান পেয়েছে। বছরে ৭৫ হাজারের বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ফ্রান্সে অথচ ১০ শতাংশ ঘটনারও অভিযোগ জমা পড়ে না পুলিশে।
৮.কানাডা : হাফিংটন পোস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী বছরে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ যৌন নির্যাতনের শিকার হন কানাডায়। বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে বাড়িতে চেনা পরিবেশে এবং ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিবার-বন্ধুবান্ধবরাই যৌন নির্যাতন করেন।
৯.অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়াতে ২০১২ সালের হিসাব ধরলে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মহিলা বছরে নির্যাতিতা হন।

১০.ডেনমার্ক : ডেনমার্কে ৫২ শতাংশ মহিলা যৌন নির্যাতনের শিকার হন প্রতিবছর।
সূত্র : ওয়ান ইন্ডিয়া

পবিত্র কোরআনের অনুপ্রেরণায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চায় মুসলিম মনীষিদের অবদান






Tuesday, May 14, 2013

আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি আঙুলের ছাপ

 মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

মহান আল্লাহ তাঁর অন্যান্য মাখলুকের মতো মানবজাতিকেও সৃষ্টি করেছেন। তাদের দেহেই তিনি রেখে দিয়েছেন বহু রহস্য। বলা যায়, মানুষের দেহও মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। বিশেষ করে মানুষের আঙুলের অগ্রভাবে তিনি রেখে দিয়েছেন মহা রহস্য, যা নকল করা সম্ভব নয়। তাই তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি তার আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।’ (সুরা : কিয়ামাহ, আয়াত : ৪) মহান আল্লাহ ওই আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন, মানুষের আঙুলের অগ্রভাগে তিনি সূক্ষ্ম কোনো রহস্য রেখেছেন, যা তিনি মানুষের পুনরুত্থানের সময়ও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।

বর্তমান যুগে মানুষের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বায়োমেট্রিক সিস্টেমটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মোবাইলের লক, অফিস/বাসার দরজার লকেও বায়োমেট্রিক সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে অন্য কেউ গোপনে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে না পারে। এবং বাসা ও অফিসে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে না পারে। অফিসের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের অফিস কামাই দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এই বায়োমেট্রিক সিস্টেম। ব্যাংকের টাকা উত্তোলন করতেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে বায়োমেট্রিক সিস্টেম। সরকারি ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও সিম কিনতে গেলেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাতের আঙুলের ছাপ দিয়ে কিনতে হয়।

কারণ মানুষের হাতের ছাপ অন্যের সঙ্গে মেলে না। ফলে এর মাধ্যমে মানুষের আইডেনটিটি যাচাই করা হয়। কেউ অপরাধ করলে এর মাধ্যমে অপরাধীও শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া মানুষের আঙুলের ছাপ থেকে বিভিন্ন আণবিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার জীবনযাত্রা সম্পর্কে, তার বসবাসরত পরিবেশ সম্পর্কে, তার কাজ, খাওয়ার অভ্যাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে সেগুলোও জানতে পারা যায়।

কোনো কিছুর ওপর মানুষের আঙুলের ছাপ পড়লে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খালি চোখে দেখা যায় না। সেটা দেখার জন্য অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের আশ্রয় নিতে হয়। প্রযুক্তির দ্রুত উৎকর্ষের যুগে এই কাজটি আরো নিখুঁত হয়ে গিয়েছে এবং আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণের পাশাপাশি আরো তথ্য এই ছাপ থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে। আঙুলের ছাপ যাচাই করার মেশিনগুলো এতই উন্নত যে সেগুলো আঙুলে রক্ত চলাচল আছে কি না, তাও যাচাই করে। ফলে অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে কারো আঙুলের ছাপ নকল করলেও তা ব্যবহার করে অন্যের তথ্য হাতানো যায় না।

বর্তমান যুগে আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে মানুষ কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছে অথবা সে কোনো ধরনের বিস্ফোরকের সংস্পর্শে আছে কি না, সেটাও নির্ণয় করা যায়। আঙুলের ছাপে পরীক্ষা চালিয়ে শরীরের অনেক রোগব্যাধিও শনাক্ত করা যায় বলে দাবি করেন কেউ কেউ।

১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট আবিষ্কার করেন, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার আঙুলের ছাপ অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে। প্রত্যেক মানুষকে শনাক্ত করার জন্য তার আঙুলের ছাপই যথেষ্ট। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন অপরাধী শনাক্ত হয়ে যায় হাতের এই আঙুলের ছাপের মাধ্যমেই। অনেকটা হাতের ছাপই বলে দেয়, অপরাধী কে হতে পারে।

মৌখিক কোনো বক্তব্য না দিয়ে শুধুমাত্র হাত থেকে তথ্য নেওয়ার ধারণাটি পবিত্র কোরআনেও এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে, যা তারা অর্জন করত।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)

বর্তমান যুগেও কেউ কোনো বিস্ফোরকের সংস্পর্শে থাকলে, কোনো কিছু হাত দিয়ে চুরি করলে, কাউকে হত্যা করলে, এমনকি অফিসে দেরি করে এলে তার মৌখিক বক্তব্য না নিয়ে তার আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করেই তার অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব। কোরআনের এই আয়াতের কিছুটা ব্যাখ্যা আমরা দুনিয়ায়ই পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ। আখিরাতে এর রূপ কতটা অত্যাধুনিক হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন।

Source: www.kalerkantho.com

Thursday, May 9, 2013

তুরস্কে ইসলামী নিদর্শন: সাহাবী আবু আয়ুব আনসারী (রাঃ)-'র সমাধিস্থল

হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রাদি)
- অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের ইতিহাসে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদি আল্লাহু তা’আলা আন্হুর শুভ নাম অবিস্মরণীয় হয়ে আছে। প্রিয়নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদীনা মনওয়ারায় হিজরত করে এসে তাঁর বাড়িতেই আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন। মদীনার প্রত্যেক বাসিন্দা চাচ্ছিলেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম তাঁর গৃহে আতিথ্য গ্রহণ করুন। তাঁদের এই আন্তরিকতা দেখে তিনি বললেন : তোমরা আমার উষ্ট্র্রী কাসওয়ার পথ ছেড়ে দাও। সে আমার অবস্থানস্থল খুঁজে বের করুক। তাই করা হলো। উষ্ট্রী কাসওয়া ধীরগতিতে হাঁটতে হাঁটতে হযরত আইয়ূব আনসারীর দোতলা বাড়ির সামনে এসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে শুয়ে পড়ল। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেই বাড়িতে উঠলেন এবং মসজিদে নববী ও তাঁর জন্য হুজরা নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এই বাড়িতেই অবস্থান করেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর পূর্ণ নাম হচ্ছে খালিদ ইবনে যায়েদ ইবনে কুলায়েব আল-খাযরাজী আন্-নাজ্জারী। আবূ আইয়ূব আনসারী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। মদীনার বনূ নাজ্জার বা নাজ্জার বংশের খাযরাজ গোত্রে তিনি ৫৯১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এই নাজ্জার বংশের এক কন্যাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লামের পরদাদা বা প্রপিতামহ হাশিম শাদি করেছিলেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলেন। কবিতা লেখার ঝোঁকও তাঁর ছিল। তিনি ২৯ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। হজ্জের মৌসুমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম মদীনার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে আকাবা নামক স্থানে রাত্রি বেলায় গোপনে মিলিত হন এবং তাঁদের নিকট ইসলামের বাণী তুলে ধরেন। তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনা যাবার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সালামকে দাওয়াত দিয়ে যান। সেই দলে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুও ছিলেন এবং মদীনায় তাঁর নিজগৃহে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে মেহমান হিসেবে পাবার খোশনসীব তিনি লাভ করেছিলেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে পরিচালিত সকল সশস্ত্র যুদ্ধে শরিক হয়েছিলেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিদায় হজ্জে অংশগ্রহণ করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পরিচালিত সকল অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত উমর ইব্ন খাত্তাব রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর খিলাফতকালে মিসরে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। হযরত আমর ইব্নুল আস রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর সেনাপতিত্বে মিসর জয়ে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর বিশেষ অবদান ছিল।
৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান ইব্নে আফফান রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর বাসভবন বিদ্রোহীরা অবরুদ্ধ করলে মদীনায় নেমে আসে অরাজক অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু খলীফার নির্দেশে মসজিদুন নববীতে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু মদীনা মনওয়ারা থেকে রাজধানী কূফা স্থানান্তরিত করেন এবং হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহ তা’আলা আন্হুকে মদীনার গবর্নর নিযুক্ত করেন। গবর্নর হিসেবে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন।
হযরত উসমান ইব্নে আফফান রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুন তাঁর বাসভবনে বিদ্রোহীদের অস্ত্রাঘাতে শহীদ হলে হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু জনগণের বিশেষ করে বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরামের অনুরোধে খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ওদিকে দামেস্কের গবর্নর হযরত আমীর মুআবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু খলীফা উসমান হত্যার বিচার চেয়ে জোরদার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটালেন। এর ফলে হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু ও হযরত মু’আবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। সংঘটিত হয় সিফফিনের যুদ্ধ। এই সুযোগে একটা চরমপন্থী বাতিল র্ফিকা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তারা আল্লাহ্র আইন ছাড়া কোন আইন মানি না সেøাগান তোলে এবং হযরত আলী, হযরত মু’আবিয়াকে কাফির বলে এঁদের হত্যা করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এরাই খারেজী। এই খারেজীদের দমন করবার জন্য হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু ইরাকের নাহারওয়ান অভিমুখে অভিযান পরিচালনা করেন। খারেজীদের সৈন্যসংখ্যা ছিল ২৫ হাজার। নাহারওয়ান খালের তীরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ খারেজীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাদের চার হাজার সৈন্য নিহত হয়। হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহুর বাহিনীতে হযরত আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু অশ্বারোহী বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে যোগদান করেন এবং বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু মুসলিম নৌবাহিনী ৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে হযরত মু’আবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর আমলে কনস্টান্টিনোপল অভিযানে গমন করেন। এই অভিযানে অশীতিপর বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু অংশগ্রহণ করেন। এই অবস্থায় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বেশ কিছুদিন রোগ ভোগের পর সেখানেই ইন্তিকাল করেন। তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পূর্বে অসিয়ত করে যান তাঁকে কনস্টান্টিনোপলেই যেন দাফন করা হয়। তাঁর সেই অসিয়ত অনুযায়ী তাঁকে কনস্টান্টিনোপলের নগর প্রাচীরের পাশে কবরস্থ করা হয়।
  কালক্রমে এই মাযার শরীফ সব ধর্মের মানুষের তীর্থস্থানে পরিণত হয়। তাঁর মাযার শরীফ থেকে আকাশ সমান আলোকিত করে একটা জ্যোতি উত্থিত হয় বলে জানা যায়। উসমানী সুলতানগণ তাঁদের অভিষেক অনুষ্ঠান এই মাযার শরীফে এসে সম্পন্ন করতেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রাদি) উচ্চশিক্ষিত ছিলেন এবং কুরআন মজীদের হাফিজ ছিলেন। হাদীস শরীফ প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ২১০। ইলমে ফিক্হেও তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল। খলীফা আবূ বকর রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু, খলীফা উমর (রাদি.) ও খলীফা উসমান (রাদি)-এর আমলে বায়তুল মাল হতে মাসিক চার হাজার দিরহাম ভাতা দেয়া হতো, হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু এই মাসিক ভাতা ২০ হাজার দিরহামে উন্নীত করেন।
ঐতিহাসিক হিট্টি হিস্ট্রি অব আরব্স গ্রন্থে লিখেছেন: In course of the siege Abu ayub died of dysentery and buried before the walls of Constantinople. His tomb soon became a shrine even for Christian Greeks, who made pilgrimages to it in time of draught to pray for rains... Thus the medina’s gentleman became a saint for three nations.
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সাঃ), সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ


ইতিহাসের এক স্বর্ণালী বিস্ময়।

হলদে ডানা

.............................................আবু আইয়ুব আনসারী রা. পৃথিবীতে বেঁচে ছিলেন অনেক দিন। আল্লাহর জমীনে তারই মনোনিত জীবন ব্যাবস্থাকে প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর ৮৬ বছরের এক বৃদ্ধের শেষ জীবনের কাহিনী পৃথিবীর সব বিপ্লবীর জন্য এক নির্বাক করা নমুনা। তখন মুয়াবিয়া রা. এর শাসনকাল।  কন্সানটিনোপল তথা তুরস্কের ইস্তাম্বুল অভিযানে শরীক হলেন ৮৬ বছরের 'তরুণ' মুজাহিদ আবু আইয়ুব আনসারী রা. । শেষ নিশ্বাস ফেলব আল্লাহর দীনের পথে এই ছিল কামনা। রাসুল স. কন্সট্যান্টিনোপল বিজয়ের যে ভবিষ্যতবানী করে যান, সেই বিজয় অভিযানের একজন সঙ্গী হওয়ার সে এক প্রবল আকাঙ্খা! সৈন্যরা ঘেরাও করলো কন্সট্যান্টিনোপল। দীর্ঘ এক বছর অবরোধ চললো।এ সময় মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ আবু আইয়ুব আনসারী। শায়ীত হলেন মৃত্যু শয্যায়। ছুটে এলেন সেনাপতি। পরম শ্রদ্ধাভরে শেষ ইচ্ছা জানতে চাইলেন। আবু আইয়ুব আনসারী রা. বললেন- বলে লাভ কি, তোমরা কি তা পূরণ করবে? সেনাপতি  নাছোড়বান্দা। বললেন, কেন নয় চাচাজান- আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করবো। মুমূর্ষু মুজাহিদ বুজুর্গ সাহাবী আবেগরুদ্ধ কণ্ঠে বললেন, আমি চাই আমার মৃত্যুর পর আগামীকাল কনস্ট্যান্টিনোপলের প্রবেশ পথের ওপর আমাকে কবর দিয়ে আসবে। শেষ ইচ্ছা শুনে হতবাক সেনাপতিজানতে চাইলেন, তাঁর এই শেষ ইচ্ছার কারণ কি। আবু আইয়ুব আনসারী রা. জানালেন, আমি জানি কন্সট্যানটিনোপলে একদিন কুরআনের শাসন কায়েম হবেই, উড়বে কালেমার পতাকা, কিন্তু আমি তো তখন থাকবোনা। আমি চাই বিজয়ের দিনে বিজয়ী মুসলিম সৈনিকেরা যেন আমার কবরের ওপর দিয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে রোমান রাজধানীতে প্রবেশ করে।
এই সম্মানিত সাহাবীকে ইস্তাম্বুলে প্রবেশকারী সড়কের ওপর দাফন করা হয়। আল্লাহ তায়ালা তার এই আকাঙ্খা কবুল করে নেন। এই ঘটনার সাড়ে সাতশ বছর পর এই সড়কের উপর দিয়েই ওসমানী খলিফা দ্বিতীয় মুহাম্মদের বিজয়ী বাহিনী ইস্তাম্বুলে প্রবেশ করেছিল। সালটি ছিল ১৪৫৪ খৃষ্টাব্দ।
বর্তমান ইস্তাম্বুলের আইয়ুপ সুলতান মসজিদ টি হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. এর মাজারকে ঘিরেই। তুরস্কবাসী তাকে স্মরণ করে আইয়ুপ সুলতান নামে।

ভিডিওটি দেখুন প্লীজ:

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য