Thursday, June 6, 2013
কুরআনে ভুল খুঁজতে গিয়ে নিজেই মুসলমান হলেন খ্রিস্টান গবেষক
Wednesday, June 5, 2013
ধর্ষণে শীর্ষ স্থানাধিকারী ১০ টি দেশ : নেই কোন মুসলিম দেশ
Tuesday, May 14, 2013
আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টি আঙুলের ছাপ
মহান আল্লাহ তাঁর অন্যান্য মাখলুকের মতো মানবজাতিকেও সৃষ্টি করেছেন। তাদের দেহেই তিনি রেখে দিয়েছেন বহু রহস্য। বলা যায়, মানুষের দেহও মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শন। বিশেষ করে মানুষের আঙুলের অগ্রভাবে তিনি রেখে দিয়েছেন মহা রহস্য, যা নকল করা সম্ভব নয়। তাই তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমি তার আঙুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।’ (সুরা : কিয়ামাহ, আয়াত : ৪) মহান আল্লাহ ওই আয়াতে ইঙ্গিত করেছেন, মানুষের আঙুলের অগ্রভাগে তিনি সূক্ষ্ম কোনো রহস্য রেখেছেন, যা তিনি মানুষের পুনরুত্থানের সময়ও পুনর্বিন্যস্ত করতে সক্ষম।
বর্তমান যুগে মানুষের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য বায়োমেট্রিক সিস্টেমটি ব্যবহার করা হচ্ছে। মোবাইলের লক, অফিস/বাসার দরজার লকেও বায়োমেট্রিক সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে অন্য কেউ গোপনে মোবাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে না পারে। এবং বাসা ও অফিসে বহিরাগতরা প্রবেশ করতে না পারে। অফিসের ক্ষেত্রে কর্মচারীদের অফিস কামাই দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে এই বায়োমেট্রিক সিস্টেম। ব্যাংকের টাকা উত্তোলন করতেও অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে বায়োমেট্রিক সিস্টেম। সরকারি ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও সিম কিনতে গেলেও বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাতের আঙুলের ছাপ দিয়ে কিনতে হয়।
কারণ মানুষের হাতের ছাপ অন্যের সঙ্গে মেলে না। ফলে এর মাধ্যমে মানুষের আইডেনটিটি যাচাই করা হয়। কেউ অপরাধ করলে এর মাধ্যমে অপরাধীও শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়া মানুষের আঙুলের ছাপ থেকে বিভিন্ন আণবিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার জীবনযাত্রা সম্পর্কে, তার বসবাসরত পরিবেশ সম্পর্কে, তার কাজ, খাওয়ার অভ্যাস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা থাকলে সেগুলোও জানতে পারা যায়।
কোনো কিছুর ওপর মানুষের আঙুলের ছাপ পড়লে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খালি চোখে দেখা যায় না। সেটা দেখার জন্য অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের আশ্রয় নিতে হয়। প্রযুক্তির দ্রুত উৎকর্ষের যুগে এই কাজটি আরো নিখুঁত হয়ে গিয়েছে এবং আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণের পাশাপাশি আরো তথ্য এই ছাপ থেকে এখন পাওয়া যাচ্ছে। আঙুলের ছাপ যাচাই করার মেশিনগুলো এতই উন্নত যে সেগুলো আঙুলে রক্ত চলাচল আছে কি না, তাও যাচাই করে। ফলে অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে কারো আঙুলের ছাপ নকল করলেও তা ব্যবহার করে অন্যের তথ্য হাতানো যায় না।
বর্তমান যুগে আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করে মানুষ কী ধরনের ওষুধ ব্যবহার করছে অথবা সে কোনো ধরনের বিস্ফোরকের সংস্পর্শে আছে কি না, সেটাও নির্ণয় করা যায়। আঙুলের ছাপে পরীক্ষা চালিয়ে শরীরের অনেক রোগব্যাধিও শনাক্ত করা যায় বলে দাবি করেন কেউ কেউ।
১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডে স্যার ফ্রান্সিস গোল্ট আবিষ্কার করেন, পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যাবে না যার আঙুলের ছাপ অন্য কোনো ব্যক্তির সঙ্গে হুবহু মিলে যাবে। প্রত্যেক মানুষকে শনাক্ত করার জন্য তার আঙুলের ছাপই যথেষ্ট। বর্তমান বিশ্বে বিভিন্ন অপরাধী শনাক্ত হয়ে যায় হাতের এই আঙুলের ছাপের মাধ্যমেই। অনেকটা হাতের ছাপই বলে দেয়, অপরাধী কে হতে পারে।
মৌখিক কোনো বক্তব্য না দিয়ে শুধুমাত্র হাত থেকে তথ্য নেওয়ার ধারণাটি পবিত্র কোরআনেও এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে, যা তারা অর্জন করত।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)
বর্তমান যুগেও কেউ কোনো বিস্ফোরকের সংস্পর্শে থাকলে, কোনো কিছু হাত দিয়ে চুরি করলে, কাউকে হত্যা করলে, এমনকি অফিসে দেরি করে এলে তার মৌখিক বক্তব্য না নিয়ে তার আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করেই তার অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব। কোরআনের এই আয়াতের কিছুটা ব্যাখ্যা আমরা দুনিয়ায়ই পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ। আখিরাতে এর রূপ কতটা অত্যাধুনিক হবে, তা আল্লাহই ভালো জানেন।
Source: www.kalerkantho.com
Thursday, May 9, 2013
তুরস্কে ইসলামী নিদর্শন: সাহাবী আবু আয়ুব আনসারী (রাঃ)-'র সমাধিস্থল
- অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর পূর্ণ নাম হচ্ছে খালিদ ইবনে যায়েদ ইবনে কুলায়েব আল-খাযরাজী আন্-নাজ্জারী। আবূ আইয়ূব আনসারী নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। মদীনার বনূ নাজ্জার বা নাজ্জার বংশের খাযরাজ গোত্রে তিনি ৫৯১ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এই নাজ্জার বংশের এক কন্যাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লামের পরদাদা বা প্রপিতামহ হাশিম শাদি করেছিলেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ায় মনোযোগী ছিলেন। কবিতা লেখার ঝোঁকও তাঁর ছিল। তিনি ২৯ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। হজ্জের মৌসুমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লাম মদীনার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে আকাবা নামক স্থানে রাত্রি বেলায় গোপনে মিলিত হন এবং তাঁদের নিকট ইসলামের বাণী তুলে ধরেন। তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদীনা যাবার জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সালামকে দাওয়াত দিয়ে যান। সেই দলে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুও ছিলেন এবং মদীনায় তাঁর নিজগৃহে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে মেহমান হিসেবে পাবার খোশনসীব তিনি লাভ করেছিলেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু ’আলায়হি ওয়া সাল্লামের নেতৃত্বে পরিচালিত সকল সশস্ত্র যুদ্ধে শরিক হয়েছিলেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বিদায় হজ্জে অংশগ্রহণ করেছিলেন। খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পরিচালিত সকল অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। হযরত উমর ইব্ন খাত্তাব রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর খিলাফতকালে মিসরে ইসলামের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। হযরত আমর ইব্নুল আস রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর সেনাপতিত্বে মিসর জয়ে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর বিশেষ অবদান ছিল।
৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ইসলামের তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান ইব্নে আফফান রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর বাসভবন বিদ্রোহীরা অবরুদ্ধ করলে মদীনায় নেমে আসে অরাজক অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু খলীফার নির্দেশে মসজিদুন নববীতে ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু মদীনা মনওয়ারা থেকে রাজধানী কূফা স্থানান্তরিত করেন এবং হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহ তা’আলা আন্হুকে মদীনার গবর্নর নিযুক্ত করেন। গবর্নর হিসেবে তিনি দক্ষতার স্বাক্ষর রাখেন।
হযরত উসমান ইব্নে আফফান রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু ৬৫৬ খ্রিস্টাব্দের ১০ জুন তাঁর বাসভবনে বিদ্রোহীদের অস্ত্রাঘাতে শহীদ হলে হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু জনগণের বিশেষ করে বিশিষ্ট সাহাবায়ে কেরামের অনুরোধে খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ওদিকে দামেস্কের গবর্নর হযরত আমীর মুআবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু খলীফা উসমান হত্যার বিচার চেয়ে জোরদার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটালেন। এর ফলে হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু ও হযরত মু’আবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহুর মধ্যে চরম বিরোধ দেখা দেয়। সংঘটিত হয় সিফফিনের যুদ্ধ। এই সুযোগে একটা চরমপন্থী বাতিল র্ফিকা মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। তারা আল্লাহ্র আইন ছাড়া কোন আইন মানি না সেøাগান তোলে এবং হযরত আলী, হযরত মু’আবিয়াকে কাফির বলে এঁদের হত্যা করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। এরাই খারেজী। এই খারেজীদের দমন করবার জন্য হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু ইরাকের নাহারওয়ান অভিমুখে অভিযান পরিচালনা করেন। খারেজীদের সৈন্যসংখ্যা ছিল ২৫ হাজার। নাহারওয়ান খালের তীরে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধ খারেজীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তাদের চার হাজার সৈন্য নিহত হয়। হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহুর বাহিনীতে হযরত আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু অশ্বারোহী বাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে যোগদান করেন এবং বীরত্বের স্বাক্ষর রাখেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু মুসলিম নৌবাহিনী ৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে হযরত মু’আবিয়া রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হুর আমলে কনস্টান্টিনোপল অভিযানে গমন করেন। এই অভিযানে অশীতিপর বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু অংশগ্রহণ করেন। এই অবস্থায় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং বেশ কিছুদিন রোগ ভোগের পর সেখানেই ইন্তিকাল করেন। তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পূর্বে অসিয়ত করে যান তাঁকে কনস্টান্টিনোপলেই যেন দাফন করা হয়। তাঁর সেই অসিয়ত অনুযায়ী তাঁকে কনস্টান্টিনোপলের নগর প্রাচীরের পাশে কবরস্থ করা হয়।
কালক্রমে এই মাযার শরীফ সব ধর্মের মানুষের তীর্থস্থানে পরিণত হয়। তাঁর মাযার শরীফ থেকে আকাশ সমান আলোকিত করে একটা জ্যোতি উত্থিত হয় বলে জানা যায়। উসমানী সুলতানগণ তাঁদের অভিষেক অনুষ্ঠান এই মাযার শরীফে এসে সম্পন্ন করতেন।
হযরত আবূ আইয়ূব আনসারী (রাদি) উচ্চশিক্ষিত ছিলেন এবং কুরআন মজীদের হাফিজ ছিলেন। হাদীস শরীফ প্রসারে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ২১০। ইলমে ফিক্হেও তাঁর পাণ্ডিত্য ছিল। খলীফা আবূ বকর রাদিআল্লাহু তা’আলা আন্হু, খলীফা উমর (রাদি.) ও খলীফা উসমান (রাদি)-এর আমলে বায়তুল মাল হতে মাসিক চার হাজার দিরহাম ভাতা দেয়া হতো, হযরত আলী করমাল্লাহু ওয়াজহাহু এই মাসিক ভাতা ২০ হাজার দিরহামে উন্নীত করেন।
ঐতিহাসিক হিট্টি হিস্ট্রি অব আরব্স গ্রন্থে লিখেছেন: In course of the siege Abu ayub died of dysentery and buried before the walls of Constantinople. His tomb soon became a shrine even for Christian Greeks, who made pilgrimages to it in time of draught to pray for rains... Thus the medina’s gentleman became a saint for three nations.
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সাঃ), সাবেক পরিচালক ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
ইতিহাসের এক স্বর্ণালী বিস্ময়।
- হলদে ডানা
এই সম্মানিত সাহাবীকে ইস্তাম্বুলে প্রবেশকারী সড়কের ওপর দাফন করা হয়। আল্লাহ তায়ালা তার এই আকাঙ্খা কবুল করে নেন। এই ঘটনার সাড়ে সাতশ বছর পর এই সড়কের উপর দিয়েই ওসমানী খলিফা দ্বিতীয় মুহাম্মদের বিজয়ী বাহিনী ইস্তাম্বুলে প্রবেশ করেছিল। সালটি ছিল ১৪৫৪ খৃষ্টাব্দ।
বর্তমান ইস্তাম্বুলের আইয়ুপ সুলতান মসজিদ টি হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা. এর মাজারকে ঘিরেই। তুরস্কবাসী তাকে স্মরণ করে আইয়ুপ সুলতান নামে।