Showing posts with label Sign of Rasulullah. Show all posts
Showing posts with label Sign of Rasulullah. Show all posts

Friday, July 12, 2013

রাসূলে পাকের হস্ত চুম্বনের বিখ্যাত কারামত

রাসূলে পাকের হস্ত চুম্বনের বিখ্যাত কারামত


হযরত সাইয়্যেদ আহমদ কবীর রেফায়ী (রহ.) এর সর্বাপেক্ষা অধিক প্রসিদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ কারামত হচ্ছে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুবারক চুম্বন করা। এই সৌভাগ্য কেবলমাত্র হযরত রেফায়ী কবীরেরই হয়েছে। ইতিহাসে এ ধরনের আর একটি ঘটনাও অশ্র“ত। ঘটনার বিবরণে শেখ উমর ফারুকী বলেন, হযরত রেফায়ী কবীর রহ. পাঁচশত পঞ্চান্ন হিজরী সনে প্রথম হজ্বব্রত পালন করেন। আমিও হযরত রেফায়ী রহ. সঙ্গে ছিলাম। হজ্বব্রত পালন করেই মদীনা পাকের সফর। শাম, ইরাক, ইয়ামান, মরক্কো, হেজায, ও আরব বিশ্বের নব্বই হাজারের অধিক হাজী সাহেবান হজ্ব শেষে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনা পাকে সমবেত ছিল। হযরত রেফায়ী কবীর রহ. মদীনা পাকের এলাকায় পৌঁছেই পায়ের জুতা খুলে ফেলেন এবং আদব ও এহতেরামের সাথে অগ্রসর হন। যখন রওযা পাকের সম্মুখে হাজির হলেন তখন অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে এশকের হালতে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে এভাবে সালাম পেশ করেন :
السلام عليك يا جيدى
হে নানাজী! আপনার প্রতি সালাম! সাথে সাথে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে উত্তর দিলেন :
وعليكم السلام يا ولدى
হে আমার আওলাদ! তোমার প্রতিও আমার সালাম।
হযরত রেফায়ী রহ. উত্তর শুনে ওয়াজদে ভাবাবিষ্ট হয়ে পড়েন। তাঁর বরকতে উপস্থিত সকলেও রাসূলে পাকের সালাম শুনে সৌভাগ্যশীল হন। একটু শান্ত হয়ে হযরত রেফায়ী রহ. প্রেমের আবেগে নিম্নের কবিতা সমূহ আবৃত্তি করলেন :
فى حالة البعد كنت روحى ارسلها : تقبل الارض على وهى نائبى
وهذه دولة الاشباح حضرت : فامد ديمينك كئ تحظى بها شفتى
* দূরে অবস্থানকালে আমার রূহকে আপনার দরবারে পাঠিয়ে দিতাম, যেন সে আমার পক্ষে আপনার কদমবুসি করে যায়।
* এবার আমি স্বশরীরে আপনার মহান দরবারে হাজির হয়েছি; সুতরাং মেহেরবাণী করে আপনার হাত বাড়িয়ে দিন! যেন আমার ওষ্ঠাধর আপনার হাত মুবারক চুম্বনের সৌভাগ্য লাভে ধন্য হয়।
কবিতা পাঠের সাথে সাথে রওযা মুবারক থেকে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হস্ত মুবারক বের হয়ে আসে এবং সমস্ত মসজিদে নববী আলোকিত হয়ে যায়। আর হযরত রেফায়ী কবীর রহ. রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র হাত চুম্বন করে সৌভাগ্যশীল হন। উপস্থিত সকলেই রাসূলে পাকের হস্ত মুবারক যিয়ারত করে ধন্য হয়। হযরত শেখ হায়াত বিন কায়েস হারবুনী, শেখ আদী বিন মুসাফির, শেখ আকীল, কুতবে আলম মাহবুবে সুবহানী আব্দুল কাদের জিলানী, শেখ আহমাদুল কবী যাফরানী, শেখ আলী তাবারী, শেখ আহমাদ বিন মাহমূদী রিবযী , আমীর আসাদুদ্দীন বিন সাদী, শেখ হাসান বিন মুহাম্মাদ হুসাইনী ও শেখ আব্দুর রাযযক ওয়াসেতীও সেখানে হাজির ছিলেন, তারাও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হস্ত মুবারক যিয়ারত করে ধন্য হন।
শেখ ইজ্জুদ্দীন ফারুছী বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলমীনের আমার প্রতি বিশেষ রহমত যে, ছয়শত বাষট্টি হিজরী সনে আমার শ্রদ্ধেয় পিতা, হযরত রেফায়ী কবীর রহ. মাযার যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ফারুছ থেকে উম্মে আবীদার পথে রওনা হন, আমার বয়স তখন মাত্র আঠারো। শ্রদ্ধেয় পিতা মেহেরবাণী করে আমাকে সাথে নিলেন। তখন রেফায়ী তরীকার উত্তরাধিকারী হিসেবে ছিলেন শেখ শাসুদ্দীন মুহাম্মাদ রেফায়ী। আমরা খানকাহে পৌছলাম। প্রাথমিক সাক্ষাতের পর আমাদের থাকার জন্য খানকাহের নিকটে একটি ভিন্ন হুজরাখানা দেয়া হলো। আশে-পাশের অসংখ্য হুজরাখানা এবং লোকে লোকারণ্য। জুমার দিন বাদ নামায শেখ আহমাদ কবীর রেফায়ী রহ. এর মাযারের দরজা খুলে দেয়া হলো। লক্ষ লক্ষ লোক যিয়ারতের উদ্দেশ্যে অসম্ভব ভীড় করছে। এমন সময় শ্রদ্ধেয় পিতা আমার হাত ধরে একজন বুযুর্গের সাথে সাক্ষাত করালেন এবং দোয়ার জন্য দরখাস্ত করলেন। শ্রদ্ধেয় পিতা আমার হাত ধরে একজন বুযুর্গের সাথে সাক্ষাত করালেন এবং দোয়ার জন্য দরখাস্ত করলেন। শ্রদ্ধেয় পিতা ঐ বুযুর্গের হাত চুম্বন করলেন, আমাকেও চুম্বন করতে বললেন, সুতরাং আমিও চুম্বন করলাম। তিনি দোয়া করে চলে গেলেন। আব্বাজান আমাকে বললেন, এই বুযুর্গের নাম শেখ আহমাদ বিন মুাহমূদ রেফায়ী, যিনি হযরত রেফায়ী কবীর রহ.-এর সাথে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হস্তু মুবারকের যিয়ারত লাভ করেছেন। এর কিছুক্ষণ পর শেখ মুবারক বিন জাফর উনয়াবী, শেখ আব্দুর রহমান দাইবিনী, শেখ রমযান বিন আবদে রাব্বিহী ও শেখ আব্দুল মুহসিন ওয়াসেতী আনসারী তাশরীফ আনলেন। আব্বাজান সকলের হাত চুম্বন করলেন এবং দোয়ার দরখাস্ত করলেন। আমিও পিতার অনুসরণ করলাম। আরো অসংখ্য লোকজন তাদের হস্তু চুম্বন করেন এবং দোয়ার দরখাস্ত করেন। সকলের চেহারায় তাদের প্রতি ছল প্রাণভরা ভক্তি শ্রদ্ধা। সকলের চোখ থেকেই অশ্র“ ঝরছিল। সকলেই তাদেরকে দেখে দেখে ওয়াজদের হালতে রোদন করছি। আব্বা আমাকে বললেন, তারা সকলেই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত মুবারক যিয়ারতের সৌভাগ্য লাভ করেছে, এ কারণেই লোকেরা এশকে ব্যাকুল হয়ে ক্রন্দন করছে। এ ঘটনাকে হযরত রেফায়ী কবীরের এর কারামতের মধ্যে গণ্য করা হয়। অসংখ্য ওলামা মাশায়েখ, মুহাদ্দিসীন ও ঐতিহাসিকগণ এঘটানাকে সত্য বলে রায় দিয়েছেন। তাই এর সত্যতার প্রশ্নে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। আল্লাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, শেখ ছফেরী শেক ইজ্জুদ্দীন, ফারুছী, শেখ মুহাম্মাদ ওতবী. এবং আরো অসংখ্য উলামা মাশায়েখ বলেছেন: 
يخشى على منكر هذه القصة السعيدة سوء الخاتمة
যে ব্যক্তি এই কারামতকে অস্বীকার করবে তার অপমৃত্যুর ভয় আছে। 
আল্লামা সামেরায়ী বলেন:
قدافتى كثير من العلماء بان من ينكر هذه القصة قد ضل وغوى
অসংখ্য ওলামাদের ফাতওয়া অনুসারে এই কারামতের অস্বীকারকারী গোমরাহ এবং পথভ্রষ্ট।

Thursday, July 11, 2013

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী

মুসলিম স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন মসজিদে নববী

মসজিদে নববী মানে নবীর মসজিদ। ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনা শরিফে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। পবিত্র কাবা শরিফ মসজিদে হারামের পরেই মদিনা মসজিদের অবস্থান। মহানবীর হিজরতের আগ পর্যন্ত মদিনার নাম ছিল ইয়াসরিব। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) ইয়াসরিবের নাম পাল্টে রাখেন মদিনা। হিজরতের পর মুসলমানদের নামাজের জন্য মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কর্তৃক নির্মিত হয় মদিনা মসজিদ। ৬২২ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরের পর থেকে শুরু হয়ে ৬২৩ খ্রিস্টাব্দের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাল নির্ধারণ করা হয়।
 নির্মাণপ্রক্রিয়া
মুহাম্মদ(সা:) মদিনা মসজিদের নির্মাণের জন্য নাজ্জার গোত্রের সাহল ও সোহাইল নামক দুই জন বালকের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় জমি ক্রয় করেন। এর ক্ষুদ্র একটি অংশে বাসস্থান নির্মাণ করতঃ বাকী অংশে মদিনা মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। প্রতিটি কোণ থেকে তীর নিক্ষেপ করে যে পরিমাণ জায়গা পাওয়া গেল তা হলো একটি ক্ষেত্র। বর্গের প্রতিটি বাহুর পরিমাণ দাৎড়ালো ১০০ হাত বা ৫৬ গজ। অর্থাৎ মদিনা মসজিদের প্রাথমিক আয়তন ছিল ১০০*১০০ হাত বা ৫৬*৫৬ গজ। মসজিদের ভিত্তি ও দেয়ালের নিম্নভাগ ৩ হাত পর্যন্ত প্রস্তর নির্মিত ছিল। প্রথম পর্যায়ে মদিনা মসজিদ রৌদ্র-শুষ্ক ইট দ্বারা নির্মিত হয়। এই রৌদ্র-শুষ্ক ইট বাকী আল-খাবখাবা উপত্যাকা হতে আনিত কাদা দ্বারা তৈরি হয়েছিল। তখন মদিনা মসজিদের দেয়াল ছিল ৭ হাত উঁচু। ছাদকে শক্তিশালী ও মজবুত রাখার জন্য মদিনা মসজিদের ৩৬টি খেজুর গাছকে স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। মসজিদের ছাদ নির্মিত হয়েছিল খেজুর পাতা দিয়ে। ছাদকে সুন্দর করার জন্য, রৌদ্র ও বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য খেজুর পাতার উপর কাঁদামাটির আস্তরণ লেপে দেয়া হয়েছিল। সে সময় মদিনা মসজিদে প্রবেশের জন্য ৩টি দরজা ছিল। প্রধান প্রবেশ পথটি ছিল দক্ষিণ দিকে যা দিয়ে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ করতেন ও বাহির হতেন। পশ্চিম দেয়ালে ছিল মসজিদের দ্বিতীয় প্রবেশ পথ যা "বাবে রহমত" নামে পরিচিত। তৃতীয় প্রবেশ পথটি ছিল পূর্ব দেয়ালে যা দিয়ে মুহাম্মদ (সা:) এ মসজিদে প্রবেশ করতেন। এ জন্য এটির নাম হয় "বাব উন নবী", ঐতিহাসিক উইনসিংকের মতে, মদিনা মসজিদের দরজা প্রস্তর নির্মিত ছিল। মদিনা মসজিদেই সর্ব প্রথম মেহরাব, মিম্বার, আজান দেয়ার স্থান বা মিনার ও ওজুর স্থান সংযোজন করা হয়। বর্তমানে মদিনা মসজিদে আগের চেয়ে অনেক সম্প্রসারিত। সম্পূর্ণ নতুন নকশার ভিত্তিতে এটিকে সম্প্রসারণ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মুসল্লীর নামাযের সুব্যবস্থা করা হয়েছে। 
সংস্কার ও সম্প্রসারণ

মদিনা মসজিদ বা মসজিদে নববী মুসলমান শাসকদের দ্বারা বহুবার সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মুহাম্মদ (সা:) ওফাতের পর হযরত ওমর (রা:) ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে মসজিদে রববীর সম্প্রসারণ করেন। তিনি মসজিদটি উত্তর দিকে ৩০ হাত, দক্ষিণ দিকে ১০ হাত, পশ্চিম দিকে ২০ হাত সম্প্রসারণ করেন। হযরত ওমর (রা:) এর সময় মসজিদের পরিমাণ দাঁড়ায় উত্তর-দক্ষিণে ১৪০ হাত, পূর্ব-পশ্চিমে ১২০ হাত। হযরত ওসমান (রা:) এর সময় ৬৪৬-৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে খেজুরপাতার পরিবর্তে ছাদে সেগুণ কাঠ ব্যবহার করা হয়। ছাদের আকার দাঁড়ায় ১৬০*১৩০ হাত। এ সময় সম্প্রসারিত হয়ে মসজিদের আকার দাঁড়ায় উত্তর দক্ষিণে ১৬০ হাত এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১৫০ হাত। খলিফা আল ওয়ালিদের সময় মদিনা মসজিদটি আধুনিক ইমারতে পরিণত হয়। ওয়ালিদ ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে মসজিদে নববীকে সাজিয়ে তোলেন। তাঁর সময় মসজিদে নববীর পরিমাপ দাঁড়ায় ২০০*২০০ হাত। ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে সর্ব প্রথম মদিনা মসজিদের চারকোণে ৪টি মিনার নির্মাণ করেন আল ওয়ালিদ। তখন প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ছিল ৫০ হাত এবং প্রস্থে ছিল ৮ হাত। খলিফা মাহদী ৭৭৫-৭৮৫ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি সম্প্রসারণ করেন ৩০০*৩০০ হাত। আর মামলুক সুলতান কয়েত-বে মসজিদে নববীতে গম্বুজ প্রতিষ্ঠিত করেন। এতে গম্বুজ করা হয় ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে। গম্বুজ সবুজ রং-এর আস্তরণ দিয়েছিলেন ওসমানী সুলতান দ্বিতীয় মাহমুদ ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। বর্তমান আধুনিকায়নে মসজিদ-এ নববীর রূপদান করেন সৌদি বাদশাহ আব্দুল আজিজ ইবনে সউদ। এর পরিকল্পনা করা হয় ১৯৪৮ খ্রীস্টাব্দে। ১৯৫৩-১৯৫৫ সাল নাগাদ মসজিদ আধুনিকায়ন করা হয়। বিশালকার মসজিদে নববীর সমস্ত রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্ব সৌদি রাজ পরিবারের।
জিয়ারত 
ইসলামে ফজিলত লাভের উদ্দেশ্যে তিন মসজিদে ভ্রমণ করার অনুমোদন আছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো মক্কা মুকাররমা বা কাবা শরীফ (সৌদি আরব)। দ্বিতীয়টি হচ্ছে মসজিদ আল-আকসা বা বায়তুল মুকাদ্দাস : ইসলামের প্রথম কিবলা (ফিলিস্তিন)। তৃতীয়টি হলো মদীনা আল-মুনাওয়ারার মসজিদে নববী : নবীজিকে যেখানে চির শয়নে শায়িত করা হয়েছে। মদীনা নবীর শহর, একে আরবিতে বলা হয় ‘মদীনাতুন নবী।’ আর মদীনার প্রাণকেন্দ্র হলো ‘মসজিদে নববী।’ মদীনার ৯৯টি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) মদীনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন, একে হারাম বা সম্মানিত ঘোষণা করেছেন।
* হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে যে, ঘর থেকে অজু করে মসজিদে কুবায় গিয়ে নামাজ পড়লে একটি উমরাহ্র সওয়াব পাওয়া যায়। মসজিদে নববী থেকে সামান্য দূরে ইসলামের ১ম মসজিদ কুবা অবস্থিত।
* মসজিদে নববীর ভেতরে স্বয়ংক্রিয় ছাদের ব্যবস্থা আছে, যা দিনের বেলা সুইচের মাধ্যমে খুলে দেওয়া হয় আর রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। মসজিদে নববীতে নারীদের জন্য আলাদা নামাজ পড়ার জায়গা আছে। ভেতরে কিছুদূর পরপর পবিত্র কোরআন মজিদ রাখা আছে, আর পাশে আছে জমজম পানি খাওয়ার ব্যবস্থা।
*পাশেই ‘জান্নাতুল বাকি’ গোরস্তান। এখানে হযরত ফাতেমা (রা.), বিবি হালিমা (রা.) ও হযরত ওসমান (রা.) সহ অগণিত সাহাবায়ে কিরামের কবর রয়েছে। এর একপাশে নতুন কবর হচ্ছে প্রত্যহ। এখানে শুধু একটি পাথরের খন্ড দিয়ে চিহ্নিত করা আছে একেকটি কবর।
* মসজিদে নববীর উত্তর দিকের গেট দিয়ে বেরিয়েই সাহাবাদের মসজিদ। পাশাপাশি দু’টি এবং একটি একটু দূরে একই ডিজাইনে করা তিনটি মসজিদ। এগুলোকে ‘সাহাবা মসজিদ’ বলা হয়। হযরত আলী, ওমর ফারুক ও আবু বকর (রাহ.) মসজিদ।
* মসজিদে নববীতে সালাত আদায় ও দোয়া করার উদ্দেশ্যেই মদীনায় গমন এবং সালাত আদায় করে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর রওজা শরীফ জিয়ারত করা ও সালাম পৌঁছানোর ইচ্ছা প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানের থাকে।
* জিয়ারত ও নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে মদীনায় যাওয়া সুন্নত। মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ার ফজিলত বেশি।
* মসজিদে নববীতে জিয়ারতের জন্য ইহরাম বাঁধতে বা তালবিয়া পড়তে হয় না। তবে মদীনা থেকে যদি মক্কায় আবার আসতে হয়, তাহলে মিকাত বীর আলী পার হলে ইহরাম বেঁধে আসতে হবে।

Watch these Video:




Same Label's Other Link
http://isignbd.blogspot.com/2013/09/blog-post_18.html

Friday, June 28, 2013

ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব : মুহাম্মদ (সা.) - তাঁর শ্রেষ্ঠত্বের নিদর্শন

ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব : মুহাম্মদ (সা.)
- সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদূদী (রহ.)

ইসলামী ইতিহাসের দৃশ্যপটে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সুমহান এবং উন্নত ব্যক্তিত্ব এতটা সমুজ্জ্বল পরিদৃষ্ট হয় যে, শুরু থেকে আজ অব্দি বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব যাদেরকে বিশ্ব জাহানের নায়ক (Heroes) হিসেবে গণ্য করা হয় সকলেই তাঁর মোকাবিলায় তুচ্ছ বলে প্রতীয়মান হয়। পৃথিবীর মহান ব্যক্তিবর্গের মধ্যে এমন একজন ব্যক্তিও নেই যার পূর্ণতার দ্বীপ্তি মানব জীবনের দু’একটি বিভাগ থেকে সম্মুখে অগ্রসর হতে পেরেছে। কেউ দর্শনের সম্রাট কিন্তু বাস্তব কর্মক্ষমতা বর্জিত। কেউ আমলের প্রতিভু কিন্তু চিন্তা শক্তিতে দুর্বল। কারো পূর্ণতা রাজনৈতিক কলাকৌশল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ সামরিক প্রতিভার আধার। কারো দৃষ্টি সামাজিক জীবনের এতটা গভীরে নিবদ্ধ যে অন্যান্য দিকগুলো দৃষ্টির অন্তরালে রয়ে গেছে। কেউ আবার নৈতিকতা এবং আধ্যাত্মিকতাকে পাশ কাটিয়ে গেছে। মোটকথা ইতিহাসের সর্বত্রই কেবল একরোখা নায়কই পরিদৃষ্ট হবে। কিন্তু মহানবী (সা.)ই এমন এক ব্যক্তিত্ব যার মধ্যে সমস্ত পূর্ণতার গুণাবলী পরিপূর্ণভাবে বিদ্যমান। তিনি নিজেই একজন দার্শনিক, একজন বিজ্ঞানী যিনি স্বীয় দর্শনকে তাঁর নিজের কর্মজীবনে বাস্তবায়নকারী, একজন রাজনৈতিক কৌশলী, সমর নায়ক, আইন প্রণেতা, নৈতিকতা বিনির্মাণকারী। তিনি নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী একটি স্বতন্ত্র সভ্যতা (Civilization) সৃষ্টি করে দেখিয়ে দেন। জীবনের সকল দিক বিভাগের মধ্যে এমন ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেন যাতে অতিরঞ্জনের কোন নাম নিশানা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হয় না। এ ধরনের বহুমুখী গুণাবলীর অধিকারী অন্য কোন একজন মানুষের কথাও কি আপনার জানা আছে?

পৃথিবীর বড় বড় ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের মধ্যে কোন একজন মানুষও এমন নেই যে, কমবেশি স্বীয় পরিবেশের সৃষ্ট নয়। কিন্তু একমাত্র মহানবী (সা.)-এর মর্যাদা সকলের চাইতে আলাদা যে, তার জীবন পরিগঠনে সমকালীন পরিবেশের কোনই অবদান দৃষ্টিগোচর হয় না। আর কোন যুক্তিতেই একথা সাব্যস্ত করা যেতে পারে না যে, ঐতিহাসিকভাবে তখনকার পরিবেশ এমন একজন মানুষের আগমন প্রত্যাশিত ছিল। অনেক টেনে হিঁচড়ে আপনি বড়জোর যতটুকু করতে পারনে তা এর চেয়ে বেশী নয় যে, তখনকার ঐতিহাসিক কার্যকারণ এমন এক নেতার আবির্ভাবের দাবি করছিল যে নাকি বিভিন্ন গোত্রীয় বিভেদকে নির্মূল করে একটি মাত্র জাতিতে পরিণত করতো। দেশের পর দেশ জয় করে আরবদের অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন করতো, অর্থাৎ এমন একজন জাতীয়তাবাদী নেতার আবির্ভাবের দাবি করছিলো যেন সে সময়কার সকল আরব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে যে  জুলুম অত্যাচার রক্তপাত প্রতারণা মোটকথা সম্ভাব্য সকল কলাকৌশললের মাধ্যমে তার নিজ জাতিকে সমৃদ্ধশালী করার পথ প্রশস্ত করতো এবং একটি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য রেখে যেতো। এছাড়া সে সময়কার ইতিহাসের কোন দাবিই আপনি প্রমাণ করতে পারবেন না।

হেগেলের ইতিহাস দর্শন, কিংবা মার্কসের ঐতিহাসিক বস্ত্তবাদী ব্যাখ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি বড়জোর এ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন যে, আরবের তদানীন্তন পরিবেশে একটি জাতি গঠন এবং সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার যোগ্যতাসম্পন্ন নেতার আবির্ভাবের প্রয়োজন ছিল কিংবা আবির্ভাব হতে পারতো। কিন্তু হেগেল কিংবা মার্কসীয় দর্শন যা ঘটে গেল তার কি ব্যাখ্যা দিবে? সে সময় সে পরিবেশে এমন এক ব্যক্তি জন্ম নিলেন যিনি সর্বোত্তম নৈতিক চরিত্র শিক্ষা দিলেন। মানবতাকে সুসজ্জিত পরিশীলিত ও সুসংগঠিত করলেন। মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করলেন। জাহেলী ধ্যান ধারণা এবং হিংসা বিদ্বেষ নির্মূল করলেন। যার দৃষ্টি জাতি গোষ্ঠী এবং দেশের সীমা সরহদ ডিঙ্গিয়ে সমগ্র মানবতার ওপর পরিব্যাপ্ত হয়েছে। যিনি নিজের জাতির জন্যই নয় বরং গোটা বিশ্ব মানবতার একটা নৈতিক, আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছেন। যা অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে কল্পনার জগতে নয় বরং বাস্তবতার জগতে নৈতিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দেখিয়েছেন। আধ্যাত্মিকতা এবং বস্ত্তবাদের এমন সুসম ভারসাম্যপূর্ণ মিশ্রণ তৈরি করেছেন যা সে কালের ন্যায় আজো জ্ঞান ও বিচক্ষণতার শ্রেষ্ঠতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এমন এক ব্যক্তিত্বকে আপনি কি করে তৎকালীন আরবের জাহেলী পরিবেশের সৃষ্ট বলতে পারেন? শুধু এতটুকুই নয় যে, সে ব্যক্তি তার পরিবেশের ফসল হিসেবে পরিদৃষ্ট হয় না বরং যখনই আমরা তার কৃতিত্বের প্রতি গভীরভাবে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তখন মনে হয় তিনি স্থান-কাল-পাত্র থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন। তার দৃষ্টি পরিবেশ পরিস্থিতির বন্ধন ছিন্ন করে শতাব্দী ও সহস্রাব্দের (Millennium) সীমানা সম্মুখে এগিয়ে গেছে।

তিনি মানুষকে দেখেছেন সকল যুগ ও পরিবেশের আলোকে। একই সাথে তার জীবন যাপনের জন্য এমন সব নৈতিক এবং ধর্মগত পথ নির্দেশনা দান করেছেন  যা সর্বকালে সর্বাবস্থায় একইভাবে খাপ খেয়ে যায়। তিনি সে সব লোকের অন্তর্ভুক্ত নন ইতিহাস যাদেরকে সেকেলে লোকদের তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের পরিচয় আমরা এভাবে দিতে পারি যে, তারা সে যুগের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক ছিলেন। মানবতার জন্য সবচেয়ে ব্যতিক্রম এবং বিশিষ্ট নেতা হলেন ঐ ব্যক্তি যিনি ইতিহাসের চলমান ধারার সাথে (March) এগিয়ে যেতে পারেন। যিনি তার যুগের যেমন আদর্শ ও উত্তম নেতা তেমনি প্রত্যেক যুগেই তিনি আধুনিক (Modern) নেতা প্রমাণিত হন যেমন তার পূর্বের যুগে ছিলেন। আপনি যাদেরকে উদারতার সাথে ইতিহাস সৃষ্টিকারী বলে আখ্যায়িত করেন প্রকৃতপক্ষে তারা ইতিহাসের সৃষ্টি সমগ্র মানবেতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্ব একজনই। পৃথিবীর ইতিহাসে যত নেতাই ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তার অবস্থার ওপর পর্যালোচনার দৃষ্টি নিবদ্ধ করলে লক্ষ্য করবেন যে, কার্যকারণ বা উপাদানগুলো স্বয়ং বিপ্লবের লক্ষ্য এবং পন্থা -নির্ধারণ করে দিচ্ছিল। বিপ্লবের নায়ক শুধু এতটুকু ভূমিকা পালন করেছে যে, সময়ের চাহিদানুযায়ী বিপ্লবের দিক ও পথ নির্দেশ করেছিল। বিপ্লবের নেতা অবস্থা ও পরিবেশের চাহিদাকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য এমন একজন অভিনেতার ভূমিকা পালন করেছেন যার জন্য মঞ্চ পূর্ব থেকে প্রস্ত্তত ছিল। কিন্তু ইতিহাস এবং বিপ্লব সৃষ্টিকারী উভয় শ্রেণীর মধ্যে মহানবী (সা.) এমন ব্যক্তি যেখানে বিপ্লবের উপাদান বিদ্যমান ছিল না সে ক্ষেত্রে তিনি নিজেই বিপ্লবের উপাদান কার্যকারণগুলো উদ্ভাবন করেন যেখানে লোকদের মধ্যে বিপ্লবের সৃষ্টি এবং কর্মক্ষমতার মধ্যে বর্তমান ছিল না সেখানে তার নিজস্ব চেষ্টায় বিপ্লবের উপযোগী লোক তৈরি করেন, নিজের প্রচন্ড ব্যক্তিত্বকে দ্রবীভূত করে সহস্র মানুষের দেহে প্রবিষ্ট করিয়ে তাদের এবং তাদেরকে নিজের মনের মত করে তৈরি করে নিয়েছেন। এমনি একজন ইতিহাস স্রষ্টা এবং এ ধরনের বিপ্লবী মানুষ মানবেতিহাসের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে কি?
 
উর্দু ডাইজেস্ট থেকে ভাষান্তর করেছেন আ. হ. ম. নূরুল হুদা

এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য