Sunday, October 20, 2013

জর্দানের বিস্ময়কর ইসলামিক নিদর্শন সাহাবী গাছ (ভিডিও সহ)

জর্দানের বিস্ময়কর ইসলামিক নিদর্শন সাহাবী গাছ



আজো বেঁচে আছে বিস্ময়কর ১৫০০ বছর আগের রাসুল (সঃ) এর সাক্ষাৎপ্রাপ্ত বেচে থাকা একমাত্র সাহাবী গাছ। ইংরেজিতে এ গাছকে বলা হয় The Blessed Tree. শুনতে অবাক লাগলেও কিন্তু বেঁচে আছে গাছটি।
পৃথিবীতে এত পুরনো কোনো গাছ এখনো বেঁচে আছে তা বিশ্বাসযোগ্য না হলেও কিন্তু সত্যি। সাহাবি গাছ এমনই একটি গাছ যে গাছটি অবিশ্বাস্যভাবে শত বর্গ কিলোমিটারজুড়ে মরুভূমিতে গত ১৫০০ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। দেখতে খুবই সুন্দর গাছটি।
মরুভূমির রুক্ষ পরিবেশের কারণে জন্ম থেকেই গাছটি ছিল পাতাহীন শুকনো কিন্তু একসময় আল্লাহর হুকুমে গাছটি সবুজ পাতায় ভরে উঠে এবং আজ পর্যন্ত গাছটি সবুজ শ্যামল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
অবিশ্বাস্য এই গাছটি জর্ডানের মরুভূমির অভ্যন্তরে সাফাঈ এলাকায় দণ্ডায়মান। জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহ সর্বপ্রথম এই স্থানটিকে পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা দেন।
৫৮২ খ্রিস্টাব্দে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর বয়স তখন ১২ বছর, তিনি তার চাচা আবু তালিবের সঙ্গে বাণিজ্য উপলক্ষে মক্কা থেকে তৎকালীন শাম বা সিরিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
যাত্রাপথে তারা সিরিয়ার অদূরে জর্ডানে এসে উপস্থিত হন। জর্ডানের সেই এলাকাটি ছিল শত শত মাইলব্যাপী বিস্তৃত উত্তপ্ত বালুকাময় এক মরুভূমি। মোহাম্মদ (সা.) এবং তার চাচা আবু তালিব মরুভূমি পাড়ি দেয়ার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়েন।
তখন তারা একটু বিশ্রামের জায়গা খুঁজছিলেন। কিন্তু আশপাশে তারা কোনো বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। চারদিকে যত দূর চোখ যায় কোনো বৃক্ষরাজির সন্ধান পাচ্ছিলেন না।
কিন্তু দূরে একটি মৃতপ্রায় গাছ দেখতে পেলেন তারা। উত্তপ্ত মরুভূমির মাঝে গাছটি ছিল লতাপাতাহীন শীর্ণ ও মৃতপ্রায়। উপায় না পেয়ে তারা মরুভূমির উত্তাপে শীর্ণ পাতাহীন সেই গাছটির তলায় বিশ্রাম নিতে বসেন।
উল্লেখ্য, রাসূল মোহাম্মদ (সা.) যখন পথ চলতেন তখন আল্লাহর নির্দেশে মেঘমালা তাকে ছায়া দিত এবং বৃক্ষরাজি তার দিকে হেলে পড়ে ছায়া দিত।


মোহাম্মদ (সা.) তার চাচাকে নিয়ে যখন গাছের তলায় বসেছিলেন তখন তাদের ছায়া দিতে আল্লাহর নির্দেশে মৃতপ্রায় গাছটি সজীব হয়ে উঠে এবং গাছটির সমস্ত ডালপালা সবুজ পাতায় ভরে যায়।
সেই গাছটিই বর্তমানে সাহাবি গাছ নামে পরিচিত। এ ঘটনা দূরে দাঁড়িয়ে জারজিস ওরফে বুহাইরা নামে একজন খ্রিস্টান পাদ্রি সবকিছু দেখছিলেন।


আবু তালিব মোহাম্মদকে (সা.) নিয়ে পাদ্রীর কাছে গেলে তিনি বলেন, আমি কোনোদিন এই গাছের নিচে কাউকে বসতে দেখিনি।
পাদ্রী বলেন, গাছটিও ছিল পাতাহীন কিন্তু আজ গাছটি পাতায় পরিপূর্ণ। এই ছেলেটির নাম কি? চাচা আবু তালিব উত্তর দিলেন মোহাম্মদ! পাদ্রী আবার জিজ্ঞাসা করলেন, বাবার নাম কি? আব্দুল্লাহ!, মাতার নাম? আমিনা!
বালক মোহাম্মাদকে (সা.) দেখে এবং তার পরিচয় শুনে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাদ্রীর চিনতে আর বাকি রইল না যে, এই সেই বহু প্রতীক্ষিত শেষ নবী মোহাম্মদ। চাচা আবু তালিবকে ডেকে পাদ্রী বললেন, তোমার সঙ্গে বসা বালকটি সারা জগতের সর্দার, সারা বিশ্বের নেতা এবং এই জগতের শেষ নবী।
তিনি বলেন, আমি তার সম্পর্কে বাইবেলে পড়েছি এবং আমি ঘোষণা দিচ্ছি, এই বালকটিই শেষ নবী।
চাচা আবু তালিব ও মহানবী (সা.) যেই গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিয়েছিলেন সেই গাছটি ১৫০০ বছর আগ যে অবস্থায় ছিল আজো সেই অবস্থায় জর্ডানের মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে।
গাছটি সবুজ লতা-পাতায় ভরা এবং সতেজ ও সবুজ। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, গাছটি যেখানে অবস্থিত তেমন মরুদ্যানে কোনো গাছ বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। গাছটির আশপাশের কয়েকশ’ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে আর কোনো গাছ নেই।
গাছটির চারিদিকে দিগন্ত জোড়া শুধুই মরুভূমি আর মরুভূমি। উত্তপ্ত বালুকাময় মরুভূমির মাঝে গাছটি দাঁড়িয়ে থেকে আল্লাহর অসীম ক্ষমতার সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেইসঙ্গে মহানবী রাসূল মোহাম্মদের (সা.) স্মৃতি আঁকড়ে ধরে রেখেছে, যা আল্লাহ তা’য়ালার কুদরতি ক্ষমতার উৎকৃষ্ট নিদর্শন।

Watch This Video:


Thursday, October 17, 2013

আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আলাদা মিরাকল দরকার নেই, তার প্রতিটি সৃষ্টিই মিরাকল:

আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আলাদা মিরাকল দরকার নেই, তার প্রতিটি সৃষ্টিই মিরাকল: 
মাছের গায়ে আর গাছের ডালে আল্লাহ্‌র নাম দেখে যারা দুর্বল ঈমান পোক্ত করতে চান–এই পোস্ট তাদের জন্য নয়

মাছের গায়ে আর গাছের ডালে আল্লাহ্‌র নাম দেখে যারা দুর্বল ঈমান পোক্ত করতে চান–এই পোস্ট তাদের জন্য নয়তবে এই পোস্ট নাস্তিকদের জন্যও নয়। বরং এই পোস্ট ধর্মের নামে ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রকৃত ধর্ম-বিশ্বাসীদের জন্য। আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ও ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য কিছু ভণ্ড ধর্ম-ব্যবসায়ী ভূয়া ‘মিরাকল’ বা অলৌকিক ঘটনার ছবি প্রচার করে একদিকে যেমন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তেমনি অন্যদিকে নাস্তিক ও বিধর্মীদের কাছে ইসলাম ধর্মকে হাস্যাস্পদ করছে। আবার কিছু ধর্ম-বিদ্বেষীও ধর্মকে হেয় করার জন্য এসব ছবি ব্যবহার করে। এই পোস্টে সেসব ‘ভূয়া’ মিরাকলের ‘আসল’ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছে।
সবচেয়ে বিখ্যাত ‘মিরাকল’টি দিয়েই শুরু করি। অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের মুসলমানদের ঘরে ঘরে নীচের ছবিটি বাঁধানো অবস্থায় শোভা পাচ্ছে:

এটি নাকি জার্মানির একটি খামারের ছবি–এর গাছগুলি আল্লাহ্‌র কুদরতে এমনভাবে আকৃতি নিয়েছে, যাতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ কথাটি পরিষ্কার ফুটে উঠেছে! এটি দেখে নাকি অনেক জার্মান নাগরিক মুসলমানও হয়েছে। তারপর ‘বে-দ্বীন’ জার্মান সরকার নাকি জায়গাটি বেড়া দিয়ে আড়াল করে দিয়েছে–আল্লাহ্‌র এই কুদরত দেখে আর কেউ যাতে মুসলমান হতে না পারে।
অথচ আসল ঘটনা হল, এটি মোটেই বাস্তব কোন দৃশ্য নয়, বরং ডাঃ সাঈদ আল-খুদারি নামে এক মিশরীয় ব্যক্তির হাতে আঁকা তৈলচিত্র! একই ব্যক্তির ‘আঁকা’ মানুষের শ্বাসনালীর নীচের ছবিটিকেও দেখুন কীভাবে এর পরের ছবিতে আল্লাহ্‌র কুদরতের নিদর্শন হিসেবে চালানো হয়েছে:

পরবর্তীতে অন্য একজন প্রত্যক্ষদর্শী মিশরীয় ব্যক্তি আসল ঘটনা উন্মোচন করে ই-মেইল পাঠালে একটি ইসলামী ওয়েবসাইট গাছের ও ফুসফুসের ছবি দুটি সরিয়ে নেয়। উক্ত ই-মেইলটি দেখতে পাবেন এখানে: http://www.themodernreligion.com/miracles.html#email
এবার দেখুন নীচের ছবিতে ক্যাকটাস গাছকে কীভাবে ‘আল্লাহু’ লেখা মিরাকল হিসেবে দাবি করা হয়েছে:
বক-ধার্মিকগণ নীচের গাছটিতেও ‘আল্লাহু’ লেখা খুঁজে পেয়েছে:

আরও দেখুন অস্ট্রেলিয়ার এক বনে রুকুর ভঙ্গিতে থাকা গাছের ছবি:

রুকুতে থাকা গাছের ভিডিওটি দেখতে পাবেন নীচের ইউটিউব লিংকে: http://www.youtube.com/watch?v=LYdw1iM1yI0
উপরে গাছের ছবিগুলি যদি আল্লাহ্‌র কুদরতই হয়, তবে নীচে দেখানো গাছের ছবিগুলির ব্যাখ্যা কী:
১। মানুষের মুখের আকৃতির গাছ:

২। হাতির আকৃতির গাছ (কোন হিন্দু যদি এটি দেখে গণেশ বলে দাবি করে, তবে আপনি কী বলবেন!):

৩। ব্যালে নর্তকীর ভঙ্গীতে গাছ:

৪। আরেকটি মানুষের আকৃতির গাছ:

৫। সিঙ্গাপুরের হনুমান গাছ (যা দেখে হিন্দুরা হনুমানদেবের কীর্তি ভেবে ভক্তিভরে পূজা শুরু করেছে!):

থাইল্যান্ডের কথিত ‘নারীপল’ বা ‘নারীফল’ গাছের ছবিটি কারো কারো কাছে অশ্লীল মনে হতে পারে বলে এখানে দিলাম না। চাইলে এই লিংকে গিয়ে দেখে আসতে পারেন: http://mrugeshmodi.blogspot.com/2010/09/nareepol-tree-amazing-woman-tree.html
বরং সাগরের বুকে মানুষের তৈরি কৃত্রিম ‘খেজুর গাছ’ আকৃতির দ্বীপকে আমার বিজ্ঞানের ‘মিরাকল’ মনে হয়। সৃষ্টিকর্তা মানুষকে কত জ্ঞানই না দিয়েছেন! নীচে দেখুন দুবাইয়ের ‘আল-নাখীল’ দ্বীপ:

এবার দেখুন মেঘের গায়ে ‘আল্লাহু’ লেখা:

অথচ আপনি চাইলে আকাশের মেঘের গায়ে হাতি, ঘোড়া, গাছ, ইত্যাদি অনেক কিছু কল্পনা করতে পারেন। এরকম ‘মিরাকল’ দেখতে চান? তাহলে নীচে দেখুন:
১। গাড়ি আকৃতির মেঘ (এটি দেখে জাপানের টয়োটা কোম্পানি যদি নিজেদের স্বর্গীয় বলে দাবি করে, তবে আমি এর জন্য দায়ী না!):

২। হাতি আকৃতির মেঘ:

৩। আরেকটি হাতি-মেঘ (হিন্দুদের দেবতা গণেশের মিরাকল?):

নীচে ‘গনেশ’ আকৃতির একটি ফুলও দেখুন তাহলে:

এবার দেখুন প্রাণির গায়ে ‘আল্লাহু’ ও ‘মুহাম্মদ’ লেখা ছবি:

উপরের প্রাণীর ছবিগুলি যদি আল্লাহ্‌র কুদরত হয়, তবে নীচের ছবিগুলি কার কুদরত?
১। গরুর গায়ে হিন্দুদের ওম লেখা:

২। গরুর গায়ে খ্রীস্টানদের ক্রশ আঁকা:

কেউ কেউ নীচের ছবিতে পাহাড়ের গায়ে অলৌকিক ‘আল্লাহু’ লেখা দেখতে পায়:

এখন পাহাড়ের গায়ে ‘ওম’ লেখা নীচের ছবিটি দেখে কী বলবেন?:

এখন দেখুন এক পাকিস্তানি নাকি চাপাতিতে ‘আল্লাহু’ লেখা বলে দাবি করেছে:

তাহলে নীচের ‘ওম’ পরোটা দেখে সে কী বলবে?:

আবার নীচের ছবিটাতে সাগরের মাঝে পাথরের দ্বীপটি নাকি ‘সেজদারত’:

তাহলে নীচের ছবির ভালোবাসার প্রতীক ‘হার্ট’ আকৃতির দ্বীপটা দেখে যদি কেউ দাবি করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস ইসলাম-সম্মত, তবে তাকে কী বলবেন?:

সুতরাং এসব ছবির বেশির ভাগই প্রকৃতির খেয়াল, কাকতালীয়, দৃষ্টিবিভ্রম কিংবা দুষ্ট লোকের কারসাজির উদাহরণ মাত্র। অথচ আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব ও ইসলামের মহিমা প্রমাণের উদ্দেশ্যে এরকম হাজার হাজার ভূয়া ‘মিরাকল’ প্রচার করছে ইন্টারনেটের বহু ইসলামী ওয়েব-সাইট।
তাই এসব ছবি দিয়ে যারা আল্লাহ্‌র অলৌকিকত্ব প্রমাণ করতে চায়, তারা আসলে নিজেরা বিভ্রান্ত, অন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানকেও বিভ্রান্ত করে এবং একই সাথে ইসলাম ধর্মকে হাস্যাস্পদ বা হেয় করে। আল্লাহ্‌র শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য আলাদা মিরাকল দরকার নেই, তার প্রতিটি সৃষ্টিই মিরাকল।
আল্লাহ্‌ আমাদের সকলকে প্রকৃত জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দিন।



Related Links:
আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির কিছু নিদর্শন

মহাবিশ্বের বিদ্যমান অসংখ্য নিদর্শন আল্লাহকে চিনতে ও খুজে পেতে সহায়তা করে । 

আল্লাহ তাআলার সৃষ্টির কিছু নিদর্শন - একটি খুতবার ভিডিও 


Please browse these website for more information about  sign of creation: 

http://www.signsofcreation.com
http://www.evidencesofcreation.com

 

http://isignbd.blogspot.com/2013/07/the-miracles-of-quran-bangla.html


আব-ই-জমজম: আল্লাহর এক বিস্ময়কর ও রহস্যময় নিদর্শন

আব-ই-জমজম: আল্লাহর এক বিস্ময়কর ও রহস্যময় নিদর্শন



জমজম কূপের ইতিহাস:
মহান আল্লাহতায়ালা বিশ্বের সব বস্তুই সৃষ্টি করেছেন মানবকল্যাণে। আর বিশ্বের সব সৃষ্টি মানুষের জন্য নিয়ামতস্বরূপ। তার মধ্যে পানি একটি বিশেষ নিয়ামত। এই পানি ব্যতীত মানুষ এক মুহূর্তও চলতে পারে না। জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সব পানির চেয়ে আলাদা। আর এ পানি স্বয়ং আল্লাহতায়ালার দেয়া স্বর্গীয় রহমতপূর্ণ। আজ থেকে প্রায় চার-সাড়ে চার হাজার বছর আগে, মধ্যপ্রাচ্যের পবিত্র ভূমি মক্কানগরী, যেখানে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জন্মস্থান, সেখানে মহাবরকতময় স্বর্গীয় পানি জমজম কূপের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই পানি পৃথিবীর অন্যসব পানি থেকে ব্যতিক্রমধর্মী। জমজম কূপের উৎপত্তির সঙ্গে হজরত হাজেরা (আ.) এর স্মৃতিজড়িত। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার বড় স্ত্রী বিবি হাজেরা ও তার নবজাতক সন্তান হজরত ইসমাইলসহ (আ.) পবিত্র মক্কানগরে লুপ্ত কাবার কাছে নির্বাসন দেয়ার জন্য আদিষ্ট হন।
তিনি আল্লাহর আদেশে স্ত্রী ও সন্তানকে কিছু পানি ও খেজুরসহ সেখানে রেখে যান। যাওয়ার সময় ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন, 'হে আল্লাহ! তুমি একে শান্তিময় নগরে পরিণত কর এবং আমাকে ও আমার সন্তানদের মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখ।' সুরা ইব্রাহীম। অপর আয়াতে বলা হয়েছে, 'হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার সম্মানিত ঘরের কাছে এক অনাবাদি উপত্যকায় আমার এক বংশধরকে বসত করতে রেখে গেলাম। হে আমাদের প্রভু! তারা যেন সালাত কায়েম করে। তুমি কতিপয় লোকের মন তাদের প্রতি আকৃষ্ট করে দাও। তাদের জীবিকারূপে কিছু ফলমূল দাও। আশা করা যায়, তারা তোমার শোকর গোজার করবে। সুরা ইব্রাহীম। ইব্রাহীম (আ.) মা ও শিশু সন্তানের জন্য যে খাদ্য ও পানীয় রেখে গিয়েছিলেন, তা অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। ফলে মা ও শিশু সন্তান ক্ষুধা ও তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েন।
মা হাজেরা (আ.) এদিক সেদিক ছোটাছুটি করে কোথাও খাদ্য সংগ্রহ করতে না পেরে, নিকটস্থ সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের চূড়ায় উঠে চারদিকে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন কোথাও কোনো জনমানবের কাফেলা দেখা যায় কি না। এভাবে তিনি আশায়-নিরাশায় উভয় পাহাড়ে পরপর সাতবার ওঠানামা করতে থাকেন। তার পুত্রস্নেহের এই দৃশ্যটি আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছে বিধায় আল্লাহতায়ালা এই স্মৃতিটি চিরদিনের জন্য হাজিদের দ্বারা অমস্নান ও স্মরণীয় করে দেন। আর হজের এই কাজটি ওয়াজিব হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। মা হাজেরা উভয় পাহাড়ে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করে নিরুপায় হয়ে সন্তানের কাছে ফিরে এসে দেখতে পেলেন যে, ইসমাইলের পাদদেশে পানি। বিবি হাজেরা তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলেন শিশুপুত্রের কাছে। হ্যাঁ ঠিকই পানি। শিশুপুত্রের খেলাচ্ছলে পায়ের গোড়ালির আঘাতে আঘাতে প্রস্তর চুইয়ে পানি আসছে। আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে পানি যাতে গড়িয়ে যেতে না পারে তাই আশপাশ থেকে প্রস্তর ও বালু এনে চারপাশে বৃত্তাকারে পানি যতদূর গড়িয়েছে ততটুকু বাঁধ দিয়ে আটকালেন এবং পানিকে জমজম অর্থাৎ থামথাম বললেন। অমনি আল্লাহপাকের নির্দেশে পানি স্থির হয়ে রইলো। বর্ণিত আছে যে, সেদিন যদি তিনি পানিকে এভাবে বাধা প্রদান না করতেন, তবে এ পানিতেই সারাবিশ্ব তলিয়ে যেত। জমজম কূপের উৎপত্তির দিন থেকে মক্কা নগরীতে জনবসতির সূচনা হয়। ধীরে ধীরে তা মহানগরীতে পরিণত হয়। এর পানি বিশ্বের সর্বোত্তম এবং বিশেষ বরকতময়। 

জমজম কূপ সম্মন্ধে কিছু জানা-অজানা তথ্য:

 ১) আল্লাহ তা'লার অসীম কুদরতে ৪০০০ বছর পূর্বে সৃষ্টি হয়েছিল। এরপর থেকে… এর স্বাদেরও কোন পরিবর্তন হয় নাই আজ পর্যন্ত কোন এলগি বা শ্যাওলা জন্মায় নাই কোনরকম জীবাণুরও সংক্রমন হয় নাই পৃথিবীর বিভিন্ন হাই টেক ল্যাবোরেটরিতে এর মান ও গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয় এবং তাতে কোনরকম সমস্যা পাওয়া যায় নাই আজ পর্যন্ত

২) ভারী মোটরের সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার পানি উত্তোলন করার পরও পানি ঠিক সৃষ্টির সূচনাকালের ন্যায়। আর পানি উঠানো বন্ধের পর মাত্র ১১ মিনিটে আবার পানির লেভেল উঠে আসে ১৩ ফুটে! এখন একটা স্বাভাবিক গাণিতিক হিসাবে যাওয়া যাক। প্রতি সেকেন্ডে ৮০০০ লিটার হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় উত্তোলিত পানির হিসাব দাড়ায়- ৮০০০*৬০*৬০*২৪= ৬৯১.২ মিলিয়ন লিটার! যা পূরণ হয়ে যায় মাত্র ১১ মিনিটে অথচ তা তোলা হয়েছিল ২৪ ঘণ্টায়!! সুবহানআল্লাহ 

৩) দুটো আশ্চর্য ব্যাপার এখানে যে- জমজম কূপের এত দ্রুত পূর্ণ হয়ে যাওয়া বা কুপে পানি প্রবাহের এত তীব্র গতি আবার অন্যদিকে সেই তীব্র গতির পানিপ্রবাহ একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় এসে বন্ধ হয়ে যাওয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি অসাধারন এবং চমৎকার তাঁর নিয়ন্ত্রণ।

৪) এই কূপের পানি সৃষ্টির পর থেকে একই রকম আছে এর পানি প্রবাহ, এমনকি হজ্ব মউসুমে ব্যবহার ক'য়েক গুন বেড়ে যাওয়া সত্বেও এই পানির স্তর কখনও নিচে নামে না।

৫)  সৃষ্টির পর থেকে এর গুনাগুন, স্বাদ ও এর মধ্যে বিভিন্ন উপাদান একই পরিমানে আছে।

৬) এই কূপের পানির মধ্যে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সল্ট এর পরিমান অন্যান্য পানির থেকে বেশী, এজন্য এই পানি শুধু পিপাসা মেটায় তা না, এই পানি ক্ষুধাও নিবারণ করে।

) এই পানিতে ফ্লুরাইডের পরিমান বেশী থাকার কারনে এতে কোন জীবানু জন্মায় না ।

৮) এই পানি পান করলে সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

৯) সব থেকে বড় নিদর্শন হলো এই কূপের কোন সংযোগ নেই, কারণ আসে পাশে নেই কোন জলাধার বা নদী বা সমুদ্র, সম্পূর্ণ মরুভূমি, আর বৃষ্টি… তা তো নেই বললেই চলে! আলহামদুলিল্লাহ, এটাই আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন আমাদের জন্য

►রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ ও আল-আজরাকি)

►জম জমের পানি দাড়িয়ে এবং তিন শ্বাসে পান করা সুন্নাহ। পান করার সময় নিম্নের দোয়াটি পাঠ করা-
اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ.
(حديث ضعيف/ رواه الدارقطنى وعبد الرزاق والحاكم عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا مَوْقُوْفًا)

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আস'আলুকা ইলমান নাফি'আ, ওয়ারিজকান ওয়াসিয়া, ওয়াশিফা'আন মিন কুল্লি দা।

অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট কল্যাণকর জ্ঞান, প্রশস্থ রিযিক এবং যাবতীয় রোহ থেকে আরোগ্য কামনা করিতেছি। (দারা কুতনী, আব্দুর রাজ্জাক ও হাকেম, বর্ণনায় ইবেনে আব্বাস)

বৈজ্ঞানিক গবেষণায় জমজমের পানি
- গবেষক তারিক হোসাইন, রিয়াদ এবং মইনুদ্দিন আহমেদ 
বাংলা লিখেছেন

আব-ই-জমজম কূপ আল্লাহর সৃষ্ট এক বিস্ময়কর নিদর্শন। ১৯৭১ সালে একজন মিশরীয় ডাক্তার ইউরোপীয়ান গণমাধ্যমে লিখে ছিলেন, জমজমের পানি পানের উপযোগী নয়। কাবার অবস্থান ছিল সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে নিচে এবং মক্কার মাঝখানে। তাই শহরের সকল নোংরা পানি এই কূপে এসে জমা হয়। এই খবরটি সৌভাগ্যক্রমে বাদশাহ্ ফয়সলের দৃষ্টি গোচর হয় এবং তিন চরম রাগান্বিত হন। তিনি কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণায়কে দ্রুত নির্দেশ দিলেন এর তদন্ত করতে। মন্ত্রণালয় জেদ্দার পাওয়ার এন্ড ডিজএলাইজেশন প্লান্টকে নির্দেশ দিল এই কাজটি করতে। তখন আমি (লেখক) সেই প্রতিষ্ঠানে ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলাম। আমি এই কাজটি করতে আগ্রহ দেখালাম। প্রথমে আমি কূপটির আয়তন সম্পর্কে ধারণা নিতে শুরু করলাম। আমি আমার সহকারীকে গোসল করিয়ে পবিত্র করে কূপে নামালাম। সহকর্মীর উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। কূপের পানি তার কাধ পর্যন্ত ছিল। কূপটির আয়তন ১৮ ফুট বাই ১৪ ফুট। সে কূপের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে খুজে কোথাও কোন অর্ন্তনালী বা পাইপলাইন পেল না। আমার মাথায় অন্য একটি বুদ্ধি খেলল। আমি একটি উচ্চ মতা সম্পন্ন পাম্প বসিয়ে দ্রুত কূপের পানি সেচতে থাকলাম। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে পানির লেভেলে কোন পরিবর্তন ঘটল না। এটা ছিল একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোথা থেকে পানি কূপে আসছে তা বের করা যেত। আমি এই পদ্ধতি পুনরায় প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি সহকারীকে এবার কূপে নামিয়ে তাকে সূক্ষ্ম ভাবে পর্যবেনের নির্দেশ দিয়ে পাম্প চালু করলাম। এবার একটি অবাক করা ঘটনা ঘটল। সে হঠাৎ তার হাত তুলে চিৎকার করে বলে উঠল, “আলহামদুলিল্লাহ! আমি পেয়েছি। আমার পায়ের নিচে বালি নাচছে।” তারপর সে কূপের চারদিকে হাটতে শুরু করল এবং দেখল সব স্থানে একই ঘটনা ঘটছে। আসলে কূপের সব স্থান থেকে একই গতিতে পানি এসে সমতা বজায় রাখছিল। আমার এই পর্যবেণ শেষে আমি পানির নমুনা পরীার জন্য ইউরোপীয়ান ল্যবরেটরীতে পাঠালাম। আমি মক্কার অন্যান্য কূপগুলো সম্পর্কে খবর নিলাম। দেখলাম সেগুলো সচরাচর শুকনো থাকে। ইউরোপীয়ান ল্যাবেরটরীজ তাদের পরীা শেষে রিপোর্টে জানালো সাধারন পানির তুলনায় জমজমের পানিতে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সল্টের পরিমাণ বেশী। যা হাজীদের কান্তি দূর হওয়ার জন্য একটি কারণ হতে পারে। ল্যাবেরটরীজ এই পানিকে পানের উপযোগী বলে আখ্যায়িত করে। বাদশাহ্ ফয়সল একথা শোনার পর অনেক খুশি হলেন এবং পূর্বের রিপোর্টটির একটি প্রতিবাদ ইউরোপীয়ান গণমাধ্যমে পাঠালেন। উল্লেখ্য, ছোট এই কূপটি লক্ষ লক্ষ মানুষের পানির চাহিদা মিটিয়ে আসছে। একটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিল এখান থেকে আধুনিক পাম্পের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে ৮ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করা যায় এবং ২৪ ঘন্টা পর ১১ মিনিটের জন্য বিরতী দেয়া হলে পানির লেভেল আবার সমান হয়ে যায়। জমজম কূপের পানির স্তর কখনো কমে না। এতে কখনো শ্যাওলা বা আগাছা জন্মে না।  সূত্র- http://alislaah4.tripod.com/moreadvices2/id21.htm

See Video please(ভিডিওটি দেখুন):

Zam Zam Water - Mini Documentary 

 

Related other links:

Japanese Scientist's research on Zam Zam

Zamzam: A living miracle 

 



এক অসাধারণ #না’তসহ দরূদ - বালাগাল উলা বি-কামালিহি: ইতিহাস, অনুবাদ ও তাৎপর্য